নাভালনি মামলায় এবার জার্মানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল রাশিয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নকেও ছাড় দেয়া হয়নি।
বিজ্ঞাপন
জার্মানির উপর পাল্টা চাপের রাস্তা তৈরি করল রাশিয়া। রাশিয়ার বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনি মামলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নকে চাপ দিয়েছিল জার্মানি। দ্রুত রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। গত অক্টোবর মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার ঘোষণা করে। এবার জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত জানালো রাশিয়া। জার্মানির এবং ইইউ-র বেশ কিছু কূটনীতিক এবং রাজনীতিকের রাশিয়ায় ঢোকা নিষিদ্ধ করা হলো।
রাজনীতির ইতিহাসে বিষ দিয়ে হত্যার যত চেষ্টা
রাজনীতির ইতিহাসে বিষ দিয়ে মারার চেষ্টা বহুবার হয়েছে – কখনো সফল, কখনো অসফল৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Sazonov
আলেক্সি নাভালনি
রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের কট্টর সমালোচক আলেক্সি নাভালনিকে সাইবেরিয়া থেকে জার্মানিতে নেওয়া হয়েছে৷ নাভালনির শরীরে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন সমর্থকরা৷ ১৯ আগস্ট ৪৪ বছর বয়সি সাবেক এই আইনজীবী চা খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Kudrayavtsev
সের্গেই স্ক্রিপাল
৬৬ বছর বয়সি সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপালকে ব্রিটেনের স্যালিসবেরি শহরের একটি শপিং মলের সামনে অজ্ঞান অবস্থায় একটি বেঞ্চের উপর পাওয়া যায়৷ তিনি কোনো অজ্ঞাত বিষের শিকার হয়েছেন বলে পুলিশের ধারণা৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ এই পরিস্থিতিকে ‘দুঃখজনক’ বললেও যোগ করেছেন যে, ‘‘(ঘটনার) কারণ কী হতে পারে অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কী করেছেন, সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass
কিম জং নাম
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বৈমাত্রেয় ভাই কিম জং নাম ২০১৭ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে প্রাণ হারান৷ দৃশ্যত দুই নারী তাঁর মুখে ভিএক্স নামের একটি রাসায়নিক মাখিয়ে দিয়েছিলেন৷ মালয়েশিয়ার একটি আদালতে অভিযুক্তদের বিচার চলার সময় জানা যায় যে, আক্রান্ত হওয়ার সময় কিম জং নাম-এর পিঠের ব্যাগে ভিএক্স বিষের ডজন খানেক অ্যাম্পুল ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Kambayashi
আলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কো
সাবেক রুশ গুপ্তচর লিটভিনেঙ্কো দেশ ছেড়ে ব্রিটেনে আশ্রয় নেবার পর সাংবাদিকতা শুরু করেন এবং রাশিয়ার ফেডারাল সিকিউরিটি সার্ভিস এফএসবি ও পুটিনের বিরুদ্ধে দু’টি বই লেখেন৷ ২০০৬ সালের ২৩শে নভেম্বর দু’জন সাবেক কেজিবি কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর লিটভিনেঙ্কো অসুস্থ হয়ে পড়েন ও পরে হাসপাতালে প্রাণত্যাগ করেন৷ সরকারি তদন্তে দেখা যায় যে, তেজস্ক্রিয় পলোনিয়াম-২১০ বিষের ক্রিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kaptilkin
ভিক্টর কালাশনিকভ
সোভিয়েত কেজিবি গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক কর্নেল ভিক্টর কালাশনিকভ তখন সাংবাদিক হিসেবে সস্ত্রীক বার্লিনে বসবাস করছিলেন৷ ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে কালাশনিকভ ও তাঁর স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়৷ সেখানে তাদের রক্তে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৭ ও ৫৬ মাইক্রোগ্রাম পারদ পাওয়া যায়৷ স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তে এক থেকে তিন মাইক্রোগ্রাম পারদ থাকা নিরাপদ৷পরে এক সাক্ষাৎকারে কালাশনিকভ বলেন, ‘‘মস্কো আমাদের বিষ দিয়েছে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/RIA Novosti
ভিক্টর ইউশ্চেঙ্কো
ইউক্রেনের বিরোধী নেতা ইউশ্চেঙ্কো ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন ও দেখা যায় যে, একটি ভাইরাল ইনফেকশন ও সেই সঙ্গে রাসায়নিকের বিষক্রিয়ার ফলে তাঁর অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটিস হয়েছে৷ এর ফলে ইউশ্চেঙ্কোর জন্ডিস হয়, মুখ ফুলে যায় এবং ত্বকে এক ধরণের দাগ থেকে যায়, যা ডাইঅক্সিন বিষের প্রভাবে ঘটে থাকতে পারে বলে চিকিৎসকদের ধারণা৷ সরকারি চররা তাঁকে বিষ দিয়েছে বলে ইউশ্চেঙ্কো দাবি করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Leodolter
খালেদ মেশাল
১৯৯৭ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর তারিখে ইসরায়েলের গুপ্তচর বিভাগ হামাস নেতা খালেদ মেশালকে হত্যা করার চেষ্টা করে৷ কথিত আছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্বয়ং নাকি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ মেশাল জর্ডানের আম্মানে অবস্থিত হামাসের কার্যালয় থেকে বেরোনোর সময় দু’জন ইসরায়েলি গুপ্তচর তাঁর কানে কোনো বিষাক্ত পদার্থ স্প্রে করে৷ মেশাল অক্ষতই থাকেন এবং পরে ঐ দুজন ইসরায়েলি গুপ্তচরকে ধরাও সম্ভব হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Sazonov
গেয়র্গি মার্কভ
১৯৭৮ সালে বুলগেরীয় সরকারবিরোধী মার্কভ বিবিসি-তে কাজ শেষ করে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন – হঠাৎ কিছু একটা তাঁর থাই ফুঁড়ে দেয়৷ ওদিকে মার্কভ দেখেন, এক পথচারী তার ছাতা মাটি থেকে তুলছে৷ ছুঁচ ফোটার জায়গাটা ফুলে উঠে চারদিনের মধ্যে মার্কভ প্রাণ হারান৷ ময়না তদন্ত বলে, একটি শূন্য দশমিক দুই মিলিগ্রাম রিসিন বিষের পেলেট থেকে মার্কভের মৃত্যু ঘটেছে৷ পথচারীর ছাতা থেকেই পেলেটটা ছোঁড়া হয়েছিল, বলে অনেকের বিশ্বাস৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/Stringer
গ্রিগরি রাসপুটিন
রুশ বিপ্লবের ঠিক আগে রাসপুটিন একজন আধ্যাত্মিক শক্তিসম্পন্ন গুনিন হিসেবে পরিচিত ছিলেন৷ ১৯১৬ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গের ইয়ুসুপভ প্রাসাদে আসেন প্রিন্স ফেলিক্স ইয়ুসুপভের আমন্ত্রণে৷ প্রিন্স ইয়ুসুপভ তাঁকে পটাসিয়াম সায়ানাইড বিষ মাখানো কেক খেতে দেন ও সায়ানাইড মাখানো পাত্রে সুরা পরিবেশন করেন৷ সেই বিষাক্ত কেক ও সুরা থেকে রাসপুটিনের কিছুই হয় না৷ অতঃপর রাসপুটিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/ IMAGNO/Austrian Archives
9 ছবি1 | 9
ভ্লাদিমির পুটিনের বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনি। অভিযোগ, তাঁকে বিষ দিয়ে মারার চেষ্টা হয়েছিল। বিষপ্রয়োগের পরে নাভালনি জার্মানি চলে আসেন। দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছেন। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসায় সাড়া দেন তিনি। এবং সুস্থ হয়ে ওঠেন। সেই পর্বে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও রাশিয়ার সরকারকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করেছিলেন। পুটিনের কাছে জবাবদিহি চেয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নে একাধিকবার জার্মানি বিষয়টি নিয়ে সরব হয় এবং রাশিয়ার জবাব দাবি করে। রাশিয়া অবশ্য গোড়া থেকে এই ঘটনার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ অস্বীকার করেছে। তবে ইইউ-তে প্রয়োজনীয় প্রমাণ দিতে পারেনি। ফলে গত অক্টোবর মাসে ইইউ রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিছু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়।
মঙ্গলবার রাশিয়ার সরকার তলব করে জার্মান রাষ্ট্রদূতকে। তাঁর হাতে একটি তালিকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। যেখানে বেশ কিছু জার্মান অফিসারের নাম লেখা আছে। তাঁরা কেউ এখন রাশিয়া সফর করতে পারবেন না।
শুধু জার্মানি নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও বেশ কিছু ব্যক্তির তালিকা তৈরি করেছে রাশিয়া। তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফ্রান্স, সুইডেন, জার্মান দূতাবাসের কাছে সেই তালিকাও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির আবেদন করেছিল জার্মানি। মঙ্গলবারের ঘটনার পরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জার্মানি পাল্টা নতুন কোনো পদক্ষেপ নেয় কি না, সেটাই এখন দেখার।