জার্মানির ব্যবসাবান্ধব রাজনৈতিক দল মুক্ত গণতন্ত্রী বা এফডিপি স্থানীয় নির্বাচনে হিজাব পরা এক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে৷ আয়গ্যুল কিলিচ নামের ঐ প্রার্থী অনলাইনে বিরূপ মন্তব্যের শিকার হয়েছেন৷
ছবি: Facebook, Aygul Kilic
বিজ্ঞাপন
উত্তর জার্মানির নয়ম্যুনস্টারের স্থানীয় নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন কিলিচ৷ ২৫ মার্চ নিজের ফেসবুকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্টার প্রকাশ করেন তিনি৷ পরে দ্রুতই ফেসবুক আর টুইটারে সেটি সম্পর্কে সমালোচনামূলক মন্তব্য ছড়িয়ে পড়ে৷ অনেকে প্রশ্ন করেন, এফডিপি কীভাবে এমন পোশাক পরা একজনকে প্রার্থী করলো?
অনলাইনে এমন বিতর্কের পর এফডিপির নয়ম্যুনস্টার শাখা একটি বিবৃতি দিয়েছে৷ কিলিচকে নিয়ে যে ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে সেগুলোকে ‘ঘৃণাপূর্ণ’ ও ‘ডানপন্থি’ বলে আখ্যায়িত করেছে দলটি৷ এছাড়া বিবৃতিতে এফডিপি বলেছে, ‘‘প্রগতিশীল ও উদার মানুষ হচ্ছেন তাঁরা, যাঁরা অন্য সংস্কৃতি, ধর্ম ও দেশের মানুষ কী পরবে সে ব্যাপারে নাক গলায় না৷’’
হিজাব পরা ফ্যাশন মডেল
উদ্বাস্তু-সন্তান ও মার্কিন নাগরিক হালিমা এডেন ফ্যাশনের জগতে এক পথিকৃৎ৷ নিউ ইয়র্ক, মিলান ও লন্ডনের ফ্যাশন শো-তে প্রথম যে মডেল হিজাব পরে রানওয়েতে নামেন, তিনি হলেন হালিমা৷
ছবি: Reuters/B. McDermid
মার্কিন জাতীয় পতাকার রঙে হিজাব
ছবিতে লাল-সাদা-নীল রঙের হিজাব পরে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনি হলেন ১৯ বছরের তরুণী হালিমা এডেন, যিনি ধর্মপ্রাণ মুসলিম৷ হালিমা শুধু হিজাবই পরেন না, তিনি মুসলিম নারীদের মতো শরীর ঢেকে রাখেন৷ তবুও ফ্যাশনের জগতে তাঁর সাফল্য দেখবার মতো...
ছবি: Reuters/B. McDermid
মার্কিন ‘অ্যালিওর’ থেকে আর্বি ‘ভোগ’-এর প্রচ্ছদে
হালিমা সম্প্রতি মার্কিন মহিলা পত্রিকা ‘অ্যালিওর’-কে বলেছেন যে, তিনি ‘‘মুসলিম মহিলাদের সম্পর্কে ভুল ও বস্তাপচা ধারণা’’ দূর করতে চান৷ ‘অ্যালিওর’ পত্রিকার জুলাই মাসের ইস্যুর প্রচ্ছদে রয়েছেন হালিমা, যেমন তিনি ‘ভোগ’ পত্রিকার আর্বি সংস্করণের আগস্ট মাসের ইস্যুর প্রচ্ছদে ছিলেন৷
ছবি: Reuters/B. McDermid
হিজাব পরে রানওয়েতে
২০১৭ সালের গোড়া থেকে হালিমা আইএমজি মডেলস সংস্থার মডেল – হাদিদ ভগিনীদ্বয় অথবা জিসেল ব্যুন্ডসেন-এর মতো সুপারমডেলরা যে সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ৷ ছবিতে হালিমাকে মিলানে ম্যাক্স মারা কোম্পানির হয়ে মডেলিং করতে দেখা যাচ্ছে৷ ব়্যাপার কেনি ওয়েস্ট-এর ফ্যাশন লেবেল ‘ইজি’ অথবা আলবের্তো ফেরেত্তি-র হয়েও তিনি রানওয়েতে নেমেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Medina
উদ্বাস্তু থেকে ফ্যাশন মডেল
হালিমার জন্ম কেনিয়ার একটি উদ্বাস্তু শিবিরে৷ ছোটবেলায় মায়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় আসেন – আজ সেখানেই পড়াশুনা করছেন৷ হালিমা জন্মসূত্রে সোমালি৷ তাঁর পরিবার সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে কেনিয়ায় পলায়ন করেছিল৷
ছবি: Reuters/B. McDermid
মিস মিনেসোটা হতে গিয়ে...
...২০১৬ সালে বিকিনির বদলে বুর্কিনি পরেন হালিমা৷ মিস মিনেসোটা হলো মিস ইউএসএ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্যায়৷ গোড়ার দিকেই বাদ পড়েন হালিমা, কিন্তু প্রতিযোগিতার আয়োজক আইএমজি মডেলস সংস্থা তাঁকে মডেল হিসেবে চুক্তিবদ্ধ করে৷ মনে করা যেতে পারে, ২০১৫ সাল অবধি মিস ইউএসএ প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: Imago
দু’পক্ষ থেকেই সমালোচনা
হালিমা যে মডেলিং করছেন, রক্ষণশীল মুসলিমদের সেটা পছন্দ নয়৷ অপরদিকে উদারপন্থি মুসলিমদের কাছে নারীদের পরিধেয়র উপর বাধানিষেধ গ্রহণযোগ্য নয়৷ হালিমা বলেন, সৌন্দর্যই তাঁর সব কথা নয়; এছাড়া হিজাব পরার ফলে তাঁকে ‘‘তুই বড় মোটা হয়ে গেছিস’’, ‘‘তুই বড় রোগা হয়ে গেছিস’’, এ সব কথা শুনতে হয় না৷
ছবি: Reuters/B. McDermid
6 ছবি1 | 6
জাতীয় পর্যায়ের সাংসদরাও এই বিতর্কে অংশ নিয়েছেন৷ অভিবাসন ও ইসলামবিরোধী দল এএফডির বেয়াট্রিক্স ফন স্টর্স বিষয়টি নিয়ে টুইটারে একটি শ্লেষপূর্ণ পোস্ট দিয়েছেন৷ তিনি কিলিচের কাছে জানতে চেয়েছেন, ‘‘খ্রিস্টান ও ইহুদিদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা’’ ইসলামি আইন তিনি (কিলিচ) প্রত্যাখ্যান করেন কিনা৷
এদিকে, জার্মানির সংসদে এফডিপির সংসদ সদস্য কন্সটানটিন কুলে কিলিচের ঘটনায় নিজেকে গর্বিত মনে করছেন৷ ‘‘এমন এক দলের অংশ হয়ে আমি গর্বিত, যারা কিলিচের মতো নারীকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার সুযোগ দিয়েছে,’’ টুইটে লেখেন তিনি৷
তবে এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এফডিপির ভাইস চেয়ারম্যান ভল্ফগাঙ কুবিচকি৷ জার্মান দৈনিক ‘ডি ভেল্ট’কে তিনি বলেন, ‘‘হেডস্কার্ফ পরা বা না পরা একজন মুসলিম প্রার্থীর যারা সমালোচনা করছে, তাদের নরকে যাওয়া উচিত৷’’
ডি ভেল্ট-এর এফডিপিপন্থি সম্পাদক উল্ফ পোশার্ড্ট কিলিচের সমর্থকদের ভয় না পাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷ কারণ, উদারপন্থিরা জানেন ‘‘হেডস্কার্ফের নীচে যা ঘটে, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ,’’ বলেন তিনি৷
উল্লেখ্য, নয়ম্যুনস্টার শহরে ৬ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷
আলেকজান্ডার পেয়ারসন/জেডএইচ
মুসলিম নারীরা যেসব উপায়ে ‘পর্দা’ করে
হিজাব, বোরকা বা নিকাবের মতো নারীদের জন্য বিভিন্ন ইসলামি পোশাক নিয়ে ইউরোপে এখন তুমুল বিতর্ক চলছে৷ কোনো কোনো দেশ এ সব পোশাক নিষিদ্ধের পক্ষে৷ মুসলমান নারীদের শরীর ঢাকার পোশাকগুলি কী কী – চলুন জেনে নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হিজাব
দেশ এবং সংস্কৃতিভেদে অনেক মুসলমান নারী হিজাব পরিধান করেন৷ মূলত মাথা, চুল এবং গলা এবং ঘাড়ের খোলা অংশ ঢাকা হয় এই পোশাক দিয়ে৷ বিভিন্ন ডিজাইনের এবং রঙের হিজাব পাওয়া যায় যেগুলো পরলে চেহারা পুরোটাই দেখা যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Seyllou
নিকাব
নিকাব পরলে নারীর পুরো শরীর ঢেকে যায়, শুধু চোখ দু’টো খোলা থাকে৷ সাধারণত পুরোপুরি রক্ষণশীল মুসলমান নারীরা নিকাব পরেন৷ নিকাব মূলত কালো রঙের হলেও অন্যান্য রঙের নিকাবও ইদানীং দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
দোপাট্টা
দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় দোপাট্টা বা ওড়না৷ নিকাব বা বোরকার মতো না হলেও এই পোশাকেও নারীর শরীর অনেকটা ঢাকা থাকে৷ তবে চুলের কিছুটা, চেহারা এবং গলা দেখা যায়৷ দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য ধর্মের মেয়েরাও দোপাট্টা পরেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/S.Jaiswal
আল-আমিরা
মূলত দুই টুকরো কাপড় দিয়ে আল-আমিরা তৈরি করা হয়৷ একটি টুকরো দিয়ে চুল পুরোপুরি ঢেকে দেয়া হয় আর অন্য টুকরোটা হিজাবের মতো জড়িয়ে দেয়া হয়৷ কম বয়সি মুসলিম নারীদের মধ্যে এই আল-আমিরা বেশ জনপ্রিয়৷
শায়লা
শায়লা হচ্ছে লম্বা, চারকোনা এক ধরনের স্কার্ফ, যা গল্ফ অঞ্চলের মুসলিম নারীদের মধ্যে জনপ্রিয়৷ এটি সাধারণত কালো রঙের হয় এবং কাঁধের কাছে পিন দিয়ে আটকাতে হয় এটিকে৷ তবে হিজাবের মতো সবকিছু ঢেকে রাখে না শায়লা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A.Rochman
এশার্প
অনেকটা হিজাবের মতো হলেই এসার্প তৈরি হয় সিল্ক দিয়ে এবং বেশ উজ্জ্বল রঙের হয়৷ মূলত তুরস্কের মুসলিম নারীরা এটা পরিধান করেন৷ এটি বিভিন্ন রং এবং ডিজাইনে পাওয়া যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Altan
কেরুডুং আর টুডুং
ইন্দোনেশিয়ার আধুনিক মেয়েরা আজকাল যে হিজাব ব্যবহার করছে, তার নাম কেরুডুং৷ আর প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়ায় নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় টুডুং৷ এই দু’টি অনেকটা চাদরের মতো হলেও, একটি অংশে সুন্দর প্যার্টার্ন থাকে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে থাকে বিভিন্ন রঙের শেডও৷ হিজাবের মতো টুডুং বা কেরুডুং-ও চুল, গলা এবং কাঁধ পুরোপুরি ঢেকে ফেলে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S.Khan
চাদর
ইরানের মেয়েদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় চাদর৷ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সাধারণত সে দেশের নারীরা চাদর পরে নেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Mehri
বোরকা
মুসলিম নারীরা সারা চেহারা এবং সারা শরীর পুরোপুরি ঢেকে ফেলে বোরকা পরিধান করেন৷ ক্ষেত্রবিশেষে বোরকার চোখের অংশে জাল দেয়া থাকে, যাতে তারা দেখতে পারেন৷ কালো ছাড়াও বিভিন্ন রংঙের বোরকা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Arshad Arbab
জিলবুবস
সারা শরীর ঢেকে রেখেও নারীর স্তন এবং পশ্চাতদেশের আকার ফুটিয়ে তোলা যায় এই পোশাকে৷ এ জন্যই একে জিলবুবস বলা হয়৷ ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পোশাকের ব্যবহার দেখা যায়৷ তবে এই পোশাক নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷ দ্রষ্টব্য: মুসলিম নারীদের পোশাক সংক্রান্ত বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ছবিঘরটি তৈরি করা হয়েছে৷