1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পানিতে ওষুধের মিশ্রণ

ফ্রাতসেক জেনিফার/আরবি৭ জানুয়ারি ২০১৩

জার্মানিতে প্রতিদিন কয়েক টন ওষুধ পরিবেশের সাথে মিশে যাচ্ছে৷ মূলত মানুষের বর্জ্য, টয়লেটে ওষুধ ফেলা ও কৃষি খেতের সার থেকেই এই দূষণটা হচ্ছে৷ যা মানুষ ও প্রাণী উভয়ের জন্য ক্ষতিকর৷ তাই এর প্রতিকারের কথা বলছে ইইউ৷

Deichlandschaft an der Elbe in Mühlberg in Nordsachsen, aufgenommen am 05.08.2012. Foto: Jens Kalaene dpa
ছবি: picture-alliance/ZB

জার্মানির পানিতে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথা ও উচ্চরক্তচাপ কমানোর ওষুধ, এমনকি জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধের অবশিষ্টাংশও পাওয়া যায়৷ পানীয় জলও বাদ যায় না এই দূষণ থেকে৷ অবশ্য ফেডারেল পরিবেশ দপ্তরের মতে, দূষণের পরিমাণ এত কম যে, তা মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়৷ তবে নদী ও জলাশয়ে মিশে যাওয়া এই সব ওষুধের রেশ প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের জন্য বিপজ্জনক৷

নদীতে হরমোন মাছের জন্য ক্ষতিকর

জার্মানিতে এই সমস্যার কথাটা ১৯৯০ সালে প্রথম জানা যায়৷ সেই সময় এক গবেষক পানির নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে হঠাৎ করেই এক ওষুধের রেশ আবিষ্কার করেন, যা মানুষের শরীরের অতিরিক্ত কলেস্টরেল-এর মাত্রা হ্রাস করে৷

নদীতে হরমোন মাছের জন্য ক্ষতিকরছবি: picture alliance/WILDLIFE

ফেডারেল পরিবেশ দপ্তর এই সম্পর্কে একটি রিপোর্ট প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করে৷ ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় এটি৷ পরিবেশ দপ্তরের মুখপাত্র সাবিনে টিয়ারবাখ জানান, ‘‘১৯২টি উপাদান খোঁজা হয়েছিল, যার মধ্যে ১৫৬টি পাওয়া গিয়েছে৷''

তুলনামূলকভাবে কয়েকটি ওষুধের অবশিষ্টাংশ বেশি দেখা গিয়েছে৷ যেমন, এক্সরের রেডিও কনট্রাস্ট উপাদান, ব্যথার ওষুধ ইত্যাদির অবশিষ্টাংশ৷ হরমোন জাতীয় ওষুধ খুব কমই পাওয়া গেছে৷

মাছেরজন্য বিপজ্জনক

বিশেষ করে মাছের মধ্যে হরমোনের ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়৷ টিয়ারবাখ বলেন, ‘‘দেখা গেছে, জলাশয়ে হরমোনের ফলে পুরুষের তুলনায় নারী মাছের সংখ্যাই বৃদ্ধি পায়৷ অর্থাৎ মাছের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় লিঙ্গ ভারসাম্য৷ বিলুপ্ত হয়ে যায় মাছের জনসংখ্যা৷''

পশু পাখির রোগ বালাই দূরীকরণে প্রায়ই অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়৷ আর এই সব ওষুধ বিভিন্ন রকমের সারের মাধ্যমে উদ্ভিদের সংস্পর্শে চলে আসে৷ যার ফলে তাদের বর্ধনের সমস্যা দেখা দেয়৷ অ্যান্টিবায়োটিক আবার পানীয় জলেও চলে আসতে পারে৷

জার্মানির এক বৃহৎ বেসরকারি সংস্থা, ‘পরিবেশও প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিয়ন' বা ‘বুন্ড' মনে করে যে, কোনো চিন্তাভাবনা না করেই জার্মানিতে ওষুধপত্র ব্যবহার করা হয়৷ বুন্ডের বাভারিয়া অঙ্গরাজ্যের উপপ্রধান সেবাস্টিয়ান শ্যোনাউয়ার এ জন্য ওষুধ উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও রাজনীতিকে দায়ী করেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘ওষুধের অনুমোদন দেয়ার আগে জলাশয়ের সহ্য সীমাটা বিবেচনা করা প্রয়োজন৷ কোনো রোগ ভালো করার ক্ষেত্রে দুই ধরনের ওষুধ থাকলে, যেটি জলাশয়ের পক্ষে কম ক্ষতিকর, সেটিকেই কেবল অনুমোদন দেওয়া উচিত৷ অথবা ক্ষতিকারক ওষুধটিকে বাজার থেকে তুলে নেওয়া উচিত৷''

ওষুধ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা

শ্যোনাউয়ার একটি পদ্ধতি পুনর্বহালের ইচ্ছা প্রকাশ করেন, যা কয়েক বছর আগে বাতিল হয়ে গিয়েছে৷ এতে রোগীদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধগুলি দোকানে ফেরত দিতে হতো৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ওষুধ বেসিনে বা টয়লেটে ফেলে দিয়ে ফ্লাশ করা হয়৷ এমনটি করা হয় রোগীদের অতিরিক্ত ওষুধ ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে না বলেই৷ জার্মানিতে রোগীদের জন্য প্রায়ই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ প্রেসক্রিপশন করা হয়, যা অপচয় ছাড়া কিছুই নয়৷''

সেবাস্টিয়ান শ্যোনাউয়ারছবি: Bund Naturschuz

ক্লাউডিয়া টিয়ারবাখ অবশ্য এক্ষেত্রে জলশোধন পদ্ধতির উন্নয়নের ওপর জোর দেন৷ তাঁর মতে, ‘‘সুয়েজ প্ল্যান্টে দূষিত পানি পরিশোধন প্রক্রিয়ায় কয়েকটি ধাপ বৃদ্ধি করলে এই সমস্যার কিছুটা সমাধান হবে৷ তবে এটাও জানা দরকার, ওষুধের উপাদানগুলি অত্যন্ত গতিশীল, যা ছেঁকে আটকানো যায় না৷ কিন্তু পরিশোধন প্রক্রিয়ায় আরো কিছু ধাপ আছে, যার মাধ্যমে ওষুধ ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানকে ফিল্টার করে ধরে রাখা যায়৷ এই পদ্ধতি জনঅধ্যুষিত শহরগুলিতে ব্যবহার করা যেতে পারে৷''

ইউরোপীয় কমিশনের প্রস্তাব

ইউরোপীয় কমিশনও কিছুদিন ধরে পানিতে রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে৷ এ জন্য ৩৩টি উপাদানের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যে গুলির ওপর নজর রাখা হবে৷ কিছু দিনের মধ্যে আরো ১৫টি পদার্থকে তালিকায় ঢোকানো হবে, যাতে রয়েছে প্রথম বারের মতো ওষুধও৷

টিয়ারবাখ ও শ্যোনাউয়ার দুজনেই ইউরোপীয় কমিশনের এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন কতটা হবে, সে ব্যাপারে সন্দিহান৷ শ্যোনাউয়ার এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও মনে করেন, বিষয়টি দূষিত পানি পরিশোধন ব্যবস্থার মধ্যেই আটকে থাকবে৷

থিয়ারবাখ বলেন, ‘‘এখানে কোনো ওষুধকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি আসছে না৷ মূল কথা হল, পানিতে একটা সমস্যা দেখা গিয়েছে, যার প্রতিকার করা প্রয়োজন৷ কীভাবে তা করা যায়, এটাই এখন প্রশ্ন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ