এর আগে জার্মানিতে নতুন সরকার গঠনে ‘জোট আলোচনা' চলেছে সর্বোচ্চ ৮৬ দিন৷ তবে এবার সে রেকর্ড ভেঙেছে৷ তবে কবে এ নিয়ে অপেক্ষা শেষ হবে, অর্থাৎ কবে নাগাদ জার্মানিতে সরকার গঠন হতে পারে, তা এখনোও অনিশ্চিত৷
ছবি: Reuters/A. Schmidt
বিজ্ঞাপন
এ বছরের সেপ্টেম্বর ২৪ তারিখের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে সরকার গঠন নিয়ে এই অনিশ্চয়তা৷ খ্রিষ্টান সোশ্যাল ইউনিয়ন সিএসইউ, লিবারেল ফ্রি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এফডিপি ও সবুজ দলের সাথে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের খ্রিষ্টান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন সিডিইউ-র দীর্ঘ জোট আলোচনা ব্যর্থ হবার পর, এসপিডি ও সিডিইউ-র মহাজোট গঠনের সম্ভাবনায় ছিল জার্মানিতে নতুন সরকারের বিষয়ে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি৷ তবে অনিশ্চয়তা আরো একবার তীব্র হলো এসপিডি বা সামাজিক গণতন্ত্রী দলের নেতা মার্টিন শুলৎসের টুইটারের সূত্র ধরে৷
মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় শুলৎস জানান, জানুয়ারি ২১ তারিখে দলের বিশেষ কনফারেন্সের আগে তাঁর দল জোট আলোচনা নিয়ে অগ্রসর হবে না৷ কারণ হিসেবে তিনি জানুয়ারির শুরুতে ফেডারেল সংসদ সদস্যদের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য সভার আগ পর্যন্ত জোট আলোচনা স্থগিতের সিদ্ধান্তের দিকে ইঙ্গিত করেছেন৷
বেশি বেতন পাওয়া সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা
কোন দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান সবচেয়ে বেশি বেতন পান? ছবিঘরে দেখুন তেমন কয়েকজনের বাৎসরিক বেতনের তালিকা৷
ছবি: Reuters
সিংগাপুরের প্রধানমন্ত্রী
রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেতন পান সিংগাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং৷ তার বাৎসরিক বেতন ১৬ লাখ দশ হাজার ডলার৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Rahman
হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেতন পান হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী কেরি লাম৷ তার বাৎসরিক বেতন পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার চারশ’ ডলার৷
তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি৷ তার বাৎসরিক বেতন চার লাখ ৮২ হাজার নয়শ’ ৫৮ ডলার৷
ছবি: picture-alliance/robertharding
মার্কিন প্রেসিডেন্ট
বেশি বেতন পাওয়াদের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ জো বাইডেনের বাৎসরিক বেতন চার লাখ ডলার৷
ছবি: Evan Vucci/AP/picture alliance
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী
তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন৷ তার বাৎসরিক বেতন তিন লাখ ৭৮ হাজার চারশ’ ১৫ ডলার৷
ছবি: Sam Mooy/Getty Images
জার্মান চ্যান্সেলর
জার্মান চ্যান্সেলরের বাৎসরিক বেতন তিন লাখ ৬৯ হাজার ৭২৭ ডলার৷
ছবি: Clemens Bilan/Getty Images
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্নের বাৎসরিক বেতন তিন লাখ ৩৯ হাজার আটশ’ ৬২ ডলার৷ বেশি বেতন পাওয়া রাষ্ট্র প্রধানদের তালিকায় আট নাম্বারে আছেন তিনি৷
ছবি: Mark Mitchell/New Zealand Herald via AP/picture alliance
মৌরিতানিয়ার প্রেসিডেন্ট
আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ার প্রেসিডেন্ট বেশি বেতন পাওয়াদের তালিকার নয় নাম্বার স্থানে আছেন৷ তার বাৎসরিক বেতন তিন লাখ ৩০ হাজার ডলার৷ দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট হলেন মোহামেদ ঔল্ড গাজুয়ানি৷
ছবি: Reuters/R. Duvignau
লুক্সেমবুর্গের প্রধানমন্ত্রী
তালিকার দশ নাম্বারে আছেন ইউরোপের ছোট্ট, ধনী দেশ লুক্সেমবুর্গের প্রধানমন্ত্রী৷ দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হলেন জাভিয়ার বেটেল৷ তার বাৎসরিক বেতন দুই লাখ ৭৮ হাজার ৩৫ ডলার৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
নরেন্দ্র মোদী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বছরে ৩০ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার বেতন পান৷ দেশটির হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা জানায়, করোনার মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা ঠেকাতে নিজের বেতন শতকরা ৩০ ভাগ কমিয়েছেন মোদী৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Rahman
শেখ হাসিনা
২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মাসিক বেতন ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা করা হয়৷ মে মাসে এ সংক্রান্ত একটি বিল পাস হয়৷ বেতন বাড়ার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বছরে মোট বেতন দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বা ১৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার৷
গত ৫০ বছরের মধ্যে ভোটের মাঠে এসপিডির সবচেয়ে শোচনীয় পরাজয়ের পর শুলৎস ঘোষণা দিয়েছিলেন, সরকারের সাথে জোট গঠনের বদলে সংসদে বিরোধী দল হিসেবেই থাকতে চান তাঁরা৷ পরে এসপিডি সদস্য জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ারের অনুরোধে মার্টিন শুলৎস সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় রাজি হন৷
পরবর্তীতে অবশ্য এসপিডির নিজেদের মধ্যেই এ সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিমত তৈরি হয়৷ বিশেষ করে দলের তরুণ প্রতিনিধিরা জোট গঠনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়৷ এ পরিস্থিতিতে জানুয়ারির সভা দল হিসেবে এসপিডির অবস্থান নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ জমায়েত৷ প্রায় ৬০০ জন প্রতিনিধি এতে অংশ নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
আরএন/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)
জার্মানিতে কেমন সরকার দেখতে চান আপনি? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাস্ত করেন ম্যার্কেল
এমনকি ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগেও তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো রাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয় বা পাশে সরিয়ে দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নিজের দল বা বিরোধী দলের অনেক নেতাকেই নানাভাবে ঠেকিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
‘কোল গার্ল’ যখন গুরুকে ছাড়লেন
দীর্ঘদিন চ্যান্সেলর পদে থাকে হেলমুট কোল ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় প্রথম সুযোগ দিয়েছেন এবং তাঁর উত্থানে সহায়তা করেছিলেন৷ কিন্তু ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর ম্যার্কেল এবং সিডিইউ তাঁর বিপক্ষে চলে যায়৷ কোল কিছু সূত্র থেকে নগদ অর্থ সাহায্য নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে সব সূত্রের বিস্তারিত তিনি জানাননি যা দলের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন সেসময় সিডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার – রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি
২০০৫ সালের নির্বাচনে এসপিডি’র চ্যান্সেলর শ্র্যোডারকে পরাস্ত করেন ম্যার্কেল৷ তবে এই পরাজয়ে শ্র্যোডারের নিজের দাম্ভিকতাও কিছুটা ভূমিকা রেখেছিল৷ সেই নির্বাচনে খুব অল্প ব্যবধানে সিডিইউ’র কাছে হেরে যায় এসপিডি৷ যদিও নির্বাচনের আগে টিভি বিতর্কে তিনি দাবি করেছিলেন, যে জার্মানরা চায় তিনি ক্ষমতায় থাকুন৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি এবং তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার - দীর্ঘদিনের সঙ্গী
শুরুতে ম্যার্কেলের অধীনে চারবছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ এরপর ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেন সামাজিক গণতন্ত্রীদের এই রাজনীতিবিদ৷ কিন্তু সেই নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি স্টাইনমায়ারের দল৷ পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আবারো ম্যার্কেলের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন স্টাইনমায়ার৷ আর চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে তিনি জার্মানির প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kembowski
গ্যুন্টার ও্যটিঙার - পথের কাঁটা দূর হলো
ম্যার্কেল যে শুধু তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেন এমন নয়৷ বরং নিজের দলে থাকা সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের লোভনীয় অন্য কোন পদেও পাঠিয়ে দেন৷ তাঁর সহকর্মী বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্যুন্টার ও্যটিঙারকে ২০১০ সালে তিনি ইউরোপীয় কমিশনে বড় পদে পাঠিয়ে দেন৷ অথচ ও্যটিঙারের সেই পদ পাওয়ার মতো কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
রোনাল্ড কখ - বাতিলের তালিকায় ফেলে দেয়া
দুই কারণে রোনাল্ড কখ পরিচিত৷ প্রথমত, তিনি দলাই লামার বন্ধু৷ দ্বিতীয়ত, সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্ব চালুর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য৷ হেসে রাজ্যের এই রাজ্য প্রধান কখনো ম্যার্কেলের উত্থানে বাধা না হলেও হঠাৎ করেই মনে করেছিলেন তাঁকে বার্লিনে বড় পদের জন্য ডাকা হবে৷ কিন্তু ম্যার্কেলকে তাঁকে সেরকম কোন সুযোগ দেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ - একজন দুর্ভাগা রাষ্ট্রপতি
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ কিন্তু ২০১০ সালে হর্স্ট ক্যোলার পদত্যাগ করার পর সিডিইউ বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ভুল্ফ সুযোগ পেয়ে যান৷ ভুল্ফ তখন লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের রাজ্যপ্রধান৷ পরবর্তীতে অবশ্য দুর্নীতির দায়ে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেয়ার স্টাইনব্রুক – সঠিক মানুষ, ভুল সময়
২০১৩ সালে ম্যার্কেল যখন তাঁর ক্যারিয়ারের তুঙ্গে, তখন এসপিডি থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেছে নেয়া হয় পেয়ার স্টাইনব্রুক’কে৷ ম্যার্কেলের অধীনে একসময় অর্থমন্ত্রী থাকা এই রাজনীতিবিদের চ্যান্সেলর পদ পাওয়ার সব যোগ্যতাই ছিল৷ কিন্তু সময়টা ঠিক ছিল না৷ ম্যার্কেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুবিধা করতে পারেননি তিনি৷