এটা ঠিক যে বিশ্বের সব কার্টুনিস্টদের বর্তমান পছন্দ নব্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট, কেননা তার চুলের ভিন্ন স্টাইল৷ জার্মানিতে কার্নিভাল উপলক্ষ্যে ট্রাম্পের যত উইগ আনা হয়েছিল, উৎসব শুরু হওয়ার আগেই দোকানগুলো থেকে তা নিমেষে উধাও৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান কস্টিউম চেইন ডাইটার্স-এর কোলন শাখার সেলস ম্যানেজার মারিয়ন ভেন্ডট জানালেন, প্রেসিডেন্টের সব উইগ বিক্রি হয়ে গেছে৷ জার্মানির যেসব শহরে এই দোকান রয়েছে, সবখানেই এক অবস্থা৷ অন্যদিকে বার্লিনের ‘মাস্ক ওয়ার্ল্ড' ট্রাম্পের উইগসহ মুখোশ বিক্রি করতে পেরে ভীষণ খুশি, কেননা এগুলো দোকানে আসা মাত্রই বিক্রি হয়ে গেছে৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যতই অজনপ্রিয় হোন না কেন এ বছরের কার্নিভালে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে তার ধারে কাছে কেউ নেই৷ কেবল উইগই নয়, ট্রাম্পের পুরো পোশাক এবার কার্নিভালের কস্টিউম হিসেবে ‘হট কেক'৷ অর্থাৎ স্যুট, উইগ, লম্বা লাল টাই এবং মুখে চড়া কমলা রঙের মেক আপ৷
যেসব দোকানে কার্নিভালের কস্টিউম বিক্রি হয় সব দোকানেই ট্রাম্পের উইগের ভীষণ চাহিদা৷ আর যেসব দোকানে ট্রাম্পের উইগ বিক্রি হচ্ছে না, সেখানকার বিক্রেতারা ‘হাইনো' উইগ ক্রেতাদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে৷ এই উইগটি জার্মানির কবি-সাহিত্যিক ও সংগীতজ্ঞরা ১৮ শতকে পরতেন৷
এ থেকে বোঝা যাচ্ছে গোলাপি সোমবার বা রোজেন মোনটাগে কোলন, ড্যুসেলডর্ফ এবং মাইনজ এর রাস্তায় যে শত শত ট্রাম্প ঘোরাফেরা করবে তার আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷
২০১৬ সালের ১১ই নভেম্বর রাইন কার্নিভালের বর্তমান মৌসুম শুরু হয় রাইনল্যান্ড এলাকায়৷ নভেম্বরেও নর্ডরাইন ভেস্টফালিয়ার রাজ্যগুলোতে ফিক্সনাল চরিত্র বা হোপ্পেডিৎস ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ এই হোপ্পেডিৎস-কে দাহ করা হয় এবং কার্নিভাল মৌসুম শেষে ‘অ্যাশ ওয়েডনেসডে'-তে তা পুঁতে ফেলা হয়৷
নানা রকমের কার্নেভাল, নানা রকমের উৎসব
সোমবার ছিল ‘রোজেনমোনটাগ’৷ কার্নেভালের এই বিশেষ দিনে জার্মানির নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্য বা পশ্চিম রাইনল্যান্ডের মানুষ আনন্দ করেছে প্রাণ খুলে৷ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে হয় এমন আনন্দোৎসব৷ চলুন দেখি তারই কিছু নমুনা৷
ছবি: Getty Images/Feng Li
ক্যোল আলাফ!
সেজেগুজে রাস্তায় নামার সুযোগ এলে জার্মানরা সে সুযোগ ছাড়ে না৷ রাইনল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলের সব মানুষ তাই অপেক্ষায় থাকে কার্নেভালের জন্য৷ জার্মানিতে চারটি ঋতু, কিন্তু কার্নেভাল আনন্দ নিয়ে আসে বলে একে সবাই ‘পঞ্চম ঋতুর’ মর্যাদা দেয় ভালোবেসে৷ কার্নেভালের দিনে সবাই সবাইকে সম্ভাষণ জানায় ‘আলাফ’ কিংবা ‘হেলাউ’ বলে৷ কার্নেভালে সবচেয়ে আনন্দের দিন ‘রোজেনমোনটাগ’৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
ব্রাজিলের সাম্বা পার্টি
ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় উৎসবও কার্নেভাল৷ রিও ডি জানেরোর প্রায় ২০০টি সাম্বা নাচের স্কুলের শিক্ষার্থীরা রং-বেরংয়ের পোশাক পরে নেমে আসে রাস্তায়৷ শনি থেকে মঙ্গল বার – এই চারদিন ধরে চলে উৎসব৷ উদ্দাম সাম্বা নাচের এই উৎসব দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ব্রাজিলে প্রতি বছর পাড়ি জমায় কয়েক লক্ষ পর্যটক৷
ছবি: Reuters
ভেনিসের কার্নেভাল
ইটালির ভেনিস নগরিও কার্নেভালের জন্য বিখ্যাত৷ ভেনিসের কার্নেভালের নাম, ‘কার্নেভালে ডি ভেনেসিয়া’৷ বিশ্বের অন্যান্য কার্নেভালের তুলনায় অন্য ধরনের মুখোশ আর পোশাক দেখা যায় এই কার্নেভালে৷ দ্বাদশ শতক থেকে চলছে এই কার্নেভাল৷
ছবি: picture alliance/Robert Harding World Imagery
‘মোটা মঙ্গলবার’
পাশ্চাত্যের অনেক দেশের খ্রিষ্টানরা ইস্টারের সাত সপ্তাহ আগের বুধবারটিকে বলে ‘অ্যাশ ওয়েডনেসডে’৷ সেদিন ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টানরা উপোস করেন৷ অ্যাশ ওয়েডনেসডে-র পরের দিনটাই হলো ‘ফ্যাট টিউসডে’৷ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অর্লিন্সে সেদিন কার্নেভাল৷ শহর জুড়ে নেচে বেড়ায় জনসমুদ্র৷ অসংখ্য মানুষের বহুবর্নীল পোশাকে নিউ অর্লিন্সও যেন নতুন রূপ পায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শহরে ডাইনি আর ভূত!
কার্নেভালে যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো শহরের মানুষ পোশাকে খুব একটা বৈচিত্র্য খোঁজে না৷ তবে হ্যালোইন হলে অন্য কথা৷ তখন ডাইনি, ভূত-পেন্তি সেজে রাস্তায় নামে বড়রা৷ ছোটরা ঘরে ঘরে গিয়ে চকলেট, টফি চায়৷ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় এবং জমজমাট হ্যালোইন প্যারেডটি হয় নিউ ইয়র্ক সিটিতে৷
ছবি: AFP/Getty Images/D. Emmert
মৃতদের স্মরণে...
মেক্সিকোয় ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত চলে অদ্ভুত এক উৎসব৷ উৎসবের নাম ‘দিয়াস দে লোস মুয়েরতোস’ বা ‘মৃতদের দিন’৷ এই দিনে মেক্সিকোর মানুষ তাঁদের প্রয়াত প্রিয়জনদের স্মরণ করে৷ কবরস্থানগুলো সাজিয়ে-গুছিয়ে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়৷ মেয়েরা ‘কঙ্কাল নারী’ কাতরিনা সাজে৷ অন্যরা দৈত্য-দানব কিংবা কঙ্কাল সেজে ঘুরে বেড়ায়৷
ছবি: AFP/Getty Images/A. Estrella
চীনে নববর্ষ
চীনে চান্দ্রমাসের হিসেবে বর্ষবরণের উৎসব পালন করা হয়৷ চীনা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বছরের শেষ মাসের শেষ দিন থেকে পরের বছরের প্রথম মাসের ১৫তম দিন পর্যন্ত পালন করা হয় এই উৎসব৷ এ সময়টায় বসন্ত উৎসবও পালন করে চীনারা৷ অনেকে দূরদূরান্তের আত্মীয়দের বাড়িতে বেড়াতে যায়৷ আতশবাজি জ্বালানো হয়৷ গ্রামে-গঞ্জে, মন্দিরে মন্দিরে ড্রাগন নৃত্যে মেতে ওঠে সর্ব স্তরের মানুষ৷