সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, জার্মানির জেলখানাগুলোতে কয়েদির সংখ্যা বর্তমানে ধারণক্ষমতার প্রায় সমান বা তার চেয়ে কিছু বেশি৷ ফলে জেল ব্যবস্থার আসল লক্ষ্য ব্যাহত হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন গবেষকরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
বিজ্ঞাপন
গবেষণা বলছে, বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ ও রাইনলান্ড-পালাটিনাটে রাজ্যের কারাগারগুলোতে কয়েদিদের সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়ে গেছে৷ আর বাভেরিয়া, বার্লিন, হামবুর্গ ও নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যে কয়েদির সংখ্যা ধারণক্ষমতার ৯০ শতাংশের চেয়ে বেশি অবস্থায় আছে৷
গবেষকরা বলছেন, কয়েদির সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি হলে কারাগারের কর্মীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা থাকে৷ এছাড়া জেলখানা থেকে বেরিয়ে কয়েদিদের সমাজে ভালোভাবে মিশতে পারার যে লক্ষ্য নিয়ে জেল ব্যবস্থা চালু হয়েছে – তা ব্যাহত হতে পারে বলেও মনে করছেন গবেষকরা৷
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বিশ্ব কারাগার গবেষণা কর্মসূচি’-র পরিচালক ক্যাথেরিন হার্ড ডয়চে ভেলেকে বলেন, বন্দিদের সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি হওয়া নিয়ে জার্মান গবেষকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয়টি যুক্তিসংগত৷ কারণ এর ফলে ‘‘মুক্তি পাওয়ার পর বন্দিদের সমাজে ফিরে যাবার মতো দক্ষ করে তোলা এবং তারা যেন আবার অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে সেজন্য তাদের সমর্থন দেয়ার বিষয়গুলো বাধাগ্রস্ত হতে পারে,’’ বলে মন্তব্য করেন হার্ড৷
আলোচিত কয়েকটি জেল পলায়নের কথা
জেলে থাকতে কে চায় বলুন? তাই সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করে থাকেন অনেক কয়েদি৷ সবসময় যে সফল হন তা নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দ্বিতীয়বার
২০১৫ সালের জুলাই মাসে আবার জেল থেকে পালিয়েছেন মেক্সিকোর মাদক সম্রাট গুসমান৷ গত ১৪ বছরে দ্বিতীয়বার এই কাণ্ড করলেন তিনি৷ এবার জেলখানায় নিজের সেলের গোসলখানার নীচে টানেল তৈরি করে পালিয়েছেন তিনি৷ তাকে কিন্তু মেক্সিকোর সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবিশিষ্ট আলতিপ্লানো কারাগারে রাখা হয়েছিল৷
ছবি: Reuters/PGR/Attorney General's Office
ভাল চেষ্টা, কিন্তু..
ছবি দেখেই বুঝতে পারছেন তিনি কীভাবে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি৷ ব্যাগের মধ্যে থাকা মেক্সিকোর এই আসামির নাম হুয়ান রামিরেস তিহেরিনা৷ অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে তার সাজা হয়েছিল৷ ২০১১ সালে তার স্ত্রী কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় এই ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিলেন৷ পরে স্বামীকে ব্যাগে করে বেরিয়ে আসার সময় ধরা পড়ে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Sspqr
বন্দুক আর ছুরি দিয়ে
ইউরোপের সবচেয়ে কড়া নিরাপত্তাবিশিষ্ট জেলখানাগুলোর মধ্যে একটি আয়ারল্যান্ডের দ্য মেজ৷ ১৯৮৩ সালে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সমর্থ হন স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের স্বপ্ন দেখা আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির ৩৮ সদস্য৷ গোপনে সংগ্রহ করা বন্দুক আর ছুরি দিয়ে তারা জেলের নিরাপত্তা কর্মীদের পরাস্ত করে পালিয়ে যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Mcerlane
ব্যাংক ডাকাতের পালানো
১৯৬২ সালে সান ফ্রান্সিসকো বে-র জেল থেকে পালিয়েছিলেন তিন ব্যাংক ডাকাত৷ ধারালো চামচ আর ড্রিল দিয়ে তারা নিজেদের সেলে গর্ত খুঁড়ে পালিয়ে যান৷ নিরাপত্তা কর্মীদের বোকা বানাতে তারা তাদের বিছানায় নকল মাথা বসিয়ে রেখেছিলেন!
ছবি: imago/Kai Koehler
হেলিকপ্টারে করে পলায়ন
মনে হবে যেন কোনো হলিউড ব্লকবাস্টার মুভির কাহিনি৷ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামি পাসকাল পায়ে ফ্রান্সের একটি গ্রামের কারাগার থেকে অপহরণ করা হেলিকপ্টারে করে একবার নয়, দুবার পালিয়ে যান৷ প্রথমবার ২০০১ সালে, পরের বার ২০০৭ সালে৷ শুধু তাই নয়, জেলখানায় নিজের সঙ্গে থাকা তিন কয়েদিকেও একবার হেলিকপ্টারে করে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Horvat
ওজন কমিয়ে পলায়ন!
১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক নারী খুন করে আলোড়ন তুলেছিলেন থিওডোর রবার্ট বান্ডি৷ প্রথমবার জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ার পর দ্বিতীয়বার কলোরাডোর একটি জেল থেকে পালানোর জন্য নিজের ওজন ১৩.৫ কেজি কমিয়েছিলেন তিনি! সেলের উপর দেয়ালে লাইট বসানোর জন্য তৈরি করা গর্তের মধ্যে নিজের দেহ ঢোকাতে এই পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি৷ সফলও হয়েছিলেন৷ পরে অবশ্য আবারও ধরা পড়ে গিয়েছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/AP
ইস্টারের ডিমের জন্য!
১৯৮১ সালে সুইজারল্যান্ডের কয়েদি ভাল্টার স্টুয়র্ম করাত দিয়ে নিজের সেলের জানালা কেটে নীচে নেমে তারপর মই দিয়ে কারাগারের সীমানা পেরিয়ে যান৷ পালানোর আগে তিনি তার সেলে একটি নোট লিখে যান৷ তাতে লিখা ছিল, ‘ইস্টারের ডিম নিতে যাচ্ছি!’
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
অবশ্য জার্মান কারাগারগুলোতে কয়েদিদের সংখ্যা বেশি হওয়ার বিষয়টি নতুন নয়৷ ২০০৬ সালে জেলখানাগুলোতে বন্দিসংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি না হলেও প্রায় সমান ছিল৷ গতশতকের আশির দশকেও এমন অবস্থা তৈরি হয়েছিল৷
পরিস্থিতি সামাল দিতে জার্মানির কয়েকটি রাজ্য সরকার ধারণক্ষমতা বাড়ানোর আভাস দিয়েছে৷ নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র পেটার মার্শলেভস্কি ডিডাব্লিউকে জানান, নতুন কারাগার স্থাপন ও আগেরগুলো সংস্কারের জন্য আগামী কয়েক বছরে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার৷
বিকল্প প্রস্তাব
কারাগারগুলোর সমস্যার সমাধানে ১০ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন গবেষকরা৷ এর মধ্যে আছে, বেশি বেশি প্যারোলের ব্যবস্থা চালু, তুচ্ছ অপরাধগুলোকে বিচার ব্যবস্থায় বিবেচনায় না নেয়া ইত্যাদি৷
হার্ড বলেন, ‘‘সহজ একটি উপায় হচ্ছে, অভাবের কারণে যারা জরিমানার অর্থ দিতে অক্ষম তাদের জেলের শাস্তি দেয়া বন্ধ করা৷’’ তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে জার্মানিতে যত কয়েদি আছে তার মধ্যে আট শতাংশ হচ্ছে জরিমানা দিতে অক্ষম ব্যক্তি৷ আর এদের বেশিরভাগই গণপরিবহণে টিকিট ছাড়া চলাচলকারী৷’’ আজকের যুগে দারিদ্র্যতাকে এভাবে শাস্তি দেয়া অবশ্যই যুক্তিসংগত নয়, বলেন তিনি৷