জার্মানিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০টি গাড়ির একে অপরকে ধাক্কা
২৫ মার্চ ২০২৪
জার্মানির রাজ্য বাভারিয়ার উচ্চগতির একটি হাইওয়ে বা অটোবানে একাধিক দুর্ঘটনায় দুজন প্রাণ হারিয়েছেন৷ পরপর কয়েকটি দুর্ঘটনা হওয়ায় গাড়ির উপর গাড়ি উঠে ব্যাপক যানজট ও বিপজ্জনক অবস্থা সৃষ্টি হয়৷
বিজ্ঞাপন
রোববার দুপুরের এই দুর্ঘটনার পর অটোবান এথ্রি-তে এসে পৌঁছায় উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার৷ উদ্ধারকর্মী ও পুলিশের কাজে সহায়তার জন্য সাধারণ যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়৷
ভ্যুর্ৎসবুর্গ শহরের পাশের এই উচ্চগতির সড়কে স্থানীয় সময় বিকাল ৪টার দিকে প্রায় ৪০টি গাড়ি সরাসরি একে অপরের সাথে ধাক্কা খায় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ দ্য বাভারিয়ান রেড ক্রস সংস্থাটির মতে, ৩১জন আহত, আরো চারজনের অবস্থা গুরুতর৷
যেভাবেহলোএইদুর্ঘটনা
তিনটি পৃথক দুর্ঘটনা একই সাথে ঘটার কারণেই এই অটোবানটি বন্ধ করতে হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
পুলিশের মুখপাত্র বলেন, প্রথমে সংঘর্ষ হয় কয়েকটি গাড়ির, তারপরেই সেই একই জায়গায় একের পর এক গাড়ি ধাক্কা খেতে থাকলে পরিস্থিতি সামলাতে বন্ধ রাখতে হয় উচ্চগতির এই সড়ক৷
জার্মানির গর্ব ‘অটোবান’
জার্মানি হলো দুনিয়ার একমাত্র দেশ, যেখানে মোটরওয়েতে কোনো স্পিড লিমিট নেই - যদি না আলাদা কোনো নির্দেশনা থাকে৷
ছবি: DW/Maksim Nelioubin
নাম ‘অটোবান’
অটোবানে শুধু গাড়ি চলতে পারে৷ অটোবানে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের নীচে গাড়ি চালানোর নিয়ম নেই (যদি না নির্দেশ দেওয়া থাকে)৷ অটোবানে সাইকেল, মোপেড বা ট্রাক্টর
চালানো নিষেধ৷ এবং স্বভাবতই অটোবানে কোনো ট্রাফিক লাইট থাকে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্রথম অটোবান
কোলন আর বন শহরের মধ্যে ‘এ ৫৫৫’ অটোবানটি তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯২৯ সালে৷ কোলনের মেয়র কনরাড আডেনাউয়ার তা উদ্বোধন করেন ১৯৩২ সালে৷ ১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় এসে দাবি করেন, অটোবান তৈরির পরিকল্পনা তাঁর মাথাতেই প্রথম এসেছিল৷
ছবি: DW/M. Nelioubin
কোনো গতিসীমা নেই
জার্মানি বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানকার মোটরওয়ের একটা বড় অংশে কোনো গতিসীমা নেই৷ তবে সাধারণভাবে ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়৷ অটোবান মেরামতি, অটোবানে ঢোকা কিংবা বেরনোর রাস্তা, দুর্ঘটনা ঘটার বর্ধিত আশঙ্কা ইত্যাদি কারণে অবশ্য কিছুক্ষেত্রে গতিসীমা নির্ধারিতও থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Breloer
১৩,০০০ কিলোমিটার অটোবান
জার্মানির সব অটোবান জোড়া দিলে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান ডিয়েগো থেকে জার্মানির হামবুর্গ অবধি রাস্তা তৈরি হয়ে যাবে৷ জার্মানিতে ‘এ ৭’ অর্থাৎ সাত নম্বর অটোবানই সবচেয়ে দীর্ঘ, মোট ৯৬৩ কিলোমিটার৷
ছবি: Imago/J. Huebner
নামের আগে ‘এ’
‘এ’ হলো অটোবান কথাটির আদ্যক্ষর৷ তার সঙ্গে যুক্ত হয় একটি সংখ্যা, এই দু’য়ে মিলে অটোবানের নাম, যেমন ‘এ ৮’৷ আন্তঃ-জার্মানি গুরুত্বপূর্ণ অটোবানগুলির নম্বর ১ থেকে ৯-এর মধ্যে হয়; আঞ্চলিক অটোবানগুলি দুই সংখ্যার, যেমন বার্লিন আর হামবুর্গের মধ্যে ‘এ ২৪’৷ আরো ছোট অটোবানগুলি তিন সংখ্যারও হতে পারে৷ উত্তর-দক্ষিণ অটোবানগুলি সাধারণত বেজোড় আর পশ্চিম-পুবেরগুলি জোড় সংখ্যার হয়ে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Strauß
মোটরওয়ে, না রানওয়ে?
পরিভাষায় বলে হাইওয়ে স্ট্রিপ, অর্থাৎ দূরপাল্লার রাস্তার এমন একটা অংশ, যেখানে ছোটখাট বিমান অবতরণ করতে পারে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোবানকে এভাবে কাজে লাগানো হয়েছিল; ঠাণ্ডা লড়াইয়ের আমলে উভয় জার্মানিতেই এ ধরনের অটোবান ল্যান্ডিং স্ট্রিপ প্রস্তুত করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Karmann
যানচলাচল বাড়া মানেই যানজট
জার্মান অটোমোবাইল ক্লাব এডিএসি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে জার্মানির অটোবানগুলিতে ৫,৬৮,০০০ যানজট হয়, যার মোট দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১১ লাখ কিলোমিটার৷ জ্যামে আটকা পড়ে মানুষজনের ৩,৪১,০০০ ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Friederichs
অটোবানে গাড়ি দুর্ঘটনা মানে...
...একাধিক গাড়ির পর পর এসে ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা৷ এ ধরনের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৯০ সালের অক্টোবর মাসে, যখন ঘন কুয়াশার মধ্যে ১৭০টি গাড়ির ‘পাইল-আপ’ হয়: প্রাণ হারান দশজন, আহত হন ১২৩ জন৷ ২০০৯ সালেও ২৫৯টি গাড়ির এভাবে একসঙ্গে ধাক্কা লাগে, কিন্তু আশ্চর্য, সেবার কেউ প্রাণে মারা যাননি৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Iwersen
টোল ট্যাক্স
২০০৫ সাল থেকে জার্মানিতে ভারী লরি ও ট্রাকের জন্য ‘টোল’ আদায় করা শুরু হয়েছে৷ ইউরোপের নানান দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক ট্রাক জার্মানির অটোবান হয়ে ট্রানজিট করে, যার ফলে জার্মান অটোবানের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাড়ে৷ সেটা উশুল করার জন্য ‘টোল’ বসানোর সিদ্ধান্ত নেন জার্মান সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অটোবানের সুবিধা
মুখ্য চ্যানেলগুলোর পাশে বিপদে-আপদে গাড়ি দাঁড় করানোর জায়গা থাকে৷ কয়েক কিলোমিটার পর পর থাকে এমার্জেন্সি টেলিফোন৷ প্রত্যেক ২০ থেকে ৪৫ মিনিট ড্রাইভের পর পাওয়া যায় (অটোবানের লাগোয়া) একটি পেট্রোল পাম্প, যেখানে টয়লেট, মোটেল ও রেস্টুরেন্টেরও ব্যবস্থা থাকে৷
ছবি: DW/Maksim Nelioubin
10 ছবি1 | 10
দ্বিতীয় দুর্ঘটনাটি ঘটে যখন ধাক্কা খাওয়া গাড়ির মধ্যে তিনটিতে আগুন লেগে যায়৷ তার ঠিক ৩০ মিনিট পরেই তৃতীয় দুর্ঘটনা৷ সেখানে আরো কয়েকটি গাড়ি এসে থেমে থাকা গাড়িগুলির গায়ে ধাক্কা খেতে থাকে৷
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ রেড ক্রস জানায় যে বেশ বড় আকারেই উদ্ধারের কাজ চলছে৷ দুর্ঘটনাস্থল ও আশেপাশের বন্ধ সড়কের ছবিও পোস্ট করেন তারা৷ তিনটি হেলিকপ্টার ও অ্যাম্বুলেন্স আসার কথাও জানায় রেড ক্রস৷
বিভিন্ন উদ্ধারকারী সংস্থার কর্মীরা দুর্ঘটনাস্থলে আটকে পড়া আরো ৩০জনের দেখাশোনা করছেন৷