সিরিয়ার এক স্কুলভবনে আকাশ থেকে চালানো হামলায় কমপক্ষে ৩২ জন সাধারণ নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন৷ জার্মানির দেয়া গোয়েন্দা তথ্য এই প্রাণহানির কারণ হতে পারে বলে জার্মান গণমাধ্যম বলছে৷
বিজ্ঞাপন
সিরিয়ায় তথাকথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর শক্তিশালী ঘাঁটি বলে পরিচিত রাকা শহরের ৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত আল-মানসুরা শহরে মঙ্গলবার এই হামলা চালায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন আইএস-বিরোধী জোট৷ ভবনটিতে গৃহহীন মানুষরা আশ্রয় নিয়েছিল বলে জানিয়েছে লন্ডন ভিত্তিক সংগঠন ‘সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস’৷
গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত আলেপ্পোয় আবারো সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, অন্তত কয়েক ঘণ্টার জন্য৷ স্থানীয় ক্লাব আল-ইত্তিহাদ এবং হুরাইয়া গত পাঁচবছরের মধ্যে প্রথম একটি ফুটবল ম্যাচে অংশ নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Lubaki
২০১২ সালের পর প্রথম ম্যাচ
সেই ২০১২ সালে আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চল বিদ্রোহীরা দখল করে নেয়ার পর থেকেই যুদ্ধ লেগে আছে সিরিয়ার শহরটিতে৷ এখন অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা ঠান্ডা৷ আর সেই সুযোগ সুযোগে স্থানীয় ক্লাব আল-ইত্তিহাদ এবং হুরাইয়া নিজেদের ভক্তদের একটু স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ দিল৷ ফুটবল মাঠে মুখোমুখি হয় দুই ক্লাব৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Ourfalian
আসাদ উপস্থিত
খেলা চলাকালে ইত্তিহাদের বিশাল ব্যানারে শোভা পায় সেদেশের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের একটি ছবি৷ সিরিয়ায় একসময় সিরিয়ান প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের আয়োজন করা হতো৷ ফুটবল জনপ্রিয় সেদেশে৷ তবে আলেপ্পোয় অদূর ভবিষ্যতে আর কোনো খেলার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Ourfalian
পতাকা উড়িয়েছেন সমর্থকরা
টানা কয়েকবছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে অনেকই আপনজন হারিয়েছেন৷ তা সত্ত্বেও হাসিমুখে মাঠে হাজির ছিলেন দুই ক্লাবের অনেক ভক্ত৷ কেউ কেউ আবার উড়িয়েছেন পতাকা৷ স্টেডিয়ামে হাজির মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘‘সর্বশেষ ২০১০ সালে একটি ম্যাচ দেখেছিলাম আমি৷’’ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে তিন লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, গৃহহীন কয়েক মিলিয়ন৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Ourfalian
উত্তেজনায় কঠিন সময়
স্টেডিয়ামে দাঙ্গা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণসহ পুলিশের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো৷ সেই ২০১২ সালের সিরিয়ান প্রিমিয়ার লিগের একটি ম্যাচ হিসেবে আলেপ্পোতে মুখোমুখি হয় দু’দল৷ এছাড়া আসাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দামেস্ক এবং লাটাকিয়াতে আরো ম্যাচ অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Ourfalian
খেলোয়াড় এবং ভক্তদের জন্য শোচনীয় অবস্থা
কিছু প্রফেশনাল ফুটবলার জীবন বাঁচাতে সিরিয়া ত্যাগ করেছেন, অনেকে আবার চলে গেছেন প্রতিবাদ হিসেবে৷ সিরিয়ার ফুটবল বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ নাসের মনে করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খেলোয়াড় এবং ভক্তদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেছে৷ তিনি জানান, ২০১২ সালে পশ্চিম এশিয়ান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপে সিরিয়ার জাতীয় দল সাফল্য অর্জন করলেও বিভিন্ন সময়ে খেলা চলাকালে খেলোয়াড়দের হত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Ourfalian
আশাবাদী ভক্তরা
খেলা শুরুর আগে গুশান মাহমুদ নামের এক ভক্ত বলেন, ‘‘আমরা অনেকটা আশাহত হয়ে পড়ছিলাম, কেননা আলেপ্পোতে কোনো ম্যাচ আয়োজন করা হচ্ছিল না৷ কিন্তু এখন নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে৷ আমরা আশা করছি, ক্লাবের সমর্থকরা ধীরে ধীরে গ্যালারিতে ফিরবেন৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/G. Ourfalian
6 ছবি1 | 6
জার্মানির ‘স্যুডডয়চে সাইটুং’ পত্রিকাসহ এনডিআর এবং ডাব্লিউডিআর প্রচারমাধ্যম বলছে, হামলার আগের দিন জার্মানির জেট বিমান থেকে তোলা ঐ স্কুলভবনের ছবি আইএস-বিরোধী জোটকে দেয়া হয়েছিল৷ এরপর হামলার পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণেও সেখানে জেট পাঠিয়েছিল জার্মানি৷
জার্মানির মিলিটারি ইন্সপেক্টর জেনারেল ফল্কার ভিকার বুধবার বিষয়টি নিয়ে সংসদের প্রতিরক্ষা বিষয়ক কমিটির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে৷
এদিকে, জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা ডিপিএ-কে বলেছেন, ভবনে থাকা জঙ্গি অথবা সাধারণ মানুষদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর মতো যথেষ্ট তথ্য ঐ ছবিগুলোতে ছিল না৷
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী বলছে, আইএসকে লক্ষ্য করে চালানো হামলায় সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ার তথ্য তাদের কাছে নেই৷ তবে এ বিষয় তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে তারা৷
উল্লেখ্য , ২০১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া আইএসবিরোধী অভিযানে কমপক্ষে ২২০ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে চলতি মাসে জানিয়েছিল আইএসবিরোধী জোট৷ তবে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী কয়েকটি সংস্থা বলছে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি৷
চেজ ভিন্টার/জেডএইচ
আলেপ্পো: তখন আর এখন
আলেপ্পো-ঝলমলে প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর সিরিয়ার একটা শহর৷ সবসময় যেখানকার বাজার থাকতো সরগরম৷ আর এখন আলেপ্পো যেন এক ভুতূরে শহর৷ আলেপ্পোতে গৃহযুদ্ধের আগের ও পরের কিছু ছবি থাকছে ছবিঘরে৷
উমায়াদ মসজিদ, তখন
৭১৫ সালে নির্মিত উমায়াদ মসজিদকে সিরিয়ার ‘মর্যাদাপূর্ণ স্থাপনা’ বলা হতো৷ এমনকি জাতিসংঘের বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাতেও এর নাম রয়েছে৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
উমায়াদ মসজিদ, এখন
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর ২০১৩ সালে হামলায় এই মসজিদও রেহাই পায়নি৷ প্রার্থনায় জায়গায়ও গোলাগুলি হয়৷ ২০১৬ সালের মার্চে একটি মিনার ধসে পড়ে৷ এখন জায়গাটি দেখলে একটা ধ্বংসস্তূপ মনে হয়৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
নহাসিন হাম্মাম, তখন
পুরানো আলেপ্পোর এই হাম্মাম পর্যটকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় স্থান বলে পরিচিত ছিল৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
নহাসিন হাম্মাম, এখন
গৃহযুদ্ধ শুরুর পর এই জায়গাটির চেহারা দেখে বোঝাই যায় না কতটা আরামের জায়গা ছিল এটি৷ এখানে এখন পানি আর গোসল করার জিনিসের বদলে যুদ্ধের ভয়ংকর ক্ষত চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
কেল্লা, তখন
আলেপ্পোর কেল্লা বিশ্বের অন্যতম বড় ও পুরানো কেল্লার তালিকায় স্থান পেয়েছে৷ ১২শ’ শতাব্দীতে দুর্গটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়৷
ছবি: Reuters/S. Auger
কেল্লা, এখন
সময়ের সাথে লড়াই করে দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা দুর্গটি নিজের অধিবাসীদের ঝগড়া-বিবাদ সহ্য করতে পারেনি৷ যুদ্ধের প্রভাবে দুর্গটি তার পুরোনো জৌলুস হারিয়েছে৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
পুরানো শহর, তখন
২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে তোলা এই ছবিটি৷ পুরানো শহর তার চাকচিক্যে ঐতিহ্যে ঝলমল করছে৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
পুরানো শহর, এখন
এই ছবিটি ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বরের৷ পুরানো শহরের চাকচিক্যের ছিটেফোটাও এখন আর নেই৷ যেন এক ভুতূরে নগরী৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
শাহাবা মল, তখন
২০০৯ সালের ডিসেম্বর, এই মল ক্রিসমাসের জন্য সাজানো হয়েছিল৷ ২০০৮ সালে নির্মিত এই শপিং মলের সাজ সজ্জা দেখতেই অনেক লোক এখানে যেতো৷
ছবি: Reuters/K. Ashawi
শাহাবা মল, এখন
গুগলে যদি এখন এই নামটি সার্চ করেন, তবে লেখা দেখবেন ‘চিরকালের জন্য বন্ধ’ ৷ ২০১৪ সালে হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় মলটি৷
ছবি: Reuters/A. Ismail
আল-জারাব বাজার, তখন
আল-জারাব বাজার এর প্রধান দরজা৷ পুরোনো আমলের এই বাজারে ছবিটি ২০০৮ সালে তোলা৷
ছবি: Reuters/O. Sanadiki
আল-জারাব বাজার, এখন
২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে বাজারের এই ছবিটি তোলা হয়েছে৷ বাজারের বেশিরভাগ অংশই বিধ্বস্ত হয়েছে হামলায়৷