1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিল্পকলা

কামিল্লা ইয়ারৎসিনা/এসি২৯ মার্চ ২০১৩

বাওহাউস ডেসাউ-তে চলেছে একটি প্রদর্শনী, যার নাম ‘‘বিশ্বজনীন প্রগতিশীলতার বিভিন্ন ধারার সাক্ষাৎ’’৷ সেখানেই ঝুলছে ইউরোপীয় বাওহাউস শিল্পীদের আঁকা নানান ছবি৷ এবং তাদের পাশেই ভারতীয় শিল্পীদের ছবি৷

ছবি: Stiftung Bauhaus Dessau/Yvonne Tenschert

সুনয়নী দেবী, নন্দলাল বোস, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর: এঁদের ছবি হঠাৎ জার্মানির পূর্বাঞ্চলের প্রখ্যাত বাওহাউস ডেসাউ নামধারী ভবনটিতে এলো কি করে, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে জার্মান তথা ইউরোপীয় স্থাপত্য তথা শিল্পকলার ইতিহাসে বেশ খানিকটা পথ ফিরে যেতে হবে৷

১৯১৯ থেকে ১৯২২ সাল অবধি জার্মানিতে স্থাপত্য ও শিল্পকলার একটি ধারা সারা বিশ্বে নাম করে ফেলেছিল: বাওহাউস শৈলী৷ বাওহাউস কথাটার মানে কিন্তু এক কথায় ‘হাউস অফ কনস্ট্রাকশন' বা ‘বাড়ি তৈরি'৷ ভাইমারের ভাল্টার গ্রোপিয়ুস এই শৈলীর স্রষ্টা৷ বাওহাউসের পিছনে মূল ধারণাটা ছিল হাতের কাজ ও শিল্পকলাকে এক করা৷ সূচনায় স্থাপত্যকে তার মধ্যে ধরা হতো না, যদিও গ্রোপিয়ুস স্বয়ং ছিলেন স্থপতি৷ অথচ পরে এই বাওহাউস শৈলী আধুনিক স্থাপত্য শিল্পের ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়৷

ইওহান্নেস ইটেন-এর আঁকা ‘‘তরুণী মহিলা’’ছবি: VG Bild-Kunst Bonn 2013

কলকাতা, ১৯২২

বাওহাউস আন্দোলনের গোড়ার দিকে, ১৯২২ সালে, কলকাতায় একটি প্রদর্শনী হয়, যে প্রদর্শনীতে বাওহাউস শিল্পীদের আঁকা ছবি প্রদর্শিত হয়েছিল৷ এবং সেই সঙ্গে ভারতীয় আভঁ গার্দ' বা ভবিষ্যত নবী শিল্পীদের ছবি – তবে পৃথকভাবে৷ এবার ডেসাউ-তে সে আমলের ইউরোপীয় বাওহাউস শিল্পীদের পাশাপাশি সে আমলের ভারতীয় শিল্পীদের ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে৷

চিত্রকলায় বাওহাউস শৈলীটা যে কি বস্তু, তা বুঝতে গেলে ইওহান্নেস ইটেন-এর আঁকা ‘‘তরুণী মহিলা'' ছবিটি দেখা চলতে পারে৷ ইটেন যে কোনো বস্তু কিংবা ব্যক্তির নির্যাস বা সারমর্মটুকু ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন৷ শুধু আকার কি বর্ণ নয়, স্বয়ং স্বাদ-গন্ধকে রেখায় ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি৷ এমনকি যে বাতাস শরীরকে ঘিরে থাকে, পেন্সিলের আঁচড়ে তাকেও ধরে রাখতে চেয়েছিলেন ইটেন৷

পোস্টকার্ডে ভারতীয় চা রুমছবি: Louis Held, Bauhaus-Archiv Berlin

সংলাপ, সমান্তরাল

বাওহাউস ডেসাউ-তে ইউরোপীয় ও ভারতীয় শিল্পীদের ছবি পাশাপাশি রেখে যেন দু'পক্ষের মধ্যে সংলাপের প্রচেষ্টা করা হয়েছে৷ বাওহাউসের এক পরিচালিকা রেজিনা বিটনার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন: ‘‘আমরা দুই দেশের শৈল্পিক বিকাশধারার সমান্তরাল গতি ও অবস্থান দেখাতে চেয়েছি৷ ইউরোপ যে সে আমলে শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, এখান থেকেই সব বিকাশধারা বাকি বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তো, এই ধারণাটাকে আমরা অত্যধিক গুরুত্ব দিতে চাইনি৷''

অথচ ধারণাটা খুব মিথ্যা নয়৷ গত শতাব্দির বিশের দশকে ভারতের আধুনিক চিত্রকলার সঙ্গে বাওহাউস শৈলীর একটা ঘনিষ্ঠ সংযোগ ছিল: তার প্রমাণ ১৯২২ সালে কলকাতার ঐ প্রদর্শনী৷ প্রদর্শনীটা হয়েছিল ‘‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট''-এর ভবনে৷ প্রদর্শনীতে ইওহান্নেস ইটেন, পল ক্লে অথবা ভাসিলি কান্ডিনস্কি-র মতো বাওহাউস শিল্পীদের ছবি ঐ প্রথমবারের মতো ভারতীয় উপমহাদেশে প্রদর্শিত হয়৷

সুনয়নী দেবীর ‘মিল্কমেইড’ছবি: Delhi Art Gallery

ভারততত্ত্বের যুগে

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকার পর ইউরোপের দার্শনিক ও শিল্পীদের মধ্যে পশ্চিমি যুক্তিবাদ ও স্বভাববাদের বিকল্প খোঁজা শুরু হয়৷ মহাকবি গ্যোটের ‘শকুন্তলা' থেকে শুরু করে হ্যার্মান হেসের ‘সিদ্ধার্থ' অবধি জার্মান চেতনায় ভারতের যে একটি শাশ্বত মূর্তি ছিল, সেটাই যেন ঐ বিশের দশকে স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রূপ ধরে একাধিকবার জার্মানিতে আসেন৷

অপরদিকে ১৯২২ সালে কলকাতায় এবং ২০১৩'য় ডেসাউ-তে প্রদর্শিত ভারতীয় শিল্পীরা ঔপনিবেশিকতার বেড়জাল থেকে মুক্তির সন্ধান করছিলেন৷ স্বকীয়, দেশজ জীবন ও সংস্কৃতি থেকেই ছবির বিষয় খুঁজে নিয়েছিলেন তারা৷ এমনকি ব্রিটিশ পদ্ধতিতে ক্যানভাসের উপর তেলরঙ দিয়ে আঁকার পরিবর্তে ভারতীয় শিল্পীরা কাগজের উপর গুয়াচে ও টেম্পেরা ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন৷

আজকের দৃষ্টিকোণ থেকে আশ্চর্য এই যে, জার্মানির বাওহাউস এবং ভারতীয় আভঁ গার্দ ঠিক একই শৈল্পিক ভাষা খুঁজে পায়৷ শিল্পকলার ক্ষেত্রে গ্লোবাল ভিলেজ যে আজকের নয়, কলকাতার সেই প্রদর্শনীই তার প্রমাণ৷

প্রদর্শনীতে ইউরোপ ও ভারতের ৮০টি করে ছবি দেখানো হয়েছে, এবং সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরো কিছু ছবি৷ এছাড়া ১৯২২ সালের কলকাতা প্রদর্শনীটিকে পুনর্নির্মাণের প্রচেষ্টা করা হয়েছে৷ এভাবেই যেন অতীত চিরকাল ভবিষ্যতের খোঁজে, অথবা বর্তমান অতীতের৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ