দ্রুত আফগানিস্তানের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বললেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক।
বিজ্ঞাপন
আফগানিস্তানে আটকে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানালেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রশাসনিক ফাইলের জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত তাদের উদ্ধারের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করলেন।
বৃহস্পতিবার বেয়ারবক বলেছেন, ''আফগানিস্তানের অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয়। একাধিক ক্ষেত্রে আফগানিস্তান কার্যত ভেঙে পড়েছে।'' তার মতে এই সময়ের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের নাম আফগানিস্তান। দেশের লাখ লাখ মানুষের দুর্দশা অবর্ণনীয়। এই পরিস্থিতিতে তাদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি।
আফগানিস্তানের সরকারি কর্মচারিরাও নামছেন ভিক্ষায়
আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক সংকট চরম রূপ নিচ্ছে৷ বেকারত্ব বাড়ছে, বাড়ছে খাদ্যপণ্যের দাম৷ চাকরি হারানো অনেকের পেশা এখন ভিক্ষা৷ ডাব্লিউএফপি, আইএমএফ, ইইউ শঙ্কিত৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Oliver Weiken/dpa/picture alliance
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট
গত আগস্টে কাবুলের দখল নেয় তালেবান৷ তারপর মোটামুটি সারা দেশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলেও অর্থনীতি দ্রুত চরম বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে৷ আন্তর্জাদিক দাতা সংস্থাগুলো আফগানিস্তান ছেড়েছে৷ বিদেশি সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর থেকে দৃশ্যত বিদেশের কোনো অর্থনৈতিক সহায়তাও পাচ্ছে না তালেবানের আফগানিস্তান৷ প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানের নাগরিক সেবা সংশ্লিষ্ট খরচের তিন চতুর্থাংশই বিদেশি সহায়তা নির্ভর৷
ছবি: Bernat Armangue/AP Photo/picture alliance
ব্যাংকে টাকার অভাব
আশরাফ গনি সরকারের রেখে যাওয়া ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সম পরিমান অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পড়ে আছে৷ তালেবান সরকার তা তুলতে পারছে না৷ অন্যদিকে সরকার নির্দিষ্ট অঙ্কের বেশি টাকা তোলায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় অনেকে নিজের জমানো টাকাও প্রয়োজনমতো তুলতে পারছেন না৷ ওপরের ছবিতে এক ব্যাংকের সামনে টাকা তুলতে আসা মানুষদের দীর্ঘ লাইন৷
ছবি: Oliver Weiken/dpa/picture alliance
বেকারত্ব এবং বেতন-সমস্যা
গনি সরকারের আমলের অনেক সরকারি-বেসরকারি কর্মচারি তালেবান আমলে চাকরি হারিয়েছেন৷ এ কারণে আগে থেকেই ধুঁকতে থাকা আফগানিস্তানে বেকারত্ব আরো বেড়েছে৷ তাছাড়া কর্মরতদের অনেকেই বেতন নিয়মিত পাচ্ছেন না বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন৷ ছবিতে বেকারত্ব ও নারীদের ওপর আরোপিত নানা বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে আফগানদের বিক্ষোভ মিছিল৷
ছবি: Privat
খাদ্যের জন্য আসবাব বিক্রি, ভিক্ষা
খাদ্যপণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিচ্ছে আফগানিস্তানে৷ দাম বাড়ছে হু হু করে৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, খাবার কেনার টাকা জোগাড় করতে তারা এখন ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করছেন৷ সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আজমল (ছদ্মনাম) জানান, তিনি এমন কয়েকজন সাবেক চাকুরিজীবীকে চেনেন, যারা ‘‘এখন বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করছেন, কিংবা দিনমজুরের কাজ করছেন৷’’
ছবি: SHAH MARAI/AFP/Getty Images
দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা
খরা এবং করোনা মহামারির মাঝে আফগানিস্তান এখন এমন এক অবস্থায় যে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, সেখানে চরম মানবিক সংকট অত্যাসন্ন৷ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি)-র আফগানিস্তান শাখার প্রধান মেরি-এলেন ম্যাকগ্রোয়ার্টি মনে করেন, আফগানিস্তানের অন্তত ৮৭ লাখ মানুষ এ মুহূর্তে ‘‘অনাহার থেকে এক পা দূরে৷’’ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আফগানিস্তানে অচিরেই ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে৷
ছবি: Denis Elamu/Photoshot/picture alliance
আইএমএফ-এর হুঁশিয়ারি
এদিকে আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে শরণার্থী সংকট চরম রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)৷ সংস্থাটি বলেছে, আফগানিস্তানের অর্থনীতি এ বছর ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সঙ্কুচিত হতে পারে। এর প্রভাবে লাখ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যকে বরণ করে নিতে বাধ্য হবে৷ এর প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোতেও নানাভাবে পড়বে বলে মনে করে আইএমএফ৷
ছবি: Privat
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশঙ্কা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি নির্ধারণ কমিটির প্রধান ইয়োসেপ বোরেল-ও আফগানিস্তান নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷ গত অক্টোবরে এক ব্লগ পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘ভয়ঙ্কর এক মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান৷ সামাজিক-অর্থনৈতিক বিপর্যয় চরম রূপ নিচ্ছে৷ এ পরিস্থিতি আফগানদের এবং আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্যও বিপদ ডেকে আনতে পারে৷’’
ছবি: David Dee Delgado/REUTERS
7 ছবি1 | 7
বেয়ারবক সাংবাদিকদের বলেছেন, আফগানিস্তানের পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, সামান্য খাবারের জন্য মেয়েদের বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে পরিবারগুলি। এর থেকেই বোঝা যায়, সেখানে কী অবস্থায় বসবাস করছেন সাধারণ মানুষ। জার্মানির হিসেবে, চলতি শীতে শুধু ঠান্ডায় ২৪ মিলিয়ন আফগানের মৃত্যু হতে পারে। তারমধ্যে অসংখ্য শিশুও আছে। বেয়ারবক বলেছেন, ''চোখ বুজে রেখে এই মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারি না। আমাদের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তাদের উদ্ধার করতে হবে।''
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, জার্মান সরকার আফগানিস্তান থেকে প্রায় দশ হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে। উদ্ধার করে জার্মানি নিয়ে আশার প্রতিশ্রুতি যাদের দেওয়া হয়েছিল, তেমন আরো ১৫ হাজার মানুষ এখনো আফগানিস্তানে আটকে আছেন। শুধু তাই নয়, ১৩৫ জন জার্মান নাগরিক এখনো আফগানিস্তানে আটকে। তাদের সকলকে জার্মানিতে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ''জার্মানি আপনাদের ভুলে যায়নি।''
বৃহস্পতিবারই আফগানিস্তান নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সেখানে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের জন্য তালেবান, মার্কিন সেনা এবং এবং আফগান সেনা যৌথভাবে দায়ী। তাদের যুদ্ধে বহু সাধারণ আফগানের মৃত্যু হয়েছে। শুধু তাই নয়, তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও তুলেছে অ্যামনেস্টি। তবে এ বিষয়ে অ্যামেরিকা এবং তালেবান নেতৃত্ব কেউই কোনো মন্তব্য করেনি।