ম্যার্কেলের পর কে হবেন জার্মানির চ্যান্সেলার? জোরদার টিভি বিতর্কে তিন প্রার্থী। বিতর্কের পর এগিয়ে ওলাফ শলৎস।
বিজ্ঞাপন
টিভি বিতর্কের পর সমীক্ষা বলছে, সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি থেকে চ্যান্সেলারনির্বাচনের প্রার্থী ওলাফ শলৎস অন্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় এগিয়ে আছেন।
৯০ মিনিটের টিভি ডিবেটের পর সমীক্ষা হয়। এক হাজার ৫০০ দর্শকের কাছ থেকে বিতর্কের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। ৪১ শতাংশ দর্শক বলেছেন, তারা মনে করেন, শলৎস তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে বিতর্কে পরাভূত করেছেন। ম্যর্কেলের দল সিডিইউ-এর প্রার্থী আরমিন লাশেটকে ২৭ শতাংশ ও গ্রিন পার্টির নারী প্রার্থী বেয়ারবককে সমর্থন করছেন ২৫ শতাংশ দর্শক।
এই সমীক্ষা বলে দিচ্ছে, শলৎস তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর আক্রমণ ভালোভাবে সামলেছেন এবং নিজের যুক্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।
লাশেটের প্রশ্ন
বিতর্কে লাশেট জানতে চান, শলৎস কি সোশ্যালিস্ট বামপন্থী দলের সঙ্গে আঁতাত চালিয়ে যাবেন? কিন্তু শলৎস এই বিতর্কে ঢুকতে চাননি।
লাশেটও পরে চাপের মধ্যে পড়েন, তার নিজের দলের নেতা ও সাবেক গোয়েন্দা প্রধান ও তার দলের প্রার্থী মাসেনকে নিয়ে। তার ডানপন্থি বক্তব্যের কড়া সমালোচনাও হয়েছে। বিতর্কের সময় লাশেটকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি যদি মাসেনের কেন্দ্রের ভোটার হতেন, তাহলে কি তাকে ভোট দিতেন? লাশেট প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে বলেছেন, তার ও মাসেনের মধ্যে অনেক বিষয়ে মতবিরোধ আছে। কিন্তু দলনেতা হিসাবে তিন যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা মাসেন মনতে বাধ্য।
জার্মান নির্বাচন ২০২১: জোট সরকারের সম্ভাবনা ও যত উপায়
২৬ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে জার্মানির যে-কোনো দুটি দল জোট বেঁধেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না৷ মতামত জরিপ থেকে তেমন ইঙ্গিতই মিলছে৷ সেক্ষেত্রে তিন দলের অনেক ধরনের জোটেরই সম্ভাবনা রয়েছে৷ ছবিঘরে এক নজরে দেখুন পাঁচ বিকল্প৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Hörhager
রংয়ের রহস্য
মধ্য ডানপন্থি দল খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাটিক - সিডিইউ এবং তাদের বাভারিয়ান সহযোগী খ্রিস্টান সোশ্যাল ইউনিয়ন - সিএসইউ-এর প্রতীকী রং কালো৷ মধ্য বামপন্থি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট - এসপিডি ব্যবহার করে লাল রং৷ অন্যদিকে মুক্ত বাজারপন্থি ফ্রি ডেমোক্র্যাটস-এফডিপির রং হলুদ৷ আর পরিবেশবাদী সবুজ দলের রং যে সবুজ তা তো বলাই বাহুল্য৷ জোট বোঝাতে জার্মানির গণমাধ্যমে অনেক সময় নামের বদলে দলগুলোকে তাদের রং দিয়ে উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: Fotolia/photocrew
কালো, লাল, সবুজ-কেনিয়া জোট
খ্রিস্টান ডেমোক্র্যাট এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের জোট গত আট বছর ধরে জার্মানির ক্ষমতায়৷ আসন্ন নির্বাচনে যদি এই দুই দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারে তাহলে সবুজ দলকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর জোট হতে পারে৷ সেক্ষেত্রে তাদের জোটের রংটি কেনিয়ার পতাকার রংয়ের সঙ্গে মিলে৷ এই জোটের চ্যান্সেলর কে হতে পারেন তা এসপিডি ও সিডিইউ/সিএসইউ এর মধ্যে কাদের বেশি আসন থাকবে তার উপর নির্ভর করতে পারে৷
ছবি: Fotolia/aaastocks
কালো, হলুদ, সবুজ-জ্যামাইকা জোট
আঞ্চলিক ও জাতীয় নির্বাচনে সিডিইউ গত কয়েক বছরে অপেক্ষাকৃত ছোট দল ফ্রি ডেমোক্র্যাট - এফডিপিরর সঙ্গেও জোট বেঁধেছে৷ তার সঙ্গে সবুজ দলকে নিয়ে আরেকটি বিকল্প জোটের সম্ভাবনাও অনেক সিডিইউ নেতার কাছে আকর্ষণীয়৷ এই তিন দলের রং রয়েছে জ্যামাইকার পতাকাতে৷ তবে সবুজ ও এফডিপির মধ্যে মতবিরোধের কারণে ২০১৭ সালে সরকার গঠনের এমন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
কালো, লাল, হলুদ-জার্মানি জোট
মধ্য ডানপন্থি সিডিইউ/সিএসইউ ও মধ্য বামপন্থি এসপিডি এর সঙ্গে মুক্ত বাজারপন্থি এফডিপি যোগ দিলে এমন একটি জোট হতে পারে৷ এই তিন দলের রং জার্মানির পতাকার তিনটি রংয়ে৷ মতপার্থক্য দূর করে এক হতে পারলে তারা অনায়াসেই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ ব্যবসায়ী নেতা ও উচ্চ আয়ের মানুষের কাছে এটি কাঙ্খিত এক জোট৷
ছবি: imago/blickwinkel/McPhoto/K. Steinkamp
লাল, লাল, সবুজ
সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা সবুজ দলের সঙ্গে জোট করেও যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে বামপন্থি দল ডি লিংকে-কে কাছে টানতে পারে৷ সেক্ষেত্রে পার্লামেন্টে যেতে ডি লিংকের অন্তত পাঁচ শতাংশ ভোট পেতে হবে৷ কিন্তু এসপিডি ও ডি লিংকের সম্পর্কের অতীত খুব একটা ভালো নয়৷ বিশেষ করে ডি লিংকের কট্টর পররাষ্ট্রনীতি এই সম্ভাবনা ভেস্তে দিতে পারে৷
ছবি: Imago/C. Ohde
লাল, হলুদ সবুজ-ট্রাফিক লাইট জোট
মুক্ত বাজারের সমর্থক এফডিপি এর আগে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট ও সবুজ দলের সঙ্গে জোট বাঁধতে আগ্রহী হয়নি৷ তবে এই বছর কোনো সম্ভাবনাই তারা বাতিল করছে না৷ বড় দলগুলো যেভাবেই হোক ক্ষমতায় ফিরতে চাইবে, তা যে রংয়ের জোটই হোক না কেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/J.Büttner
6 ছবি1 | 6
রক্ষণাত্মক শলৎস
বিতর্কের সময় অর্থমন্ত্রণালয়ের মানি লন্ডারিং তদন্ত নিয়ে শলৎস ছিলেন রক্ষণাত্মক। সরকারি কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই তদন্ত হচ্ছে। লাশেট বলেন, শলৎস যেভাবে অর্থমন্ত্রক চালাচ্ছেন, তাতে প্রচুর সমস্যা হচ্ছে।
শলৎস এরপর রীতিমতো রেগে বলেন, লাশেট এ তদন্ত নিয়ে ভুল ছবি তুলে ধরছেন। এরপর শলৎস বোঝাতে থাকেন, তার আমলে কীভাবে অর্থমন্ত্রকের বিস্তার হয়েছে।
বেয়ারবক শলৎস ও লাশেটকে সমালোচনা করে বলেন, প্রতিবছর মানি লন্ডারিং ও কর ফাঁকির জন্য জার্মানি কোটি কোটি উইরো হারাচ্ছে।
বেয়ারবকের শক্তি
পরিবেশ নিয়ে যখন বিতর্ক হচ্ছিল, তখন বেয়ারবক নিজের শক্তি দেখান। তিনি প্রশ্ন করেন, কেন জার্মানি বারবার পরিবেশগত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না? কেন দুই প্রার্থীর দল এই সমস্যার কোনো সমাধান দিতে পারছে না? কেন আপনারা শুধু একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন? বেয়ারবক বলেন, ২০৩৮ সালের মধ্যে কয়লার উপর নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কিন্তু এখনকার মতো চললে আগামী ১৭ বছরেও কিছু হবে না।
শলৎস ও লাশেট দাবি করেন, তারা ও তাদের দল পরিবেশগত সমস্যাকে খুবই গুরুত্ব দেয়।