জার্মানির কাছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আরো ক্ষতিপূরণ দাবি
৩১ জানুয়ারি ২০২৪
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির জন্য জার্মানির কাছে নতুন করে ক্ষতিপূরণের দাবি রাখলেন পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্লাভ সিকরস্কি৷ যুদ্ধের দুর্দশা থেকে বেরোতে ‘সৃজনশীল সমাধান' চায় ওয়ারশ৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পোল্যান্ডে নাৎসি বাহিনীর লুঠপাটের ‘আর্থিক ক্ষতিপূরণ’ দাবি করেছেন দেশটির শীর্ষস্থানীয় এই মন্ত্রী৷
গত ডিসেম্বরে পোল্যান্ডের ক্ষমতায় আসে বামঘেঁষা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ঘনিষ্ঠ নতুন সরকার৷ তারপর প্রথমবারের মতো বার্লিনে এসেছেন মন্ত্রী সাদিস্লাভ সিকরস্কি৷ এই সফর চলাকালীন ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গ টানেন তিনি৷
জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক সিকরস্কির সাথে বৈঠকের পর বলেন, ‘‘আরো শক্তিশালী ইউরোপ, যার কেন্দ্র আগামীতে আরো পুবের দিকে যাবে, তেমন ইউরোপের প্রয়োজন সর্বকালের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বার্লিন-ওয়ারশ সম্পর্ক ও এই সম্পর্কে আস্থা৷’’
এ প্রসঙ্গে পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক জার্মানি ও পোল্যান্ডের মধ্যে সহযোগপূর্ণ সম্পর্ক ফিরিয়ে আনতে হবে৷’’
ট্রেন যখন সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের সেতু
03:21
আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবিতে সরব সিকরস্কি
বর্তমান সরকারের আগের সরকারের আমলেও এমন ক্ষতিপূরণের কথা উঠেছিল৷ ‘৫২ লাখ পোলিশ নাগরিকের মৃত্যুর জন্য’ তৎকালীন সরকার জার্মানির কাছেএক লাখ ৩০ কোটি ইউরোর ক্ষতিপূরণ দাবি করে৷
তিনি আরো যোগ করেন যে, যদি জার্মানি ‘‘কোনো সৃজনশীল সমাধানের মাধ্যমে অনুশোচনা ব্যক্ত করে, যারা এতকিছুর পরেও বেঁচে আছেন, তাদের জন্য ভালো কিছু করে'', তাহলে তা পোল্যান্ডের জন্য ভালো হবে৷
‘‘অতীতকে নৈতিকভাবে খতিয়ে দেখলে আর্থিক ক্ষতিপূরণই একমাত্র সমাধান হবে,’’ বলেন সিকরস্কি৷
এই দাবি মানবে না জার্মানি
এর আগের পোলিশ সরকারও জার্মানির ক্ষতিপূরণকে ‘নৈতিক দায়িত্ব' বলেছিল৷ এই দাবি পরে পোল্যান্ড-জার্মান সম্পর্কে কিছুটা ভাঁটাও আনে৷
তবে জার্মানি এই দাবিকে আগে থেকেই খারিজ করে আসছে৷ এক্ষেত্রে জার্মানি মনে করায় ১৯৫৩ সালের একটি সিদ্ধান্তের কথা, যেখানে পোল্যান্ড তৎকালীন পূর্ব জার্মানির কাছ থেকে সকল দাবি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল৷
জার্মান কর্তৃপক্ষের মতে, ক্ষতিপূরণের বিতর্কের সমাধান হয়ে গেছে ১৯৯০ সালে, যখন জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ হয় ‘টু প্লাস ফোর' চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যেখানে পোল্যান্ডের কোনো ভূমিকা ছিল না৷
এসএস/এসিবি (এএফপি, ডিপিএ)
ঘুরে দেখা জার্মানির ইতিহাস
যে জায়গাগুলোতে জার্মানির দুই হাজার বছরের ইতিহাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, সেসব নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: Martin Schutt/dpa/picture alliance
হেয়ারমান্সডেঙ্কমাল স্মৃতিস্তম্ভ
প্রায় দুই হাজার বছর আগে জার্মানিতে নানান জাতিগোষ্ঠীর বাস ছিল৷ রোমানরা এদের বলত জার্মানিক জাতি৷ জার্মানির নর্থ রাইন-ভেস্টফালিয়া রাজ্যের ডেটমল্ড শহরে ৩৮৬ মিটার (১২০৭ ফুট) উঁচু এই হেয়ারমান্সডেঙ্কমাল৷ ৯ শতাব্দীতে রোমানদের বিরুদ্ধে ট্যোটোবুর্গ যুদ্ধে জয়ের প্রতীক হিসেবে চেরুস্কি জার্মানিক গোষ্ঠীর নেতা আর্মিনিউস (জার্মান ভাষায় হেয়ারমান)-এর এই মূর্তি৷
ছবি: Rupert Oberhäuser/picture alliance
আখেন ক্যাথিড্রাল
যদিও জার্মানিক গোষ্ঠীগুলোই জার্মানদের আদিপুরুষ হিসেবে বিবেচিত, রোমান-জার্মান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হলেন শার্লেমাগনে৷ তিনি ৮০০ শতাব্দীতে সম্রাট হন এবং মধ্য ইউরোপে সাম্রাজ্য বিস্তার করেন৷ আর ১৫৩১ সাল পর্যন্ত হোলি রোমান জার্মান সাম্রাজ্যের রাজার অভিষেক হত ঐতিহাসিক আখেন ক্যাথিড্রালে৷ এটি ইউনেস্কোর একটি সংরক্ষিত স্থাপনা৷
ছবি: Peter Schickert/picture alliance
ভার্টবুর্গ
ভার্টবুর্গ দুর্গ জার্মানির ইতিহাসের একটি অন্যতম স্থান৷ মার্টিন লুথার ১৫২১-২২ সালে জার্মান ভাষায় নিউ টেস্টামেন্টের অনুবাদ করেন৷ সেইসঙ্গে প্রমিত লৈখিক জার্মান ভাষার ভিত্তি তৈরি করেন৷
ছবি: Ulf Nammert/Zoonar/picture alliance
সাসোসি প্যালেস
প্রুসিয়া রাজ্যের কেন্দ্র ছিল বার্লিন ও পটসডাম৷ জার্মান সম্রাট ফ্রেডেরিক দুই এই ছোট দেশটিকে প্রভাবশালী ইউরোপীয় সাম্রাজ্য হিসেবে তৈরি করেন৷ ১৭৪০ সাল নাগাদ বার্লিন জ্ঞানের কেন্দ্র হয়ে ওঠে৷ ফ্রেডেরিক দুই সাসোসি প্যালেসে সময় কাটাতে ভালোবাসতেন৷ এটা আজ পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ৷
ছবি: Michael Bahlo/dpa/picture alliance
ব্যাটল অব নেশন্স স্তম্ভ
১৮১৩ সালের অক্টোবরে লাইপজিশে রাশিয়া, প্রুসিয়া, অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও ছোট ছোট রাজ্যগুলো একসঙ্গে নেপোলিয়ানের শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে৷ ছয় লাখ সেনার সেই যুদ্ধ তখনকার সময় পর্যন্ত সবচেয়ে বড় যুদ্ধ৷ ইউরোপে নেপোলিয়ানের খবরদারির সমাপ্তি ঘটে এই যুদ্ধে৷ জার্মানি থেকে সরে যান নেপোলিয়ান৷ ৯১ মিটার লম্বা স্তম্ভটি তারই প্রতীক৷
ছবি: Rico Ködder/Zoonar/picture alliance
সেইন্ট পলের চার্চ
১৯ শতকে অনেকগুলো স্বাধীন রাজ্য জার্মান কনফেডারেশন গঠন করে৷ তবে কনফেডারেশনের নাগরিকরা এতে খুব একটা সন্তুষ্ট ছিলেন না৷ এমনকি ১৮৪৮ সালে মার্চ অভ্যুত্থানও হয়৷ এরপর ফ্রাঙ্কফুর্টের সেইন্ট পলের চার্চে একটি উদার জাতি গঠনের সংবিধান রচনার লক্ষ্যে জাতীয় অধিবেশন ডাকা হয়৷
ছবি: Stefan Ziese/imageBROKER/picture alliance
সলফেরাইন কয়লা খনি কমপ্লেক্স
ইংল্যান্ডের চেয়ে অনেক পরে জার্মানি শিল্পায়নের চূড়ায় পৌঁছেছে৷ ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি শুরু৷ তখন রেলরোড তৈরির জন্য তাদের অনেক ইস্পাতের দরকার ছিল৷ রুয়র এলাকা তখন ছিল কয়লা খনির কেন্দ্র৷ আজ সেখানকার প্রায় সব কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও এসেন শহরের সলফেরাইন কয়লা খনিকে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে৷
ছবি: Federico Gambarini/dpa/picture alliance
হলোকাস্ট মেমোরিয়াল
প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ২০ শতকের সবচেয়ে বড় ঘটনা৷ অ্যাডলফ হিটলারের নেতৃত্বে ১৯৩৩ সালে নাৎসিরা ক্ষমতায় আসে৷ তারা ৬০ লাখেরও বেশি ইহুদি ও আরো অনেককে হত্যা করে৷ জার্মানির অনেক জায়গা সেইসব হত্যাযজ্ঞের সাক্ষ্য বহন করে৷ এর মধ্যে বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের পাশে ২৭১১টি কংক্রিট ব্লকের স্মৃতিস্তম্ভ উল্লেখযোগ্য৷
ছবি: Bildagentur-online/Joko/picture alliance
বার্লিন দেয়াল
নাৎসিদের পরাজয়ের পর বিজয়ীরা দেশটিকে দুইভাগে দখলে নেয়৷ এতে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি নামে দু’টি অংশ তৈরি হয় এবং বার্লিন দেয়াল ও সীমানা প্রাচীর তৈরি করে দুই অংশকে আলাদা করা হয়৷ এই দেয়াল অনেক ঘটনার সাক্ষী৷
ছবি: Bildagentur-online/Joko/picture alliance
ব্রান্ডেনবুর্গ গেট
১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরেকত্রিত হয়, বার্লিন দেয়াল পতনের ৩২৯ দিন পর৷ ব্রান্ডেনবুর্গ গেট হল বার্লিনের একমাত্র টিকে থাকা গেট, যেটি পশ্চিম ও পূর্ব বার্লিনকে আলাদা করে৷ আজ এটি জার্মানির একতার প্রতীক ও একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান৷