জার্মানির উত্তর সাগর অঞ্চলের মাডফ্ল্যাট এলাকার প্রকৃতি সত্যি অপরূপ সুন্দর৷ এই ওয়েটল্যান্ড এলাকা যথেষ্ট পর্যটক আকর্ষণ করে৷ বিশ্ব প্রাকৃতিক সম্পদের স্বীকৃতি পাওয়ার পর সেখানে পরিবেশ সংরক্ষণও বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
ভাটার টানে জার্মানির উত্তর সাগর উপকূল শুকিয়ে যায়৷ নানা রকম উদ্ভিদ ও প্রাণীর আকর্ষণে পর্যটকরা সেখানে ভিড় করেন৷ মে মাসের শেষে সমুদ্র থেকে অসংখ্য হার্বার সিল এসে বালুর উপর বিশ্রাম নেয়৷ জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত তারা সেখানে বাচ্চার জন্ম দেয়৷
মানুষের প্রভাবের কারণে জার্মানির উপকূলবর্তী ওয়েটল্যান্ড এলাকা বেশ নাজুক হয়ে উঠেছে৷ ২০০৯ সালে এই এলাকা বিশ্ব প্রাকৃতিক সম্পদের স্বীকৃতি পাওয়ায় জার্মানির পরিবেশবিদরা অবশ্য অত্যন্ত গর্বিত৷ ন্যাশানাল পার্ক সেন্টারের ক্রিস্টিয়ানে গেটইয়ে বলেন, ‘‘একসময় যখন এসএমএস-টা এল, যে আমরা বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি, তখন আমরা শ্যাম্পেন খুলেছিলাম৷ ভীষণ আনন্দ হয়েছিল৷ কয়েকদিন পর একটা লাইটহাউসে স্থানীয় মানুষের সঙ্গে উৎসবে মেতে উঠেছিলাম৷''
ট্যোনিং শহরে ন্যাশানাল পার্ক সেন্টার মুল্টিমার ভাটফোরুম-এ পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা অত্যন্ত যত্ন নিয়ে গোটা অঞ্চল চিনিয়ে দেন৷ ২০০৯ সালে ইউনেস্কো সেখানে পর্যটন সংক্রান্ত কর্মসূচি দেখতে চেয়েছিল৷ তখন থেকে পরিবেশের ক্ষতি না করে পর্যটনের উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷
পর্যটকদের আকর্ষণ করে জার্মানির যে দ্বীপগুলি
জার্মানিতে প্রায় ৮০টি দ্বীপ রয়েছে এবং বেশিরভাগের অবস্থান পূর্বে বাল্টিক সাগর এবং পশ্চিমে উত্তর সাগরে৷ এই ছবিঘরে জার্মানির দ্বীপপুঞ্জের কিছু নমুনা পাওয়া যাক৷
ছবি: picture alliance / Hinrich Bäsemann
জার্মানির উত্তরে
উত্তরে শ্লেসভিক হলস্টাইন রাজ্যের পশ্চিম উপকূলের কাছে ওয়াডেন সাগরে অবস্থিত উত্তর ফ্রিসিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কিছু দ্বীপ৷ জার্মানির সবচেয়ে বড় দ্বীপ স্যুল্ট জার্মানি থেকে ডেনিশ উপকূল পর্যন্ত প্রসারিত৷ এখানকার মানুষরা ইংরেজি, ডেনিশ এবং ডাচ ভাষার মিশ্রণে অদ্ভুত এক আঞ্চলিক ভাষা ‘স্যালরিং’-এ কথা বলে৷
ছবি: Sven Hoppe/AFP/GettyImages
গভীর সাগরের গ্ল্যামার
নিউইয়র্কের হ্যামস্টনস যেমন,জার্মানিতে স্যুল্ট-ও তেমনি দ্বীপ৷ জার্মানির এলিট শ্রেণি এবং পর্যটকরা আসেন রেড ক্লিফ-এর মতো একটি ক্লাবে গ্ল্যামার উপভোগ করতে এবং সেলিব্রেটিদের দেখার জন্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রুগেন দ্বীপের দুর্লভ সময়
জার্মানির রুগেন দ্বীপের অবস্থান জার্মানির পূর্বাঞ্চলে বাল্টিক সাগরের কাছাকাছি৷ ২০১৩ সালে এই দ্বীপে এক কোটিরও বেশি মানুষ রাত কাটান৷ এখানে আলোকসজ্জ্বায় সজ্জিত সাগরপাড়ের অবসর যাপন কেন্দ্র সেলিন-এ পর্যটকরা আনন্দের সাথে কনসার্ট উপভোগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মধ্যযুগীয় উত্তরাধিকার
রাইশেনাউ দ্বীপটির অবস্থান জার্মানির দক্ষিণের সীমান্তে অবস্থিত লেক কন্সটানৎস-এর কাছাকাছি৷ এই দ্বীপটি আবিষ্কৃত হয় ৭২৪ সালে আর ২০০২ সাল থেকে এটি বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নেদারল্যান্ডস-এর উত্তরে
ঐতিহাসিক দলিলপত্রে সরকারিভাবে বরকুম দ্বীপের প্রথম উল্লেখ দেখা যায় ১৩৯৮ সালে৷ সে সময় দ্বীপটি ছিলো জলদস্যুদের স্বর্গ৷ বর্তমানে উত্তর সাগরের এই দ্বীপে বসবাস করে আনুমানিক পাঁচ হাজার মানুষ৷ হোটেলগুলোর অবস্থান একেবারে সাগরের গা ঘেঁষে৷ ১৮৩০ সাল থেকে এই সমুদ্র সৈকত অবসর যাপন কেন্দ্র৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur Huber
হেলগোলান্ড-এর প্রাকৃতিক টাওয়ার
জার্মানির উপকূল থেকে একমাত্র হেলগোলান্ড দ্বীপে যেতেই নৌকায় প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগে৷ পরিবেশ রক্ষার জন্য এখানে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ৷ বালির পাথর ‘টল আনা’ এই দ্বীপের বড় চিহ্ন৷
ছবি: picture alliance / Hinrich Bäsemann
6 ছবি1 | 6
বার্লিনের সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ ক্লাউডিয়া গ্র্যুনব্যার্গ এ ক্ষেত্রে জার্মানি, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস-এর মধ্যে সহযোগিতার ঢালাও প্রশংসা করেন৷ ক্লাউডিয়া বলেন, ‘‘তারা মাডফ্ল্যাট সেক্রেটেরিয়েট গড়ে তুলেছে৷ এই তিনটি দেশ অত্যন্ত নিবিড়ভাবে কাজ করে চলেছে৷ এটা সত্যি খেয়াল করার মতো, কারণ আন্তর্জাতিক সীমা অতিক্রম করে এই আইডিয়াই তো বিশ্ব ঐতিহ্য কনভেশনের মূলমন্ত্র৷ প্রকৃতি বা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷''
এক্ষেত্রে বিশেষ করে পরিজায়ী পাখির সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তারা এই অঞ্চলে খাদ্য ও আশ্রয় খোঁজে৷ শুধু পক্ষিবিশারদ নয়, সবার জন্যই এটা অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য৷
‘লাগওয়ার্ম' বা স্থানীয় কেঁচোর মতো প্রাণীর আকর্ষণও কম নয়৷ তারা বালু খেয়ে বেঁচে থাকে৷ প্রতিটি কেঁচো বছরে প্রায় ২৫ কিলো বালু খায়৷