জার্মানিতে সরকার গঠনে বিলম্ব সত্ত্বেও এতকাল বিদায়ী সরকারের মন্ত্রীরা নির্বিবাদে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন৷ কিন্তু এই ‘কার্যনির্বাহী' সরকারের আচরণ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিচ্ছে৷ মহাজোট সরকার গঠনের উপর এই বিতর্কের আঁচ পড়তে পারে৷
বিজ্ঞাপন
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের নেতৃত্বে বিদায়ী মহাজোট সরকারই আবার নতুন সংস্করণে ক্ষমতায় আসতে পারে – এমন সম্ভাবনার মাঝেই শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ ম্যার্কেলের ইউনিয়ন শিবিরের অন্যতম শরিক বাভেরিয়ার সিএসইউ দলের এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি ইউরোপীয় স্তরে এককভাবে জার্মানির হয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ গ্লাইফোসেট নামের আগাছানাশক সার নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে এতকাল প্রবল বিতর্ক চলে আসছে৷ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এই পদার্থ নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে৷ তারই মাঝে জার্মানির সমর্থনে আচমকা আরও পাঁচ বছরের জন্য গ্লাইফোসেট ইইউ-র ছাড়পত্র পেয়ে গেল৷ বিদায়ী সরকারের জোটসঙ্গী এসপিডি দল এই সিদ্ধান্তের ফলে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেল এই সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়েছেন কিনা, তাও স্পষ্ট নয়৷ ফলে আগামী সরকার গঠন করার ক্ষেত্রে নতুন করে আরও উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে৷
জার্মানিতে বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা সত্ত্বেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে আর বিলম্ব সম্ভব হচ্ছে না৷ যেমন জার্মানির বেশ কিছু শহরে বায়ু দূষণের অতিরিক্ত মাত্রার কারণে ডিজেল গাড়ি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আলোচনা চলছে৷ এ ক্ষেত্রেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্তরেও প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ জার্মানির মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশের সম্মতি ছাড়া সে সব কার্যকর করা সম্ভব নয়৷ মঙ্গলবারই আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে ইইউ শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন ম্যার্কেল৷ এক বছর পর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু হতে চলেছে৷
বৃহস্পতিবার জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার সিডিইউ দলের ম্যার্কেল, সিএসইউ দলের প্রধান হর্স্ট সেহোফার ও এসপিডি দলের প্রধান মার্টিন শুলৎসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ আশা করা হচ্ছে, এই বৈঠকের পর মহাজোট সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে৷
এমনকি ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগেও তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো রাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয় বা পাশে সরিয়ে দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নিজের দল বা বিরোধী দলের অনেক নেতাকেই নানাভাবে ঠেকিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
‘কোল গার্ল’ যখন গুরুকে ছাড়লেন
দীর্ঘদিন চ্যান্সেলর পদে থাকে হেলমুট কোল ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় প্রথম সুযোগ দিয়েছেন এবং তাঁর উত্থানে সহায়তা করেছিলেন৷ কিন্তু ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর ম্যার্কেল এবং সিডিইউ তাঁর বিপক্ষে চলে যায়৷ কোল কিছু সূত্র থেকে নগদ অর্থ সাহায্য নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে সব সূত্রের বিস্তারিত তিনি জানাননি যা দলের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন সেসময় সিডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার – রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি
২০০৫ সালের নির্বাচনে এসপিডি’র চ্যান্সেলর শ্র্যোডারকে পরাস্ত করেন ম্যার্কেল৷ তবে এই পরাজয়ে শ্র্যোডারের নিজের দাম্ভিকতাও কিছুটা ভূমিকা রেখেছিল৷ সেই নির্বাচনে খুব অল্প ব্যবধানে সিডিইউ’র কাছে হেরে যায় এসপিডি৷ যদিও নির্বাচনের আগে টিভি বিতর্কে তিনি দাবি করেছিলেন, যে জার্মানরা চায় তিনি ক্ষমতায় থাকুন৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি এবং তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার - দীর্ঘদিনের সঙ্গী
শুরুতে ম্যার্কেলের অধীনে চারবছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ এরপর ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেন সামাজিক গণতন্ত্রীদের এই রাজনীতিবিদ৷ কিন্তু সেই নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি স্টাইনমায়ারের দল৷ পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আবারো ম্যার্কেলের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন স্টাইনমায়ার৷ আর চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে তিনি জার্মানির প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kembowski
গ্যুন্টার ও্যটিঙার - পথের কাঁটা দূর হলো
ম্যার্কেল যে শুধু তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেন এমন নয়৷ বরং নিজের দলে থাকা সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের লোভনীয় অন্য কোন পদেও পাঠিয়ে দেন৷ তাঁর সহকর্মী বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্যুন্টার ও্যটিঙারকে ২০১০ সালে তিনি ইউরোপীয় কমিশনে বড় পদে পাঠিয়ে দেন৷ অথচ ও্যটিঙারের সেই পদ পাওয়ার মতো কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
রোনাল্ড কখ - বাতিলের তালিকায় ফেলে দেয়া
দুই কারণে রোনাল্ড কখ পরিচিত৷ প্রথমত, তিনি দলাই লামার বন্ধু৷ দ্বিতীয়ত, সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্ব চালুর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য৷ হেসে রাজ্যের এই রাজ্য প্রধান কখনো ম্যার্কেলের উত্থানে বাধা না হলেও হঠাৎ করেই মনে করেছিলেন তাঁকে বার্লিনে বড় পদের জন্য ডাকা হবে৷ কিন্তু ম্যার্কেলকে তাঁকে সেরকম কোন সুযোগ দেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ - একজন দুর্ভাগা রাষ্ট্রপতি
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ কিন্তু ২০১০ সালে হর্স্ট ক্যোলার পদত্যাগ করার পর সিডিইউ বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ভুল্ফ সুযোগ পেয়ে যান৷ ভুল্ফ তখন লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের রাজ্যপ্রধান৷ পরবর্তীতে অবশ্য দুর্নীতির দায়ে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেয়ার স্টাইনব্রুক – সঠিক মানুষ, ভুল সময়
২০১৩ সালে ম্যার্কেল যখন তাঁর ক্যারিয়ারের তুঙ্গে, তখন এসপিডি থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেছে নেয়া হয় পেয়ার স্টাইনব্রুক’কে৷ ম্যার্কেলের অধীনে একসময় অর্থমন্ত্রী থাকা এই রাজনীতিবিদের চ্যান্সেলর পদ পাওয়ার সব যোগ্যতাই ছিল৷ কিন্তু সময়টা ঠিক ছিল না৷ ম্যার্কেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুবিধা করতে পারেননি তিনি৷