বিদায়ী চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের ডেপুটি ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী ওলাফ শলৎস ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে নিজের দলের প্রতি সমর্থনও বাড়িয়ে চলেছেন৷ ফলে আগামী সরকারের নেতৃত্বের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচনের আর দুই মাসও দেরি নেই৷ অথচ চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের প্রায় ১৬ বছরের ক্ষমতাকালের শেষে আগামী সরকারের রূপরেখা বা তাঁর উত্তরসূরি সম্পর্কে এখনো কোনো নির্ভরযোগ্য পূর্বাভাস সম্ভব হচ্ছে না৷ জনমত সমীক্ষায় কোনো শীর্ষ চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী বা দলের পক্ষে জোরালো সমর্থন চোখে পড়ছে না৷ ফলে নির্বাচনের পর আসনসংখ্যার ভিত্তিতে দুইয়ের বদলে তিনটি দলের জোট সরকার গঠনের সম্ভাবনা বাড়ছে৷
অথচ ম্যার্কেলের আমলে ইউনিয়ন শিবির জার্মানির সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজস্ব অবস্থান প্রায় অটুট রাখতে পেরেছিল৷ তাঁর সম্ভাব্য উত্তরসূরি বাছাইয়ের আগে পর্যন্ত সেই অবস্থান মোটামুটি অক্ষত ছিল৷ কিন্তু চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হিসেবে নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আরমিন লাশেট আসরে নামার পর থেকে সিডিইউ ও সিএসইউ দলের জনপ্রিয়তা কমেই চলেছে৷ বিশেষ করে জুলাই মাসের মাঝামাঝি নিজের রাজ্যে বিধ্বংসী বন্যার পর তাঁর দুর্বল ও বিতর্কিত ভূমিকা প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে৷ তাঁর বদলে বাভেরিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডার নেতৃত্বের সেই সুযোগ পেলে কিন্তু এমন অধঃপতন হতো না বলে সমীক্ষায় বার বার স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ ফলে আগামী সরকারের নেতৃত্বের সুযোগ ইউনিয়ন শিবিরের জন্য অধরা থেকে যেতে পারে৷ বিপর্যয় এড়াতে দুই দলের মধ্যেই কাণ্ডারী হিসেবে লাশেটকে সরিয়ে স্যোডারের হাতে হাল দেবার দাবিও বাড়ছে৷ মরিয়া হলে লাশেট জোরালো নির্বাচনি প্রচারের মাধ্যমে ভোটারদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা শুরু করেছেন৷
অন্যদিকে তিন চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীর মধ্যে সমর্থনের বিচারে শেষ স্থান থেকে ধীরে ধীরে শীর্ষে উঠে এসেছেন এসপিডি দলের নেতা ওলাফ শলৎস৷ ভাইস চ্যান্সেলর ও অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং শান্ত স্বভাব মানুষের মনে ধরছে৷ এবার তার দলও দুর্বলতা কাটিয়ে সমর্থনের বিচারে সবুজ দলকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে, যদিও সরকারের নেতৃত্ব দেবার মতো অবস্থানে এখনো পৌঁছতে পারে নি৷
জার্মানির আগামী জোট সরকারের নেতৃত্ব বা শরিক দল হবার আশা সবুজ দলের কাছে অধরা থেকে যেতে পারে৷ ইউনিয়ন শিবিরের মতো সবুজ দলও চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীর জনপ্রিয়তার অভাবের কারণে পিছিয়ে পড়ছে৷ একের পর এক ব্যক্তিগত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় আনালেনা বেয়ারবক চ্যান্সেলর হবার স্বপ্ন ত্যাগ করতে কার্যত বাধ্য হচ্ছেন৷ দলের জনপ্রিয়তাও কমে চলেছে৷
বার্লিনে নির্বাচনের আমেজ, সাঁটা শুরু পোস্টার
বার্লিনে আঞ্চলিক এবং জাতীয় নির্বাচন শুরু হতে আর দুই মাসও বাকি নেই৷ ফলে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে৷ রাস্তাঘাটে দেখা যাচ্ছে প্ল্যাকার্ড৷ নির্বাচনি স্লোগানেও উঠে আসছে নানা বড় ইস্যু৷ বাকিটা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Carsten Koall/dpa/picture alliance
আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু
জার্মানিতে নির্বাচনি প্রচারণা এভাবেই নির্বাচনের তারিখের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে হঠাৎ করে শুরু হয়৷ বিভিন্ন দল এবং প্রার্থীরা সেসময় রাস্তাঘাটে প্ল্যাকার্ড ঝুলানোর অনুমতি পায়৷ ২৬ সেপ্টেম্বর বার্লিনের জেলাগুলোতে স্থানীয় নির্বাচন এবং বিভিন্ন শহরের জনপ্রতিনিধি ও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ তাই আগামী কয়েক সপ্তাহ রাস্তাঘাট শত শত হাসিমুখের পোস্টারে ভরে থাকবে৷
ছবি: Carsten Koall/dpa/picture alliance
‘বিচার চায়’ খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী এবং সবুজরা
নির্বাচনি পোস্টারে জটিল বিষয়গুলো এক লাইনের স্লোগানে প্রকাশ করতে হয়৷ ন্যয়েকোল্ন-এর এক থানার সামনে মধ্যডানপন্থি খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল (সিডিইউ)-র পোস্টারে জনমতে সাম্প্রতিক পু্লিশবিরোধী মনোভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে৷ দলটি লিখেছে, ‘‘কারণ, আমরা তোমাকে ভালোবাসি, বার্লিন পুলিশ৷’’ অন্যদিকে, সবুজ দলের ভাবনা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে৷ তাদের স্লোগান, ‘‘জলবায়ু নিরাপত্তা ইস্যুতে ন্যায়বিচার প্রয়োজন৷’’
ছবি: Elliot Douglas/DW
এসপিডি-র মুখ ওলাফ শ্যলস
‘‘স্থিতিশীল পেনশন-এর জন্য ভোট দিন’’ - লেখা হয়েছে মধ্যবামপন্থি সামাজিক গণতন্ত্রী দল (এসপিডি)-র পোস্টারে৷ আর তাতে শোভা পাচ্ছে দলটির চ্যান্সেলর প্রার্থী ওলাফ শ্যলস-এর ছবি৷ বার্লিন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস-এ সবচেয়ে বড় দল এসপিডি৷ জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগ-এ তারা দ্বিতীয় বড় দল৷ তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্বাচনে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি দলটি৷
ছবি: Carsten Koall/dpa/picture alliance
এএফডি’র আকর্ষণীয় স্লোগান
জার্মানির উগ্রডানপন্থি পপুলিস্ট দল জার্মানির জন্য বিকল্প (এএফডি) নির্বাচনী স্লোগানে লিখেছে ‘‘বার্লিন কিন্তু স্বাভাবিক’’৷ দলটি করোনা বিধিনিষেধের বিরোধী৷ এমনকি অনেক দল যখন পরিবেশ বাঁচাতে শহরের মধ্যে গতিসীমা চালু ও বিভিন্নস্থানে গাড়ি নিষিদ্ধের পক্ষে, দলটি নিয়েছে পুরো উল্টো অবস্থান৷
ছবি: Elliot Douglas/DW
সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে বাম দল
বাম দল হচ্ছে কয়েকটি দলের একটি, যারা বহুসংস্কৃতির শহর বার্লিনে জার্মান ভাষা ছাড়াও আরো কয়েকটি ভাষায় নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছে৷ এই পোস্টারে দলটি আরবি ভাষায় লিখেছে, ‘‘ভাড়াটেদের রক্ষা করুন!’’৷ তবে জার্মানির এক তৃতীয়াংশ বাসিন্দাই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না, কেননা শুধু জার্মান পাসপোর্টধারীরাই জার্মানির জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন৷ আঞ্চলিক জেলা নির্বাচনে অবশ্য ইইউ নাগরিকরাও ভোট দিতে পারেন৷
ছবি: Elliot Douglas/DW
এফডিপি-র আহ্বান ব্যবসায়ীদের প্রতি
মুক্তবাজারের পক্ষের দল মুক্ত গণতন্ত্রী (এফডিপি) এবারের নির্বাচনে নিজেদেরকে অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করার দল হিসেবে ব্যবসায়ীদের কাছে আকর্ষণীয় হতে চাচ্ছে৷ দলটির একটি পোস্টারে লেখা হয়েছে ‘‘কেন্দ্রেরও প্রতিরক্ষা দেয়াল দরকার’’৷ এর অর্থ হচ্ছে বার্লিনের কেন্দ্রীয় জেলা মিটে-তে অবস্থানরত অনেক ব্যবসায়ীর জন্যও নিরাপত্তা দরকার৷
ছবি: Carsten Koall/dpa/picture alliance
ছোট দলগুলোও প্রচারণা চালাচ্ছে
বর্তমানে সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকা ছয়টি দলের বাইরেও বেশ কয়েকটি ছোট দল নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে৷ কমিউনিস্ট মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট জার্মান পার্টি তাদের একটি৷ দলটির স্লোগান হচ্ছে ‘‘১০০০ আশা, একটি পরিণতি: বিদ্রোহ’’৷ তবে যেহেতু জার্মান সংসদে প্রবেশ করতে অন্তত পাঁচ শতাংশ ভোটের প্রয়োজন হয়, এসব দলের তাই সংসদে প্রবেশের সম্ভাবনা খুব কম৷
ছবি: Revierfoto/dpa/picture alliance
নাগরিক উদ্যোগ
বার্লিনের নাগরিকদের উদ্যোগে গড়া ‘ডিসপোজেস ডয়চে ভোনেন উন্ড কো.’ বার্লিনের বড় বাড়িওয়ালাদের একটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছে যাতে ‘বার্লিনবাসী ঘরে থাকতে পারেন’৷ চলতি বছরের শুরুতে আদালত বাড়িওয়ালাদের ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ দেয়, যা বেশ কিছু বছর বন্ধ ছিল৷ সেই ঘটনায় বার্লিনের নাগরিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: Elliot Douglas/DW
8 ছবি1 | 8
জার্মানির আগামী জোট সরকারে শরিক হিসেবে উদারপন্থি এফডিপি দলের সম্ভাবনা বেড়ে চলেছে৷ দলের শীর্ষ নেতা ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনার এখন থেকেই নিজেকে অর্থমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে তুলে ধরছেন৷