নতুন প্রেসিডেন্ট
১৮ মার্চ ২০১২নির্বাচন প্রক্রিয়া
জার্মানিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে থাকে ফেডারেল এসেম্বলি৷ এর সদস্য সংখ্যা ১২৪০৷ এর মধ্যে ৬২০ জন সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগের সদস্য আর বাকি ৬২০ জন বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধি৷ আজ নির্বাচনে ভোট পড়ে ১,২৩২টি৷ এর মধ্যে ৭২ বছর বয়সি গাউক পান ৯৯১ ভোট৷ নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বেয়াটে ক্লার্সফেল্ড৷ তিনি বামপন্থী ‘ডি লিংকে' দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন৷
গাউকের অতীত
ইওয়াখিম গাউক-এর জন্ম ১৯৪০ সালে, জার্মানির পূর্বাঞ্চলের বাল্টিক সাগরবর্তী রস্টক শহরে৷ বড় হয়েছেন কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানিতে৷ অল্প বয়স থেকেই স্বাধীনচেতা মানুষ তিনি৷ ১৯৫১ সালে কমিউনিস্ট গোয়েন্দা দপ্তরের কর্মীরা তাঁর বাবাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়৷ গাউকের বয়স মাত্র ১১৷ বাবা ছিলেন ক্যাপ্টেন৷ তাঁকে আবার দেখেন তিনি ১৫ বছর বয়সে৷ তখন তিনি ভেঙে পড়া এক মানুষ৷ সাইবেরিয়ায় ২৫ বছরের শ্রমশিবির বাসের দণ্ড জোটে তাঁর৷ কোথায় তাঁকে রাখা হয়, তিনি আদৌ জীবিত কিনা পরিবারের কেউই তা জানতেননা৷ স্বৈরশাহীর ফল কি হতে পারে তার ছবিটা বাবার ওপর এই নিগ্রহ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় গাউকের মনে অল্প বয়সেই৷ মুক্তি ও স্বাধিকারের পক্ষ নিতে তাঁর দেরি হয় নি৷ ধর্মযাজক হিসেবেও এই কাজ করেছেন তিনি নির্দ্বিধায়৷ এবং তাঁর ওপর কড়া চোখ ছিল কমিউনিস্ট সরকারের গোয়েন্দা পুলিশের৷ পূর্ব জার্মানির মানুষের শান্তিপূর্ণ বিপ্লবেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন ইওয়াখিম গাউক৷ লুপ্ত হয় কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানি৷ জার্মানি হয় পুনরএকত্রিত৷ পূর্ব জার্মানির কুখ্যাত রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা দপ্তর স্টাসির নাগরিকদের ওপর নিয়মিত নজরদারির সব দলিলপত্র সংরক্ষণ করতে যে সংস্থা গঠিত হয় তার পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে ইওয়াখিম গাউক-এর ওপর৷ ২০০০ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব তিনি মর্যাদার সঙ্গে পালন করেন৷ এই দলিল দেখার সুযোগ দেন তিনি জনসাধারণকে৷ গণতন্ত্রের স্বচ্ছতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধতা তাঁর চরিত্রের সহজাত৷
প্রতিক্রিয়া
পূর্ব আর পশ্চিম একত্রিত হওয়ার পর জার্মানি কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে গাউকের নির্বাচন তারই একটা নিদর্শন বলে মনে করেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ গাউকের মতো তিনিও পূর্ব জার্মানির লোক৷ নির্বাচিত হওয়ার পর দেয়া বক্তব্য গাউক বলেন, তিনি এমন দিনে নির্বাচিত হলেন ২২ বছর আগে যেদিন পূর্ব জার্মানিতে প্রথমবারের মতো স্বাধীন নির্বাচন হয়েছিল৷
উল্লেখ্য, গত তিন বছরের মধ্য এটা ছিল জার্মানির তৃতীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷ কারণ এর আগের দুটো নির্বাচনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ আর হর্স্ট ক্যোলার৷ বন্ধুর কাছ থেকে কমসুদে গৃহঋণ নেয়ার তথ্য প্রকাশ এবং সে থেকে ঘটা পরবর্তী ঘটনাসমূহের কারণে ব্যাপক সমালোচিত হয়ে পদত্যাগ করেছিলেন ভুল্ফ৷ আর আফগানিস্তান বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হয়ে পদত্যাগ করেছিলেন ক্যোলার৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়