জার্মানির নাৎসি যুগের জাতীয় সংগীত গাওয়ায় দর্শকের ‘শাস্তি’
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ইউএস ওপেনের ম্যাচ চলার সময় এক দর্শক নাৎসি আমলের জাতীয় সংগীত গাওয়ায় তাকে স্টেডিয়াম থেকে বের করে দেয়া হয়েছে৷ জার্মানির টেনিস খেলোয়াড় আলেকসান্ডা স্ভেরেফের অভিযোগের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷
জার্মানির টেনিস খেলোয়াড় আলেকসান্ডা স্ভেরেফছবি: Dubreuil Corinne/abaca/picture alliance
বিজ্ঞাপন
নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত মঙ্গলবারের ঐ ম্যাচে স্ভেরেফ ইটালির ইয়ানিক সিনার বিরুদ্ধে খেলছিলেন৷ এক পর্যায়ে এক দর্শককে ঐ সংগীত গাইতে শুনে তিনি ম্যাচ রেফারির কাছে অভিযোগ করেন৷
খেলা শেষে স্ভেরেফ বলেন, ‘‘তিনি (দর্শক) হিটলারের জাতীয় সংগীত গাওয়া শুরু করেন৷ একজন জার্মান হিসেবে আমি ইতিহাসের ঐ সময়টা নিয়ে গর্বিত নই, এবং সেজন্য এটা করা ঠিক নয়৷'' তিনি বলেন, ‘‘তিনি (দর্শক) প্রথম সারিতে ছিলেন, ফলে অনেক মানুষ সেটা শুনেছে৷ আমি যদি প্রতিক্রিয়া না দেখাতাম, তাহলে সেটা আমার দিক থেকে খারাপ হতো৷''
জার্মানিতে স্কুলে নাৎসি ও হলোকস্ট বিষয়ে ক্লাস
জার্মানির স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা নাৎসি যুগ সম্পর্কে কী শেখে? সেই বিষয়টি জানতে সম্প্রতি বার্লিনের একটি স্কুল পরিদর্শন করেছে ডয়চে ভেলে৷
ছবি: Rayna Breuer/DW
বাধ্যতামূলক
জার্মানিতে স্কুলে হলোকস্ট নিয়ে পড়া বাধ্যতামূলক৷ তবে পাঠ্যসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রে জার্মানির ১৬টি রাজ্য কর্তৃপক্ষ স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায় হলোকস্ট বিষয়টি কীভাবে এবং কতটুকু পড়ানো হচ্ছে, সে বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে৷ ছবিতে বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়াল দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Bildagentur-online/Joko/picture alliance
বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা
নাৎসি আমলে প্রাণ হারানো ও বেঁচে যাওয়া প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষের তথ্য আছে ‘আরলজেন আর্কাইভস’ নামে এক সংস্থার কাছে৷ এ বিষয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংগ্রহ তাদের কাছে আছে৷ হলোকস্ট বিষয়ে শিক্ষা কর্মসূচি তৈরি ও পাঠদানের বিষয়ে জার্মানির স্কুলগুলোকে সহায়তা করে আরলজেন আর্কাইভস৷
ছবি: WDR
উদ্দেশ্য
আরলজেন আর্কাইভসের কর্মকর্তা বির্টে পাটা বলেন, ‘‘লক্ষ্য হলো, ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ছাড়াও আরও অন্য কিছু শেখা৷’’ তিনি বলেন, ‘‘কেবল নাৎসি যুগে যা ঘটেছিল তা নয়, সেই সময়ের সামাজিক সমস্যাগুলি কী ছিল তা বোঝার সক্ষমতাও গড়ে তোলা৷ উদ্দেশ্য হলো, ছাত্রদের ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক বিতর্কে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করা এবং বর্তমান বিষয় সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা৷’’
ছবি: Rayna Breuer/DW
প্রথম পাঠ
নাৎসি ও হলোকস্ট সম্পর্কে প্রথম পাঠ শুরু হয় নবম শ্রেণিতে৷ ছবিতে বার্লিনের লিনা মর্গেনস্ট্যার্ন হাইস্কুলের নবম শ্রেণির একটি শ্রেণিকক্ষ দেখা যাচ্ছে৷ উনিশ শতকের জার্মান ইহুদি নারীবাদী, শিক্ষাবিদ ও অ্যাক্টিভিস্ট লিনা মর্গেনস্ট্যার্নের নামে স্কুলটির নামকরণ করা হয়েছে৷
ছবি: Rayna Breuer/DW
শিক্ষার্থীরা কতটুকু জানে?
লিনা মর্গেনস্ট্যার্ন হাইস্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক কার্ল বার্কনার বলেন ‘‘বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই আডল্ফ হিটলারের নাম জানে, ন্যাশনাল সোশ্যালিজম টার্মটাও জানে৷ তাদের মধ্যে একটা অংশ হলোকস্ট সম্পর্কেও জানে, কিন্তু জ্ঞানটা নির্বাচিত এবং এতে অনেক ফাঁক আছে৷’’
ছবি: Rayna Breuer/DW
শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
‘‘ইতিহাস ক্লাস ছাড়া, তখন কী ঘটেছিল সে বিষয়ে আমি জানতে পারতাম না৷ আমার বাবা-মাও খুব বেশি কিছু জানেন না,’’ বলেছে এক শিক্ষার্থী৷ আরেকজন বলেছে, ‘‘অতীত থেকে ভবিষ্যৎ আসে, ইতিহাস বর্তমানকে প্রভাবিত করে৷’’ পাশে বসা আরেক শিক্ষার্থী জানায়, ‘‘আমার মা আমাকে তথ্যচিত্রের লিংক পাঠায় যেটা তার একজন শিক্ষক বন্ধু তাকে পাঠিয়েছে৷’’
ছবি: Bastian/Caro/picture alliance
6 ছবি1 | 6
স্ভেরেফ আরও বলেন, ‘‘তিনি (দর্শক) শুধুমাত্র হিটলারের সবচেয়ে পরিচিত বাক্যটা বলছিলেন৷ এটা গ্রহণযোগ্য নয়, এটা অবিশ্বাস্য৷''
২৬ বছর বয়সি স্ভেরেফের মা-বাবা রাশিয়ার৷ তবে ১৯৯০ সালের দিকে তারা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ত্যাগ করেছিলেন৷
জার্মানির জাতীয় সংগীত নেয়া হয়েছে ‘জার্মানদের গান' কবিতা থেকে৷ এই কবিতায় তিনটি চরণ আছে৷ প্রথম চরণের প্রথম লাইনটি এমন ‘জার্মানি, সবার ওপরে, বিশ্বের সবকিছুর ওপরে জার্মানি'৷ একসময় জাতীয় সংগীতে কবিতার এই অংশটি ব্যবহৃত হতো৷ নাৎসি আমলেও সেটি বলবৎ ছিল৷ কিন্তু অতীতের তুলনায় বেশি আক্ষরিক অর্থে গানের কথাগুলো গ্রহণ করেছিল নাৎসি সরকার৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতীয় সংগীতে ঐ কবিতার প্রথম চরণ বাদ দিয়ে শেষ চরণটি নেয়া হয়৷ সুর একই রাখা হয়৷ শেষ চরণের প্রথম লাইনটি এমন, ‘জার্মান পিতৃভূমির জন্য ঐক্য এবং ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতা!' বর্তমানে এটিই জাতীয় সংগীত হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷
ঐ দর্শক রাজনৈতিক কোনো বক্তব্য প্রদর্শন করতে নাৎসি আমলের জাতীয় সংগীত গাইছিলেন কিনা, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি৷ কিংবা ঐ জাতীয় সংগীতকে যে অনেক আধুনিক জার্মান নেতিবাচক হিসেবে দেখেন, ঐ দর্শক সেটা জানতেন কিনা, তা-ও জানা যায়নি৷ কারণ, জাতীয় সংগীতে যে পরিবর্তন এসেছে সেটি জার্মান ভাষাভাষী দেশগুলোর বাইরের মানুষ যে জানবেনই, বিষয়টা তেমন নয়৷