জার্মানির সামরিক বাহিনীর এলিট ইউনিট ‘কমান্ডো স্পেৎসিয়ালক্র্যাফ্টে' বা কেএসকে-র বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে৷ এই ইউনিটের অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে উগ্র ডানপন্থি মতাদর্শের প্রতি সমর্থন থাকার অভিযোগ উঠেছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘মিলিটারি কাউন্টারইন্টেলিজেন্স সার্ভিস' বা এমএডি এই তদন্ত করছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে৷
এর আগে জার্মানির সামরিক বাহিনীর মধ্যে থাকা উগ্র ডানপন্থি মতাদর্শের সমর্থনকারী সৈন্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে৷ তবে এই প্রথম এলিট ইউনিট কেএসকে-র কমান্ডোদের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে৷
কেএসকে-র সদস্য সংখ্যা প্রায় ১,১০০৷ বলকান ও মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনায় প্রায়ই এই ইউনিটের সহায়তা নিয়ে থাকে ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র৷
বিভিন্ন নিরাপত্তা সূত্র স্পিগেল ম্যাগাজিনকে জানিয়েছেন, কেএসকে-তে উগ্র-ডানপন্থি মতবাদের সমর্থনকারী সৈন্যের সংখ্যা ‘অনেক বেশি'৷
দেশে দেশে উগ্রপন্থিদের পুনর্বাসন
উগ্রবাদে জড়িতদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকে বিভিন্ন দেশ৷ কোনো কোনো দেশ সে কাজে সাফল্য পেয়েছে, আবার কোথাও কাজ এখনো চলমান৷ চলুন দেখে নিই কয়েকটি দেশের উগ্রপন্থি পুনর্বাসন প্রক্রিয়া৷
ছবি: picture alliance / akg-images
নাৎসিদের পুনর্বাসন, জার্মানি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নাৎসিবাদের বিলোপের পাশাপাশি যারা হত্যা-নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়৷ নাৎসি পার্টি ও অনুগত সংগঠনের লোকদের মূল অপরাধী, অপরাধী, কম অপরাধী, অনুগত এবং খালাস ক্যাটেগরিতে চিহ্নিত করা হয়৷ প্রথম তিন শ্রেণিকে আনা হয় বিচারের আওতায়৷ ১৯৫০ সাল পর্যন্ত চলে ডিনাজিফিকেশন৷ পরে নাৎসি অনুগতদের নাগরিক অধিকার দেওয়া হলেও অপরাধীদের বিচার এখনো চলছে৷
ছবি: picture alliance / akg-images
তামিল টাইগার, শ্রীলঙ্কা
২০০৯ সালে তামিল টাইগার বিদ্রোহীদের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়৷ আটক ১১,৬৬৪ জন যোদ্ধাকে পুনর্বাসনের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নেয় সরকার৷ ৬+১ মডেলে শুরু হয় এই পুনর্বাসন কার্যক্রম৷ এর মধ্যে যোদ্ধাদের জন্য ১. শিক্ষা, ২. কারগরি, ৩. মানসিক ও সৃজনশীল থেরাপি, ৪. সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পারিবারিক কার্যক্রম ৫. আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় এবং ৬. বিনোদনমূলক কার্যক্রম নেয়া হয়৷ পাশাপাশি চলে ‘কমিউনিটি পুনর্বাসন’ কাযর্ক্রম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/str
উইঘুর জঙ্গিদের পুনর্বাসন, চীন
উইঘুর মুসলিম জঙ্গিদের দমনে ডিব়্যাডিকালাইজেশনের সঙ্গে পুনর্বাসন কার্যক্রম হাতে নেয় চীনের জিনজিয়াং প্রদেশ৷ এর মধ্যে কারা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, ধর্মীয় কাউন্সেলিং, নাগরিক সমাজের পরামর্শ গ্রহণ এবং উগ্রবাদ থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের দিয়ে উগ্রবাদবিরোধী বক্তব্য প্রচারের উদ্যোগ ছিল৷ সাজা মওকুফ করা হয় জঙ্গিদের কারো কারো৷ যাদের সাজা শেষ কিংবা মওকুফ হয়, তাদের চাকরি ও সমাজে অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়াও আছে চীনে৷
ছবি: Getty Images/K. Frayer
মুসলিম উগ্রপন্থিদের পুনর্বাসন, সিঙ্গাপুর
ইসলামি পণ্ডিত ও শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত সিঙ্গাপুরের রিলিজিয়াস রিহ্যাবিলিটেশন গ্রুপ (আরআরজি) উগ্রবাদীদের সঠিক পথে ফেরানোর কাজে সরকারকে সহায়তা করে৷ ২০০৩ সালে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জেমাহ ইসলামিয়া-কে পুনর্বাসনের জন্য এর কার্যক্রম শুরু হয়৷ গ্রেপ্তার হওয়া উগ্রবাদীদের পরিবারকে কাউন্সেলিং ও আর্থিক সহায়তা দিতে কাজ করে তারা৷ এ পর্যন্ত দেড় হাজার কাউন্সেলিং সেশন করে সুনাম কুড়িয়েছে গ্রুপটি৷ মোবাইল অ্যাপও আছে তাদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সন্ত্রাসী পুনর্বাসন, নাইজেরিয়া
তেল নিয়ে সংঘাতে জড়িত নাইজার ডেল্টা মিলিট্যান্টদের ২০০৯ সালে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করে নাইজেরিয়া৷ জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা হয়৷ দেশে-বিদেশে দেওয়া হয় প্রশিক্ষণ৷ স্কিল ট্রেইনিংয়ের পর তাদের ৪৩৯ মার্কিন ডলার করে মাসিক ভাতাও দেয়া হয়৷ ২০১৬ সাল থেকে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারামের পুনর্বাসন কাজ চলছে৷ জঙ্গিদের পাশাপাশি সংঘাতে বাস্তুচ্যুতরাও আছেন এই প্রক্রিয়ায়৷
ছবি: Reuters/A. Sotunde
কমিউনিস্ট ও আইএস জঙ্গিদের পুনর্বাসন, মালয়েশিয়া
১৯৪৮ থেকে ১৯৬০ সালে মালয়ান ইমারজেন্সির সময়ে কমিউনিস্টদের পুনর্বাসনের যে ধারা মালয়েশিয়ায় চালু হয়েছিল, সেটি এখনো অন্যভাবে চালু আছে৷ সেই প্রক্রিয়ায় ২০১৭ সালের দিকে ২৫০ জন আইএস জঙ্গিকে ধরা হয় এবং তাদের অনেককে বিচারের পাশাপাশি পুনর্বাসন করা হয়৷ মূলধারার মূল্যবোধ শেখানো, অর্থ সহায়তা ও ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণসহ নানা উদ্যোগ থাকে তাদের এই পুনর্বাসন কার্যক্রমে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Xinhua
পুনর্বাসনে উদাহরণ তৈরি করেছে সৌদি আরব
২০০৪ সালে কয়েকটি জঙ্গি হামলার শিকার হলে উগ্রবাদীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় সৌদি আরব৷ কারাগার ও ওপেন সোসাইটির মিশেলে ৫টি পুনর্বাসন কেন্দ্র খোলে তারা৷ শিক্ষা, খেলাধুলা ও বিনোদনসহ নানা ব্যবস্থা রাখা হয় সেখানে৷ সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫০০ জন সঠিক পথে ফিরেছেন, যাদের মধ্যে ১২৩ জন গুয়ানতানামো কারাগারে ছিলেন৷৮০ ভাগ সাফল্যের দাবি তাদের৷ সেখান থেকে ফিরে আবার জঙ্গিবাদে জড়ানোর কিছু উদাহরণও আছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Pain
7 ছবি1 | 7
জার্মানির উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী গেয়ার্ড হুফে সংসদীয় এক কমিটিকে বলেছেন, কেএসকে ইউনিটে চরমপন্থার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে৷
বাভারিয়া রাজ্যে অবস্থিত কেএসকে ইউনিটের ফ্রানৎস-ইওসেফ-স্ট্রাউস ক্যাম্পে সমস্যা বেশি বলে জানিয়েছে ‘রিডাকসিউনসনেৎসভ্যার্ক ডয়েচলান্ড'৷ নব্বই দশকের একটি ঘটনার জন্য ক্যাম্পটি বেশ পরিচিত৷ সেই সময় ক্যাম্পের সৈন্যরা হিটলারের জন্মদিন পালন ও নাৎসি পার্টির সংগীত গাইতে গিয়ে এমএডির গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েছিলেন৷
কেএসকে ইউনিটের যে সদস্যদের সঙ্গে জার্মান সেনাবাহিনীর সদস্য ফ্রাঙ্কো এ.-র সম্পর্ক রয়েছে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে৷ ফ্রাঙ্কো এ. ২০১৭ সালে ভিয়েনা বিমানবন্দরে নিজের লুকিয়ে রাখা অস্ত্র বের করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন৷ পরে তাঁর বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ ও ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা ‘শরণার্থীবান্ধব' তাঁদের উপর হামলা পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়েছিল৷