রায়ের আগেই মামলা শেষ
২ জুন ২০১৭এই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ থাকলেও এরই মধ্যে নানা মহলে ঘটনার ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে৷
জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় কোবলেনৎস শহরে এই ঘটনা ঘটেছে৷ সমালোচকরা এ ঘটনাকে বিচার বিভাগের জন্য কলঙ্কজনক হিসাবে উল্লেখ করছেন৷ বিচারকার্য বিলম্বিত করতে আসামিপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করেছেন বলেও তাদের অভিযোগ৷ অবশ্য আদালতও বিচারে বিলম্বের জন্য আসামিপক্ষকেই দায়ী করেছে৷
এই বিচারের সন্দেহভাজন ১৭ আসামি উগ্র ডানপন্থি সংগঠন আকসিয়ন্স ব্যুরো মিটেলরাইন-এর সদস্য বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷ এ সংগঠনের বিরুদ্ধে জার্মান রাষ্ট্র ব্যবস্থা বদলে দেয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে৷
তবে বিচার স্থগিত করায় সেই আসামিরাই এখন মুক্তি পেয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ ৫ বছর ধরে চলা অসমাপ্ত এই বিচারের মূল আসামি ২৬ জন৷ তাদের পক্ষে ৫২ জন আইনজীবী মামলা পরিচালনা করেছেন৷ মামলায় সাক্ষী ছিল ১২০ জন৷ ৯২৬ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধী দল গঠন, সম্পদহানি, অগ্নিসংযোগ এবং হামলার অভিযোগ আনা হয়৷
এদিকে মামলা চলতে চলতেই বিচারক হান্স-গিওর্গ গোটগেনের অবসরে যাবার সময় আসন্ন৷ তাই বিচার ঝুলে গেছে৷ জার্মান আইন অনুসারে নতুন বিচারক দিয়ে এই বিচার চালিয়ে নেয়া যায় না৷ নতুন বিচারক এলে তাকে বিচার কাজ নতুন করে শুরু করতে হবে৷
এত দীর্ঘ একটি বিচার নতুন করে শুরু না করে মঙ্গলবার আদালত এটার ইতি টানার আদেশ দিয়ে দেয়৷
আসামিদের মধ্যে দুইজন কারাগারে কাটানো সময়ের জন্য ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন বলে আদালতের অভিমতে বলা হয়৷ কারণ, তাদের বিরুদ্ধে যে ধরণের তথ্য প্রমাণ রয়েছে, তাতে তারা খালাস পেতেন বলে মনে করা হচ্ছে৷
বাকিদের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ থাকায় তাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আদালত বিবেচনা করেনি৷
তবে এই সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত নয়৷ কারণ, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ চাইলে আপিল করতে পারে৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক বার্তায় প্রসিকিউশন টিম জানিয়েছে, তারা এই সিদ্ধান্তকে সতর্কতার সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ নেবেন৷
এই বিচারকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য আদালতের আদেশে আসামিপক্ষকে দায়ী করেছে৷ আদালত বলেছে, ২০১২ সালের অগাস্টে যখন এই বিচার শুরু হয়, তখন কোনো অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়নি৷ কারণ, কেউই ভাবতে পারেনি যে, এতদিনেও এই বিচার শেষ হবে না৷
বিচারে এমন অনেক উদ্ভট ঘটনাও ঘটেছে যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আদালতকে হিমশিম খেতে হয়েছে৷ দুর্গন্ধ-বোমা নিক্ষেপ, উগ্র সমর্থকদের হৈ-চৈ এবং বিক্ষোভ, আসামিদের অস্বাভাবিক হারে অসুস্থতার কারণে এই বিচার দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে৷
বিশেষ করে, যখন এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বিচারক অবসরে গেলেই বিচার শেষ হয়ে যাবে, তখন ৫ মিনিটের টয়লেট বিরতিও ২০ মিনিট হয়ে যায়৷
এমন খবর রয়েছে যে, প্রসিকিউশনের সাক্ষীরা যে টেবিলে বসেন, বিরতির সময় সেখানে আসামিরা থুতু ছিটিয়ে দিত৷ আদালতের টয়লেটে নাৎসিদের প্রতীক ‘স্বস্তিকা’ চিহ্ন এঁকে দিত৷ তবে এই কাজে জড়িত বলে কাউকে সুনির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করা যায়নি৷
এই আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্ত থাকার সময়ে বিভিন্ন দেয়ালে স্বস্তিকা চিহ্ন আঁকার অভিযোগ রয়েছে৷
উভয়পক্ষের শত শত আবেদনেও বিচার বিঘ্নিত হয়েছে৷ চারশ’র বেশি প্রক্রিয়াগত আবেদন, দলিলের জন্য ২৪০টি আবেদন, পাঁচশ'র বেশি আবেদন করা হয় পক্ষপাতের যুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে৷
বিচার চলাকালে আদালত কক্ষে বসে আসামিদের উপন্যাস পড়তেও দেখা যায়৷ কোনো কোনো আইনজীবীকে তাদের ল্যাপটপে কার্ড খেলতেও দেখা যায়৷
এক আইনজীবী জার্মান একটি সংবাদপত্রকে বলেছেন, কখনো কখনো আমার মনে হয়েছে যেন পাগলের কারখানায় আছি৷
বিচার বিঘ্নিত করার অভিযোগ আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অস্বীকার করেছেন৷ অবশ্য আসামিপক্ষের আইনজীবীদের কারো কারো বিরুদ্ধে দক্ষিণপন্থার প্রতি দুর্বলতা থাকার অভিযোগ রয়েছে৷
দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির একটি সংবাদ মাধ্যমকে আসামিপক্ষের আইনজীবী গুন্টার হ্যারৎসোগেনরাথ-আমেলুং বলেন, প্রক্রিয়াগত সকল সম্ভাব্যতায় আমরা কেবল আইনজীবী হিসাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি৷
‘আমরাও মামলা করবো’- শিরোনামে আসামিদের পক্ষ থেকে একটি অনলাইন প্রচারণাও রয়েছে, যেখানে পুরো বিচারকে ‘বিচারিক কলঙ্ক’ নামে আখ্যা দেয়া হয়েছে৷ সেখানে পুরো অভিযোগপত্রকেও ভিত্তিহীন বলা হয়েছে৷
বেন নাইট/এসএন