দুই বছরে ৪ থেকে ১২ বছর বয়সি অন্তত ৩৭ মেয়েশিশু এক জার্মান সাঁতার শিক্ষকের যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছে৷ সেই শিক্ষক আবার পানির নীচে এক ক্যামেরায় হেনস্থার ভিডিও করতেন৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/allOver/TPH
বিজ্ঞাপন
৩৭ মেয়ে শিশুকে যৌন হেনস্থার দায়ে ৩৪ বছর বয়সি এক সাঁতার শিক্ষককে বারো বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে জার্মানির বাডেন-ভ্যুর্টেমবুর্গের আদালত৷ ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সুইমিং পুল এবং পোশাক বদলের স্থানে শিশুদের এভাবে হেনস্থা করেন তিনি৷
আদালতে শুনানির শুরুতেই নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন সেই ব্যক্তি৷ জার্মানির স্যুডডয়চে সাইটুং পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘‘আমি যা করেছি তার জন্য আমি লজ্জিত৷''
তার বিরুদ্ধে সবমিলিয়ে ২০০ যৌন হেনস্থার অভিযোগের তদন্ত করেছে পুলিশ৷ এগুলোর মধ্যে শারীরিকভাবে যৌন হয়রানি ছাড়াও শিশু পর্নোগ্রাফির ভিডিও তৈরির অভিযোগও রয়েছে৷ মোট চল্লিশ জন শিশুর সঙ্গে তিনি এসব অপরাধ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়৷ কিন্তু তদন্তকালে পুলিশ তিন শিশুকে শনাক্তে সক্ষম না হওয়ায় তাদের সঙ্গে সংগঠিত অপরাধের অভিযোগ বাতিল করা হয়৷
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
শিশুরা বিকৃতকাম মানুষের সহজ শিকার৷ সারল্যের সুযোগ নিয়ে সহজে ভোলানো যায় তাদের৷ অনেক সময় শিশুরা বুঝতে পারে না, চিনতে পারে না পিশাচের থাবা৷ আর বুঝলেও করতে পারে না প্রতিবাদ, প্রতিরোধ৷ শুধু একটা অস্বস্তি থেকে যায় সারাটা জীবন৷
ছবি: picture alliance/abaca
ভয়াবহ অবস্থা ভারতে
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চা যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পরিবারের মধ্যে, পরিবারেরই কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সদস্যের হাতে৷ তাই সে সব ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো ডাইরি অথবা মামলা৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব
এভাবে প্রতিদিন বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যাচ্ছে অগুন্তি শৈশব৷ অনেকক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝে উঠতে পারছে না, বলে উঠতে পারছে না তাদের অমানবিক সেই সব অভিজ্ঞতার কথা৷ তাই শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত, বিকৃত মানুষগুলো থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে৷ সমাজবিদরা বলছেন, এ জন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবক এবং স্কুলের৷ শিশুকে দিতে হবে তার প্রাপ্য শৈশব৷
ছবি: Fotolia/Kitty
যেভাবে বোঝাবেন বাচ্চাদের
সহজ ভাষায় খেলা বা গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যেত পারে৷ বাচ্চাদের বলতে হবে যে, তাদের শরীরটা শুধুমাত্র তাদের৷ অর্থাৎ কেউ যেন তাদের ‘গোপন’ জায়গায় হাত না দেয়৷ তাই কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, কেউ তাদের জোর ঘরে কোনো ঘরে নিয়ে গেলে, খেলার ছলে চুমু দিলে বা শরীরের কোথাও হাত দিলে – তা যেন মা-বাবাকে জানায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনিয়ে দিন যৌনাঙ্গ
অনেক বাবা-মা নিজ সন্তানের সঙ্গে যৌনাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং খুব ছোটবেলাতেই ছবি এঁকে অথবা গল্পে-গানে বাচ্চাকে তার শরীরের অন্য সব অঙ্গের মতো যৌনাঙ্গ, লিঙ্গ ইত্যাদি চিনিয়ে দিতে হবে৷ এমনটা করলে কেউ যদি তাদের সঙ্গে পিশাচের মতো ব্যবহার করে, তাহলে শিশুরা সহজেই বলতে পারবে কে, কখন, কোথায় হাত দিয়েছিল৷
ছবি: DW/S.Rahman
শিশুর কথা শুনুন, তার পক্ষ নিন
শিশু যাতে আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে, বন্ধুর মতো সবকিছু খুলে বলতে পারে – সেটা নিশ্চিত করুন৷ আপনার বাচ্চা যদি পরিবারের কাউকে বা আপনার কোনো বন্ধুকে হঠাৎ করে এড়িয়ে যেতে শুরু করে অথবা আপনাকে খুলে বলে বিকৃত সেই মানুষের কৃতকর্মের কথা, তবে সময় নষ্ট না করে শিশুটির পক্ষ নিন আর তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বার করে দিন ঐ ‘অসুস্থ’ লোকটাকে৷
ছবি: Fotolia/pegbes
স্কুলেরও দায়িত্ব আছে
বাচ্চারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়৷ তাই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের একটা বড় দায়িত্ব থেকে যায়৷ তবে স্কুলের মধ্যে, বিদ্যালয় চত্বরেও ঘটতে পারে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ তাই স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে, একা একা সময় কাটায় বা পড়াশোনা করতে না চায়, তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলুন৷ জানতে চান কী হয়েছে, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানান৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ছেলে-মেয়ে সমান!
আমাদের সমাজে ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়৷ মেয়ে হলেই হাতে একটা পুতুল আর ছেলে হলে ধরিয়ে দেয়া হয় বল বা খেলনার পিস্তল৷ ছেলের পাতে যখন তুলে দেয়া হয় মাছের বড় টুকরোটা, তখন মেয়েটির হয়ত এক গ্লাস দুধও জোটে না৷ এ বৈষম্য বন্ধ করুন৷ বাবা-মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান – সেভাবেই বড় করুন তাদের৷ তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কীভাবে? কীভাবে কমবে শিশু নির্যাতন?
ছবি: picture alliance/abaca
7 ছবি1 | 7
আদালতে বিচারকাজ চলাকালে সাঁতার শিক্ষকের ক্যামেরায় ধারণ করাযৌন হয়রানির কিছু ভিডিওচিত্র বিচারকদের দেখানো হয়৷ ভিডিওতে দেখা যায়, ওই শিক্ষক শিশুদের সাঁতারের সময় ভাসিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কিট কিছুক্ষেত্রে ব্যবহার না করে তার হাত ব্যবহার করেছেন, যাতে তিনি তাদের হেনস্থা করতে পারেন৷
গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই মেয়েশিশুর অভিভাবক আলাদাভাবে পুলিশের কাছে সাঁতার শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে৷