আন্তর্জাতিক আঙিনায় বেড়ে চলা সক্রিয় ভূমিকা সত্ত্বেও জার্মান সেনাবাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ও সাজসরঞ্জাম নিয়ে সমস্যার অন্ত নেই৷ দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবার একাধিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতির উদ্যোগ নিচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিভক্ত জার্মানির দুই অংশের সেনাবাহিনী মিত্রশক্তির কড়া নজরদারির মধ্যে সক্রিয় ছিল৷ নাৎসি বাহিনীর উত্তরসূরী হিসেবে তাদের ভূমিকাও ছিল অত্যন্ত সীমাবদ্ধ৷ ১৯৮৯ সালে দুই জার্মানির পুনরেকত্রিকরণের পর ধীরে ধীরে জার্মান সেনাবাহিনী ‘স্বাভাবিক' চরিত্র ফিরে পেতে থাকে৷ সংসদের অনুমোদন নিয়ে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশনে বিদেশের মাটিতেও তাদের দেখা যায়, যা তার কয়েক বছর আগেও অকল্পনীয় ছিল৷ আজ বিশ্বের অনেক প্রান্তে ন্যাটো ও জাতিসংঘের একাধিক অভিযানে জার্মান সেনাবাহিনী সক্রিয় রয়েছে৷ সেখানে তাদের গঠনমূলক কাজ প্রশংসাও কুড়িয়ে থাকে৷ কিন্তু অন্যদিকে দায়িত্ব বেড়ে চলা সত্ত্বেও সেনাবাহিনীর বাজেট ও সাজ-সরঞ্জামের চাহিদা নিয়ে সমস্যা বহুচর্চিত বিষয় থেকে গেছে৷
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন এবার এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চান৷ বর্তমান চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি৷ এর আওতায় সৈন্যসংখ্যার ক্ষেত্রে ঊর্দ্ধসীমা তুলে দেবার পক্ষপাতী প্রতিরক্ষামন্ত্রী৷
প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের বিষয়ে জার্মানির জনগণ অত্যন্ত সন্দিহান৷ কিন্তু ইউক্রেন সংকট, আইএস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে৷ ফলে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে সেনাবাহিনীর ক্ষমতায় কাটছাঁটের পর আবার প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়তে চলেছে৷ ন্যাটো-র জোটসঙ্গীরাও বহুকাল ধরে এই দাবি জানিয়ে আসছে৷ এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে জার্মান সৈন্যদের উপরও চাপ কিছুটা কমবে৷
একবিংশ শতাব্দীতে জার্মানির শান্তিপূর্ণ ভূমিকা বাকি বিশ্বের কাছে স্বাভাবিক হয়ে উঠলেও ‘নাৎসি জার্মানি'র সর্বগ্রাসী নীতির ইতিহাস অনেকে আজও ভুলতে পারে না৷
জার্মান সেনাবাহিনীতে যত ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি
জার্মান সেনাবাহিনীতে প্রায় প্রতিদিনই হয় যুদ্ধবিমান, না হয় হেলিকপ্টার বা অন্য কিছুর সমস্যা দেখা দেয়৷ সেসব কথাই জানা যাবে ছবিঘরে৷
ছবি: AFP/Getty Images
ইউরোফাইটার
জার্মানি সবচেয়ে আধুনিক ফাইটার জেট এটি৷ নাম ইউরোফাইটার৷ তবে নির্মাণকালীন সময়ে ত্রুটির কারণে এই জেটের উড্ডয়ন-ঘণ্টা তিন হাজার থেকে কমে অর্ধেক, অর্থাৎ দেড় হাজার হয়ে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
টর্নেডো ফাইটার ও পরিবহণ বিমান
জার্মান সেনাবাহিনী প্রায় ৪০ বছর ধরে টর্নেডো ফাইটার ব্যবহার করে আসছে৷ বর্তমানে এরকম ৮৯টি ফাইটারের মধ্যে মাত্র ৩৮টি চালু আছে৷ ট্রানজাল সি-১৬০ পরিবহণ বিমানের একই পরিণতি হয়েছে৷ ৫৭টি বিমানের মধ্যে এখন মাত্র ২৫টি ব্যবহারের যোগ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Udo Zander
ত্রুটিপূর্ণ হেলিকপ্টার
৩১টি আধুনিক টাইগার হেলিকপ্টারের মধ্যে মাত্র ১০টি এখন আকাশে উড়তে পারে৷ আর ২২টি ‘সি লিংক্স অ্যান্টি-সাবমেরিন হেলিকপ্টার’ এর মধ্যে এখন মাত্র চারটি ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় আছে৷ এনএইচ৩০ এবং সিএইচ৫৩ পরিবহণ কপ্টারেরও একই অবস্থা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Carsten Rehder
ট্যাংক
জার্মান সেনাবাহিনীতে একসময় ১৮৯টি ‘বক্সার’ ট্যাংক ছিল৷ এখন সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০-এ৷ আর ১৯৭১ সাল থেকে ব্যবহৃত হওয়া ‘মার্ডার’ এপিসি-র (আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার) সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷
ছবি: Johannes Eisele/AFP/Getty Images
সাগরে সমস্যা
২০০১ সালের ডিসেম্বরে পাঁচটি ‘কে১৩০’ করভেটে কেনার সিদ্ধান্ত নেয় জার্মান সেনাবাহিনী৷ ২০০৭ সাল থেকে সেগুলো ব্যবহারের কথা ছিল৷ কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ গিয়ার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও সফটওয়্যারের কারণে নির্ধারিত সময়ে সেগুলোর ব্যবহার শুরু করা যায়নি৷ তারপর যখন শুরু হলো, তখন পাঁচটির মধ্যে মাত্র দুটি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারযোগ্য ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর জন্য চ্যালেঞ্জ
২০১৩ সালের শেষের দিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন উর্সুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ দায়িত্ব নেয়ার পর তাঁর জন্য প্রথন চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয় এসব ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি৷ এজন্য অবশ্য সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা দায়ী৷ কারণ তাঁরাই খুচরা যন্ত্রাংশের জন্য অর্থ বরাদ্দ কমিয়েছিলেন৷