বখুম শহরে রয়েছে জার্মানির একমাত্র ইন্টারনেট স্কুল৷ পপতারকা কিংবা অটিস্ট – সে যাই হোক না কেন সবাই সেখানে পড়াশোনার সুযোগ পায়৷ সকাল-সকাল ওঠা, স্কুলে যাওয়ার তাড়া নেই৷ কারণ এর মাধ্যমেই তারা স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির স্কুলগুলিতে গ্রীষ্মের ছুটি চলছে এখন৷ মিউনিখের ১৩ বছরের লিলির জন্য এটা কোনো বিষয় নয়৷ সে এখনও ক্লাস করছে৷ একইসঙ্গে বাবা-মার সঙ্গে টোঙ্গায় ছুটিও কাটাচ্ছে৷ তার মা-বাবা সেখানে একটি হোটেল চালান৷ লিলিও বছরে তিন মাস তাঁদের সঙ্গে সেখানে কাটায়৷ জার্মানি থেকে রবিন শাডে তাকে স্কাইপের মাধ্যমে গণিত ও ইংরেজি ব্যাকরণ পড়ান৷
লিলি মিউনিখে হাইস্কুল বা গিমনাসিয়ুমে পড়ে৷ পড়াশোনায় যাতে বাধা না পড়ে, সেজন্য টোঙ্গাতে বসেও সুবোধ ছাত্রীর মতো ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছে সে৷ আর এক্ষেত্রে সাহায্য করছে জার্মানির একমাত্র ইন্টারনেট স্কুল৷ লিলি জানায়, ‘‘তিন বছর আগে আমি এটা শুরু করেছি৷ সত্যি খুব ভাল হচ্ছে৷''
জীবনের জন্য শিক্ষা
পুরো ইউরোপে নতুন ক্লাসে উঠেছে শিক্ষার্থীরা৷ শুরু হয়েছে নতুন বছর৷ লেবাননে সিরীয় শরণার্থী শিশুদের কি অবস্থা? দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়ে কেউ স্কুলে পড়ালেখা করলেও, অনেকের জীবনেই নেমে এসেছে বিপর্যয়৷
ছবি: Amy Leang
থেরাপি
বৈরুতের এই স্কুলে যে শিক্ষার্থীদের দেখছেন তারা সিরিয়ার শরণার্থী৷ স্কুলে গান গাইছে তারা৷ এটা একটা থেরাপি যাতে যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি এবং আতঙ্ক কাটাতে পারে তারা৷ এছাড়া এখানে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে তারা৷
ছবি: Amy Leang
দ্বিতীয় জীবন
শিশুদের এমনভাবে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে যেন তারা লেবাননের সরকারি স্কুলে পড়তে পারে৷ এদের মধ্যে একজন সুজানে৷ বড় হয়ে শিল্পী হতে চায় সে৷ স্কুলে পড়ালেখা ছাড়া এই স্বপ্ন পূরণ হবে না, তাই শিক্ষাগ্রহণকে সুজানে ‘দ্বিতীয় জীবন’ বলে মনে করছে৷
ছবি: Amy Leang
পরিবারের সহায়তা নেই
বৈরুতের ঐ স্কুলটিতে অঙ্কের ক্লাসে দেখা যাচ্ছে ডায়নাকে৷ ডায়নার মতো সিরিয়ার এই শরণার্থী শিশুদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পরিবারের কোনো সহায়তা পায় না তারা, এমনকি বাড়িতে পড়ানোর মতো কেউ নেই৷ স্কুলই পড়ার একমাত্র জায়গা৷
ছবি: Amy Leang
চিন্তার শক্তি
শিশুরা এই স্কুলে একবেলা খেতে পায়৷ যে বেসরকারি সংস্থাটি স্কুলটি পরিচালনা করছে, তার এক কর্মকর্তা জানালেন, একটি গির্জার সহায়তায় এই শিশুদের পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ এই শিশুরা ঐ এলাকার আশপাশেই থাকে এবং সেখানকার বাড়ি ভাড়া প্রতি মাসে ৪০০ থেকে ৫০০ ডলার৷ ফলে পরিবারের উপার্জনের প্রায় পুরোটাই বাড়ি ভাড়ায় চলে যায়৷ খাবারের জন্য অর্থ থাকে না৷
ছবি: Amy Leang
বাড়ি থেকে বাড়ি
এই শরণার্থী পরিবারগুলো এমন অ্যাপার্টমেন্টে থাকে, যেখানে হয়ত সিঁড়ির নীচে বা ছাদের চিলেকোঠায় মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে তারা৷
ছবি: Amy Leang
সৃজনশীলতা
১২ বছর বয়সি আশতাকে সৃজনশীল লেখা লিখতে বলা হয়েছে৷ তাই হয়ত জানলার বাইরে তাকিয়ে সে চিন্তা করছে কি লেখা যায়৷ এর মাধ্যমে নিজের মানসিক চাহিদাগুলোর বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে তারা৷
ছবি: Amy Leang
হারিয়ে যাওয়ার পথে যে প্রজন্ম
নিজেদের ভাড়া বাড়িতে শিশুদের অঙ্ক বাড়ির কাজ নিয়ে বসেছেন বাবা-মা৷ সিরিয়ার কৃষক বাবা জানালেন, ‘‘আমি তাদের এখানে নিয়ে এসেছি৷ কারণ আমার ধারণা তারা সিরিয়ায় থাকলে অশিক্ষিতই থেকে যেত৷ এটা একটা বড় ধরনের ভুল৷ এর সমাধান করতে না পারলে একটা পুরো প্রজন্ম হারিয়ে যাবে৷’’
ছবি: Amy Leang
সময়ের অপচয়
লেবাননে থাকা যেসব শরণার্থী শিশুরা স্কুলে যায় না, তাদের পুরো সময়টা কাটে টিভি দেখে বা খেলাধুলা করে৷ এনজিওটি জানালো বর্তমানে ৪ লাখ শরণার্থী শিশু রয়েছে৷ কিন্তু মাত্র ৯০ হাজার স্কুলে যায়৷
ছবি: Amy Leang
পথেই জীবন
নারিমান, বয়স ৭৷ এত অল্প বয়সেই সে জীবিকার পথ বেছে নিয়েছে৷ রাস্তায় রাস্তায় টিস্যু পেপার বিক্রি করে সে৷ তার চাচা তাকে এগুলো বিক্রি করতে দিয়েছে, তবে শর্ত হলো সন্ধ্যা ৬ টার আগে চাচার হাতে ১২,০০০ লেবানিজ পাউন্ড অর্থাৎ প্রায় ৮ ডলার তুলে দিতে হবে৷ তাই দিনের প্রায় পুরোটা সময় রাস্তাতেই কাটে তার৷
ছবি: Amy Leang
লক্ষ্যভ্রষ্ট
লেবানন-সিরিয়া সীমান্তের কাছে আরো একটি স্কুল খুলেছে বেসরকারি সংস্থা সাওয়া৷ সংস্থার এক কর্মী বললেন, ‘‘এই শিশুগুলো এমন আতঙ্ক ও ভয়াবহ একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে, এখন কোনো কিছুতেই তাদের কিছু যায় আসে না৷ পরোয়া করে না তারা৷
ছবি: Amy Leang
10 ছবি1 | 10
তিন মাস টোঙ্গাতে থাকাকালীন বখুমের ‘ওয়েব ইনডুভিজুয়াল স্কুল'এর দুজন শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করে সে৷ এই ব্যবস্থা না থাকলে লিলিকে দীর্ঘদিনের জন্য টোঙ্গাতে আনা সম্ভব হতো না বলে জানিয়েছেন তার মা-বাবা৷
তবে ইন্টারনেট স্কুলটি পরীক্ষা নিতে বা নম্বর দিতে পারে না৷ ছাত্রছাত্রীদের তাদের হাউপ্টশুলে কিংবা রেয়ালশুলের ফাইনাল পরীক্ষা দিতে হয় কোনো সহযোগী স্কুলে, সরকার অনুমোদিত পরীক্ষা-কমিশনের সামনে৷ এ পর্যন্ত ১৫০-এর বেশি শিক্ষার্থী ওয়েব স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে বের হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত কেউ ফেল করেনি৷
‘টোকিও হোটেল' সংগীত গোষ্ঠীর দুই ভাই বিল ও টম কাইলিৎস এই স্কুলেই পড়াশোনা করেছেন৷ জাপান বা অ্যামেরিকা যেখানেই তারা গিয়েছেন, সেখানেই তারা হোটেলে বসে পড়াশোনা করেছেন৷ ইংরেজির পাশাপাশি গণিত ও ভূগোলে জ্ঞান অর্জন করেছেন জার্মান ভাষায়৷ শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে৷ কোনো জার্মান প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যারা বিদেশে কর্মরত, তাদের সন্তানরাও ইন্টারনেট স্কুলের সাহায্য নিয়ে থাকে৷
অধিকাংশই কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত
ওয়েব স্কুলের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই শারীরিক বা মানসিক ক্রনিক রোগে আক্রান্ত, যাদের পক্ষে সাধারণ স্কুলে যাওয়া সম্ভব নয়৷ মাসে ৭৮০ ইউরো টিউশন ফি বহন করে ভারপ্রাপ্ত যুবদপ্তরগুলি৷
শুরুতে ইমেলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্কুলের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতো৷ ২০০৪ সাল থেকে পরিবর্তন শুরু হয়৷ আজ স্কাইপ, মোবাইল ও চ্যাটের মাধ্যমে ক্লাস করানো হয়৷
পড়াশোনা বা ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা হলে অনেক রাতেও শিক্ষকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলা যায়৷ সাতজন শিক্ষক বখুম ও রুর অঞ্চলের আশেপাশের জায়গায় বসবাস করেন৷ অর্থাৎ ক্লাসরুমবিহীন স্কুলটি থেকে খুব বেশি দূরে থাকেন না তাঁরা৷ নিয়মিত স্কুলে চাকরি করার সুযোগ থাকলেও ওয়েব স্কুলে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই শিক্ষকরা৷
জার্মানিতে শিক্ষার্থীরা যেভাবে বসবাস করেন
এর আগে কখনো প্রথম সেমিস্টারে এত ছাত্র দেখা যায়নি৷ ক্লাসে পড়াশোনার পাশাপাশি একটি থাকার জায়গাও তো চাই? থাকার জায়গা পাওয়া কিন্তু মোটেই সহজ ব্যাপার নয়৷ এই ছবিঘরের মধ্য দিয়ে জানা যাক কে কোথায় জায়গা পায়৷
ছবি: DW/V. Wüst
অনিশ্চয়তা
নতুন সেমিস্টার শুরু হয়েছে, কিন্তু হোস্টেলগুলোতে জায়গা নেই৷ এখন শিক্ষার্থীরা কি করবে? মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই তো চাই! একটা ব্যবস্থা তো করতেই হবে! মিউনিখ এবং ফ্রাংকফুর্ট সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর৷ বাভারিয়া রাজ্য একটি ঘর ভাড়া গড়ে ৪৯৩ ইউরো আর ফ্রাংকফুর্টে ৪২১ ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মায়ের কাছে থাকা
শতকরা ২৭ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনার সময় মায়ের কাছেই থাকে৷ এতে করে শুধু যে খরচ কম হয় তা নয়, মায়ের কাছে থাকার আরামই আলাদা৷ কাপড়চোপড় সবসময় ধোঁয়া থাকে আর ফ্রিজ থাকে ভর্তি, অর্থাৎ খাওয়া-দাওয়ার চিন্তা নেই৷ তাছাড়া সন্তান যত বড়ই হোক না কেন বাবা-মায়ের কাছে তারা সবসময়ই আদরের৷
ছবি: Fotolia/Jeanette Dietl
জরুরি অবস্থায় জিমে থাকা
প্রথম সেমিস্টারে প্রায় সমস্যা হয় বড় শহরগুলোতে, বিশেষ করে মিউনিখ, কোলোন বা ফ্রাংকফুর্টে৷ এত ভাড়া দিয়ে অনেকের পক্ষেই বাসা নেওয়া সম্ভব হয় না, তাই অনেক সময় ক্যাম্পাসের জিমে একটি ম্যাট্রেস পেতেই রাতে ঘুমোতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হোস্টেলে জায়গা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার!
শতকরা মাত্র ১২ জন ছাত্র হোস্টেলে জায়গা পেয়ে থাকে৷ বেশিরভাগ সময় সেখানে দুই তিনজনকে একসাথে থাকতে হয়৷ কোলোনের একটি ছাত্রদের হোস্টেলের ভাড়া ২৩০ ইউরো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
থাকার জন্য কন্টেনার
৮০’র দশক থেকেই অনেক ছাত্র কন্টেনার-এ থাকা শুরু করে৷ কন্টেনার ঘরগুলো খুবই ছোট ছোট৷
ছবি: Manfred Kovatsch
নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে থাকা
কোনো কোনো মালিক তাঁদের ফ্যাক্টরি, হাসপাতাল বা স্কুলের ঘরগুলো একেবারে খালি রাখতে চান না৷ তাই অনেক সময় ছাত্রদের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে সেখানে থাকতে দেন৷ তবে সেখানে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়৷ যেমন ধূমপান করা, কুকুর-বেড়াল পোষা বা কোনো ধরনের পার্টি করার অনুমতি থাকেনা সেখানে৷
ছবি: DW/L.Heller
বিদায় বাড়ি !
তবে সব শিক্ষার্থী কিন্তু বাবা-মায়ের সাথে থাকতে পারেনা কারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রায়ই থাকে বাড়ি থেকে অনেক দূরে৷ অর্থাৎ মায়ের হোটেল থেকে এবার বিদায়ের পালা!
ছবি: DW/V. Wüst
7 ছবি1 | 7
অটিস্টরাও আবরণ ছাড়তে পারে
আনা গেবার্স-ফ্রিটশে দুই বছর ধরে ১২ বছরের লেওনকে পড়াচ্ছেন৷ ছেলেটি অটিস্ট৷ অ্যাসপারজার্স সিনড্রোমে ভুগছে সে, অর্থাৎ মানুষের সংস্পর্শ পছন্দ নয় তার৷ তাই সানটেন শহরের হাউপ্টশুলেতে তাল সামলাতে পারছিল না লেওন৷ এখন সে নব উদ্যোমে ওয়েব স্কুলে পড়াশোনা করছে৷
কম্পিউটারের ‘পর্দার আড়ালে' মানুষের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করতে পারছে সে, বলেন শিক্ষিকা আনা৷ গতানুগতিক স্কুলে অটিস্টরা আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে আড়ষ্ট বোধ করে ও নিজেকে গুটিয়ে রাখে৷
আগ্রহ অনুযায়ী পাঠ্যসূচি
বখুমের ওয়েব স্কুলের শিক্ষকদের অধিকাংশই অতিরিক্ত বিশেষ কোর্স করেছেন৷ এছাড়া একজন মনস্তত্ত্ববিদ শিক্ষকদের সহায়ক হিসাবে পাশে থাকেন৷ বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কীরকম আচরণ করা উচিত, সে সম্পর্কে পরামর্শ দেন তিনি৷ ইন্টারনেট স্কুলের পাঠ্যসূচিও তৈরি করা হয় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ অনুযায়ী৷ যেমন অংক ক্লাসে হিসাব কষে বের করতে হয়, ফর্মুলা ওয়ান চ্যাম্পিয়ন সেবাস্টিয়ান ফেটেল বছরে কত কিলোমিটার পার করেছেন৷ ভূগোলে সেই সব দেশ সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করা হয়, যেসব দেশে ফর্মুলা ওয়ান-এর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷
ইন্টারনেট স্কুল থেকে পাস করে বের হয়েছে ১৯ বছরের লিন মাক্স কেম্পেন৷ টেনিস খেলাকে ক্যারিয়ার হিসাবে বেছে নিয়েছে এই তরুণ৷ দৈনিক ছয় ঘণ্টা ট্রেনিং ছাড়াও বিভিন্ন দেশে টুর্নামেন্টে যেতে হয় তাকে৷ পাশাপাশি রেয়ালশুলের পরীক্ষার প্রস্তুতি সহজ ছিল না৷ ওয়েব স্কুলের সহায়তায় এই বৈতরণি পার হয়েছে লিন৷