ইউক্রেন যুদ্ধের বিরোধিতা করা রাশিয়ার শান্তিকামী নারীদের একটি নেটওয়ার্ক এবং ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মানবাধিকার কর্মীদের আইনি সহায়তা দেয়া একটি সংস্থাকে এ বছরের আখেন শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
তিনশোর বেশি ব্যক্তি এবং ৫০টির বেশি ধর্মীয়, রাজনৈতিক, শ্রমিক সংগঠন ও সামাজিক গ্রুপের সমন্বয়ে গঠিত একটি সংগঠন প্রতিবছর আখেন শান্তি পুরস্কার দিয়ে থাকে৷ ১৯৮৮ সালে প্রথম এটি দেয়া হয়েছিল৷ ১ সেপ্টেম্বর জার্মানির যুদ্ধবিরোধী দিবসে বিজয়ীদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেয়া হয়৷
ফার নেটওয়ার্ক
‘ফেমিনিস্ট অ্যান্টি-ওয়ার রেসিস্টেন্স' এফএআর বা ফার রাশিয়ার শান্তিকামী নারীদের একটি নেটওয়ার্ক যেটি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে৷ ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরদিন এর সমালোচনা করে অনলাইনে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছিল ফার৷ এরপর ইউক্রেনের মারিউপলে রুশ বাহিনী কয়েক হাজার সাধারণ নাগরিককে হত্যা করলে তার প্রতিবাদ জানান ফার নেটওয়ার্কের কর্মীরা৷ এছাড়া যুদ্ধবিরোধী স্টিকার বিতরণ এবং সুপারমার্কেটে পণ্যের মূল্যের উপর যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা সম্বলিত স্টিকার সেঁটে দিয়েছিলেন তারা৷
ফার নেটওয়ার্কের এক সদস্য একাতেরিনা (নিরাপত্তার খাতিরে পুরো নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না) বর্তমানে জার্মানিতে বাস করছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ফার-এর কর্মীরা রাশিয়ার সব বড় শহরে কাজ করছেন৷ তারা আবাসিক ভবনে গোপনে শান্তিকামী সংবাদপত্র বিতরণ করে থাকেন৷ এসব সংবাদপত্রে রেসিপির আড়ালে পুরুষেরা কীভাবে যুদ্ধে যাওয়া এড়াতে পারেন সেই সব কৌশল থাকে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান জার্মানিতে বাস করা ফার-এর আরেক কর্মী ওলগা৷ এসব কাজ ছাড়াও ফার আরও যেসব কাজ করছে সেগুলোর খবর কোথাও প্রকাশ করা হয় না৷ এমনকি এসব কাজে যুক্ত অনেক কর্মীও তা জানেন না৷ নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে আইনি উপদেশ, মানসিক পরামর্শইত্যাদিও দেয়া হয়ে থাকে৷
ফিলিস্তিনি এলাকায় ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরোধিতা করা, ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকার রক্ষা, এলজিবিটি অধিকার ও জলবায়ু নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের আইনি সহায়তা দিয়ে থাকে এইচআরডিএফ৷
একটি হটলাইনের মাধ্যমে এই সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়৷ অহিংস আন্দোলনের সময় ইসরায়েলের পুলিশ বা সামরিক বাহিনীর হাতের গ্রেপ্তার হওয়া ইসরায়েলি বা ফিলিস্তিনিরা পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন৷ ‘‘তাদের জানা প্রয়োজন যে আমরা তাদের জন্য আছি,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন এইচআরডিএফ এর আরিয়েল সাদি গর্ডন৷
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার যত চেষ্টা
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা চালিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়৷ কিন্তু এসেছে কি শান্তি?
জাতিসংঘ রেজ্যুলেশন ১৯৬৭
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা দখল করে ইসরায়েল৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সে বছরের ২২ নভেম্বর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ‘রেজ্যুলেশন ২৪২’ নামে একটি প্রস্তাব পাস হয়৷ প্রস্তাবে দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/Keystone
ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি ১৯৭৮
মিশর ও সিরিয়ার নেতৃত্বে আরব রাষ্ট্রগুলো ১৯৭৩ সালে আবারো ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ এ যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে বিশ্ব নেতারা৷ তাদের চেষ্টায় ১৯৭৮ সালে ১২ দিন আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়৷ এ চুক্তিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির ভিত হিসিবে বিবেচনা করা হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Daugherty
মাদ্রিদ কনফারেন্স ১৯৯১
ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ে ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতৃত্বে স্পেনের মাদ্রিদে এ কনফারেন্সটি অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে আরো অংশ নেয় ইসরায়েল, জর্ডান, লেবানান, সিরিয়া ও ফিলিস্তিন৷ এ কনফারেন্সের তাৎক্ষণিক কোন ফলাফল আসেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
অসলো অ্যাকর্ড ১৯৯৩
১৯৯৩ সালে নরওয়ের অসলোতে প্রথমবারের মতো মুখোমুখি আলোচনায় বসে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন৷ আলোচনার পরবর্তী ধাপে এ দু’দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যা অসলো চুক্তি নামে পরিচিত৷ চুক্তিতে বলা হয় যে, পশ্চিম তীর থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল৷ পাঁচ বছরের জন্য ফিলিস্তিনকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের অনুমতিও দেয় এ চুক্তি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Sachs
আরব পিস ইনিশিয়েটিভ ২০০২
২০০২ সালে আরব লিগের নেতারা লেবাননের বৈরুতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনার একটি প্রস্তাব পাস করেন৷ প্রস্তাবনায় ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ চলাকালীন দখলকৃত সব জায়গা ত্যাগ করতে বলা হয়, যেন পশ্চিম তীরে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গড়ে তোলা যায়৷ বিনিময়ে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানানো হয়৷
ছবি: Getty Images/C. Kealy
রোডম্যাপ ২০০৩
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া জাতিসংঘের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির রোডম্যাপ নামে পরিকল্পনার প্রস্তাব দেয়৷ ২০০৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুইটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় এই রোডম্যাপে৷
ছবি: Getty Iamges/AFP/J. Aruri
সংঘর্ষ, অস্ত্র বিরতির চেষ্টা
২০১২ সালের শেষ দিকে গাজায় দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়তে থাকে৷ এ সময় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি অস্ত্র বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ ২০১৪ সালে ইসরায়েলি এক তরুণ নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান চালালে পরিস্থিতি আবারো খারাপ হতে থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
প্যারিস সম্মেলন ২০১৭
২০১৭ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন বিষয়ে আলোচনা করতে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিরা প্যারিসে একত্রিত হয়৷ তবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের কোনো প্রতিনিধিই এ আলোচনায় অংশ নেয়নি৷
ছবি: Reuters/T. Samson
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনা
প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ে শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এতে বলা হয় পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন বন্ধ রাখবে ইসরায়েল, তবে ইতোমধ্যে অধিকৃত সকল স্থাপনায় তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকবে৷ এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিন৷