বাংলাদেশ ও ভারতের পানিতে আর্সেনিকসহ নানা রাসায়নিকের উপস্থিতির কারণে দূষণের মাত্রা ভয়াবহ৷ কিন্তু জার্মানিতেও পানিতে দেখা দিয়েছে দূষণ৷ ফলে যারা কলের পানির উপর নির্ভরশীল, তাঁদের এখন বেশি অর্থ গুণতে হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
২০০৫-২০১৬ সালের মধ্যে জার্মানিতে কলের পানির দাম গড়ে ২৫ শতাংশ বেড়েছে৷ পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টির দাবি অন্তত এমনই৷
জার্মানির গণমাধ্যম এআরডি-তে প্রচারিত এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, জলের দাম বৃদ্ধির কারণ কৃষিপণ্য ও সারে নাইট্রেটের দূষণ৷ জাতীয় স্তরে গড় দাম যেখানে বেড়েছে, সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, পানির দাম জার্মানির ১৬টি প্রদেশে আলাদা আলাদা, প্রতিটি রাজ্যের পৌরসভাগুলি প্রতি কিউবিক লিটারে (১ হাজার লিটার) জলের ন্যূনতম দাম নির্ধারণ করে৷
সমীক্ষা অনুযায়ী, সব প্রদেশেই যে পানির দাম বেড়েছে, এমনটা নয়৷ পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বার্লিন ও ব্রান্ডেনবুর্গ এবং মধ্য জার্মানের রাজ্য টুরিঙ্গিয়ায় গত ১১ বছর ধরে জলের দাম কমেছে৷ অন্যদিকে দক্ষিণের বাভেরিয়ায় দাম বেড়েছে যে কোনো রাজ্যের থেকে বেশি৷ বৃদ্ধি ৬০ শতাংশের মতো৷ যে রাজ্যে কলের পানির ন্যূনতম দাম সবচেয়ে বেশি, সেটি উত্তর রাইন ওয়েস্টফালিয়া৷ শিল্পপ্রধান এই প্রদেশে গৃহস্থরা জলের জন্য প্রতি বছর ৩০০ ইউরো করে দিয়েছেন ২০০৫-২০১৬ সালের মধ্যে৷ কলের জল সবচেয়ে সস্তা, কম-বেশি ১৭৩ ইউরো৷
পানির অপচয় রোধের দশ উপায়
পানির আরেক নাম জীবন৷ অথচ এই পানি, বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানি ক্রমশ কমে যাচ্ছে৷ যা জীবনের জন্য এক হুমকি৷ এই হুমকি মোকাবিলায় সচেতন হতে হবে আপনাকেও৷ চলুন জেনে নেই পানির অপচয় রোধের দশ উপায়৷
ছবি: Fotolia/Valua Vitaly
এক কাপ কফি তৈরিতে ১৪০ লিটার পানি!
আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য বা পানীয় তালিকার কিছু পণ্য তৈরিতে অনেক পানি প্রয়োজন হয়৷ যেমন এক কাপ কফি বাগান থেকে আপনার টেবিল পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ হচ্ছে ১৪০ লিটার পানি৷ আর এক লিটার দুধের পেছনে ব্যয় ১,০০০ লিটার পানি৷ তাই এ সব পানীয়র অপচয় কমানোর মাধ্যমে পানির অপচয় রোধ করা সম্ভব৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Fotolia/dmitrimaruta
মাংস খাওয়া কমাতে পারেন
ওয়াটারফুটপ্রিন্ট ডটঅর্গ-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এক কেজি মাংস উৎপাদনে সবমিলিয়ে খরচ হয় ১৫ হাজার লিটারের মতো পানি৷ এই হিসাবের মধ্যে পশুর জন্ম এবং বেড়ে ওঠার সময় প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণও বিবেচনা করা হয়েছে৷ এবার ভেবে দেখুন, এক বেলা মাংস না খেয়ে কতটা পানি বাঁচানো সম্ভব?
ছবি: picture-alliance/dpa
পানির ট্যাপের দিকের নজর রাখুন
মুখ ধোয়া বা দাঁত ব্রাশ করার সময় পানির ট্যাপ বন্ধ রাখুন৷ একান্ত যদি গরম পানি পেতে ট্যাপ একটু খুলে রাখতে চান, তাহলে সেই পানি ব্যবহার করতে পারেন ব্রাশ ধোয়ার কাজে৷
ছবি: imago/CHROMORANGE
কাপড় বা থালাবাসন পরিষ্কারে সতর্ক হন
কাপড় ধোয়া বা থালাবাসন পরিষ্কারের মেশিন এখন ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে৷ পুরোপুরি ভর্তি না হওয়া অবধি এ সব মেশিন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন৷
ছবি: Fotolia/lightpoet
অপ্রয়োজনে ফ্লাশ নয়
অনেকেই যখন-তখন টয়লেট ফ্লাশ করে থাকেন৷ এতে প্রচুর পানি অপচয় হয়৷ তাই একান্ত প্রয়োজন না হলে ফ্লাশ করা থেকে বিরত থাকুন৷
ছবি: by-studio - Fotolia.com
পুকুরে ময়লা ফেলা নয়
বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষ সুযোগ পেলেই পুকুর বা খালে ময়লা ফেলে৷ এতে করে পানি দূষিত হয়৷ আর দূষিত পানি পুনরায় পান উপযোগী করে তুলতে খরচ হয় প্রচুর অর্থ এবং বিদ্যুৎ৷ তাই পুকুরে বা খালে ময়লা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে বা মাটিতে গর্ত করে ময়লা ফেলুন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
পানির পাইপের দিকে নজর দিন
অনেক সময় পানির পাইপে থাকা বিভিন্ন জোড়া হালকা হয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি বাইরে পরে যায়৷ একটু সতর্ক হলেই এভাবে পানির অপচয় রোধ করা যায়৷ এছাড়া ছাদের ট্যাংকি ভর্তি হয়ে যাতে পানি বাইরে পরে না যায় সেদিকেও খেয়াল রাখুন৷ সময়মতো পানির পাম্প বন্ধ করে দিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
গোসলের সময় অপচয় নয়
বাথরুমে থাকা গতানুগতিক বা পুরনো পানির ঝরনাগুলো সরিয়ে ফেলুন৷ বর্তমানে বাজারে পানি সাশ্রয়কারী ঝরনা পাওয়া যায়৷ সেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে ২০ থেকে ৬০ শতাংশ পানির অপচয় রোধ সম্ভব৷ আর গোসলের সময় প্রস্রাব করার অভ্যেস তৈরির মাধ্যমে দিনে অন্তত একবার ফ্লাশ করার পানি বাঁচানো সম্ভব৷
ছবি: Fotolia/Valua Vitaly
পানি কখনো ফেলে দেবেন না
পানি পান করার পর যদি গ্লাসের তলায় খানিকটা পানি থেকে যায়, তাহলে তা ফেলে দেবেন না৷ সেটুকু আপনার গাছের গোড়ায় ঢালতে পারেন কিংবা চায়ের কেটলিতে জমাতে পারেন৷
ছবি: mdxphoto - Fotolia.com
সম্ভব হলে বৃষ্টির পানি জমা করুন
বৃষ্টির পানি জমা করে তা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার এমনকি পান করাও সম্ভব৷ বর্তমানে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের বিভিন্ন সরঞ্জামও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে৷ মনে রাখবেন, আপনার সামান্য উদ্যোগ পানির অপচয় রোধে বড় ভূমিকা রাখতে পারে৷ তাই চেষ্টা করে দেখুন না!
ছবি: DW/Karin Jäger
10 ছবি1 | 10
নাইট্রেটকে শুদ্ধ করতে হবে
গ্রিন পার্টির সদস্যরাই শুধু নন, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিবেশ সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী যে কারণকে জলের দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী করেছেন, তা হলো শিল্প ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত নাইট্রেটের দ্বারা ভূগর্ভস্থ জলে দূষণ৷ সারের প্রভাবে দূষিত জল শোধন করার খরচ ক্রমশ বাড়ছে, এর ফলে বাড়ছে জলের দাম৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিবেশ সংস্থা ২০১৭ সালেই জানিয়েছিল, যে এলাকায় ব্যাপকভাবে কৃষিকাজ হয়েছে, সেখানে নাইট্রেটের দ্বারা জল অতিমাত্রায় দূষিত হয়েছে৷
গ্রিন সংসদীয় দলের প্রধান আন্তোন হফরেইটার-এর অভিযোগ, আঙ্গেলা ম্যার্কেলের জোট সরকার যে বাণিজ্যমুখী কৃষি নীতি অনুসরণ করছে, তার জেরেই জলে দূষণ বাড়ছে৷
এই দূষণকে একপ্রকার দুর্নীর্তি আখ্যা দিয়ে বিরোধী গ্রিন পার্টির শীর্ষ নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এই নীতির ফলে আমাদের জমি তরল সারে প্লাবিত৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন জার্মানিতে নাইট্রেট ব্যবহার নিয়ে অখুশি
২০১৭ সালে জার্মানি পৌরসভাগুলি নাইট্রেটের ব্যবহারবিধি মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় ইইউ কমিশন জার্মানিকে আদালতে টেনে নিয়ে গিয়েছিল৷ এর পর পরই ম্যার্কেলের আগের জোট সরকার সারের ব্যবহার নিয়ে ব্যবহারবিধি সংশোধন করেছিল৷ যাই হোক, গ্রিন পার্টির মতে, সেই সংশোধন বেশিদূর এগোয়নি৷
এছাড়া জার্মান উপভোক্তাদের বর্জ্য জলের অপসারণের জন্য টাকা দিতে হবে৷ এই মূল্য আলাদা করে ধরা হবে৷
ক্রিস্টিনা বরাক/ পিএস
একটু পানির জন্য
মরক্কোতে সাহারা মরুভূমির কাছে প্রত্যন্ত ১৩টি গ্রামের মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে অভিনব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ জার্মানির এক ফাউন্ডেশন এতে সহায়তা করছে৷
ছবি: M. Gundlach
প্রত্যন্ত এলাকা
মরক্কোতে সাহারা মরুভূমির কাছে অবস্থিত ১৩টি গ্রামে প্রায় ৪০০ মানুষের বাস৷ গ্রামগুলো এতই প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত যে, সেখানকার বাসিন্দাদের পানির জন্য অনেক দূরে যেতে হয়৷ প্রতিদিন এই কাজে গড়ে অন্তত তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়৷ সাধারণত নারীরাই এই কাজটি করে থাকেন৷ তবে একটি প্রকল্প তাঁদের কষ্ট লাঘবের স্বপ্ন দেখাচ্ছে৷
ছবি: M. Gundlach
সমাধান কুয়াশা
এলাকাটি বছরের প্রায় ছ’মাস ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে৷ সেই কুয়াশাকে কাজে লাগিয়েই গ্রামবাসীদের জন্য পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷
ছবি: M. Gundlach
কুয়াশা ধরতে জাল
পাহাড়ের উঁচুতে স্থাপিত বিশেষ জালে কুয়াশা আটকে পানি হয়ে ঝরবে৷ পানি ধরার জন্য থাকবে বড় বড় পাত্র৷ এরপর পাইপের মাধ্যমে তা পাহাড়ের নীচে অবস্থিত গ্রামগুলোতে সরবরাহ করা হবে৷ ঘন কুয়াশার সময় এক বর্গমিটার জাল থেকে দিনে প্রায় ২২ লিটার পানি পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছে প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা৷ ভিডিও দেখতে ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
ছবি: M. Gundlach
জার্মান সহায়তা
যে প্রযুক্তিতে কুয়াশা থেকে পানি সংগ্রহ করা হবে তার নাম ‘ক্লাউডফিশার’৷ জার্মানির ভাসাস্টিফটুং ফাউন্ডেশনের প্রকৌশলী পেটার ট্রাউটভাইন এটি উদ্ভাবন করেছেন৷ মরক্কোর বেসরকারি সংস্থা ‘দার সি হামদ’ ঐ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ইতিমধ্যে প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কাজ শেষ করেছে৷ ফলে কিছু গ্রামের বাসিন্দারা এখনই তাদের ঘরে পানি পাচ্ছেন৷ কয়েকদিনের মধ্যে সবার জন্য পানির ব্যবস্থা করতে আরও জাল স্থাপনের কাজ শুরু হবে৷
ছবি: M. Gundlach
শিক্ষিত হচ্ছেন নারী
যে গ্রামগুলোতে ইতিমধ্যে পানি পাওয়া যাচ্ছে সেখানকার নারীদের প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা সময় বেঁচে যাওয়ায় এখন তাঁরা লেখাপড়া শেখা থেকে শুরু করে অন্যান্য অর্থনৈতিক কাজে জড়িত হতে পারছেন৷ প্রকল্পের আওতায় তাঁদের শিক্ষিত করে তোলা হচ্ছে৷
ছবি: Ane Nordentoft/Transterra Media
কাজের স্বীকৃতি
প্রকল্পটিকে সম্প্রতি জাতিসংঘের ক্লাইমেট চেঞ্জ পুরস্কার দেয়া হয়েছে৷ কুয়াশা থেকে পানি সংগ্রহের এটিই সবচেয়ে বড় প্রকল্প বলে ধারণা করা হয়৷ জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংস্থা ইউএনএফসিসির মুখপাত্র নিক নাটাল বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় এ ধরনের অভিনব পরিকল্পনা সত্যিই এক দারুণ ব্যাপার৷’’