1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির আবহাওয়া যেন অভিমানী প্রিয়

২২ জুলাই ২০১৯

‘এই মেঘ এই বৃষ্টি'- অনেক কবি সাহিত্যিক অভিমানী প্রেমের ব্যাখ্যায় এমন উপমা নিয়ে এসেছেন৷ জার্মানির আবহাওয়া এই অভিমানী প্রেমের মতই অনিশ্চিয়তায় ঘেরা৷

Deutschland Hitze Sommer in Bonn
ছবি: DW/A. Islam

ক'দিন আগের কথা৷ আমি আর একজন কলিগ দুপুরে ডয়চে ভেলের ক্যান্টিন থেকে খেয়ে ফিরছিলাম৷ ক্যান্টিন থেকে বের হলে বিরাট এক লবি পেরিয়ে ডিপার্টমেন্টে আসতে হয়৷ আমরাও ‘সহজ সরল মনে' ফিরছিলাম সে পথে৷ কিন্তু একটু এগুতেই দেখি এক জটলা৷ বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের কর্মীরা সেখানে জড়ো হয়ে আছেন৷ সামনে হলুদ ফিতা দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া৷

হঠাৎ মনে হলো কোনো ‘ক্রাইম সিনে' এসে পড়েছি৷ যারা আমাদের নিরাপত্তা দেন, সাদা শার্ট কালো প্যান্ট পরা সুঠাম দেহের সেই লোকেরা কাউকে হলুদ ফিতা ডিঙ্গাতে দিচ্ছেন না৷ শেষে জানতে পারলাম, ওপর থেকে পলেস্তরা খসে পড়েছে৷ জিজ্ঞেস করাতে দুই নারী কলিগ জার্মান ভাষায় বলছিলেন যে, তারা ট্রমার মধ্যে আছেন৷ কারণ, পলেস্তারা খসে পড়েছে তাদের পাশেই৷ আর সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছেন, অন্য কলিগরা যারা আশেপাশে ছিলেন, তারা শুধু ছবি তুলছিলেন, কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি৷ তাদের কথা শুনে কোনো এক কারণে মুচকি হাসলাম৷

আসল কথা হলো, এত গরম পড়েছে যে তা আর সহ্য করতে পারেনি বেচারা ভবনটি৷ তাই পলেস্তারা খসে পড়েছে৷ সেদিন বা তার আগে পরে কোনো একদিন তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি পৌঁছে গিয়েছিল৷ এখানকার অনেক ভবনের এতটা তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা নেই৷ আসলে জার্মানিতে এমন গরম পড়বে, তা এখানকার মানুষ কখনো ভাবেননি৷

এই যেমন গত বছরের কথা৷ গরমের সময়টায় জার্মানির কয়েকটি রাস্তা ফেটে চৌচির৷ তবে বিষয়টা এমন নয় যে, জার্মানিতে গরমে সবসময় এমন হয়৷ কেন? বলছি সে কথা৷

জুন এলেই আমার সেই জার্মান বন্ধুর গল্প মনে পড়ে, যিনি বলেছিলেন, এখানে নাকি একদিনেই চারটি ঋতু দেখা সম্ভব! প্রথমবার যখন এদেশে এলাম, তখন এই কথা হেসেই উঁড়িয়ে দিয়েছিলাম৷ কিন্তু পরে দেখলাম কথা সত্য! একদিকে তুষারপাত, সঙ্গে কড়া ঝকঝকে দুপুরের রোদ৷ একটু পরই বৃষ্টি৷ আর হেমন্তের ঠান্ডা বাতাস৷ যদিও বরফের দেখা জুনে পাওয়া যায় না, তারপরও এই গল্পটি এ সময়েই মনে পড়ে৷ কারণ, এ সময়টাতেই সবচেয়ে অবিবেচকের মতো আচরণ করে আবহাওয়া৷

যেমন প্রথমবার যখন ২০১৭-এর জুনে বনে আসি, বিমান থেকে নেমেই দেখি ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা৷ আমাকে বিমানবন্দর থেকে নিতে এসেছিল যে বাহনটি, তাতে করে আমার জন্য নির্ধারিত অ্যাপার্টমেন্টে পৌঁছাতে লেগেছে বড় জোর ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট৷ আমি তো গাড়িতে ওঠার সময় গরম কাপড় সব ব্যাগে ঢুকিয়ে বেশ ‘সামার অ্যাটিটিউড' নিয়ে পৌঁছালাম৷ গাড়ি থেকে নেমেই টের পেলাম কী ভুলটাই না হলো! তাড়াতাড়ি জ্যাকেট বের করে আবার পরতে হলো৷ কারণ আকাশ একটু মেঘলা হয়ে যাওয়ায় তাপমাত্রা নেমে গেছে দশের কাছাকাছি! 

যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগ

এ বছরও এমন হচ্ছে৷ যেমন আজ তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই৷ তিনদিন আগেও আমি মোটামুটি সাইজের জ্যাকেট পড়ে এসেছি৷ আমি কোন ছাড়! জার্মানদের দেখেছি, গলায় মাফলার জড়িয়ে হাটুঅব্দি ওভারকোট পরে এসেছেন৷ যদিও আমি বা তারা বিকেলে ফেরার সময় এগুলো হাতে করেই ফিরেছি৷ কারণ, তখন গরম বেড়ে গেছে৷

‘আনপ্রেডিক্টেবল' বলতে যা বোঝায়, এখানকার আবহাওয়া দেখে তেমনটি বলা যেতেই পারে৷ তাই এখানে সবাই আবহাওয়ার অবস্থা দেখে ঘর থেকে বের হয়৷ আর তাই আবহাওয়া সংক্রান্ত অ্যাপগুলো এখানে খুবই জনপ্রিয়৷ সারাদিনে কত তাপমাত্রা থাকবে, বৃষ্টি হবে কিনা, শীতের সময় বরফ পড়বে কিনা এ সব জানতে এসব অ্যাপের নেই কোনো বিকল্প৷সবচেয়ে জটিলতা হয় ঋতু পরিবর্তনের সময়৷ কারণ  তাপমাত্রা হয়ত  দেখাচ্ছে, সারাদিনে ১৬ থেকে ২২ থাকবে৷ কিন্তু বিকেলের দিকে হঠাৎ করে ‘অনুভূত তাপমাত্রা' বেজায় কমে গেল! তাই এ সময়টায় থাকতে হয় ‘প্রবল প্রস্তুতি'! অভিমানী  মন বুঝতে আজীবন চেষ্টা করে গেছেন শিল্পী সাহিত্যিকরা৷ জার্মানিতে আবহাওয়াবিদদের অবস্থাও তাই৷ আজ পর্যন্ত একে বুঝতে পারেননি কেউ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ