হাফেল নদীর অববাহিকায় পাঁচটি স্থান জুড়ে এ বছরের বুন্ডেসগার্টেনশাউ বা ফেডারাল উদ্যান প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে৷ এবারকার নতুনত্ব: ছোট বাগান৷
বিজ্ঞাপন
২০১৫ সালের বুন্ডেসগার্টেনশাউ বা ফেডারাল উদ্যান প্রদর্শনী৷ হাফেল নদীর অববাহিকায় বিরাট এলাকা জুড়ে একটি রংয়ের সাগর! নদী আর তীরভূমি৷ আগামী অক্টোবর পর্যন্ত দর্শকরা এই ৫৫ হেক্টার আয়তনের প্রদর্শনী চষে ও চেখে বেড়াতে পারবেন৷ ‘‘ব্লু রিবন'' নামধারী হাফেল নদী হল এই প্রদর্শনীর মটো৷ প্রদর্শনীর পাঁচটি স্থানের যোগসূত্র হল এই হাফেল৷ বুন্ডেসগার্টেনশাউ-এর পেট্রা ইয়নশ্কভস্কি বললেন, ‘‘বড় কথা হল, আমরা এই ফেডারাল উদ্যান প্রদর্শনীর জন্য কোনো নতুন জমি নিইনি, নদীর ধারের প্রান্তর কেটে বাগান করিনি৷ বরং মানুষজন যেখানে থাকে, সেখানেই আমরা জায়গা করে নিয়েছি; যেখানে অনেক কিছু দেখার আছে; যার পটভূমিতে আমাদের তৈরি জিনিসগুলো একটা নতুন চেহারা পেয়েছে৷''
ত্রিশটির বেশি বাগানে সর্বাধুনিক ট্রেন্ডগুলি দেখানো হচ্ছে৷ অনেক বাগানেরই ‘থিম' হল এই ফেডারাল উদ্যান প্রদর্শনীরও একটি থিম: জল৷ হাফেল নদীতে খুঁজে পাওয়া টুকরো-টাকরা দিয়েও তাকে ফুটিয়ে তোলা যায়৷ ‘হাফেল অঞ্চল'-এর উদ্ভিদ জগতও এখানে একটা ভূমিকা রেখেছে: জড়িবুটির বাগানে৷
ছোট বাগান, নীল ফিতে ও গির্জা
এবারের প্রদর্শনীর আরেকটি বিষয়বস্তু হল: কম জায়গায় বাগান করা৷ ল্যান্ডস্কেপ গার্ডেনিং বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক শ্র্যোডার বললেন, ‘‘আমি নানা ধরনের পদার্থ, শিল্পকলা দিয়ে ওখানে কিছু একটা সৃষ্টি করতে পারি৷ একটা সুন্দর বাগান সৃষ্টি করার জন্য আমার এক হাজার বর্গমিটার ফাঁকা জমির প্রয়োজন নেই৷''
গাড়ির রাস্তা ধরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পথ৷ ব্রান্ডেনবুর্গ থেকে রাটেনো যাওয়ার সময় বোঝা যায়, এ বছরের গার্টেনশাউ-এর এলাকাটা ঠিক কতবড়! এখানেও সেই ব্লু রিবন হাফেল নদী হল কেন্দ্রবিন্দু৷ তবে দর্শকরা আরো একটা নীল ফিতে দেখে চমকে যান: সেটা হল একটা ইনস্টলেশন৷ একজন বললেন, ‘‘এটা হল ‘ব্লু রিবন' হাফেল নদীর প্রতীক৷ এভাবেই নাকি ব্রান্ডেনবুর্গ থেকে রাটেনো হয়ে হাফেলব্যার্গ পর্যন্ত চলে গেছে৷''
ফেডারাল উদ্যান প্রদর্শনীর পরবর্তী স্থানটিতেও একটি বিশেষ আকর্ষণ আছে৷ সেজন্য আবার হাফেল অঞ্চল পার হয়ে রাটেনো থেকে হাফেলব্যার্গ পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার পথ যেতে হবে৷
জার্মানিতে বসন্ত
রোদের তেজ বাড়ছে, রাতের তুলনায় দিনের ঘণ্টাগুলো বেড়ে চলেছে, মানুষজন বারমুখী – বসন্ত আসছে নিশ্চয়! চলুন একবার আল্পস পর্বতমালা থেকে বাল্টিক সাগর অবধি জার্মান বসন্ত চেখে আসা যাক...
ছবি: picture-alliance/dpa/Hoppe
সুগস্পিৎসে
যাঁরা স্কি খেলতে কিংবা হাইকিং করতে ভালোবাসেন, তাঁরা আল্পস পাহাড়ের উচ্চতায় – যেমন জার্মানির এই সর্বোচ্চ পাহাড়ে – বসন্ত আসার আগেই রোদ ঝলমল আবহাওয়া উপভোগ করতে পারেন৷ মার্চ মাসে সূর্যকিরণের তীব্রতা বাড়ে, তাই সানবার্ন-এর বিপদ থাকে; তবে ইউরোপের মানুষ আবার সূর্যস্নান করে খানিকটা বাদামি হতে পারলে ভারি খুশি...
ছবি: picture-alliance/dpa/Gebert
মাইনাউ দ্বীপ
কন্সটানৎস হৃদের তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ হলো এই মাইনাউ৷ হৃদের তিনদিকে তিন দেশ: জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং অস্ট্রিয়া৷ মাইনাউ তার ফুলের কেয়ারিগুলোর জন্য বিখ্যাত, যা প্রতি বসন্তে বহু পর্যটককে টানে৷
ছবি: Mainau GmbH
মিউনিখ
বাভারিয়া মানেই বিয়ার এবং বিয়ার গার্টেন: অর্থাৎ খোলামেলায় বসে বিয়ার পান করা যায়, এমন রেস্তোরাঁ৷ বাভারিয়ার রাজধানী মিউনিখের ইংলিশ গার্ডেনেও দেখা যাবে সেই দৃশ্য, যদি অবশ্য বসন্ত এসে থাকে – অথবা আসব-আসব করে! বলতে কি, বাকি জার্মানিতেও আজ বিয়ার বাগানের কোনো অভাব নেই...
ছবি: picture-alliance/dpa
বন
সরকারিভাবে বসন্ত শুরু হয় ২০শে মার্চ তারিখে৷ দিনগুলো যখন বড় হতে শুরু করে৷ পশ্চিম ইউরোপে বসন্ত ঋতু হলো মার্চ, এপ্রিল এবং মে, এই তিন মাস জুড়ে৷ তবে পথেঘাটে চেরি গাছে থোকা থোকা গোলাপি ফুল ধরে থাকতে এখনও কিছু দেরি৷
ছবি: Anke Staudacher
ড্যুসেলডর্ফ
ড্যুসেলডর্ফ শহরে রাইন নদের ধারের গাছগুলোতে এখনো নতুন পাতা ধরেনি৷ এই ‘প্লেন’ গাছগুলোর ডালপালা হেমন্তে কিছুটা ছেঁটে দেওয়া হয়, যাতে বসন্তে নতুন পাতা ভরে আসে৷ শহরের মানুষ বছরের প্রথম উষ্ণ দিনগুলিতে রাইনের ধারে হাঁটতে বেরোন৷ এছাড়া নৌকাবিহার করারও ব্যবস্থা আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Maja Hitij
ড্রেসডেন
ড্রেসডেন একটি দেখার মতো শহর: এলবে নদীর ধারে শহরের কেন্দ্রে ব্যারোক স্থাপত্যের নানা নিদর্শন, অপরপারে নতুন নতুন বার, রেস্টুরেন্ট আর ছোট ছোট ফ্যাশনেবল দোকানের কোনো অভাব নেই৷ বসন্ত এলেই পথেঘাটে মানুষের ভিড়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Hiekel
বার্লিন
জার্মানির রাজধানীর কাফেগুলিতে এখনও অতিথিদের পা ঢাকার জন্য কম্বল রাখা আছে – কেননা বেশ ঠান্ডা৷ কিন্তু গরম যত বাড়বে, ততই পর্যটকরা বার্লিনে এসে চমৎকার রোদে উন্টার ডেন লিন্ডেন বুলেভার্ডে উইন্ডো-শপিং করবেন৷
ছবি: Reuters
হামবুর্গ
রোদ থাকলে, হামবুর্গ বন্দরের কাছে এলবে নদীর তীরে ‘নগর-সৈকতে’ মানুষের মেলা৷ ট্রাকে করে বালি এনে এই ‘বেলাভূমি’ তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাল্টিক সাগর
বাল্টিক সাগরের তীরে বাতাস ততটা জোরে বয় না, যেমন উত্তর সাগরের তীরে বয়৷ কাজেই উত্তর সাগরের সৈকতাবাসগুলির চেয়ে বাল্টিকের সৈকতাবাসগুলিতে ‘বিচ চেয়ার’ অনেক আগে থেকেই দেখা দেয়৷ বহু মানুষ বালটিকের এই প্রাক-বসন্ত নির্জনতা উপভোগ করেন৷
ছবি: picture alliance/blickwinkel
9 ছবি1 | 9
এখানে একটি গির্জাই হল প্রদর্শনীর স্থান৷ ‘‘বসন্তের আগমন''-এর মতো বিষয়টিকে গির্জার আলো-আঁধারিতে স্থান দেওয়া এক দুঃসাহসিক পরিকল্পনা৷ উদ্যানকর্মী মাটিয়াস কুকলিক বললেন, ‘‘এখানে আমরা প্রায় ৮০০ থেকে হাজার লাক্সের আলো রেখেছি৷ আমরা ঝারি নিয়ে ফুলগাছগুলোর মধ্যে দিয়ে যাবো আর অতি সাবধানে জল দেবো, যাতে অংশত কাঠের, অংশত পাথরের এই সুপ্রাচীন মেঝের কোনো ক্ষতি না হয়৷ সেজন্য অতি সাবধানে জল দিতে হবে৷''
বুন্ডেসগার্টেনশাউ চলবে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত: হাফেল অঞ্চলের পাঁচটি স্থান মিলিয়ে মোট দশ লাখ ফোটা ফুল দেখার সুযোগ পাবেন দর্শকরা৷