মিউনিখ, ভ্যুর্ৎসবুর্গ, রয়েটলিঙেন আর আন্সবাখে হামলার ঘটনায় জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ওপর চাপ বাড়ছে৷এ অবস্থায় তিনি কি চতুর্থ দফা নির্বাচনে লড়বেন? এ সব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজেছেন ডয়চে ভেলের কাই-আলেক্সান্ডার শলৎস৷
বিজ্ঞাপন
গত বছর অভিবাসী সংকট যখন চরম রূপ ধারণ করেছিল, তখন জার্মান চ্যান্সেলর তাঁর নানা মুখী পদক্ষেপের কারণে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন৷ কিন্তু এখন, জার্মানির দক্ষিণপন্থি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি পার্টি (এএফডি) ইসলাম-বিরোধিতার পাশাপাশি অভিবাসনের মতো বিষয়ে তাদের অবস্থান খোলসা করেছে৷ পপুলিস্ট এই দলটির পাশাপাশি অন্যান্য সমালোচকরাও ম্যার্কেলকে তুলোধুনা করতে ছাড়েননি৷ অথচ একটা সময় ম্যার্কেল নিজেকে ‘শরণার্থী চ্যান্সেলর' হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন, যা তাকে সম্মান দিয়েছিল৷ বিরোধীরা অবশ্য তখনই মুচকি হেসেছিলেন৷
আসলে গত কয়েক সপ্তাহে একের পর হামলার ঘটনায় ম্যার্কেলের জনপ্রিয়তায় সত্যিই ভাটা পড়েছে৷ গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে একই কথা৷ তারা বলছে, জার্মানিতে শরণার্থীদের প্রবেশ এখন সীমিত করা উচিত৷ আর এ জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে ম্যার্কেলের খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউ-কেই৷
জার্মানিতে এত শরণার্থী চায় না তারা
শরণার্থীরা তাদের গন্তব্য হিসেবে জার্মানিকে বেছে নিচ্ছে৷ জার্মানিও তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে৷ কিন্তু জার্মানিতে এত শরণার্থী চান না অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিশ্বাসঘাতক’ ম্যার্কেল
জার্মানির ইসলাম ও অভিবাসী বিরোধী গোষ্ঠী পেগিডার হাজার হাজার সমর্থক সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে৷ শরণার্থীদের প্রতি নরম মনোভাবের কারণ তারা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ‘উচ্চ পর্যায়ের বিশ্বাসঘাতকতা’ ও ‘জার্মানির মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর অভিযোগ আনেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
শরণার্থীদের নিয়ে কটূক্তি
পেগিডার (প্যাট্রিয়টিক ইউরোপিয়ান অ্যাগেনস্ট দ্য ইসলামাইজেশন অফ দ্য অক্সিডেন্ট) প্রতিষ্ঠাতা লুটৎস বাখমান সম্প্রতি শরণার্থীদের ‘পশু’, ‘আবর্জনা’ ও ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা’ বলে আখ্যায়িত করেন৷ এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Berg
সমাজে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়
সোমবার বিক্ষোভের সময় বাখমান বলেন, শরণার্থীর সংখ্যা দেড় কিংবা দুই মিলিয়নেই থেমে থাকবে না৷ এরপর আসবে তাদের স্ত্রী; আসবে এক, দুই কিংবা তিন সন্তান৷ ফলে এতগুলো লোকের জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্তির কাজ অসম্ভব হয়ে পড়বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
জার্মান সরকারের অস্বীকার
জার্মানির জনপ্রিয় পত্রিকা ‘বিল্ড’ সরকারের গোপন ডকুমেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চলতি বছর জার্মানিতে প্রায় দেড় মিলিয়ন শরণার্থী আসবে বলে মনে করছে সরকার৷ যদিও প্রকাশ্যে সরকার বলছে সংখ্যাটা এক মিলিয়ন হতে পারে৷ তবে জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র এ ধরনের কোনো গোপন ডকুমেন্টের কথা তিনি জানেন না বলে সাংবাদিকদের বলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Thalia Engel
শরণার্থীর মৃত্যু
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের এক শরণার্থীদের বাসস্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইরিত্রিয়া থেকে আসা ২৯ বছরের এক শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে৷ অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি৷ এদিকে, জার্মান সরকারের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর শরণার্থী ও তাদের বাসস্থানের উপর হামলার সংখ্যা বেড়েছে৷ এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই এরকম ২০২টি ঘটনা ঘটেছে বলে সরকার জানিয়েছে, যেখানে গত বছর সংখ্যাটি ছিল ১৯৮৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিপদে ম্যার্কেল
শরণার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণের কারণে নিজ দল সহ অন্যান্য দলের রাজনীতিবিদদের তোপের মুখে পড়েছেন ম্যার্কেল৷ তাঁরা জার্মানির শরণার্থী নীতি ও শরণার্থীদের আগমনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চ্যান্সেলরকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
6 ছবি1 | 6
ম্যার্কেলের অবস্থান, বিরোধিতা
‘জার্মানির জন্য বিকল্প' এএফডি দল যেভাবে সিডিইউ-এর সমালোচনা শুরু করেছে, করছে, তাতে কোণঠাসা হয়ে পড়ে দলটি৷ এমন পরিস্থিতিতে যেখানে সব দলের একসাথে কাজ করা উচিত, সেখানে এএফডি নেতারা যেন ম্যার্কেলকে দোষ দিতেই ব্যস্ত৷ মতামত জরিপেও ম্যার্কেলের অবস্থান কিছুটা নেমে গেছে৷
পর পর কয়েকটি হামলার পর জার্মান জনগণ ম্যার্কেল এবং শরণার্থীদের এক কাতারে দাঁড় করাচ্ছে৷ তাই যখনই গণমাধ্যমে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে কিছু লেখা হয়, তা হয়ে দাঁড়ায় ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে৷ যদিও ঐ চারটি জায়গায়, অর্থাৎ যেখানে হামলা হয়, সেখানে শরণার্থীদের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি, বা জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ তবে তদন্ত এখনো চলছে৷
এএফডি-র জন্য ভালো সুযোগ
এই সময়টার ভালো ফায়দা লুটছে এএফডি৷ দলটির নেতারা সমর্থকদের বলছেন, ‘‘আমরা সবসময় বলেছি যে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে অভিবাসীদের প্রবেশ করতে দেয়াটা বিপজ্জনক হতে পারে৷'' বলা বাহুল্য, দলটির রাজনৈতিক নেতারা ফেসবুক ও টুইটারে এ কথা বলে জনগণকে নিজেদের দলে টানতে চাইছেন৷ ম্যার্কেলের ‘সবার জন্য উন্মুক্ত দ্বার' নীতিকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন তাঁরা৷
জার্মানির পূর্বাঞ্চলে বর্তমানে অবকাশ যাপন করছেন ম্যার্কেল৷ কিন্তু এ সময়টা তিনি যে খুব উপভোগ করছেন না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ কেননা পুরো দেশের দায়িত্বভার যাঁর কাধে তিনি যে এ পরিস্থিতিতে খুব একটা ভালো থাকবেন না, তা বলাই যায়৷
চতুর্থ দফা নির্বাচন প্রসঙ্গ
এখন থেকে ঠিক একবছর পর জার্মানিতে আবারও সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা৷ ম্যার্কেল কিন্তু এখনও জানাননি তিনি পরের বার নির্বাচনে লড়বেন কিনা৷ আসলে এটা অনেকটাই নির্ভর করছে শরণার্থী ইস্যুতে তিনি কতটা সফল হন, তার ওপর৷ এর মধ্যে প্যারিস ও ব্রাসেলসে হামলায় তাঁর সে সম্ভবনায় কিছুটা ভাটা পড়েছে বৈকি!
বন্ধু, আপনি কি লেখকের সঙ্গে একমত? জানান নীচের ঘরে৷
শরণার্থীদের প্রিয় জার্মানি, আরো প্রিয় ম্যার্কেল
শরণার্থীদের নিয়ে একটা ছবি সবারই নজর কেড়েছে৷ প্ল্যাকার্ড হাতে এক শিশু, প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘উই ওয়ান্ট জার্মানি’’৷ অনেকেই এসে পৌঁছেছেন তাঁদের কাঙ্খিত ঠিকানা জার্মানিতে৷ পছন্দের মানুষ ম্যার্কেলের দেশে এসে খুশি তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bernd von Jutrczenka
জার্মানিকে চাই...
সেই ছবি৷ বুদাপেস্টে তখন শরণার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে৷ অস্ট্রিয়া বা জার্মানির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে না পারায় তাঁরা ক্ষুব্ধ৷ সবাই ছুটছিলেন প্ল্যাটফর্মের দিকে৷ পুলিশ ফিরিয়ে দিলো৷ স্টেশনের বাইরে শুরু হলো বিক্ষোভ৷ কারো কারো হাতে তখন ট্রেনের টিকিট৷ কেউ ক্ষোভ জানালেন কোলের সন্তানকে নিয়ে৷ অনেক শিশুর হাতে দেখা গেল, ‘উই ওয়ান্ট জার্মানি’ লেখা কাগজ৷ ইউরোপে এত দেশ থাকতে কেন জার্মানি?
ছবি: Reuters/L. Foeger
আছে নব্য নাৎসি, পুড়েছে শরণার্থী শিবির, তবুও...
জার্মানির কোথাও কোথাও শরণার্থীবিরোধী বিক্ষোভ দেখা গেছে৷ অনেক জায়গায় রাতের অন্ধকারে আশ্রয় শিবিরে লেগেছে আগুন৷ তারপরও অভিবাসনপ্রত্যাশীরা জার্মানিকেই বেছে নিতে চায়৷
ছবি: Getty Images/M. Rietschel
বড় কারণ ম্যার্কেল এবং...
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ব্যাপারে শুরু থেকেই উদার জার্মানি৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেল সবসময়ই অভিবাসী এবং অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পাশে ছিলেন৷ পেগিডা আন্দোলনের সময়ও সরকারের অভিবাসীদের পাশে থাকার কথা স্পষ্ট করেই বলেছেন ম্যার্কেল৷ পাশে থেকেছেও৷ জার্মানির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষও ছিল তাঁর পাশে৷ এখনও আছে৷ এই বিষয়গুলোও মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মনে জার্মানির প্রতি আরো আস্থাশীল করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NDR
তোমাদের স্বাগত
অভিবাসনপ্রত্যাশীরা জার্মানিতে পা রেখেই দেখেছে অবাক হওয়ার মতো দৃশ্য৷ এখানে তাঁরা অনাহূত নয়৷ নিজের দেশ থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসে জার্মানিতে পাচ্ছেন সাদর সম্ভাষণ!
ছবি: Getty Images/A. Beier
জার্মানির নেতৃত্বে ম্যার্কেল, ইউরোপের নেতৃত্বে জার্মানি
বৃহস্পতিবার আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, শরণার্থীদের বিষয়ে জার্মানির ভূমিকা হতে হবে অনুসরণীয়, দৃষ্টান্তমূলক৷ জার্মানির সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগে বক্তব্য রাখার সময় তিনি আরো বলেন, অভিবাসন সংকট মোকাবেলায় ইউরোপকেও সফল হতে হবে৷
দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষটিকে শরণার্থীরা নিজেদের একজন হিসেবেই বরণ করে নিয়েছিলেন৷ শরণার্থীদের সঙ্গে বন্ধুর মতোই সময় কাটিয়েছেন ম্যার্কেল৷ কয়েকজন শরণার্থী তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলতে চেয়েছিলেন৷ সানন্দে তাঁদের আশা পূরণ করেছেন ম্যার্কেল৷