জার্মানির বিভিন্ন কারাগারে দেড়শ'র মতো উগ্র ইসলামপন্থি আটক রয়েছে ও তাদের সংখ্যা আগামীতে আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ পুলিশ মনে করে, এই উগ্রপন্থিদের মত ও আচরণ পাল্টানো জরুরি৷
বিজ্ঞাপন
‘ডি ভেল্ট’ পত্রিকায় প্রকাশিত জার্মান ফেডারাল অপরাধ দপ্তর বিকেএ-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জার্মান জেলগুলিতে বিপজ্জনক ইসলামপন্থিদের সংখ্যা প্রায় ১৫০৷ হয় তারা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী, নয় তো তারা সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে তদন্তাধীন বলে বিকেএ জানিয়েছে৷ এছাড়া উগ্র ইসলামি মতবাদের প্রতি সহানুভূতিশীল বা প্রত্যক্ষভাবে মদতকারী কিছু ব্যক্তিও জেলে আটক রয়েছে৷
‘‘আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের জেলগুলিতে ইসলামি চরমপন্থিদের সংখ্যা বাড়বে বলে ধরে নেয়া যেতে পারে,’’ হেসে রাজ্যের আইনমন্ত্রী ও সিডিইউ রাজনীতিক এফা ক্যুহনে-হ্যোরমান ‘ডি ভেল্ট’ পত্রিকার সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন৷ এই প্রসঙ্গে তিনি সারা দেশে ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে শত শত চলতি তদন্তের কথাও উল্লেখ করেন৷
‘স্বপ্নের নিবাস’ জেলখানা!
নেদারল্যান্ডসে অপরাধ কমে যাচ্ছে৷ তাই কর্তৃপক্ষ অব্যবহৃত জেলখানার এক অভিনব ব্যবহার বের করেছে৷ সেখানে আশ্রয়প্রার্থীদের অস্থায়ী নিবাসের করা হয়েছে৷ প্রশ্ন হলো, থাকার জায়গা হিসেবে জেলখানা কেমন?
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
প্রথম দর্শনে স্বপ্নের নিবাস
অপরাধ নেই৷ তাই নিজেদের কারাগারগুলো বেলজিয়াম ও নরওয়েকে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে ডাচ সরকার৷ তারপরও অনেক জায়গা খালি৷ তাই এবার কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থীদের অস্থায়ী নিবাস হিসেবে এ সব কারাগার ব্যবহারের৷ ছবিটি আমস্টারডামের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বেলমারবায়েস কারাগারের৷ এটি এখন একটি শরণার্থী আশ্রয় কেন্দ্র৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
অন্ধকারে আশার আলো
মাকো হুসা নামের এই নারী করিডোরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন৷ ৪০ বছর বয়সি এই শরাণার্থী এসেছেন ইথিওপিয়া থেকে৷ বেলমারবায়েস কারাগারে আশ্রয় নেয়া ৬০০ শরণার্থীর একজন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
কয়েক বর্গমিটারের স্বাধীনতা
পাকিস্তানের সংঘাতময় শহর পেশওয়ার থেকে পালিয়ে এসেছেন রাওয়াইজ ভাট্টি৷ ২৬ বছরের এই উচ্ছ্বল যুবককে প্রায়ই গিটার বাজিয়ে গান গেতে দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
নিপীড়নের ভয় নেই
সাবেক এই কারাগারের বর্তমান নিবাসীদের অনেকেই সংঘাত, নির্যাতন ও সুযোগের অভাবে দেশ থেকে পালিয়ে এসেছেন৷ এই শান্তির আশ্রয় এখন তাদের একটা নতুন শুরুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে৷ ছবিতে প্রার্থনায়রত ইরিত্রিয়া থেকে আসা ২৯ বছর বয়সি এক তরুণী৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
নতুন বন্ধন
বুরুন্ডির এক যুবক তাঁর নতুন কঙ্গোলিজ বন্ধুকে সাইকেল চালানো শেখাচ্ছেন৷ দু’জনই বেলমারবায়েসকে তাঁদের নতুন ঘর বলে মনে করেন৷ এই কারাগারে অনেক খালি জায়গা আছে যেখানে তাঁরা অবসর সময় কাটাতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
মনে পড়ে স্বজনদের কথা
ডাচ ইমিগ্রেশন সার্ভিসের হিসেবে, ২০১৫ সালে তাদের কাছে আশ্রয় চেয়ে ৫৮,৯০০ জনের আবেদন জমা পড়েছে৷ পরের বছর সংখ্যাটি কমে ৩১,৬০০ হলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, শরণার্থী আসা বন্ধ নেই৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইরিত্রিয়ান এক শরণার্থী তাঁর ফেলে স্বজনদের ছবি দেখাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
শিশুরাও আছে এখানে
কারাগারে নিজের ধরে মোবাইল ফোন হাতে সিরিয়া থেকে আসা পাঁচ বছর বয়সি সান্দি ইয়াযজি৷ ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ইউরোপে ১ লাখ ৭০ হাজার তরুণ শরণার্থী এসেছেন৷ এদের মধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের সংখ্যা অনেক বেশি৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে অনেক দূরে
সিরিয়ার শহর বানিয়াস থেকে আসা শরণার্থী শিশু সহোদর মুসতাফা ও আবুদল রাহমান আরো দুই শিশুর সঙ্গে মিলে টেবিল ফুটবল খেলছে৷ কর্তৃপক্ষ সব বয়সিদের বিনোদনের জন্য কিছু না কিছু ব্যবস্থা রেখেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP/M. Muheisen
8 ছবি1 | 8
জার্মান কারাগারগুলির অবস্থা
জার্মান জেলগুলিতে বিপুল সংখ্যক ইসলামপন্থির উপস্থিতি ‘‘(জেলে) উগ্রপন্থিদের মত পরিবর্তন ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ কর্মসূচির পক্ষে একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে,’’ বলে ক্যুহনে-হ্যোরমান সাবধান করে দেন৷
তিনি বলেন যে, চরমপন্থিদের পুনরায় সমাজে অন্তর্ভুক্ত হতে সাহায্য করার জন্য কারাগারগুলিকে ব্যবহার করা না হলে, ‘‘উগ্র ইসলামপন্থি ও যাদের জার্মানিতে থাকার আশা নেই,’’ এমন সব ব্যক্তিদের অপরিবর্তিত মনোভাব নিয়ে জনজীবনে ফিরিয়ে দিতে হতে পারে৷
গত ডিসেম্বর মাসে জার্মান কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেন যে, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে পাঁচগুণ বেশি সন্ত্রাস সংক্রান্ত তদন্ত চালু করা হয়েছে৷ সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সন্দেহে প্রায় ১,২০০ তদন্ত চলেছে, যার মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগের ক্ষেত্রে কোনো-না-কোনো ইসলামি সংযোগ আছে৷ অন্যান্যদের মধ্যে উগ্রপন্থি মওলানা, অসফল আততায়ী ও সিরিয়া বা ইরাক থেকে ফেরা যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলেছে৷
‘ডি ভেল্ট' পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী, জার্মানির কারাগারকর্মী সমিতি বলেছে যে, ইসলামপন্থি বন্দিদের সংখ্যা কারাগারের কর্মীদের পক্ষে একটি বর্ধিত নিরাপত্তা ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে – যে কারণে সমিতি জেলকর্মীদের জন্য অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ দাবি করেছে৷
প্রতিবেশী দেশ ফ্রান্সে কারাগার প্রহরীরা গতমাসে ধর্মঘট করেন; দেশের কারাগারগুলিতে বন্দিসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সহিংসতাও বেড়েছে বলে তাদের অভিযোগ৷
সংশ্লিষ্ট ঘটনায় জার্মানি থেকে আগত এক বন্দি ইসলামপন্থি জঙ্গি একটি কাঁচি নিয়ে জেলরক্ষীদের আক্রমণ করে৷
এসি/এসিবি (ডিপিএ, কেএএনএন)
আলোচিত কয়েকটি জেল পলায়নের কথা
জেলে থাকতে কে চায় বলুন? তাই সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করে থাকেন অনেক কয়েদি৷ সবসময় যে সফল হন তা নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দ্বিতীয়বার
২০১৫ সালের জুলাই মাসে আবার জেল থেকে পালিয়েছেন মেক্সিকোর মাদক সম্রাট গুসমান৷ গত ১৪ বছরে দ্বিতীয়বার এই কাণ্ড করলেন তিনি৷ এবার জেলখানায় নিজের সেলের গোসলখানার নীচে টানেল তৈরি করে পালিয়েছেন তিনি৷ তাকে কিন্তু মেক্সিকোর সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবিশিষ্ট আলতিপ্লানো কারাগারে রাখা হয়েছিল৷
ছবি: Reuters/PGR/Attorney General's Office
ভাল চেষ্টা, কিন্তু..
ছবি দেখেই বুঝতে পারছেন তিনি কীভাবে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি৷ ব্যাগের মধ্যে থাকা মেক্সিকোর এই আসামির নাম হুয়ান রামিরেস তিহেরিনা৷ অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে তার সাজা হয়েছিল৷ ২০১১ সালে তার স্ত্রী কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় এই ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিলেন৷ পরে স্বামীকে ব্যাগে করে বেরিয়ে আসার সময় ধরা পড়ে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Sspqr
বন্দুক আর ছুরি দিয়ে
ইউরোপের সবচেয়ে কড়া নিরাপত্তাবিশিষ্ট জেলখানাগুলোর মধ্যে একটি আয়ারল্যান্ডের দ্য মেজ৷ ১৯৮৩ সালে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হন স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের স্বপ্ন দেখা আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির ৩৮ সদস্য৷ গোপনে সংগ্রহ করা বন্দুক আর ছুরি দিয়ে তারা জেলের নিরাপত্তা কর্মীদের পরাস্ত করে পালিয়ে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Mcerlane
ব্যাংক ডাকাতের পালানো
১৯৬২ সালে সান ফ্রান্সিসকো বে-র জেল থেকে পালিয়েছিলেন তিন ব্যাংক ডাকাত৷ ধারালো চামচ আর ড্রিল দিয়ে তারা নিজেদের সেলে গর্ত খুঁড়ে পালিয়ে যান৷ নিরাপত্তা কর্মীদের বোকা বানাতে তারা তাদের বিছানায় নকল মাথা বসিয়ে রেখেছিলেন!
ছবি: imago/Kai Koehler
হেলিকপ্টারে করে পলায়ন
মনে হবে যেন কোনো হলিউড ব্লকবাস্টার মুভির কাহিনি৷ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামি পাসকাল পায়ে ফ্রান্সের একটি গ্রামের কারাগার থেকে অপহরণ করা হেলিকপ্টারে করে একবার নয়, দুবার পালিয়ে যান৷ প্রথমবার ২০০১ সালে, পরের বার ২০০৭ সালে৷ শুধু তাই নয়, জেলখানায় নিজের সঙ্গে থাকা তিন কয়েদিকেও একবার হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Horvat
ওজন কমিয়ে পলায়ন!
১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক নারী খুন করে আলোড়ন তুলেছিলেন থিওডোর রবার্ট বান্ডি৷ প্রথমবার জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ার পর দ্বিতীয়বার কলোরাডোর একটি জেল থেকে পালানোর জন্য নিজের ওজন ১৩.৫ কেজি কমিয়েছিলেন তিনি! সেলের উপর দেয়ালে লাইট বসানোর জন্য তৈরি করা গর্তের মধ্যে নিজের দেহ ঢোকাতে এই পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি৷ সফলও হয়েছিলেন৷ পরে অবশ্য আবারও ধরা পড়ে গিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP
ইস্টারের ডিমের জন্য!
১৯৮১ সালে সুইজারল্যান্ডের কয়েদি ভাল্টার স্টুয়র্ম করাত দিয়ে নিজের সেলের জানালা কেটে নীচে নেমে তারপর মই দিয়ে কারাগারের সীমানা পেরিয়ে যান৷ পালানোর আগে তিনি তার সেলে একটি নোট লিখে যান৷ তাতে লিখা ছিল, ‘ইস্টারের ডিম নিতে যাচ্ছি!’