ড্রেসডেন শহরে ডানপন্থি দল পেগিডার সমাবেশে সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় শহরের একজন পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত বলে স্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ৷ এ ঘটনাকে মুক্ত গণমাধ্যমের উপর হামলা বলে মনে করছে জার্মানির সংবাদমাধ্যম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Seidel
বিজ্ঞাপন
গত সপ্তাহে জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যের ড্রেসডেন শহরে ডানপন্থি দল পেগিডা সরকারবিরোধী একটি সমাবেশ করছিল৷ পেগিডা জার্মানির একটি কট্টর ডানপন্থি রাজনৈতিক সংগঠন৷ জার্মানিতে ‘ইসলামিকরন' হচ্ছে বলে মনে করে তারা৷ গত কয়েক বছর ধরে এ বিষয়ে তারা রাজনৈতিক সভা সমাবেশ করে আসছে৷ গত সপ্তাহে তাদের এক সমাবেশে জার্মান রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম জেডডিএফ-এর সংবাদকর্মীদের একটি দল ভিডিও চিত্র ধারণ করতে গেলে সমাবেশে অংশগ্রহনকারীদের কয়েকজন এক সংবাদকর্মীকে লাঞ্ছিত করে৷ সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের একজন এ সময় পুলিশের কাছে এ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে তাঁর ভিডিও চিত্র ধারণের অভিযোগ করেন৷ এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা ওই সাংবাদিককে প্রায় ৪৫ মিনিট আটকে রাখে৷ তদন্তে জানা যায়, অভিযোগকারী মূলত ড্রেসড্রেন শহরের একজন পুলিশ সদস্য৷
স্যাক্সনি রাজ্যের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অভিযুক্ত সেই পুলিশ কর্মকর্তা ছুটিতে রয়েছেন৷ রাজ্যটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোলান্ড ভ্যোলারকে উদ্ধৃত করে জেডডিএফ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে ব্যাক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি পুলিশ সদস্য হলেও বর্তমানে তিনি ছুটিতে রয়েছেন৷ সমাবেশে তিনি পুলিশ সদস্য নয়, বরং একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে অংশ নিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন ভ্যোলার৷
তিনি আরো জানান, রাজ্যের ক্রিমিনাল পুলিশ বিভাগ এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত নেবে৷ প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করে তিনি তাঁর বিভাগে কর্মরত সকলকে যে-কোনো পরিস্থিতিতে যথাযথ নীতিমালা মেনে চলার আহ্বান জানান৷
পুলিশই পেগিডা সমর্থক!
সাংবাদিককে লাঞ্ছিতত করা ও আটকে রাখার বিষয়টিকে স্বাধীন সাংবাদিকতার উপর আঘাত বলে মন্তব্য করেন জেডডিএফ-এর এডিটর-ইন-চিফ পেটার ফ্রে৷ এদিকে জেডডিএফ এর সাংবাদিক আর্ন্ড্ট গিনসেল স্যাক্সনি পুলিশের বিরুদ্ধে ডানপস্থি সংগঠন পেগিডা ও এএফডি-কে সহযোগিতার অভিযোগ করেন৷ এ অভিযোগ আস্বীকার করে অবশ্য স্যাক্সনি পুলিশ প্রধান দাবি করেন, পুলিশ সদস্যরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে৷
জার্মানিতে এত শরণার্থী চায় না তারা
শরণার্থীরা তাদের গন্তব্য হিসেবে জার্মানিকে বেছে নিচ্ছে৷ জার্মানিও তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে৷ কিন্তু জার্মানিতে এত শরণার্থী চান না অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিশ্বাসঘাতক’ ম্যার্কেল
জার্মানির ইসলাম ও অভিবাসী বিরোধী গোষ্ঠী পেগিডার হাজার হাজার সমর্থক সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে৷ শরণার্থীদের প্রতি নরম মনোভাবের কারণ তারা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ‘উচ্চ পর্যায়ের বিশ্বাসঘাতকতা’ ও ‘জার্মানির মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর অভিযোগ আনেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
শরণার্থীদের নিয়ে কটূক্তি
পেগিডার (প্যাট্রিয়টিক ইউরোপিয়ান অ্যাগেনস্ট দ্য ইসলামাইজেশন অফ দ্য অক্সিডেন্ট) প্রতিষ্ঠাতা লুটৎস বাখমান সম্প্রতি শরণার্থীদের ‘পশু’, ‘আবর্জনা’ ও ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা’ বলে আখ্যায়িত করেন৷ এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Berg
সমাজে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়
সোমবার বিক্ষোভের সময় বাখমান বলেন, শরণার্থীর সংখ্যা দেড় কিংবা দুই মিলিয়নেই থেমে থাকবে না৷ এরপর আসবে তাদের স্ত্রী; আসবে এক, দুই কিংবা তিন সন্তান৷ ফলে এতগুলো লোকের জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্তির কাজ অসম্ভব হয়ে পড়বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
জার্মান সরকারের অস্বীকার
জার্মানির জনপ্রিয় পত্রিকা ‘বিল্ড’ সরকারের গোপন ডকুমেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চলতি বছর জার্মানিতে প্রায় দেড় মিলিয়ন শরণার্থী আসবে বলে মনে করছে সরকার৷ যদিও প্রকাশ্যে সরকার বলছে সংখ্যাটা এক মিলিয়ন হতে পারে৷ তবে জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র এ ধরনের কোনো গোপন ডকুমেন্টের কথা তিনি জানেন না বলে সাংবাদিকদের বলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Thalia Engel
শরণার্থীর মৃত্যু
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের এক শরণার্থীদের বাসস্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইরিত্রিয়া থেকে আসা ২৯ বছরের এক শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে৷ অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি৷ এদিকে, জার্মান সরকারের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর শরণার্থী ও তাদের বাসস্থানের উপর হামলার সংখ্যা বেড়েছে৷ এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই এরকম ২০২টি ঘটনা ঘটেছে বলে সরকার জানিয়েছে, যেখানে গত বছর সংখ্যাটি ছিল ১৯৮৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিপদে ম্যার্কেল
শরণার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণের কারণে নিজ দল সহ অন্যান্য দলের রাজনীতিবিদদের তোপের মুখে পড়েছেন ম্যার্কেল৷ তাঁরা জার্মানির শরণার্থী নীতি ও শরণার্থীদের আগমনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চ্যান্সেলরকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷