1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উগ্র সালাফি

১৩ মে ২০১২

সম্প্রতি জার্মানির বন শহরে ইসলামি উগ্রপন্থীরা প্রায় ৩০ জন পুলিশ কর্মীকে আহত করেছে৷ তারা সালাফি গোষ্ঠীর সদস্য বলেই সন্দেহ করা হচ্ছে৷ এরা কারা? কী বা তাদের উদ্দেশ্য? সেই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন ক্লাউস ডামান৷

ছবি: Schängel/Creative Commons

জার্মান বংশোদ্ভূত উগ্র ইসলামপন্থীদের আচরণ

‘‘মা, তুমি শক্ত থেকো, আমি জেহাদ করছি৷'' জার্মান ভাষায় লেখা তরুণ পুরুষ কণ্ঠে গাওয়া গানের কথা এটা৷ সঙ্গে ভিডিও চিত্র৷ তাতে খুব কাছ থেকে দেখা যাচ্ছে নিহত শিশুদের মরদেহ, তাদের শরীরে গুলির চিহ্ন৷ আফগানিস্তান-ফেরত বন শহরের এক সালাফি সদস্য ইন্টারনেটে ভিডিওটি প্রকাশ করেছে৷ এই প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে জেহাদের মন্ত্রে উদ্ভূত করতে চেয়েছে সে৷

জার্মান অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী গত প্রায় দুই বছর ধরে সালাফি মতাদর্শে দীক্ষিত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷ তারা প্রায়ই আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে যাচ্ছে৷ আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করছেন গোয়েন্দারা৷ জার্মান বংশোদ্ভূত যেসব মানুষ সশস্ত্র জেহাদের ধারণাকে সমর্থন করে বা নিজেরাই সেই ধর্মযুদ্ধে অংশ নেয়, তাদের প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে সালাফি মতাদর্শের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল বা আছে৷

সোলিংগেনে সক্রিয় সালাফি আন্দোলনছবি: picture-alliance/dpa

জার্মানিতে সালাফি মতদের চরিত্র

অসনাব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্মের অধ্যাপক রাউফ জেইলান মনে করেন, সালাফিবাদ আসলে নির্দিষ্ট কোনো আদর্শ নয়, সুন্নি সম্প্রদায়ের একাধিক ধারা মিলে এই কাঠামোর সৃষ্টি করেছে৷ তিনি বিষয়টা আরও খোলসা করে বুঝিয়ে বললেন, ‘‘এরা আসলে এক ধরণের সনাতন ইসলাম ধর্মের প্রচার করে৷ প্রায় ১,৪০০ বছর আগে সেই সময়কে স্বর্ণযুগ বলে বর্ণনা করে সালাফিরা৷ তাদের মতে, মুসলিমরা ক্রমশ আদিযুগের সেই মূল আদর্শ থেকে সরে গেছে৷ এবার সেই মৌলিক আদর্শের পথে ফিরে যাবার সময় এসে গেছে৷'

যুগে যুগে ইসলাম ধর্ম বা মানবজাতির ইতিহাসে যেসব সংস্কার বা পরিবর্তন হয়েছে, সালাফিরা সেগুলি কোনোমতেই মানতে প্রস্তুত নয়৷ তবে তাদের সবাই যে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ নিতে চায়, তা নয়৷ কিন্তু এই আদর্শ কেন এত আকর্ষণীয়? রাউফ জেইলান এপ্রসঙ্গে বললেন, ‘‘এরা অত্যন্ত নিবিড়ভাবে পরস্পরের সঙ্গে বসবাস করে৷ অনেকটা ‘সেক্ট'এর মতো৷ মানুষ এদের সঙ্গে যত বেশি মেশে, যত ভিতরে প্রবেশ করে, বহির্জগতের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ততই কমে যায়৷ দ্বিতীয়ত, এরা এত সহজ ভাষায় সহজ লক্ষ্যের কথা বলে, সেটাও একটা আকর্ষণ বটে৷ তৃতীয়ত, এই যে একটা বোধ কাজ করে, যে আমাকেই শুভ কাজের জন্য বাছাই করা হয়েছে, তাতেও অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়৷''

ঘৃণার বাণী

সালাফিদের আদর্শ কতটা সহজ ভাষায় বর্ণনা করা হয়, তার একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক৷ বলা হয়, বিধর্মী বা কাফেররা সব দোজকে যাবে, ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় পাবে৷ গত কয়েক মাস ধরে নীরবে শুধু এই প্রচারণা চালিয়েই সন্তুষ্ট হচ্ছে না সালাফিরা৷ গত বছর ‘বেহেশতে আমন্ত্রণ' নামে এক সংগঠন গড়ে ম্যোনশেনগ্লাডবাখ শহরে নিজস্ব কেন্দ্র খোলার চেষ্টা করেছিল তারা৷ মাসের পর মাস ধরে নাগরিকদের প্রতিবাদ বিক্ষোভের ফলে সেটা আর সম্ভব হয় নি৷ তারপর তারা নিজেরাই সংগঠন ভেঙে দেয়৷'

বন শহরে সালাফিদের মিছিলছবি: picture-alliance/dpa

তবে ২০০৫ সালে গঠিত ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম ‘মৌলিক ধর্ম' তাদের কাজের প্রসার বাড়িয়ে চলেছে৷ শুধু অনলাইন পদ্ধতিতে অনুগামী খুঁজেই সন্তুষ্ট নয় তারা, পথেঘাটে মানুষের সঙ্গে কথা বলে দল বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সালাফিরা৷ গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন শহরের কেন্দ্রস্থলে বিনামূল্যে পবিত্র কোরানের জার্মান সংস্করণ বিতরণ করে দেশজুড়ে চরম বিতর্কের সৃষ্টি করেছে তারা৷ মানুষের মন জয় করতে এমন সব সদস্যদের এই দায়িত্ব দেওয়া হয়, যাদের মধুর ব্যবহারে পথচারীরা মুগ্ধ হয়ে যেতে পারে৷ তাদের আশেপাশে থাকে অনুগামীদের দল৷ রাউফ জেইলান এপ্রসঙ্গে বললেন, ‘‘সালাফিদের কোনো কেন্দ্রীয় সংগঠন নেই, স্থানীয় পর্যায়ে কোনো সংগঠন নেই, যেগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত৷ তবে যোগাযোগ অবশ্যই রয়েছে৷ ধর্মপ্রচারকরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখে, অনুগামীরাও পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত৷''

হিংসার পথ

সম্প্রতি সালাফিদের মধ্য থেকে এমন লোকজন ইন্টারনেটে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, হিংসার পথে চলতে যারা প্রস্তুত৷ যেমন উগ্র দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দল ‘প্রো এনআরভে'র নির্বাচনী সমাবেশের উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করছে তারা৷ গত ১লা মে সোলিঙেন শহরে মারাত্মক উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল, যখন উগ্র দক্ষিণপন্থীরা সালাফিদের প্ররোচনা দিতে ইসলাম ধর্মের মহানবী হজরত মহম্মদের ব্যাঙ্গচিত্র তুলে ধরছিল৷ সেসময়ে সালাফিদের হামলায় ৩ পুলিশ কর্মী আহত হয়৷ তারপর ৫ই মে বন শহরে রীতিমত তাণ্ডব চালায় সালাফিরা৷ নরমপন্থী মুসলিমরা হিংসার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সত্ত্বেও ব্যাঙ্গচিত্রের কারণে সালাফিরা পরিস্থিতি নিজেদের হাতে তুলে নেয়৷ পুলিশ দুই পক্ষকে আলাদা রাখতে গিয়ে হামলার শিকার হয়৷

বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন ও সমাজের একটা বড় অংশ এই হিংসাত্মক সালাফিদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে চাইলেও এর সঠিক পথ নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ তাদের নির্দিষ্ট সাংগঠনিক কাঠামো না থাকায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করা কঠিন৷ এই অবস্থায় জার্মান সমাজে মুসলিমদের সম্পর্কে যেসব নেতিবাচক ধারণা চালু আছে, সেগুলির পুরোপুরি ফায়দা তুলে অনুগামীদের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সালাফিরা৷

প্রতিবেদন: ক্লাউস ডামান সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ