1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে ১৬ বছর ধরে বন্ধ ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’

রাহাত রাফি
২১ ডিসেম্বর ২০১৮

ষোল বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু প্রফেসরিয়াল চেয়ার৷ প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বন্ধ হয়ে যায় এ চেয়ার৷

ছবি: picture alliance/Bildagentur-online/Schickert

তারপর ১০ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলেও তা চালু করার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি৷  

বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্প, সাহিত্যসহ নানা বিষয়ে গবেষণা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশ বিষয়ে পড়তে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বাংলাদেশের ইতিহাস, রাজনীতি, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৯৯ সালে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রফেসরিয়াল ফেলোশিপ’ চেয়ার৷ 

চালু হওয়ার প্রথম দুই বছর বাংলাদেশ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষকরা এ ফেলোশিপের আওতায় যোগদান করেন এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ বিষয়ে পাঠ দান করেন৷ তবে ২০০২ সালের পর আর কোনো শিক্ষক এ ফেলোশিপের আওতায় যোগদান করেননি৷ ফলে বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশের বাইরে জাতির জনকের সম্মানে প্রতিষ্ঠিত প্রফেসরিয়াল চেয়ারটির কার্যক্রম৷ কাজে লাগানো যাচ্ছে না বাংলাদেশ বিষয়ে গবেষণার ও বাংলাদেশেকে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ এ সুযোগটি৷

ড. হান্স হারডার

02:06

This browser does not support the video element.

হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউটে বাংলাদেশ থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ ‘চেয়ারটির’ কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে ইনস্টিটিউটের অ্যাকাডেমিক কারিকুলামে বাংলাদেশ আর ততটা স্থান পাচ্ছে না৷ 

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরা বলছেন, এমন উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বাংলাদেশ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে৷ দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউটের শিক্ষক, মডার্ন ইন্ডোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. হান্স হারডার বাংলা ভাষা ও সাহিত্যসহ নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন৷ শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষা বিষয়ে পাঠদানও করেন তিনি৷ ডয়চে ভেলেকে জানান, এ প্রফেসরিয়াল চেয়ারটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ বিষয়ে এ ইন্সটিটিউটে আর ততটা কাজ হচ্ছে না৷  

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের আগ্রহ আছে৷ এই ইনস্টিটিউটে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত৷’’ ইনস্টিটিউটটে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্হান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘এ ইনস্টিটিউটের শিক্ষা কার্যক্রমে ভারতের অনেক বড় ভূমিকা আছে৷ তাদের দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তারা কাজ করছে৷ বাংলাদেশের এ প্রফেসরিয়াল চেয়ারটি চালু হলে বাংলাদেশ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম জোরদার হবে৷’’ 

হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুয়াযায়ী, ১৯৯৯ সালের ৫ই আগস্ট হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা  চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জার্মানিতে বাংলাদেশের তখনকার রাষ্ট্রদূত কাজি আনোয়ারুল মাসুদ এবং হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউটের তৎকালীন পরিচালক ড. হান্স জর্জ বোহলে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন৷

নামিয়া আখতার

02:34

This browser does not support the video element.

এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর একজন শিক্ষক হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটে যোগদান করার কথা৷ তাঁর কাজ হবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ অন্যন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের পাঠ দান করা৷ চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বেতন-ভাতাদি দেবে এবং হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউট সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের জন্য প্রয়োজনীয় আবাসন সুবিধাসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করবে৷

সমঝোতা চুক্তিটি স্বাক্ষরের পর ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসুদ্দিন মোল্লা বঙ্গবন্ধু চেয়ারের প্রথম ফেলো হিসেবে দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটে যোগ দেন৷ ফেলো হিসেবে এক বছরের মেয়াদকালে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি বিষয়ে একটি কোর্স প্রণয়ন করে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে পাঠদান করেন বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন ড. মোল্লা৷ 

ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ড. গিয়াসুদ্দিন মোল্লা ২০০১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ফেলো হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন৷ তাঁর ফেলোশিপের মেয়াদ শেষ হলে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্যবিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আর করিম খন্দকার পরবর্তী ফেলো হিসেবে যোগদান করেন৷ প্রায় এক বছর ফেলো হিসেবে তিনি দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউটে কাজ করেছেন৷ ২০০২ সালে তাঁর মেয়াদকাল শেষ হওয়ার পর থেকে আর কোনো শিক্ষক এ চেয়ারের আওতায় যোগদান করেননি৷ 


বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেই মূলত বন্ধ হয়ে যায় এ চেয়ারটি৷ কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলেও বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত চেয়ারটি চালু করার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি৷   
হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউটে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নামিয়া আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে বঙ্গবন্ধু চেয়ার অত্যন্ত ভালো একটি সুযোগ৷’’ বাংলাদেশ বিষয়ে এখন কিছু গবেষণামূলক কাজ হচ্ছে, কিন্তু এটি যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘একাডেমিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ বিষয়ে কোর্স তেমন একটা চালু করা হয় না৷ বাংলাদেশ থেকে একজন শিক্ষক এলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালো জানতে পারবে,’’ বলেন তিনি৷ 

প্রায় ১৬ বছর ধরে এ পদটি শূন্য থাকার বিষয়ে সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ বলছেন, ২০০২ সালের পর থেকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো শিক্ষককে পাঠানো হয়নি কিংবা এ প্রক্রিয়াটিকে চালিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি৷ সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের নির্বাহী সেক্রেটারি ড. মার্টিন গিজেলমান বলেন, ‘‘এটি চালু করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল৷ কিন্তু নানা জটিলতায় এটি চালুর ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যায়নি৷’’ 

ড. মার্টিন গিজেলমান

01:06

This browser does not support the video element.


প্রফেসরিয়াল চেয়ারটি স্থাপনের অন্যতম উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন৷ জার্মানিতে বাংলাদেশি দূতাবাসের সাবেক এই কর্মকর্তা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একটি চেয়ার থাকা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুযোগ৷’’ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াতে অবস্থানরত অবসরপ্রাপ্ত এ কর্মকর্তা মনে করেন, বিভিন্ন দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস জানানোর জন্য চেয়ারটি চালু হওয়া দরকার৷ 

এদিকে চেয়ারটি চালু করার কোনো উদ্যোগ আছে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে  জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, তিনি রাষ্ট্রদূত হিসেবে জার্মানিতে যোগদানের পর এ বিষয়ে অবগত হয়েছেন এবং হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছেন৷ তবে চেয়ারটি চালুর সাথে যেহেতু অর্থনৈতিক বিষয় জড়িত, তাই বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি৷ 

এ বিষয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ