সকালে বার্লিন ও জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যে সন্দেহভাজন উগ্র ইসলামপন্থি মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে তল্লাসি অভিযান চালানো হয়েছে৷ ‘প্রকৃত ধর্ম' নামের একটি সালাফি গোষ্ঠী ছিল এই অভিযানের লক্ষ্য৷
বিজ্ঞাপন
দশটি ফেডারাল রাজ্যে প্রায় ২০০টি বাসা ও কার্যালয়ে হানা দিয়েছে পুলিশ৷ সর্বত্র একই সময়ে হানা দেওয়া হয়, জার্মান সময় সকাল সাড়ে ছয়টায়৷ লক্ষণীয় যে, যে দশটি রাজ্যে অভিযান চালানো হয়েছে, এক বার্লিন ছাড়া সেগুলোর সব ক'টি সাবেক পশ্চিম জার্মানিতে – অর্থাৎ সাবেক পূর্ব জার্মানির রাজ্যগুলিতে নয়৷
‘দি ভারে রেলিগিওন' বা ‘প্রকৃত ধর্ম' সালাফি গোষ্ঠী ‘‘লিস!'' বা ‘পড়ো!' – এই নাম দিয়ে জার্মানিতে কোরানের একটি সনাতনপন্থি জার্মান অনুবাদের আড়াই কোটি কপি বিনামূল্যে বিতরণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে ও জার্মানির বিভিন্ন শহরে এভাবে কোরান বিতরণ করতে শুরু করেছে৷ শহরের গাড়ি-বর্জিত কেন্দ্রীয় বাজার এলাকায় কোরান বিতরণ নিষিদ্ধ করার সময় জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের জানান যে, ‘প্রকৃত ধর্ম' গোষ্ঠীর প্রায় ১৪০ জন সদস্য ইসলামিক স্টেটের সদস্য হবার জন্য জার্মানি থেকে সিরিয়া ও ইরাক যাত্রা করেছে৷
মঙ্গলবার সকালের তল্লাসি অভিযানে যে রাজ্যটিতে পুলিশ বিশেষভাবে হানা দেয়, সেটি রাজ্যটির নাম হেসে৷ সেখানে প্রায় ৬৫ বার হানা দেয় পুলিশ, তার মধ্যে শুধু ফ্রাংকফুর্ট শহরেই ১৫ বার৷
সালাফিরা শরিয়া আইন চালু করার পক্ষে৷ সপ্তাহ খানেক আগে জার্মান সরকার দেশে সালাফি মতাদর্শের সর্বোচ্চ প্রবক্তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন, যেমন ৩২ বছর বয়সি হেট প্রিচার আবু ওয়ালা৷ আবু ওয়ালা একজন ইরাকি৷ ২০০০ সাল থেকে তিনি জার্মানিতে আছেন৷ তিনি জার্মানিতে আইএস-এর হয়ে কাজ করে থাকেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷
এসি/এসিবি (ডিপিএ)
আইএস বিরোধী লড়াইয়ের আঁচ জার্মানিতে
গত জুন মাসে ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় ইসলামিক স্টেট (আইএস বা আইসিস)৷ চরমপন্থি ইসলামি সংগঠনটির লক্ষ্য, মধ্যপ্রাচ্যের একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা৷ এদিকে আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আঁচ লেগেছে জার্মানিতেও৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
জার্মানিতে সংঘর্ষ
সুদূর ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের তৎপরতার আঁচ জার্মানিতেও দেখা যাচ্ছে৷ উত্তরের হামবুর্গ ও সেলে শহরে মঙ্গলবার (০৭.১০.১৪) কুর্দি ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে উগ্রপন্থি মুসলমানদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Markus Scholz
গনসচেতনতার উদ্যোগে বাধা
জার্মানিতে বসবাসরত কুর্দি ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস জঙ্গিদের তৎপরতা সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে গত কয়েক মাস ধরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও সমাবেশের আয়োজন করেছে৷ কখন উগ্রপন্থিরা তাদের বাধা দিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/Alexander Koerner
কোবানিতে তীব্র লড়াই
এদিকে সিরিয়ার কোবানি বা আইন আল-আরব শহরে আইএস জঙ্গিদের ব্যাপক হামলা চলছে৷ প্রাণ বাঁচাতে এক লাখেরও বেশি সিরীয় কুর্দি এলাকা ছেড়েছে৷ অধিকাংশই আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ তুরস্কে৷ আইএস জঙ্গিদের প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কুর্দিদের আধা সামরিক বাহিনী ওয়াইপিজি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/SEDAT SUNA
আপাতত রক্ষা
কুর্দি এই নারী তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে আইন আল-আরব থেকে পালিয়ে এসেছেন৷ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহরটিতে আইএস-এর হামলা তীব্র হওয়ার পরপরই তাঁরা তুরস্কে আশ্রয় নেন৷
ছবি: DW/Alice Martins
আতঙ্ক
তখনও আইন আল আরব সীমান্তে চলছে তীব্র লড়াই৷ এই কুর্দি পরিবার আইন আল-আরব থেকে এসে তুরস্কের সীমান্তে অপেক্ষা করছে৷ ইরাকে কুর্দি নারীদের আইএস যেভাবে তুলে নিয়ে বিক্রি করেছে, তাড়াতাড়ি পালাতে না পারলে তাঁদেরও একই পরিণতি হতে পারে এই আতঙ্ক গ্রাস করেছে তাঁদের৷
ছবি: DW/Alice Martins
অসহায়ত্ব
তুরস্কেও ভালো নেই আইন আল-আরব ছেড়ে আসা কুর্দিরা৷ খাবারদাবার, এমনকি খাওয়ার পানিও ঠিকমতো জোটে না৷ একটি সংগঠন তাই চাঁদা তুলে পানির বোতল কিনে এনে বিতরণ করছে শরণার্থীদের মাঝে৷
ছবি: DW/Alice Martins
দীর্ঘ অপেক্ষা
প্লাস্টিকের ব্যাগে কিছু খাবার নিয়ে এসেছেন একজন৷ আইন আল-আরব ছেড়ে আসা সিরীয়দের সে খাবারগুলো দিতে চান৷ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে্ তুরস্কের সেনাবাহিনী৷ তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে৷ ওদিকে খাবারের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে শরণার্থীরা৷
ছবি: DW/Alice Martins
যাত্রী চাই
সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে তুর্কি সরকার৷ এক মিনিবাস চালক তাই যাত্রীর অপেক্ষায়৷ শরণার্থীদের কেউ যদি তাঁর মিনিবাসে ওঠেন, তাতে নিজের তো সামান্য কিছু আয় হবেই, শরণার্থীদেরও উপকার হবে৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ সিরীয় তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে৷
ছবি: DW/Alice Martins
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইএস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইএস বা আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইএস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইএস-এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ আর ইরাকে নুরি আল-মালিকির সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট বিদ্রোহীদেরই পাশে ছিল৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে৷ তবে ওবামা সরকার এখন আইএস-এর বিরুদ্ধে৷ জঙ্গি সংগঠনটিকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার নিয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় চলছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Matthew Bruch
এবার আইন আল-আরব?
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আইন আল-আরব সাধারণের কাছে ‘কোবানি’ নামেই পরিচিত৷ তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের এ শহরের একটা অংশ এখন আইএস-এর দখলে৷ এবার কি তবে আইন আল-আরবও দখল করে নেবে আইএস? তারপর?