দুই জার্মানির পুনর্মিলন ঘটে ১৯৯০ সালের তেসরা অক্টোবর৷ কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানিতে শান্তিপূর্ণ বিপ্লব হিসেবে যার সূচনা, তার সমাপ্তি হয় ঐতিহাসিক পুনর্মিলনে: গ্রেহেম লুকাস-এর অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি৷
বিজ্ঞাপন
পুনরেকত্রিত জার্মানি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷ অপরদিকে জার্মানি আজ বিশ্বের বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ না হতে পারে – চীন সে স্থান অধিকার করে নিয়েছে – কিন্তু জার্মানি আজও ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি৷
২০০৮ সালের ব্যাংক সংকটের পর জার্মানি ইউরো মুদ্রাকে স্থিতিশীল রাখায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ বিদেশনীতির ক্ষেত্রে জার্মানি চিরকালই বিরোধের তীব্রতা হ্রাস করায় পটু, এশিয়ার ক্ষেত্রেও জার্মানির যা মূল ভূমিকা: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা থেকে মুক্ত করার পথে প্রথম পা বাড়ান জার্মান কূটনীতিকরা৷ বাংলাদেশে জার্মান বিদেশনীতি আজও গণতান্ত্রিক চেতনার প্রসারে সচেষ্ট৷
দৃষ্টিনন্দন ১০ দুর্গ
জার্মান ভাষাভাষী অঞ্চলের নিরাপত্তায় এক সময় ২০ হাজারের বেশি দুর্গ গড়ে তোলা হয়েছিল৷ এগুলো ছিল মধ্যযুগীয় শাসকদের শক্তি ও রাজ্যের স্থিতিশীলতার প্রতীক৷ কালের পরীক্ষায় টিকে গেছে এমন দশটি দুর্গ নিয়ে ডয়চে ভেলের এই ছবিঘর৷
ছবি: picture alliance/Horst Ossinger
হোয়েনসলার্ন কাসল
হোয়েনসলার্ন বংশের শাসকরা জার্মানি শাসন করেছেন ১৮৭১ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত৷ তাদেরই একজন ১৮৫০ সালে পিতৃপুরুষের ভিটায় এই দুর্গ নির্মাণ করেন৷ বাডেন ভুর্টেমব্যার্গে পাহাড়ের ৮৫৫ ফুট ওপরে হোয়েনসলার্ন দুর্গের অবস্থান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভার্টবুর্গ
ভার্টবুর্গ কাসলকে কেউ কেউ জার্মানির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ বলে থাকেন৷ মধ্য জার্মানির আইজেনাখ শহরে ১০৬৭ সালে এ দুর্গ নির্মাণ করা হয়৷ রোমান সম্রাটের কোপানল থেকে বাঁচতে ১৫২১ সালে এই দুর্গেই আশ্রয় নিয়েছিলেন ক্যাথলিক সাধু মার্টিন লুথার৷ এখানে বসেই তিনি জার্মান ভাষায় নিউ টেস্টামেন্টের অনুবাদ করেন৷ ১৯৯০ সালে ইউনেস্কো ভার্টবুর্গ দুর্গকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে৷
ছবি: Fotolia
নুরেমবার্গ দুর্গ
মধ্যযুগে নুরেমবার্গ কাসল ছিল জার্মান সাম্রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাসাদ৷ রোমান সাম্রাজ্যের শাসকেরা একশ বছরেরও বেশি সময় এ প্রাসাদে বসবাস করেছেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গুঁড়িয়ে দেয়া হলেও পরে মূল স্থাপনাটির আদলে গড়ে তোলা হয় বর্তমান দুর্গটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এটৎস কাসল
এক সময় জার্মানির ৫০০ মার্কের নোটে এই দুর্গের ছবি আঁকা ছিল৷ ১২ শ’ শতকের গোড়ার দিকে নির্মিত এই স্থাপনা জার্মানির অন্যতম বিখ্যাত দুর্গ৷ মোজেল নদীর ধারে পাহাড়ের ওপর ৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের একখণ্ড পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এটৎস কাসল এখন জার্মানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বুর্গহাউসেন দুর্গ
আপার বাভারিয়ার বুর্গহাউসেন শহরে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ এই কাসল কমপ্লেক্স৷ গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্য অনুযায়ী এই দুর্গ চত্বরের দৈর্ঘ্য ১০৫১ মিটার৷ ১০২৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে নির্মিত এই দুর্গ বাভারিয়ার ভিটেলসবাখ সাম্রাজ্যের শাসকদের বাসস্থান হিসাবে ব্যবহৃত হতো৷
ছবি: Fotolia/Kletr
মার্কসবুর্গ কাসল
রাইনের তীরে ব্রাউবাখ শহরে মার্কসবুর্গ কাসল গড়ে তোলা হয় ১২ শ’ শতকের শুরুর দিকে৷ এখন পর্যন্ত এর মূল কাঠামো অটুট আছে৷ মধ্য রাইন উপত্যকায় পাহাড়ের ওপর নির্মিত দুর্গগুলোর মধ্যে একমাত্র্র মার্কসবুর্গই কখনো পরাভূত বা ধ্বংস হয়নি৷ রাইন উপত্যকার এ অংশে প্রতি আড়াই কিলোমিটার অন্তর অন্তর একটি করে দুর্গ ছিল এক সময়৷ ২০০২ সালে এ এলাকাকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে ইউনেস্কো৷
ছবি: Fotolia/Umjb
রাইনস্টাইন দুর্গ
ইতিহাসের পাতায় মধ্য রাইন উপত্যকায় রাইনস্টাইন দুর্গের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৩২৩ সালে৷ ষোড়শ শতকে ধসে পড়ার পর স্থপতি কার্ল ফ্রিডরিশ ১৮২৩ সালে প্রুাশিয়ার প্রিন্স ফ্রিডরিশ-কে এই দুর্গের সম্পত্তি কিনে নিতে অনুরোধ করেন৷ রোমান্টিক যুগে রাইনের তীরে পুনঃনির্মাণ করা প্রথম দুর্গ হলো এই রাইনস্টাইন কাসল৷
ছবি: Fotolia/Kristan -
কখেম কাসল
মোজেল নদীর তীরে পার্বত্য এলাকায় নির্মিত সবচেয়ে বড় দুর্গ হলো এই কখেম কাসল৷ আনুমানিক একাদশ শতকে নির্মিত এই দুর্গ সপ্তদশ শতকে এসে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়৷ পরে বার্লিনের ব্যবসায়ী লুই রাফেন ৩০০ স্বর্ণমুদ্রায় এই সম্পত্তি কিনে নেন এবং ১৮৭৭ নিও গথিক স্থাপত্যরীতিতে দুর্গটি পুনঃনির্মাণ করেন৷
ছবি: fotolia/LianeM
আলটেনা দুর্গ
নর্থ রাইন-ভেস্টফেলিয়ায় ৮০০ বছরের পুরনো এই দুর্গেই বিশ্বের প্রথম ইয়ুথ হোস্টেলটি চালু হয় ১৯১৪ সালে৷ দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকার পর ওই সময়ই নতুন করে নির্মাণ করা হয় এ দুর্গ৷
ছবি: ullstein bild - Imagebroker.net
সাত্সফাই কাসল
নর্থ রাইন-ভেস্টফেলিয়ায় পরিখাসহ যে জার্মান দুর্গগুলো খুব ভালভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে, তার মধ্যে সাত্সফাই কাসল একটি৷ আনুমানিক দ্বাদশ শতকের দিকে এটি নির্মাণ করা হয়৷ এ দুর্গের চারপাশে রয়েছে গভীর পরিখা, শত্রুকে দূরে রাখার কৌশল হিসাবে যা খনন করা হয়েছিল৷
ছবি: picture alliance/Horst Ossinger
10 ছবি1 | 10
অপরদিকে চীন জার্মানির পক্ষে একটা চ্যালেঞ্জ: কেননা বাণিজ্যের সঙ্গে সঙ্গে মানবাধিকারের প্রশ্নটি ভুললে চলবে না৷ সর্বক্ষেত্রেই জার্মান সরকার গণতন্ত্রকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছেন – যার প্রতিদান হিসেবে বার্লিন বিশ্ব নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার ও জার্মানির জন্য একটি স্থায়ী আসনে আগ্রহী৷
‘পুবের' আর ‘পশ্চিমের'
গত ২৪ বছরে জার্মানির সবচেয়ে বড় অর্জন সম্ভবত সাবেক পূর্ব জার্মানি ও তার এক কোটি সত্তর লাখ বাসিন্দাকে অবিভক্ত জার্মানির ‘অবিভক্ত' অঙ্গ করে তোলা – যা-তে ‘অসি আর ‘ওয়েসি', অর্থাৎ ‘পুবের' আর ‘পশ্চিমের' মানুষদের মধ্যে কোনোরকম ফারাক না থাকে৷ অর্থনৈতিক বিচারে জার্মানির পূর্বাঞ্চল পশ্চিমের চেয়ে আজও কিছুটা পিছিয়ে বটে, কিন্তু অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মানের মানদণ্ডে দুই জার্মানির পার্থক্য ক্রমেই কমে আসছে৷
‘দি লিংকে' বা বামদল, এএফডি বা ‘জার্মানির জন্য বিকল্প' দল ইত্যাদি যোগ হওয়ার ফলে যেমন জার্মানির রাজনৈতিক মানচিত্রে কিছু কিছু পরিবর্তন ঘটেছে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে জার্মান রাজনীতিতে স্থিতিহীনতা দেখা দেয়নি – ঠিক সে'ভাবেই বিদেশি-বহিরাগতদের আগমনের ফলে জার্মান সমাজের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে: অভিবাসী ও তাদের সন্তান-সন্ততিদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা জার্মান সমাজের ধারা-প্রকৃতি বদলে দিয়েছে৷
অধিবাসী ও অভিবাসী
২০০৮ সাল যাবৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই অভিবাসীদের প্রিয় গন্তব্য হলো জার্মানি: ২০১২ সালে চার লাখ শিক্ষিত তথা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিবাসী জার্মানিতে আসেন৷ অভিবাসনের ফলে জার্মান সংস্কৃতি আজ বহুজাতিক সংস্কৃতি হয়ে ওঠার পথে: জার্মানির আট কোটি বিশ লক্ষ নাগরিকদের মধ্যে দেড় কোটি নাগরিক জন্ম বা বংশসূত্রে অভিবাসী৷ এই অভিবাসী ও অভিবাসী বংশোদ্ভূতদের একটা বড় অংশ মুসলিম৷ কিন্তু সেটা যে ‘ইন্টেগ্রেশন' বা অন্তর্ভুক্তির পথে কোনো অন্তরায় নয়, তার সর্বাধুনিক প্রমাণ এক ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত রাজনীতিক, যিনি আগামীতে বার্লিনের লর্ড মেয়র হতে পারেন৷ রায়েদ সালেহ ওয়েস্ট ব্যাংক থেকে জার্মানিতে আসেন পাঁচ বছর বয়সে এবং পরে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলে যোগদান করেন৷ আজ তিনি লর্ড মেয়র পদে এসপিডি প্রার্থী হওয়ার মুখে৷
অপরদিকে পুনর্মিলনের ২৫ বছর পরে জার্মানি যে সমস্যাটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত, সেটা হলো স্বদেশে ইসলামি জঙ্গিবাদের প্রচার ও প্রসার৷ গুপ্তচর বিভাগের খবর অনুযায়ী, জার্মানি থেকে প্রায় ৫০০ জন তরুণ – ও তরুণী – জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট-এর (আইএস বা আইসিস) হয়ে যুদ্ধ করার জন্য সিরিয়া যাত্রা করেছে৷