জার্মানির ভাইল আম রাইনের ভিট্রা ডিজাইন মিউজিয়ামে সম্প্রতি ‘হ্যালো রোবট’ নামে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল৷ রোবট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে উত্তেজনা - ইত্যাদি বিষয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
কিউরেটর ছিলেন অস্ট্রিয়ার আমালি ক্লাইন৷ তিনি বলেন, ‘‘পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার প্রায় সবকিছুতেই প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে৷ এটা অনেকটা রংয়ের স্তরের মতো৷ এটা হয়ে গেছে৷ এটা আর ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়৷ বোতল থেকে জ্বিন বেরিয়ে গেছে৷ তাই ব্যক্তি হিসেবে আমরা এবং সমাজ কীভাবে প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নেবো, তা খুঁজে বের করতে হবে৷''
বুদ্ধিমান যন্ত্র ছাড়া এখন শিল্পজগতের কথা ভাবাই যায় না৷ মানুষ ও রোবটের মধ্যে সম্পর্ক এখন ইউটোপিয়া ও ডিস্টোপিয়ার মধ্যে দুলছে৷ একদিকে প্রযুক্তির সাহায্যে উন্নত জীবনযাপনের আশা করা হচ্ছে, অন্যদিকে মানুষের কাজ হারানোর আশঙ্কাও রয়েছে৷
ক্লাইন বলেন, ‘‘একটা রোবট আছে যেটা মেনিফেস্টো লিখতে পারে - যার সম্পর্কে আমরা রাজনীতি বা আর্টের জগত থেকে জানি৷ এটা একটা বুদ্ধিভিত্তিক কাজ৷ কিন্তু এই রোবট আসলে বোকা৷ কারণ সে তিনটি ভাষা জানে; শব্দভান্ডার, গ্রামার আর সিন্টেক্স বোঝে, কিন্তু কী লিখছে সেটা সে বোঝে না৷''
জার্মানিতে রোবট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রদর্শনী
03:10
অনেক মুভিতে কৃত্রিম মানুষকে তুলে ধরতে দেখা গেছে যারা দেখতে অনেকটা আমাদের মতো, কিন্তু আমাদের চেয়েও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন৷ মেট্রোপলিস থেকে শুরু করে ২০০১, ব্লেড রানার থেকে শুরু করে ম্যাট্রিক্স: এমন সব সায়েন্স ফিকশন ব্লকবাস্টার মুভিতে চলচ্চিত্র নির্মাতারা রোবট, অ্যান্ডরয়েড ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতি মানুষের মুগ্ধতা এবং একইসঙ্গে আশঙ্কার বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন৷
ক্লাইন বলেন, ‘‘পুপলার কালচারের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনেককিছু আমাদের মাথায় ও মনে ঢুকে গেছে৷ এভাবে রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আমাদের মনে একটা ছবি তৈরি হয়েছে৷ তাই আমরা যখন বাস্তবে রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দেখি, তখন হতাশ হই, কারণ বেশিরভাগ সময়ই মুভি বা বইয়ে পড়ার মতো তাদের চমকপ্রদ মনে হয় না৷''
কিন্তু মানুষের সৃজনশীলতা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্যে সীমানা কোথায়? যন্ত্র কি শেষ পর্যন্ত প্রযুক্তি জগতের সবশেষ রহস্য, আবেগ অনুভব করা ও তাকে শিল্পে পরিণত করতে সক্ষম হবে?
ক্রিস্টিন লেবার্ট/জেডএইচ
কৃত্রিম বু্দ্ধিমত্তা: আদি থেকে বর্তমান
বর্তমানে প্রযুক্তি জগতের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় চ্যাটজিপিটি৷ আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বু্দ্ধিমত্তা দিয়ে এটি তৈরি৷ এআই প্রযুক্তির শুরু থেকে এই পর্যায়ে আসার পেছনে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনার কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Torsten Sukrow/SULUPRESS.DE/picture alliance
দৈনন্দিন জীবনে এআই
স্মার্টফোন খুলতে ফেস আইডির ব্যবহার, ফেসবুকে পছন্দের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন, জীবনযাপনে সিরি-আলেক্সার ব্যবহার - এসবের পেছনে আছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ৷ কিন্তু একদিনে এই প্রযুক্তি এত দূর আসেনি৷
ছবি: Reuters/T. Peter
এএনএন কম্পিউটিং সিস্টেম
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রকে কিছু ‘শেখানোর’ মাধ্যম হচ্ছে ‘আর্টিফিসিয়াল নিউরাল নেটওয়ার্কস’ বা এএনএন কম্পিউটিং সিস্টেম৷ ১৯৪৩ সালে মার্কিন নিউরোফিজিওলজিস্ট ও সাইবারনেটিশিয়ান ওয়ারেন ম্যাককালেক এবং কম্পিউটেশনাল নিউরোসায়েন্টিস্ট ওয়াল্টার পিটসের গবেষণাপত্রে প্রথম এএনএন ধারণার উল্লেখ পাওয়া যায়৷
ছবি: Axel Bueckert/Zoonar/picture-alliance
প্রথম স্বয়ংক্রিয় রোবট
মার্কিন বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নিউরোফিজিওলজিল্ট ও সাইবারনেটিসিয়ান উইলিয়াম গ্রে ওয়াল্টার ১৯৮৪ সালে এলমার ও এলসি নামে দুটি রোবট তৈরি করেছিলেন৷ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারা প্রথম রোবট এগুলো৷ আলো ও স্পর্শ ব্যবহার করে তারা বাধা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারতো৷
ছবি: United Archives/IMAGO
পড়াশোনার বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি
মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী জন ম্যাকার্থি (ছবি) ১৯৫৫ সালে প্রথম ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ টার্মটি ব্যবহার করেন৷ এরপর ১৯৫৬ সালে তিনি ডার্টমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন যেখানে পড়াশোনার বিষয় হিসেবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স স্বীকৃতি পায়৷
ছবি: AP/picture alliance
প্রথম চ্যাটবট
সিরি, আলেক্সার কথা আমরা সবাই জানি৷ তবে ১৯৬৬ সালে ‘এলিজা’ নামে একটি প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়েছিল, যাকে প্রথম এআই চ্যাটবট বলা হয়৷ এলিজা মানুষের কথা বুঝতে পারত, কথাও বলতে পারত৷ যদিও তার নির্মাতা জার্মান-অ্যামেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী ইওসেফ ভাইৎসেনবাউম (ছবি) প্রায়ই বলতেন, এলিজা বুদ্ধিমান নয়৷
স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা এসআরআই-এর ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সেন্টার’ ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে ‘শেকি’ নামে একটি রোবট তৈরি করেছিল, যেটি নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারতো৷ শেকির আগে তৈরি সব রোবটকে প্রতিটি ধাপে নির্দেশ দিতে হত৷ কিন্তু শেকির তা প্রয়োজন ছিল না৷ এসআরআই-এর ওয়েবসাইট বলছে শেকি ছিল প্রথম মোবাইল রোবট যার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বোঝার ক্ষমতা ছিল৷
ছবি: SRI International
দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে হারানো
এআই গবেষণার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে খেলা৷ একটি এআই চেস প্রোগ্রাম ১৯৮০র দশকে চেস মাস্টার ডেভিড লেভিকে খেলায় হারিয়ে দিয়েছিল৷ আর ১৯৯৬ সালে আইবিএম এর ‘ডিপ ব্লু’ কম্পিউটার তখনকার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু গ্যারি কাসপারভকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল৷
ছবি: Stan Honda/AFP/Getty Images
প্রথম রোবটিক খেলনা
একটি মার্কিন কোম্পানি ১৯৯৮ সালে রোবোটিক খেলনা ‘ফার্বি’ বাজারে এনেছিল৷ প্রথমে এটি ‘ফার্বিশ’ বলতো৷ কিন্তু তাকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা ছিল যে, তাকে ইংরেজি ভাষা ও শব্দ শেখানো শুরু করলে সে একসময় তা বলতে পারতো৷ ফার্বির মাধ্যমেই সাধারণ মানুষ প্রথম বুঝতে পারে যে, চাইলে যন্ত্রকে কিছু শেখানো যায়৷
ছবি: PA Fearn/dpa/picture alliance
জিওপার্ডি! কুইজ শো জয়
২০১০ ও ২০১১ সালে আইবিএম-এর ওয়াটসন কম্পিউটার সিস্টেম মার্কিন টেলিভিশন কুইজ শো ‘জিওপার্ডি!’তে অংশ নিয়ে দুজন চ্যাম্পিয়নকে হারাতে সক্ষম হয়৷
ছবি: IBM/dpa/picture alliance
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট সিরির আগমন
২০১১ সালে অ্যাপল ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট ‘সিরি’ নিয়ে আসে৷ এটি মানুষের কথা বুঝতে পেরে সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারে৷ এআই জগতে সেই সময় এটি একটি অন্যতম সাফল্যের ঘটনা ছিল৷ সিরির পর এসেছে আলেক্সা, গুগল- যা এখন প্রায় সবাই ব্যবহার করে থাকে৷
ছবি: Jakub Porzycki/NurPhoto/picture alliance
গার্ডিয়ানের প্রবন্ধ লিখেছিল রোবট
২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট জিপিটি-৩৷ এটি মার্কিন এআই গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই-এর ল্যাঙ্গুয়েজ-জেনারেটর৷ প্রবন্ধটি পড়তে এই লিংকে (shorturl.at/cjnzT) ক্লিক করুন৷
ছবি: Getty Images
রোবোকাপ
রোবোটিকস ও এআই গবেষণা এগিয়ে নিতে ১৯৯৬ সালে কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক রোবোকাপ টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলেন৷ এটি প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে৷ ‘রোবট সকার ওয়ার্ল্ড কাপের’ সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে রোবোকাপ৷
ছবি: JACK TAYLOR/AFP/Getty Images
বিশ্বকাপের বলে এআই প্রযুক্তি
কাতার বিশ্বকাপে অফসাইড ধরতে এআই প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েছিল ফিফা৷ এর সাহায্যে বলের মধ্যে থাকা সেন্সর ও ছাদে থাকা ১২টি ক্যামেরার মাধ্যমে ফুটবলার ও বলের অবস্থান আরও ভালোভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছিল৷
ছবি: DW
চ্যাটজিপিটি
মার্কিন ওপেনএআই কোম্পানির তৈরি চ্যাটজিপিটি একটি শক্তিশালী মেশিন লার্নিং মডেল৷ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মানুষের মতো লেখা বা টেক্সট তৈরি করার ক্ষমতা৷ এর মানে হলো, কোনো একটি বিষয়ে একজন মানুষ যেমন প্রত্যুত্তর দিতে পারে, চ্যাটজিপিটিও সেরকমই জবাব লিখে জানাতে পারে৷ এটি চ্যাটবটের মতো অ্যাপগুলোর জন্য বিশেষভাবে উপযোগী৷