জার্মান পাসপোর্টপ্রার্থী ব্রিটিশ নাগরিকের সংখ্যা এক বছরেই প্রায় চারগুণ বেড়ে গেছে৷ বেক্সিট এগিয়ে আসায় এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার জার্মানির ফেডারেল পরিসংখ্যান দপ্তর জানিয়েছে, গত বছর জার্মান নাগরিকত্ব গ্রহণকারী ব্রিটিশের সংখ্যা উচ্চহারে বেড়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগে গণভোটের ফল আসার পর থেকে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷
‘‘২০১৬ সালে সর্বমোট দুই হাজার ৮৬৫ জন ব্রিটিশ নাগরিককে জার্মান নাগরিকত্ব দেয়া হয়৷ সংখ্যাটি আগের বছরের তুলনায় ৩৬১ শতাংশ বেশি৷ এই বৃদ্ধির কারণ অবশ্যই বেক্সিট৷ ব্রিটিশদের জন্য এটা পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি৷''
ব্রেক্সিট: পরের পদক্ষেপ
ব্রিটেন লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্রটি কার্যকর করতে চলেছে, যার মাধ্যমে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ কিন্তু প্রক্রিয়াটা কী?
ছবি: Getty Images/J. Taylor
৫০তম সূত্রটি কী?
লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্র অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোনো সদস্য দেশের একতরফাভাবে ইইউ ছাড়ার অধিকার রয়েছে৷ সূত্রে তার প্রক্রিয়াও বর্ণনা করা হয়েছে৷ বিদায়ী রাষ্ট্রটি তার ইউনিয়ন পরিত্যাগের শর্তাবলী আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করার জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ ৫০তম সূত্র একবার সক্রিয় হলে, সব সদস্যদেশের সম্মতি ছাড়া সে প্রক্রিয়া রোধের আর কোনো পন্থা নেই৷
ছবি: Reuters/T. Melville
৫০তম সূত্রের বক্তব্যটা কী?
৫০তম সূত্রে বলা হয়েছে যে, বিদায়ী দেশকে সরকারিভাবে ইউরোপীয় পরিষদকে (ইইউ পরিত্যাগের অভিপ্রায়) জানাতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশ ইইউ-এর সঙ্গে আপোশে পৌঁছানোর জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ সংশ্লিষ্ট দেশ তার ইইউ ত্যাগ সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ শলা-পরামর্শে অংশ নিতে পারবে না৷ ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত চুক্তি একটি ‘কোয়ালিফায়েড মেজরিটি’-র দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে এবং ইউরোপীয় সংসদের সদস্যদের সমর্থনও আবশ্যক হবে৷
ছবি: picture alliance/dpa
কবে শুরু হবে ইইউ ত্যাগের প্রক্রিয়া?
যুক্তরাজ্য ২০১৬ সালের জুন মাসের গণভোটে ইইউ পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বিভিন্ন সংসদীয় বিতর্ক ও অন্যান্য আইনগত বিধিব্যবস্থার পর একটি পত্রের মাধ্যমে সরকারিভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করবেন – যার ফলে ৫০তম সূত্রটি কার্যকর হবে৷ ইইউ কর্মকর্তারা এই বিচ্ছেদের জন্য ব্রিটেনের কাছ থেকে ৫৫ থেকে ৬০ বিলিয়ন ইউরো পাওনার আভাস দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
তারপর...?
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করার পর ইইউ নেতৃবর্গ ২৯শে এপ্রিল একটি শীর্ষবৈঠকে মিলিত হয়ে ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনার নির্দেশাবলী নির্দিষ্ট করবেন৷ বাস্তবিক ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনা শুরু হবে মে অথবা জুন মাসে৷ এই আলাপ-আলোচনার সবচেয়ে কণ্টকিত বিষয় হবে, যে দশ লাখের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক ইইউ-তে বাস করছেন ও যে ত্রিশ লাখের বেশি ইইউ নাগরিক ব্রিটেনে বসবাস করছেন, তাদের একটা ব্যবস্থা করা৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Vitvitsky/Sputnik
দ্য গ্রেট রিপিল বিল
সেপ্টেম্বর নাগাদ যুক্তরাজ্য সরকার ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবেন এবং যাবতীয় ইইউ আইনকানুনকে ব্রিটিশ আইনে পরিণত করবেন৷ এর ফলে ১৯৭২ সালের ইউরোপিয়ান কমিউনিটিজ অ্যাক্ট বা ইসিএ তামাদি হয়ে যাবে – কেননা ইসিএ-র বলেই ইইউ-এর আইনকানুন সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেনেও বলবৎ হয়৷ এছাড়া এই রিপিল বিল পার্লামেন্টকে ইইউ-এর প্রণীত আইনের বিভিন্ন অংশ ব্রিটিশ আইনে পরিণত করার ও বাদবাকি অংশ বাতিল করার ক্ষমতা দেবে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA
গোটা প্রক্রিয়া কতদিন ধরে চলবে?
ইইউ নেতৃবর্গ বলেছেন যে, তারা ১৮ মাসের মধ্যে ব্রেক্সিটের শর্তাবলী সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা সমাপ্ত করতে চান এবং সেই শর্তাবলী ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় সংসদ এবং অপরাপর ইইউ রাষ্ট্রের সংসদের দ্বারা অনুমোদিত দেখতে চান৷ দু’বছরের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হলে ব্রিটেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সেই সংক্রান্ত যাবতীয় চুক্তি থেকে বিদায় নেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rain
কিন্তু যুক্তরাজ্য যদি মত পাল্টায়?
৫০তম সূত্রের পঞ্চম অনুচ্ছেদে সে পরিস্থিতির কথা ভাবা হয়েছে – অর্থাৎ কোনো দেশ যদি ইইউ পরিত্যাগ করার পরে আবার তাতে যোগদান করতে চায়৷ সেক্ষেত্রে ৪৯ নম্বর সূত্রটি প্রযোজ্য হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/J. Goodman
7 ছবি1 | 7
ব্রিটেনের অনেক নাগরিক মনে করেন, বেক্সিটের ফলে তারা ইউরোপের একক বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন এবং এই ব্লকের মুক্ত বাজারের সুবিধা হারাবেন৷
জার্মানির নাগরিকত্ব চাওয়া ব্রিটিশদের সংখ্যা এ বছর আরো বাড়তে পারে৷ অনেকেই জার্মান পাসপোর্ট পাওয়ার লাভের হিসাব করছেন৷ যদিও ব্রিটেন ২০১৯ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়বে বলে সময় নির্ধারিত হয়েছে৷ অবশ্য কেউ পাসপোর্ট পেতে চাইলে এই প্রক্রিয়ায় বেশ সময় লাগে৷
এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাগরিকত্ব পেয়েছে তুর্কিরা৷ এই সংখ্যাটি ১৬ হাজার ২৯০৷ অবশ্য তাদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি এর আগের বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ কমেছে৷ ৬ হাজার ৬৩২ জন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে পোল্যান্ডের নাগরিকরা৷ ২০১৫ সালের তুলনায় পোলিশদের জার্মান নাগরিকত্ব গ্রহণের হার বেড়েছে ১১ শতাংশ৷
বিদেশিরা ৮ বছর জার্মানিতে অবস্থানের পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন৷ আবেদনকারীদের গড় বয়স ৩৩ বছর৷ গড়ে তারা জার্মানিতে ১৭ বছর বাস করার পর এই আবেদন করেন৷