জার্মানিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লকডাউন। ফিল্টার মাস্ক ছাড়া দোকানে যাওয়া যাবে না, ট্রেন, বাস, মেট্রোয় ওঠা যাবে না।
বিজ্ঞাপন
একমত হলেন চ্যান্সেলার ম্যার্কেল এবং ১৬টি রাজ্যের প্রধান। জার্মানিতে লকডাউনের মেয়াদ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়ানো হলো। করোনা ঠেকাতে আরো কড়া ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এখনো জার্মানিতে লকডাউন চলছে। জানুয়ারি পর্যন্ত তা চালু থাকার কথা ছিল। কিন্তু করোনার নতুন স্ট্রেইন জার্মানিতে আসার পর আর কোনো ঝুঁকি নেয়া হয়নি। ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
অধিকাংশ দোকান, স্কুল, কলেজ, জিম, স্পোর্টস সেন্টার বন্ধ থাকবে। মাস্ক পরা নিয়ে কড়াকড়ি করা হয়েছে। প্রকাশ্য স্থানে, বিশেষ করে দোকানে যেতে হলে বা যানবাহনে চড়তে হলে ফিল্টার মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সরকার চায়, কর্মীরা যথাসম্ভব বাড়ি থেকেই কাজ করুন। সংস্থার কর্তারা সেই অনুমতি দিন।
এমনিতে জার্মানিতে করোনার প্রকোপ সামান্য হলেও কমেছে। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের উপরেও চাপ একটু কম। কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে করোনার নতুন স্ট্রেইন জার্মানিতে এসেছে। নতুন স্ট্রেইন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা।
রাজ্যের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকের পর ম্যার্কেল বলেছেন, ''ভাইরাসের বিপদ দূর করতে এখন কড়া ব্যবস্থা নিতেই হবে। আমরা আবার মানুষকে কিছু কড়া ব্যবস্থার মধ্যে থাকতে বাধ্য করছি। সাবধানতাকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে।''
জার্মানিতে লকডাউনে নতুন যেসব বিধিনিষেধ
চলমান লকডাউনের মেয়াদ তিন সপ্তাহ বাড়িয়েছে জার্মানি। শুধু মেয়াদ বৃদ্ধি নয় নতুন করে আরোপ করা হয়েছে কিছু বিধিনিষেধ। কী সেগুলো, দেখে নিন ছবিঘরে।
ছবি: Michel Kappeler/REUTERS
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা
নতুন নিয়ম অনুযায়ী করোনা ভাইরাসের হটস্পটের বাসিন্দারা তাদের শহর থেকে যৌক্তিক কারণ ছাড়া ১৫ কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ করতে পারবেন না। এর মধ্যে ডে ট্রিপ বা একদিনে কোথাও গিয়ে সেদিনই আবার ফেরার মতো দূরত্বেও যেতে পারবেন না। এক সপ্তাহের হিসাবে গড়ে প্রতি এক লাখ বাসিন্দার দুইশ’ জন করোনা আক্রান্ত, এমন জেলাকে হটস্পট হিসেবে ধরা হয়।
ছবি: Andreas Gora/imago images
সাক্ষাতে মানা
এতদিন জনসমাগমের ক্ষেত্রে দুই পরিবারের সর্বোচ্চ পাঁচজনের একসাথ হওয়ার অনুমতি ছিল৷ সেটি এখন কমিয়ে এক পরিবারের মাত্র একজনে নামিয়ে আনা হয়েছে৷ অর্থাৎ একই বাড়ির বাসিন্দা নন এমন ক্ষেত্রে মাত্র একজনের সঙ্গে দেখা বা মিলিত হওয়া যাবে। তবে সাথে নিজের পরিবারের বা বাসার একজন থাকতে পারবে৷
ছবি: Thomas Lohnes/Getty Images
দুইবার পরীক্ষা
হাই-রিস্ক বা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে কোনো ব্যক্তি জার্মানিতে এলে তাকে দুইবার করোনার পরীক্ষা করাতে হবে। প্রথমটির ফলাফল নেগেটিভ হলেও অন্তত পাঁচদিন কোয়ারান্টিন বাধ্যতামূলক।
ছবি: Antonio Calanni/AP Photo/picture alliance
অভিভাবকদের ছুটি
বাড়িতে শিশুদের দেখাশোনার জন্য কর্মজীবী বাবা-মা ১০ দিনের অতিরিক্ত ছুটি পাবেন। বাবা বা মা যদি একা হন তাহলে ছুটি হবে ২০ দিন।
ছবি: Imago Images/photothek
আগের নিয়ম
এর সঙ্গে আগের নিয়মগুলোতো থাকছেই। অর্থাৎ, জরুরি নয় এমন দোকান ও সেবা প্রতিষ্ঠান, ডে কেয়ার সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। জনসমক্ষে অ্যালকোহল পান করা যাবে না। চার্চ, সিনাগগ, মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে। কর্মীদের বাড়ি থেকে অফিস করার পরামর্শটি অবশ্য করোনার শুরু থেকেই দেয়া হয়েছে।
ছবি: Foerster/Eibner-Pressefoto/picture alliance
কতদিন থাকবে?
কমপক্ষে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত নিয়মগুলো বহাল থাকবে। ২৫ জানুয়ারি রাজ্য ও ফেডারেল সরকার বসে পরবর্তী করনীয় নির্ধারণ করবেন। সরকারের আশা, নতুন কড়াকড়িতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। সাত দিনে প্রতি এক লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে গড়ে ৫০ জন বা তার কম আক্রান্ত হলে সেটিকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হবে।
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
প্রকোপ বাড়ছে
মঙ্গলবার র্পযন্ত ২৪ ঘণ্টায় জার্মানিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজার ৯০০ জন। মারা গেছেন ৯৪৪ জন। বড়দিনের ছুটির শেষ হওয়ায় এই সংখ্যা এখন আরো বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গত সাতদিনই গড়ে এক লাখ জনগোষ্ঠীর বিপরীতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৯ জন, যা প্রত্যাশিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
ছবি: Ina Fassbender/AFP/Getty Images
ম্যার্কেলর কথা
সাংবাদিক সম্মেলনে নতুন বিধিনিষেধ ঘোষণা করে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জনগণকে এবার বিশেষভাবে সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। ভ্যাকসিন নিয়ে তিনি বলেন, প্রথম তিন মাসে দেশটিতে অগ্রাধিকারপ্রাপ্তরা টিকা পাবেন। এরপর থেকে বাকিদের টিকা দেয়া সম্ভব হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাদ দিয়ে জার্মানি একা টিকা নিশ্চিত করলে সেটি কাজে আসবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ছবি: Michel Kappeler/REUTERS
8 ছবি1 | 8
নতুন নিয়ম
-দোকানে যেতে হলে বা পাবলিক ট্র্যান্সপোর্টে চড়তে হলে ফিল্টার মাস্ক ব্যবহার করতেই হবে। ভাইরাসের হাত থেকে সুরক্ষার জন্য এই ব্যবস্থা।
-কর্মীরা যত বেশি সম্ভব বাড়িতে থেকে কাজ করবেন। সংস্থার প্রধানরা যেন ১৫ মার্চ পর্যন্ত কর্মীদের ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে দেন।
চালু নিয়ম
-অত্যাবশ্যকীয় নয়, এমন সব দোকান ও পরিষেবা বন্ধ থাকবে।
-ডে কেয়ার সেন্টার বন্ধ থাকবে। বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের দেখভালের জন্য সবেতন ছুটি পাবেন।
-প্রকাশ্যে অ্যালকোহল পান করা যাবে না।
-চার্চ, সিনাগগ, মসজিদে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হতে পারে, তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
-স্কুল মূলত বন্ধ থাকবে, তবে ডিসট্যান্স লার্নিং চলবে।
ম্যার্কেল বলেছেন, ''ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে করোনা বিধিনিযেধ নিয়ে সমন্বয় দরকার। যদি দেশগুলি আলাদা ব্যবস্থা নেয়, তা হলে জার্মানি আবার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের কথা ভাববে। আমরা চাই না, অন্য দেশ আলাদা পথে হাঁটছে বলে, সেখান থেকে জার্মানিতে সংক্রমণ চলে আসুক।''