জার্মানির বায়োটেক প্রতিষ্ঠান কিউর ভ্যাক-এর করোনা ভ্যাকসিন ২০২১ সালের মাঝামাঝি নাগাদ প্রস্তুত হতে পারে৷ প্রতি ডোজের দাম পড়বে ১০ থেকে ১৫ ইউরো৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন তথ্য জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী ফ্রানৎস-ভেরনার হাস৷ তিনি বলেন, এরই মধ্যে তারা কিছু বিষয় নিশ্চিত করেছেন৷ তাদের টিকায় স্বল্পমূল্যের কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়েছে৷ ভ্যাকসিনের দামেও এর প্রতিফলন ঘটবে৷ ‘‘আমার ধারণা এটি ১০ থেকে ১৫ ইউরোর মধ্যেই থাকবে,’’ বলেন তিনি৷
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে ভ্যাকসিনের অগ্রিম ক্রয় সংক্রান্ত আলোচনা চলছে বলেও জানান তিনি৷ তবে নির্দিষ্ট করে কোনো দেশের নাম জানাতে চাননি হাস৷
যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিন শুরুর সারিতে আছে তার মধ্যে কিউর ভ্যাকও রয়েছে৷ তাদের এই উদ্যোগের পৃষ্ঠপোষকতায় আছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান জিএসকে ও কাতারের রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল৷ সহযোগিতা দিচ্ছে জার্মানির সরকারও৷ এর অংশ হিসেবে গত জুনে তাদের ৩০ কোটি ডলার সমমূল্যের শেয়ার কিনেছে৷
টিকা আবিষ্কারের দৌড়ে কে কত এগিয়ে
করোনা ভাইরাসের কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কারে অন্তত দশটি দেশে চলছে ১৭০টিরও বেশি প্রচেষ্টা৷ তবে এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়টি পৌঁছাতে পেরেছে পরীক্ষার শেষ ধাপে৷
ছবি: Reuters/J. Akena
পৌনে দুইশ’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দৌড়ে আছে ১৭০ টির বেশি উদ্যোগ৷ একেকটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা-পর্ব সারতেই সাধারণত বছরের পর বছর সময় লাগে৷ তবে কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে তা ১২ থেকে ১৮ মাসে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা৷
ছবি: Reuters/B. Guan
প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্ব
বেশিরভাগ প্রচেষ্টাই এখনো প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে রয়েছে৷ এই ধাপে বিজ্ঞানীরা ভাইরাস বা তার কোনো একটি অংশ তৈরি করেন৷ সেটি অন্য প্রাণীদের উপর প্রয়োগ করে দেখেন রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ঠিকঠাক সাড়া দিচ্ছে কিনা৷ ১৩৯ টি প্রচেষ্টা এখনো এই ধাপে আটকে আছে৷
ছবি: Imago/blickwinkel
প্রথম ধাপ
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার প্রথম ধাপে সীমিত সংখ্যক মানুষের মধ্যে টিকাটি প্রয়োগ করা হয়৷ দেখা হয়, প্রাক ক্লিনিক্যাল পর্বে পশুর দেহে যেভাবে প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে, মানুষের শরীরেও তা একইভাবে কাজ করছে কিনা৷ বর্তমানে ২৫টি টিকা রয়েছে এই ধাপে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Gobet
দ্বিতীয় ধাপ
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপে আছে ১৫টি ভ্যাকসিন৷ সম্ভাব্য টিকাটি কতটা নিরাপদ আর তা কী মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে, এই ধাপে মূলত সেটি দেখেন বিজ্ঞানীরা৷ এজন্য কয়েকশ’ মানুষের শরীরে টিকাটি পরীক্ষা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/University of Oxford
তৃতীয় ধাপ
তৃতীয় ধাপে ভ্যাকসিন পরীক্ষার আওতায় আসেন কয়েক হাজার মানুষ৷ কার্যকরীতা, শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার দিকগুলোতে এই পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা মনযোগ দেন৷ এই ধাপটিতে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯-এর মাত্র সাতটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পৌঁছাতে পেরেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Pochard-Casabianca
অনুমোদন
পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভ্যাকসিন বাজারজাতের অনুমোদন দেয় দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ৷ গত জুনে ক্যানসিনো বায়োলোজিক্স এর ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে চীনের সামরিক বাহিনী৷ অন্যদিকে পরীক্ষায় সফল হয়েছে দাবি করে সরকারি প্রতিষ্ঠান গামালিয়া ইন্সটিটিউটের ভ্যাকসিনের অনুমোদন করেছে রাশিয়া৷ যদিও তাদের এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতে নিয়ে বিতর্ক চলছে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
শেষ ছয়
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে পৌঁছানো সাতটি ভ্যাকসিনের তিনটি চীনের৷ এর মধ্যে নিষ্ক্রিয় ভাইরাস থেকে টিকা তৈরি করেছে সাইনোভেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান৷ জুলাইতে আরব আমিরাতে চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু করেছে সাইনোফার্ম নামে দেশটির আরেকটি কোম্পানি৷ শেষ ধাপের এই দৌড়ে আরো আছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানিও৷
ছবি: Reuters/J. Akena
আলোচনায় অক্সফোর্ড
করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে শুরু থেকে আলোচনায় যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়৷ ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে তারা৷ পৌঁছে গেছে তাদের উদ্ভাবিত টিকা পরীক্ষার শেষ ধাপে৷ দক্ষিণ আফ্রিকা আর ব্রাজিলে চলছে তার ট্রায়াল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Sibeko
8 ছবি1 | 8
ভ্যাকসিন তৈরিতে নতুন আরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে কিউর ভ্যাক৷ হাস বলেন, ‘‘আমরা এমন একটি ভাইরাস নিয়ে কাজ করছি যার সবগুলো উপাদান সম্পর্কে এখনো কেউ জানে না৷ কিভাবে ভাইরাসটি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, কতদিন (প্রতিষেধক) কাজ করবে তা-ও নিশ্চিত নয়৷ এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি ভাইরাস৷ তারপরও আরএনএ দিয়ে এই সমস্যাগুলো কিছুটা মোকাবিলা করা যাচ্ছে৷ এর মাধ্যমে দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি ও পরীক্ষা সম্ভব হচ্ছে৷’’
কিউর ভ্যাক বলছে, তাদের ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যাবে সেপ্টেম্বর নাগাদ৷ এর পরপরই মানুষের শরীরে বড় ধরনের পরীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নিবে৷
২২.৫ কোটি ডোজ নেবে ইউরোপীয় কমিশন
কিউর ভ্যাকের কাছ থেকে ২২ কোটি ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন নিতে পারে ইউরোপীয় কমিশন৷ এই বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বৃহস্পতিবার আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার স্বাস্থ্য কমিশনার স্টেলা কিরিয়াকিডেস৷
‘‘করোনা ভাইরাসের কার্যকর ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সম্ভাবনা বৃদ্ধির জন্য আজ আমরা ইউরোপীয় কোম্পানি কিউর ভ্যাক-এর সঙ্গে আলোচনা শেষ করেছি,’’ বলেন তিনি৷ এই বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে পরবর্তী চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা শুরু করবে৷ এর মাধ্যমে ২৭ টি দেশের জন্য ভ্যাকসিন সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাইছে ইইউ, জানিয়েছে রয়টার্স৷