জার্মানিতে মৌলবাদী সালাফিস্ট মতাদর্শের অনুগামীদের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে, বলে জানিয়েছেন দেশের গুপ্তচর বিভাগের প্রধান৷ সালাফিস্ট মতাদর্শ থেকে ইসলামপন্থি সন্ত্রাস জন্ম নেয়, বলে কর্তৃপক্ষের ধারণা৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে সালাফিস্টদের সংখ্যা আগে কখনো এত বেশি ছিল না, বলে জানিয়েছেন অভ্যন্তরীণ গুপ্তচর বিভাগের প্রধান হান্স-গেয়র্গ মাসেন৷
মৌলবাদী ইসলামপন্থি মতাদর্শের অনুগামীদের সংখ্যা ‘‘চিরকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে,’’ বলে মাসেন গত রবিবার মন্তব্য করেন৷ জার্মান গুপ্তচর বিভাগ বিএফভি-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে জার্মানিতে সালাফিস্টদের সংখ্যা ছিল ৯,৭০০, যা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বেড়ে ১০,৮০০-য় দাঁড়ায়৷
মাসেন আরো জানান যে, সালাফিস্টরা ছোট ছোট গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে ব্যক্তিগত ও গোপনীয় পর্যায়ে পশ্চাদপসারণ করার ফলে কর্তৃপক্ষের পক্ষে তাদের গতিবিধির উপর নজর রাখা আরো কঠিন হয়ে উঠেছে৷
বিএফভি জানিয়েছে যে, সালাফিস্ট আন্দোলনের সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা এখন জনপথ ও মসজিদ ছেড়ে ইন্টারনেটের দিকে ঝুঁকেছে৷ ইন্টারনেটে ছোট ছোট গোপনীয় গোষ্ঠীর মাধ্যমে নবাগতদের মৌলবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চলেছে৷ এক্ষেত্রে বিশেষ করে মহিলাদের নেটওয়ার্ক ক্রমাগত বেড়ে চলায় কর্তৃপক্ষ আরেকটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন, কেননা ইন্টারনেটে মহিলাচক্রগুলির মূল্যায়ন করা খুবই সমস্যাকর৷
নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে সালাফিস্ট আন্দোলন তরুণ মুসলিমদের জন্য ইসলামপন্থি সন্ত্রাসবাদে উত্তরণের পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করে৷
জার্মান সালাফিস্টরা অতীতে একটি চোখে পড়ার মতো পথ-প্রচারণার আয়োজন করেছিল: বাজারে ও চত্বরে স্ট্যান্ড খুলে সেখানে পবিত্র কোরানের জার্মান অনুবাদ বিলি করা হচ্ছিল৷ কর্মসূচিটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘‘লিস!’’ বা ‘‘পড়ো!’’ – লালশালুতে যা লেখা থাকত৷ গতবছর জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের সালাফিস্টদের সদস্য সংগ্রহের এই অভিযানকে সংবিধান বিরোধী হিসেবে নিষিদ্ধ করেন৷
‘অভিজ্ঞ যোদ্ধা’
মাসেন আরো বলেন যে, উত্তর ককেশাস অঞ্চল থেকে আগত ইসলামপন্থিরা জার্মানিতে নিরাপত্তার পক্ষে একটি বিশেষ ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ চেচনিয়া, দাগেস্তান বা ইঙ্গুশেসিয়ার মতো গণরাজ্য থেকে আগত প্রায় ৫০০ চরমপন্থি জার্মানিতে অবস্থান করছে, বলে অনুমান করা হয়ে থাকে৷
‘‘সহিংসতা, মার্শিয়াল আর্টস ও আগ্নেয়াস্ত্রের প্রতি উত্তর ককেশাসের বহু ইসলামপন্থির বিশেষ প্রীতির কারণে বিষয়টির প্রতি জার্মান নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত,’’ বলে মাসেন মন্তব্য করেন৷
মাসেন বলেন যে, উত্তর ককেশাস থেকে আগত ইসলামপন্থিদের অনেকের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আছে, কেননা তারা শুধু চেচনিয়া সংঘাতেই নয়, সিরিয়া ও ইরাকের বর্তমান সংঘাতগুলিতেও অংশগ্রহণ করেছে৷
উত্তর ককেশাস থেকে আগত ইসলামপন্থিরা প্রধানত ব্রান্ডেনবুর্গ ও বার্লিনের মতো পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতেই আস্তানা গেড়েছে, বলে বিএফভি জানিয়েছে; তবে নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া, হামবুর্গ বা ব্রেমেনের মতো পশ্চিমের রাজ্যগুলিতেও তাদের ‘হট স্পট’ রয়েছে৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ, এএফপি, রয়টার্স)
এপ্রিলের এই ছবিঘরটি দেখুন...
জার্মানিতে আলোচিত যত ‘জঙ্গিবিরোধী’ মামলা
এ পর্যন্ত বেশ কিছু উগ্র ইসলামপন্থি বা জঙ্গিদের হামলা এবং হামলার চেষ্টা হয়েছে জার্মানিতে৷ কয়েকদিন আগে সর্বোচ্চ শাস্তিও হয়েছে এক ব্যক্তির৷ ছবিঘরে থাকছে জার্মানিতে আলোচিত কিছু ‘জঙ্গিবিরোধী’ মামলার কথা৷
ছবি: AP
বন শহরে বোমা বিস্ফোরণের ব্যর্থ চেষ্টা
২০১২ সালে বন শহরের কেন্দ্রীয় রেল স্টেশনে তোলা ছবি এটি৷ ছবির ওই নীল ব্যাগে বোমা ছিল৷ এক ডানপন্থি রাজনীতিবিদকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ বোমা রাখা হয়েছিল বলে পুলিশের সন্দেহ৷ হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সম্প্রতি এক ব্যাক্তির আজীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছে ড্যুসেলডর্ফের আদালত৷ বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়েছে আরো তিনজনের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরের বাস স্টপে হামলা
জার্মানিতে প্রথম ‘উগ্র ইসলামপন্থির’ হামলাটি হয়েছিল ২০১১ সালের মার্চে৷ সেবার ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরের বাস স্টপে দুই মার্কিনিকে গুলি করে হত্যা করেছিল আরিদ উকা নামের এক ব্যক্তি৷ নিহত দুই মার্কিন নাগরিকের কয়েক দিনের মধ্যেই আফগানিস্তানে যাওয়ার কথা৷ জানা যায়, আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে গুলি করে দু’জন নিরপরাধ মার্কিনিকে হত্যা করে আরিদ৷ কসভোতে জন্ম নেওয়া আরিদেরও আজীবন কারাদণ্ড হয়েছে৷
ছবি: AP
সাওয়ারল্যান্ড সেল
‘সাওয়ারল্যান্ড সেল’ হচ্ছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে গড়ে ওঠা ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক জিহাদ ইউনিয়ন বা আইপিইউ-এর জার্মান শাখা৷ ১০ বছর আগে এই সংগঠনের হয়েই যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক স্থাপনাগুলোতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল চার জার্মান এবং এক তুর্কি বংশোদ্ভূত তরুণ৷ ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে পাঁচজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়৷ ২০১০ সালে প্রত্যেকের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়েছে৷
ছবি: AP
নকল পুলিশ
২০১৪ সালে ভুপার্টাল শহরে কমলা রঙের সিকিউরিটি ভেস্ট পরা একদল লোক রাস্তায় নেমে আসে৷ তাদের পোশাকে লেখা ছিল ‘শরিয়া পুলিশ’৷ লোকগুলো বিভিন্ন মানুষকে বার এবং ক্লাব বর্জন করে ইসলামি আইন মেনে চলার পরামর্শ দিতে থাকে৷ ওই লোকগুলোর নেতা হিসেবে কাজ করেছিলেন স্ভেন লাউ নামের এক সালাফিস্ট মুসলমান৷ পরে আইএস-এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ তার বিরুদ্ধে মামলা এখন বিচারাধীন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bildfunk/M. Becker
বড় বড় কথা বলা সেই আইএস জঙ্গি
২০১৩ সালের অক্টোবরে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস-এ যোগ দিতে ডিন্সলাকেনের সালাফিস্ট মুসলমান নিলস ডি. সিরিয়ায় যায়৷ এক বছর পর আবার ফিরে আসে জার্মানিতে৷ ফিরে এসে সিরিয়ায় সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা প্রকাশ্যে জানায় সগর্বে৷ তারপর গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ চার বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তার৷
ছবি: DW/M. Gopalakrishnan
তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল
২০১৬ সালের জুলাই মাসে মামলার চূড়ান্ত শুনানির দিন হ্যারি এস. আদালতে বলে ‘‘সিরিয়ায় যাওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল৷’’ ব্রেমেনে খ্রিষ্টান থেকে মুসলমান হওয়া তরুণটি তার এক বছর আগেই সিরিয়ায় গিয়ে তথাকথিত জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর সঙ্গে তিন মাস কাটিয়ে এসেছে৷ সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দেয়ার অপরাধে তিন বছরের জেল হয়েছে তার৷