বুধবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও মুখ্যমন্ত্রীদের আলোচনার পর বর্তমান কড়াকড়ির মেয়াদ আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তবে কিছু ক্ষেত্রে বিধিনিয়ম শিথিল করা হবে৷
বিজ্ঞাপন
করোনা সংক্রমণ মোকাবিলা করতে পুরোপুরি লকডাউনের পথে না গিয়ে দুইয়ের বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছিল জার্মানি৷ মানুষের মধ্যে কমপক্ষে দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটার ব্যবস্থা ছাড়া দোকানবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি অনেক স্থাপনা বন্ধ রাখা হয়েছিল৷ কিন্তু ইস্টারের পর বিধিনিয়ম অন্তত কিছুটা শিথিল করার জন্য সরকারের উপর চাপ বাড়ছিল৷
এই অবস্থায় জার্মানির ১৬টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে আলোচনা করেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ বুধবার সন্ধ্যায় ম্যার্কেল এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন৷
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার ফলে করোনা সংকট নিয়ন্ত্রণে আনতে সাফল্য এলেও সেই সাফল্য অত্যন্ত ভঙ্গুর বলে মনে করেন ম্যার্কেল৷ তাই বর্তমান বিধিনিয়ম আপাতত ৩রা মে পর্যন্ত চালু রাখার সিদ্ধান্তের ঘোষণা করেন তিনি৷ ম্যার্কেল বলেন, দুই সপ্তাহ অন্তর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ মানুষের প্রাণ বাঁচানোর বিষয়টিকেই সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে৷ তাই সংক্রমণ প্রতিরোধ যতটা সম্ভব নিশ্চিত করে তবেই কোনো ক্ষেত্রে বিধিনিয়ম শিথিল করা হবে৷
অন্যদিকে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করতে কিছু ক্ষেত্রে নিয়ম শিথিল করছে ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলি৷ যেমন কিছু ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে৷ এর আওতায় স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত কড়া নিয়ম মেনে আরও কিছু দোকানবাজার খোলা হবে৷ ৪ঠা মে থেকে ধাপে ধাপে স্কুল খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ তবে প্রথমে শুধু উঁচু ক্লাসের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল খোলা হবে৷
জার্মানিতে নার্স: হাততালি বেশি, বেতন কম
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছেন বলে বিভিন্ন দেশের মতো জার্মানির নার্সরাও এখন হাততালি পাচ্ছেন৷ কিন্তু কয়েক বছর ধরে বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসা এই স্বাস্থ্যকর্মীরা মনে করেন তাদের জন্য শুধু হাততালি যথেষ্ট নয়৷
ছবি: Filip Romanovskij
কাজের চাপ
জার্মানির হাসপাতাগুলোতে আগে থেকেই নার্সের সংকট আছে। এই সংকট সামাল দিতে যারা আছেন তাদের প্রতিদিন অতিরিক্ত চাপ নিতে হয়, অথচ সে অনুযায়ী অর্থ পান না। ফলে বাড়তি চাপ সামলাতে না পেরে অনেকে চাকরি ছাড়েন। ২৭ বছরের জ্যান একই কারণে ছয়মাস আগে চাকরি ছেড়েছিলেন।
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Büttner
হঠাৎ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা
করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের বলা হচ্ছে ‘সৈনিক’। সরকারের ডাকে সাড়া দিয়ে ইয়ানের মত অনেক সাবেক নার্স আবার হাসপাতালে কাজ শুরু করেছেন। ২০১৮ সালে শ্রম মন্ত্রণালয়ের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, জার্মানিতে ৪০ হাজার নার্সের সংকট রয়েছে। বাস্তব চিত্র আরো খারাপ বলে ধারণা করা হয়। এতদিন এ বিষয়ে জনগণের আগ্রহ ছিল না।
ছবি: Filip Romanovskij
সংকট সবখানে
বার্লিনে একটি হাসপাতালে কর্মরত একজন নার্স বলেন, “আমি সম্মানিত, কিন্তু হাততালি কোনো কাজে আসবে না। শুধু নার্স নয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, থেরাপিস্ট এবং অন্যান্য যারা এই প্রক্রিয়ার অংশ, তাদের সব জায়গায় সংকট রয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে এতদিনে সবাই বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে।’’
ছবি: Reuters/W. Rattay
‘হাততালি বাড়ি ভাড়া জোগাবে না’
হামবুর্গের একটি হাসপাতালে কর্মরত একজন নার্স বলেন, ‘‘লোকজন আমাদের জন্য হাততালি দিচ্ছে, এটা সত্যি দারুণ। কিন্তু এটা আমাদের বাড়ি ভাড়া দেবে না।’’ তিনি মনে করেন,
“মানুষের প্রশংসা এবং স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটা আরো বেশি দরকার ছিল যখন আমরা ভালো বেতন ও কর্মপরিবেশের জন্য লড়াই করছিলাম।’’
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
প্রটেক্টিভ গিয়ারের সংকট
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় দুশ্চিন্তা হয়ে উঠেছে সুরক্ষা পোশাক ও অন্যান্য জিনিসের অভাব। উন্নত দেশগুলোতেও এই সংকট চোখে পড়ার মতো। এর ফলে স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। জার্মানিতে প্রায় ২,৩০০ হাসপাতালকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷
ছবি: Reuters/M. Rietschel
আস্থাহীনতা
নার্স সংকটের কারণে যারা এ পেশায় আছেন তাদের উপর কাজের চাপ অনেক বেশি। জার্মানির নার্সিং স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র ইয়োহানা ক্নুপেল বলেন, ‘‘কাজের অতিরিক্ত চাপের কারণে শিক্ষানবীশ নার্সদের অনেকে প্রথম বছরেই চাকরি ছেড়ে দেন।’’
ছবি: Imago-Images/7aktuell
অবস্থার উন্নতির আশা
জার্মানিতে নার্সদের সংগঠনগুলো আশা করছে, করোনা সংকটে তাদের প্রকৃত অবস্থা সবার সামনে চলে এসেছে। ভালো বেতন ও কর্ম পরিবেশের জন্য তাদের আন্দোলন এ থেকে লাভবান হবে। জার্মানিতে নার্সরা সাধারণত ঘণ্টায় ১৫ ইউরো বেতন পান।