ছবিটি দেখে কি আপনার আপত্তিকর কিংবা অশোভন মনে হচ্ছে? ফেসবুকের জার্মান শাখায় কর্মরতদের কাছে তা মনে হয়েছে৷ তাই সেটি একজনের অ্যাকাউন্ট থেকে মুছে দেয়া হয়েছে৷ আর এ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷
বিজ্ঞাপন
ছবিটি ‘বারবারা’ নামের একটি ফেসবুক পাতায় পোস্ট করা হয়েছিল৷ বারবারা আসলে একটি ছদ্মনাম৷ এই পাতার পেছনের মানুষটি একজন স্ট্রিট আর্টিস্ট৷ তাঁর কাজেকর্মে অনেক হাস্যরসের উপাদান থাকে৷ এছাড়া রাস্তার বিভিন্ন সাইন পালটে তা দিয়ে রাজনৈতিক কোনো বিষয়ে হাস্যরস তৈরির চেষ্টা করেন তিনি৷ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালে মর্যাদাপূর্ণ ‘গ্রিমে অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছিলেন বারবারা৷
আলোচিত ছবিটি মুছে দেয়ার পাশাপাশি অ্যাকাউন্ট পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে বলেও এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন তিনি৷ ছবিটি কেন মোছা হয়েছে, তার কারণ জানানো হয়নি৷ ফলে বিষয়টিকে ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে হুমকির চেয়েও বেশি কিছু মনে করছেন বারবারা৷
অবশ্য জার্মানিতে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে কার্যকর হওয়া একটি আইনের কারণে ছবি মোছা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷ ডয়চে ভেলেকে এমনটিই জানিয়েছেন বারবারা৷ নতুন আইনটি ‘নেৎসডিজি’ নামে পরিচিত৷ অনলাইনে ঘৃণা ছড়ানো রোধে এই আইন তৈরি করা হয়৷ এছাড়া অশোভন, আপত্তিকর ও অবৈধ তথ্য ছড়িয়ে পড়া রোধও এই আইনের উদ্দেশ্য৷ ফলে এ ধরণের বিষয়াদি অনলাইনে প্রকাশিত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে ফেলতে বাধ্য সংশ্লিষ্ট সাইট কিংবা সামাজিক মাধ্যম৷ তা করতে ব্যর্থ হলে সর্বোচ্চ ৫০ মিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে৷
সামাজিক মাধ্যমে অপরাধ সম্প্রচারের ৮ ঘটনা
ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে আজকাল অনেক অপরাধী তাদের অপরাধের ভিডিও আপলোড করছে৷ এর মধ্যে কোনো কোনোটি আবার সরাসরিও সম্প্রচারিত হচ্ছে৷
ছবি: imago/Schöning
‘ফেসবুক লাইভ’- এ নির্যাতন
নতুন বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে এক শ্বেতাঙ্গ তরুণের উপর নির্যাতন চালায় চার কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ-তরুণী৷ পুরো ঘটনা ‘ফেসবুক লাইভ’-এর মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল৷ শ্বেতাঙ্গ ঐ তরুণ মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল৷ পেটানোর পাশাপাশি তার চুল কেটে দেয়া হয়৷ অপরাধ করার সময় নির্যাতনকারীরা ট্রাম্প ও শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছিল৷ পুলিশ ঐ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে৷ ফেসবুক ভিডিওটি মুছে ফেলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Chicago Police Department
টুইটারে ধর্ষণের ভিডিও
২০১৬ সালের মে মাসে ব্রাজিলের রিও ডি জানেরোতে এক তরুণীকে ৩০ জনের বেশি মানুষ ধর্ষণ করে৷ তরুণীটি তার ছেলেবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেখানে তাকে ওষুধ খাইয়ে অচেতন করা হয়৷ তারপর একে একে তার উপর হামলে পড়ে সবাই৷ অপরাধীদের কেউ কেউ টুইটারে ভিডিও আপলোড করেছিল৷ সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেলে পুলিশের টনক নড়ে৷
ছবি: DW/J. Weber
লাইভ-এ আত্মহত্যা!
ফ্রান্সের ১৯ বছর বয়সি এক তরুণী ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে৷ এই ঘটনা সে পেরিস্কোপ অ্যাপের সাহায্য সরাসরি প্রচার করেছিল৷ ঘটনাটি ২০১৬ সালের মে মাসের৷
ছবি: periscope.tv
নির্যাতিতার সঙ্গে সেলফি
২০১৪ সালে দুই ইংলিশ তরুণী ৩৯ বছরের অ্যাঞ্জেলা রাইটসনের উপর প্রায় ১৭ ঘণ্টা ধরে অত্যাচার চালায়৷ এই সময় আহতের সঙ্গে সেলফি তুলে ঐ দুই তরুণী সেই ছবি স্ন্যাপচ্যাটে শেয়ার করেছিল৷ নির্যাতনের এক পর্যায়ে মারা যান রাইটসন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
সেলফির কারণে ধরা পড়া
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় ম্যাক্সওয়েল ম্যারিয়ন মর্টন নামের এক টিনএজার আরেক টিনএজারকে হত্যা করে তার সঙ্গে সেলফি তুলে স্ন্যাপচ্যাটে আপলোড করেছিল৷ সেই ছবির সূত্র ধরে মর্টনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ৷ ঘটনাটি ২০১৫ সালের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বান্ধবীকে ধর্ষণ সরাসরি সম্প্রচার!
যুক্তরাষ্ট্রের ১৯ বছর বয়সি এক তরুণীকে সম্প্রতি এই অভিযোগে নয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ ২০১৬ সালে মারিনা লোনিনা (ছবি) নামের ঐ তরুণী তার বান্ধবীর সঙ্গে রেমন্ড গেটসের ফ্ল্যাটে গিয়েছিল৷ সেখানে পান করার পর এক পর্যায়ে গেটস লোরিনার বান্ধবীকে ধর্ষণ করতে শুরু করলে পেরিস্কোপ অ্যাপের মাধ্যমে ঐ ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করেন লোরিনা৷ গ্রেপ্তার হওয়ার পর লোরিনা বলেছিল, অপরাধের প্রমাণ রাখতে তিনি ভিডিও করেছিলেন!
ছবি: picture alliance/AP Photo/Franklin County Sheriff's Office
ধর্ষণ সম্প্রচারের আরেক ঘটনা
২০১৬ সালের ৩০ মার্চ পেরিস্কোপে ‘লাইভ সেক্স’ শিরোনাম দিয়ে একটি ভিডিও দেখানো হয়৷ ভিডিওটি যারা দেখেছে, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে ‘বাজফিড’ জানিয়েছে, ভিডিওতে লন্ডনের একটি ফ্ল্যাটে তিন তরুণকে এক তরুণীর সঙ্গে যৌনকর্মে লিপ্ত হতে দেখা গেছে৷ তবে এটি যে বাস্তবে ধর্ষণের ঘটনা ছিল, সেটি বুঝতে কিছুটা সময় লেগেছে বলে বাজফিডকে জানান তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/L. Bonaventure
সরাসরি ‘আত্মহত্যা’
যুক্তরাষ্ট্রের ১২ বছর বয়সি এক মেয়ে তার আত্মহত্যার ভিডিও ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচার করেছে৷ কেটলিন নিকোল ডেভিস নামের তরুণীটি গত ৩০ ডিসেম্বর গাছের ডালের সঙ্গে দড়ি বেঁধে আত্মহত্যা করে৷ আত্মহত্যার সময় সে বলে, এক আত্মীয়ের কাছ থেকে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ায় সে আত্মহত্যা করছে৷
ছবি: Fotolia/DW
8 ছবি1 | 8
কয়েকদিন আগে টুইটারও একটি স্যাটায়ারধর্মী টুইট মুছে দিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিল৷
এসব ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমের পাশাপাশি নতুন আইনের সমালোচনা হচ্ছে৷ বিরোধী রাজনীতিকরা বলছেন, আইনটি ঠিকভাবে লেখা না হওয়ায় সামাজিক মাধ্যমগুলো এমন ‘ওভারব্লকিং’ করছে৷ বাম দলের পেট্রা সিট্টে ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘যখন শক্ত ডেডলাইনের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমগুলোকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন এমন সমস্যার (যেমন স্যাটায়ার বিষয়টি কীভাবে দেখা হবে) উদ্ভব হয়৷’’
সবুজ দলের রাজনীতিক কন্সটান্টিন ফন নোৎস মনে করেন, নতুন আইন সামাজিক মাধ্যমগুলোকে ‘স্বেচ্ছাচারী’ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে৷ শিল্পকর্মের স্বাধীনতা বিষয়ে ফেসবুকের কোনো ধারণা নেই বলেও মনে করেন তিনি৷ ‘‘সব নগ্নবক্ষ সঙ্গে সঙ্গে মুছে ফেলা হয়, এমনকি সেটা ক্লাসিক্যাল ওয়েল পেইন্টিং হলেও,’’ ডিডাব্লিউকে বলেন তিনি৷
অবশ্য অনলাইনে প্রকাশ হওয়া অবৈধ বিষয়াদি সরিয়ে ফেলা ও তার লেখকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার বিষয়ে একমত রাজনীতিবিদরা৷
গণমাধ্যম আইন বিশেষজ্ঞ ইয়র্গ হাইডরিশও নতুন আইনে শব্দের ব্যবহারের সমালোচনা করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, নেৎসডিজি একটি বিভ্রান্তিকর আইন৷ এটি বাতিল করা উচিত৷’’ ভুল করে ছবি বা তথ্য মুছে ফেলার প্রতিবাদ জানানোর একটি ব্যবস্থা থাকা উচিত বলেও মনে করেন তিনি৷