বার্লিনে স্টার্ট আপ তৈরি করার অভিজ্ঞতাই অন্যরকম৷ কারণ, স্টার্ট আপের সমস্ত সুযোগ এখানে পাওয়া যায়৷ তবে ভবিষ্যতে এশিয়ার মার্কেটে কাজ করার ইচ্ছে আছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে স্টার্ট আপের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া খুব পরিকল্পনামাফিক ছিল না৷ কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা শেষ করে জার্মানিতে এসেছিলাম উচ্চ শিক্ষার জন্য৷ ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়ার পর একটি নামকরা কর্পোরেট হাউসে চাকরি করতে শুরু করেছিলাম৷
কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারি যে, এতবড় সংস্থায় নিজেকে প্রমাণ করা সহজ নয়৷ নিজের ভাবনার জায়গাগুলো প্রতিষ্ঠা করাও বেশ কঠিন৷ কারণ, কর্পোরেট তার নিজস্ব নিয়মে চলে৷ কিন্তু আমি খুঁজছিলাম আমার নিজস্ব জগৎ৷ ক্রিয়েটিভ ভাবনার জায়গা৷ যার জন্য একটি ডায়নামিক, কিন্তু ছোট পরিসরের প্রয়োজন ছিল৷ স্টার্ট আপেই যা সম্ভব৷
গত একদশকে বার্লিন নিজেকে স্টার্ট আপের হাব হিসেবে প্রমাণ করেছে৷ বলা যায়, স্টার্ট আপ-বিপ্লব ঘটে গিয়েছে এখানে৷
এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে একটি কথা বলা জরুরি, বার্লিন সমস্ত দিক থেকেই অত্যন্ত লিবারাল একটি শহর৷ নতুন চিন্তা নিয়ে কাজ করার সুযোগ বার্লিন দেয়৷ তবে শুধু বার্লিন নয়, একই পথ অনুসরণ করছে জার্মানির অন্যান্য শহরও৷ মিউনিখ, হামবুর্গ, লাইপজিগ ইত্যাদি শহরের নাম এক্ষেত্রে উল্লেখ করতেই হয়৷
ডিজিটাল মোবিলিটিকে ব্যবহার করে প্রতিটি শহরই তাদের ব্যবসায় বিপ্লব ঘটাচ্ছে৷ বস্তুত, স্টার্ট আপের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো চমৎকারভাবে তৈরি করা হয়েছে জার্মানিতে৷ নতুন স্টার্ট আপ তৈরির জন্য প্রচুর ফান্ড এবং গ্রান্টের ব্যবস্থা আছে এখানে৷
বিশ্বের সবচেয়ে সফল ১০টি স্টার্টআপ
বিলিয়ন ডলার ক্লাবের তালিকায় উবার, এয়ার বিএনবিসহ যেসব স্টার্টআপ আছে, তাদের মূল্যমান কত, কবে এগুলোর প্রতিষ্ঠা হয়েছে, কে প্রতিষ্ঠাতা– জানতে পারবেন এই ছবিঘরে৷ তথ্য নেয়া হয়েছে ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের এ বছরের প্রতিবেদন থেকে৷
ছবি: picture alliance /abaca/D. van Tine
উবার
মূল্যমান ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ ২০০৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এর প্রধান নির্বাহী (সিইও) ট্রাভিস ক্যালানিক৷ উবার হলো বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান স্টার্টআপ৷ কোনো গাড়ির সেবা পেতে স্মার্টফোনে অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয় উবার৷
ছবি: picture alliance/dpa/Imaginechina/Da Qing
ডিডি চুঝিং
ডিডি কুয়াইদি আবার ডিডি চুঝিং নামেও পরিচিত৷ এটি চীনের সর্ববৃহৎ গাড়ি সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান৷ ২০১২ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এর মূল্যমান ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ সিইও ওয়েই চেং৷
ছবি: picture-alliance /MAXPPP/VCG
শাওমি
শাওমি কর্পোরেশনের সদরদপ্তর চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে৷ বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ স্মার্টফোন তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান এটি৷ এর মূল্যমান ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ ২০১০ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এর সিইও জুন লেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Wu Hong
এয়ারবিএনবি
২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্টার্টআপ কোম্পানিটি মূলত একটি সোশ্যাল ওয়েবসাইট৷ কোথাও বেড়াতে বা কাজে গেলে এয়ারবিএনবিতে মানুষ থাকার জায়গা খোঁজে৷ ১৯০টি দেশের ৩৪ হাজার শহরে এটি কাজ করে৷ প্রতিষ্ঠাতা সানফ্রান্সিস্কোর ব্রায়ান চেস্কি, জো গেবিয়া এবং নাথান ব্লেচারজিক৷ এর মূল্যমান ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
ছবি: Imago/STPP
স্পেসএক্স
স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস কর্পোরেশন বা স্পেসএক্সের সদরদপ্তর ক্যালিফোর্নিয়ার হাওথ্রোনে৷ এটি মহাকাশ যান, রকেট উৎক্ষেপণ– এই সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি ও নকশা তৈরি করে৷ ২০০২ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ প্রতিষ্ঠাতা এলোন মাস্ক৷ এর মূল্যমান ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
ছবি: picture-alliance /dpa/Press Association Images/@alias_Amanada
উইওয়ার্ক
বিভিন্ন পেশার মানুষ এই স্টার্টআপের সাহায্যে একই অফিসে বসে কাজ করতে পারেন৷ উত্তর অ্যামেরিকা, ইউরোপ এবং ইসরায়েলের ২০টিরও বেশি শহরে এটি চালূ আছে৷ এর ভোক্তা হলেন স্টার্টআপ, ফ্রিল্যান্সার এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যারা মাসিক ভাড়ায় বিভিন্ন স্থানে এক বা একাধিক অফিসে কাজ করতে পারেন৷ এর মূল্যমান ২০ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার৷ ২০১০ সালে নিউইয়র্কে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷
ছবি: WeWork Europe
প্যালানটির
প্যালানটির টেকনোলজিস ইনকরপোরেশন একটি বেসরকারি অ্যামেরিকান সফটওয়্যার এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, যারা মূলত তথ্য বিশ্লেষণ করার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত৷ সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন সিআইএ, এফবিআই– এদের সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণের জন্য৷ এর মূল্যমান ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ ২০০৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়৷ (ছবিতে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী আলেকজান্ডার কার্প)
ছবি: picture-alliance/newscom/A. Lohr-Jones
লুফ্যাক্স
এই স্টার্টআপের পুরো নাম লুজিয়াসুই ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যানশিয়াল অ্যাসেট এক্সচেঞ্জ করপোরেশন লিমিটেড৷ এটি একটি অনলাইন ইন্টারনেট ফিন্যান্স মার্কেট প্লেস, যার সদরদপ্তর সাংহাইয়ের লুজিয়াসুই এ৷ ২০১১ সালে এর পথচলা শুরু হয়৷ এর মূল্যমান ১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Imaginechina/Guo Hui
মেইতুয়ান-ডিয়ানপিং
মেইতুয়ান-ডিয়ানপিং চীনের সর্ববৃহৎ ‘গ্রুপ ডিল ওয়েবসাইট’৷ অর্থাৎ এই কোম্পানি আপনাকে কেনাকাটার জন্য ভাউচার, স্থানীয় নানা সেবা, বিনোদনের ভাউচার, যেমন সিনেমার টিকেট এবং রেস্তোরাঁর বুকিং– এসব সেবা দেয়৷ চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ২০১৫ সালে এটির প্রতিষ্ঠা হয়৷ এই কোম্পানির মূল্যমান ১৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/Imagechina/R. Weihong
পিনটারেস্ট
পিনটারেস্ট একটি ওয়েব এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন কোম্পানি, যারা সফটওয়্যার সিস্টেমের নকশা করে, যাতে তথ্য উদঘাটন করা যায় পুরো বিশ্বের ওয়েব থেকে৷ এজন্য তারা ছবি, গিফ এবং ভিডিও ব্যবহার করে৷ এর মূল্যমান ১২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ ২০০৮ সালে সানফ্রান্সিস্কোতে এটির প্রতিষ্ঠা হয়৷
ছবি: Pinterest
10 ছবি1 | 10
জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও স্টার্ট আপ তৈরির জন্য ফান্ড দেয়, কাজ করার জায়গা দেয় এমনকি, নানারকম কোর্সেরও ব্যবস্থা আছে৷ এছাড়াও বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থাও একইরকম সুযোগসুবিধা তৈরি করছে৷ ফলে এখানে প্রচুর স্টার্ট আপ তৈরি হচ্ছে৷
স্টার্ট আপে নিজের মনের মতো কাজ খুঁজে পেতেও তাই কোনো অসুবিধা হচ্ছে না৷ সৃজনশীল তরুণ-তরুণীরা সে কারণে অনেকেই এখন স্টার্ট আপের দিকে ঝুঁকছে৷ যদিও বড় কোম্পানিগুলির মতো পারিশ্রমিক স্টার্ট আপগুলি একেবারেই দিতে পারে না৷ সেই অর্থে জব সিকিওরিটিও কম৷ কিন্তু স্টার্ট আপ তৈরির ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছে যার আছে, সে কেনই বা এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবে? তবে মাথায় রাখা ভালো যে, স্টার্ট আপ তৈরির সময় একটা ভালো ফান্ড জোগাড় করে ফেলতে পারলে কাজেরও সুবিধা হয়, সুবিধা হয় জীবনযাপনেরও৷
বেশকিছুদিন ধরে স্টার্ট আপের সঙ্গে যুক্ত থাকার দরুণ আরো একটা বিষয় বলতে চাই৷ ইংল্যান্ড এবং জার্মানির পর ইউরোপের বহু দেশই ছোট ছোট স্টার্ট আপ হাবে পরিণত হচ্ছে৷ উদাহরণ স্বরূপ ফ্রান্সের কথা বলা যায়৷
‘স্টেশন এফ'এর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টার্ট আপ প্রজেক্ট তৈরি হয়েছে প্যারিসে, যা ইউরোপের স্টার্ট আপ মানচিত্রে একটি হটস্পট বলা যায়৷ তবে আমার ধারণা, প্যারিস, বার্লিন, মিউনিখ, হামবুর্গের মতো শহরগুলিতে কস্ট অফ লিভিং দিনে দিনে এত বাড়ছে যে, তা স্টার্ট আপ ব্যবসাতেও প্রভাব ফেলবে৷ আমার ধারণা, এই সুযোগটাকে ব্যবহার করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি স্টার্ট আপের নিজ নিজ হাব দ্রুত তৈরি করে ফেলতে পারবে এবং করবেও৷ করবেই বা বলছি কেন, ইতিমধ্যেই সেই প্রয়াস শুরু হয়ে গিয়েছে৷ কম পুঁজিওলা স্টার্ট আপগুলি ইতিমধ্যেই পূর্ব ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছে৷
তবে আমি যেহেতু বার্লিনে কাজ করছি, সেই জায়গা থেকে বলতে পারি, এই মুহূর্তে ইউরোপের চালিকাশক্তি হলো জার্মানি৷ ফলে বহু বিনিয়োগকারী এখানকার স্টার্ট আপগুলিতে টাকা ঢালছেন৷ অর্থাৎ, পুঁজির একটা ফ্লো আছে৷ যেটা নতুন স্টার্ট আপ তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷
আমার স্টার্ট আপ ডিজিটাল হেলথ সংক্রান্ত৷ এ বিষয়ে চোখ বন্ধ করে বলতে পারি যে, সারা পৃথিবীর কাছেই জার্মানিতে তৈরি প্রোডাক্টের চাহিদা বিপুল৷ তার একটাই কারণ, এখানে যেভাবে প্রোডাক্টের রেগুলেশন তৈরি হয়, যে প্রক্রিয়ায় প্রোডাক্ট টেস্ট করা হয়, তাকে সকলেই মান্যতা দেন৷ ফলে ডিজিটাল হেলথ সংক্রান্ত স্টার্ট আপের কাজ এখানে বসে করে আমি খুবই উৎসাহ পাচ্ছি৷ এবং নিজের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব বলেই মনে করছি৷
ইউরোপে স্টার্ট আপের সুযোগ অনেক৷ কথাটা সত্যি৷ তবে আমার মতে বিশ্বব্যাপী এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্টার্ট আপ তৈরির একটা আগ্রহ জন্মেছে৷ এবং এর জন্য তথ্য প্রযুক্তির রমরমাকে ধন্যবাদ দিতেই হয়৷
গোটা পৃথিবী সত্যি সত্যিই এখন সকলের হাতের মুঠোয়৷ সকলেই দেখতে পাচ্ছেন, কোথায় কী কাজ হচ্ছে৷ ফলে উৎসাহ তৈরি হচ্ছে সর্বত্র৷ মহীনের ঘোড়াগুলির গান ধার করে বলতে হয়, ‘ভেঙে গেছে দেশ-কাল-সীমানার গণ্ডি'৷ বর্তমান প্রজন্ম নিরাপত্তা, প্রচুর পারিশ্রমিকের পরিচিত গণ্ডি ভেঙে বেরিয়ে এসেছে৷ অনেকেই নিজের কিছু তৈরি করতে চায়৷ অনেকেই নিজের সৃজনশক্তিকে প্রমাণ করতে চায়৷
ফেরা যাক নিজের এবং জার্মানির কথায়৷ স্টার্ট আপের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো অফিস স্পেস৷ এখানে যাকে বলা হয় ‘কো ওয়ার্কিং স্পেস'৷ অর্থাৎ, বহু ছোট ছোট স্টার্ট আপ একই ছাদের তলায় নিজেদের কাজের জায়গা ভাগাভাগি করে নেয়৷
নিজস্ব অফিস তৈরি করার জন্য যে বিপুল খরচ, এ ধরনের জায়গায় তা নেই৷ তাছাড়া এখানে কাজ করলে বাকিদের ভাবনাচিন্তাগুলোও শোনা যায়৷ আলোচনা করা যায়৷ নতুন স্টার্ট আপ তৈরির সময় এ বিষয়গুলি খুবই কাজে লাগে৷ অনেকটা যেন একটা কমিউনিটির মতো ব্যাপার৷ সকলেই একইরকম উদ্যমে কিছু প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে৷
মানসিকভাবেও এ ধরনের পরিসরে কাজ করলে উৎসাহ বাড়ে৷ আমি যেখানে কাজ করি, এককথায় তা অফিস বলে মনেই হয় না৷ বার্লিনের প্রাণকেন্দ্রে যেন একটা মস্ত লিভিং রুম৷ চারদিকে ছড়ানো ঘর৷ মাঝে একটা কমিউনিটি কিচেন৷ যেখানে বিনামূল্যে কফি ইত্যাদি পাওয়া যায়৷ এছাড়াও রয়েছে লাউঞ্জ, কনফারেন্স রুম, ব্রেকফাস্ট মিট, হ্যাপি আওয়ার, এমন আরো অনেক কিছুই৷ সাধারণ কোনো অফিসে যা কল্পনাও করা যায় না৷ সবচেয়ে মজা হলো, ইচ্ছে হলে নিজের পোষ্যটিকেও সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া যায় অফিসে৷ তাদের রাখারও ব্যবস্থা আছে৷
এখন প্রশ্ন হলো, ভারতবর্ষ থেকে এসে বার্লিনে বসে স্টার্ট আপে কাজ করছি কেন? কেন ফিরে যাচ্ছি না নিজের দেশে? অথবা এশিয়ায়? বন্ধুরা অনেকেই এই প্রশ্ন করেছে আমাকে৷ বস্তুত এশিয়ার মার্কেট অবশ্যই আমার কোম্পানির টার্গেট৷ কারণ, আমরা ডিজিটাল হেলথ সেক্টরে কাজ করছি৷ কিন্তু আগেই বলেছি, ইউরোপে স্টার্ট আপে কাজ করার পরিকাঠামো খুব উন্নত৷
এখানকার রাজনৈতিক অবস্থা, মূলধন এবং ডিজিটাইলেশনের দিকে ঝোঁক এশিয়ার চেয়ে অনেক বেশি৷ ফলে এখানে কাজ করা সুবিধা৷ ভবিষ্যতে কি যাব না এশিয়ায়? এখনই বলা কঠিন৷ তবে সেই চ্যালেঞ্জ তো অনেকেই নিচ্ছে৷ আমাদেরও না নেওয়ার কোনো কারণ নেই৷ সময়ই তা নির্ধারণ করবে৷
এবারে খানিক নিজের কথায় আসি৷ আগেই বলেছি, বহুজাতিক সংস্থায় কাজ করে আমার পোষায়নি৷ কিন্তু সেখান থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলাম৷ তারপর যোগ দিই ফ্লাইং হেলথ নামে একটি সংস্থায়৷ জার্মানির অন্যতম ডিজিটাল হেলথ সংস্থা৷ সংস্থাটির দুই সংগঠক ক্রিশ্চিয়ান লাউটনার এবং এবং মার্কুস মুশেনিশ৷ তাঁদের চিন্তার পরিসরই অন্যরকম৷
ডিজিটাল হেলথকে তাঁরা এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন৷ সংস্থাটি একটি পরীক্ষাগারও তৈরি করেছে৷ সেখানে বিভিন্ন স্টার্ট আপ এবং সংস্থা এসে নিজেদের পরীক্ষানিরীক্ষার কাজ করতে পারে৷ এই সংস্থার সঙ্গে কাজ করার সময় ডিজিটাল হেলথের মডেল তৈরির কাজ করেছি আমি৷ তা কীভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, তা নিয়েও কাজ করতে হয়েছে৷ ফ্লাইং হেলথের কিছু প্রজেক্ট ফান্ড করছে ফেডারেল মিনিস্ট্রি অফ এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ৷
ফ্লাইং হেলথ এবং তার কর্ণধারদের সাহায্যে আমার হাতে সুযোগ এসে যায় নিজস্ব স্টার্ট আপ তৈরি করার৷ ফলে জন্ম হয় ‘নিউরালট্রেন'৷ ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষদের কীভাবে ডিজিটাল হেলথের মাধ্যমে সাহায্য করা যায়, সেটাই আমাদের বিষয়৷ যদি আমরা সফল হই, তাহলে পৃথিবীব্যাপী ডিপ্রেশনে আক্রান্ত মানুষদের আমরা সাহায্য করতে পারব৷ আশা করি আমরা সফল হবো৷
বিটকয়েন সম্পর্কে যা জানা দরকার
বেশ কিছু দিন ধরেই বিশ্ব গণমাধ্যমে ‘বিটকয়েন’ বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে৷ হঠাৎ করে এই ডিজিটাল মুদ্রার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এই আলোচনার কারণ৷ কিন্তু বিটকয়েনের ভবিষ্যৎ কী?
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
শুরুর কথা
২০০৮ সালে বিশ্বব্যাপী যে আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছিল তার পরের বছর বিটকয়েনের যাত্রা শুরু৷ মন্দার কারণে প্রচলিত মুদ্রাব্যবস্থার প্রতি মানুষের বিশ্বাসে যে ফাটল ধরেছিল তাকে পুঁজি করে ডিজিটাল এই মুদ্রা চালু করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
যেন সোনা
বিটকয়েনের স্রষ্টা বা স্রষ্টারা একে সোনার মতোই মূল্যবান হিসেবে দেখতে চেয়েছেন৷ তাই এটি যেন বিশাল পরিমাণে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ এবং সেটি হচ্ছে দুই কোটি ১০ লক্ষ৷ শুরুতে এক বিটকয়েনের মূল্য এক সেন্টেরও কম ছিল৷ ২০১১ সালে এটি এক ডলার সমমানের হয়৷ পরবর্তীতে দাম বেড়ে গতমাসের মাঝামাঝি সর্বোচ্চ ১৯ হাজার ৮০০ ডলার হয়েছিল৷
ছবি: DW/M. Sevcenko
দাম বাড়া-কমা
তবে শেয়ার মূল্যের মতোই প্রতিক্ষণে বিটকয়েনের মূল্য ওঠানামা করে৷ তবে পার্থক্য হচ্ছে, শেয়ার মূল্যের কমা-বাড়ার ব্যাখ্যা হয়ত বিশেষজ্ঞরা দিতে পারেন, কিন্তু বিটকয়েনের ক্ষেত্রে সেটি এখনও সম্ভব নয়৷
ছবি: Imago/imagebroker/M. Weber
নিয়ন্ত্রণহীন
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য যেমন নিয়ন্ত্রক সংস্থা আছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷ কিন্তু বিটকয়েনের মতো ডিজিটাল মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই৷
ছবি: Reuters/D. Ruvic
পরিচয় গোপন
বিটকয়েনের মালিকরা পরিচয় গোপন রেখে লেনদেন করতে পারেন৷ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে বিটকয়েন তৈরি করা হয়৷ এই মুদ্রা লেনদেনে কোনো খরচ নেই৷
ছবি: Getty Images/D. Kitwood
দেখা যায় না
ডলার, ইউরো বা টাকার মতো এই মুদ্রা দেখা যায় না৷ কারণ এই অর্থ জমা হয় ডিজিটাল ওয়ালেটে৷ ওয়েবসাইটের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রায় ১,৯০০ বিটকয়েন এটিএম (২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত) থেকেও এটি কেনা যায়৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Arriens
উদ্ভাবক কে?
বিটকয়েনের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে সাতোশি নাকামোতো নামে এক ত্রিশোর্ধ্ব জাপানি নাগরিকের নাম জড়িয়ে আছে৷ তবে সাধারণভাবে বিশ্বাস করা হয়, কয়েকজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ডিজিটাল মুদ্রার পেছনের প্রযুক্তিটি তৈরি করেছেন৷ মার্কিন কোম্পানি টেসলা’র প্রধান এলোন মাস্ক-ই (ছবি) আসলে সাতোশি বলে একটি গুজব রয়েছে৷ অবশ্য তিনি তা অস্বীকার করেছেন৷
ছবি: Reuters/AAP/B. Macmahon
সাফল্যের অন্য কারণ
পরিচয় গোপন রেখে বিটকয়েনের লেনদেন করা যায় বলে মানি লন্ডারিংসহ অবৈধ পণ্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়৷ এটিও এই মুদ্রার সাফল্যের আরেকটি কারণ বলে মনে করা হয়৷ সাইবার অপরাধীরাও এটি ব্যবহার করে৷ তথাকথিত জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএসও বিটকয়েনের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/M. Dairieh
অন্য ডিজিটাল মুদ্রা
বিটকয়েনের সাফল্য অনুপ্রাণিত হয়ে আরও প্রায় এক হাজারের বেশি ডিজিটাল মুদ্রার আবির্ভাব ঘটেছে৷ এর মধ্যে সফল হওয়া কয়েকটি হচ্ছে ইথেরিয়াম, জেডক্যাশ, বিটকয়েন ক্যাশ, রিপল ও লাইটকয়েন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/J. Arriens
বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এক বিটকয়েনের মূল্য ছিল এক হাজার ডলারের সমপরিমাণ৷ ১২ মাস পর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সেটি হয় সাড়ে ১৯ হাজারের বেশি৷ ফলে শঙ্কা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বিটকয়েন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Astapkovich
বিটকয়েনের ক্রেতারা ‘বোকা’
আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপিমর্গান চেজ এর প্রধান নির্বাহী জেমি ডিমোন বলেছেন, যাঁরা বিটকয়েন কেনেন তাঁরা ‘বোকা’৷ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎসও (ছবি) বিটকয়েন সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিখ্যাত বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, বিটকয়েনের মালিকরা শেষ পর্যন্ত দুর্যোগে পড়বেন৷
ছবি: World Economic Forum/Benedikt von Loebell
11 ছবি1 | 11
আপনার কোন অভিজ্ঞতা আছে কি? লিখুন নিচের মন্তব্যের ঘরে৷