জার্মানিতে বর্তমানে প্রতি চারজনের একজনের ‘মাইগ্রেশন ব্যাকগ্রাউন্ড’ রয়েছে৷ বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে বিদেশে শেকড় থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছে ‘ফেডারেল ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন রিসার্চ’৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে বসবাসকারী বিদেশি শেকড়ের মানুষের অনুপাত ২০০৯ সালের ১৮.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ২৬ শতাংশে৷ মঙ্গলবার এ তথ্য জানায় ফেডারেল ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন রিসার্চ বা বিআইবি৷ সংস্থার মতে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিকের আগমন এবং সংকটপূর্ণ অঞ্চল থেকে শরণার্থী আসা এর মূল কারণ৷
বিআইবি-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জার্মানির ব্রেমেনে ৩৬.৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর অভিবাসন ইতিহাস রয়েছে৷ ট্যুরিঙ্গিয়ার ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৭.৮ শতাংশ৷ তবে জার্মানির পূর্বাংশের রাজ্যেগুলোতে সে অনুপাত বেশি নয়৷
অন্যদিকে হামবুর্গে অভিবাসীদের অনুপাত ৩৩.৯ শতাংশ এবং বার্লিনে ৩৩.১ শতাংশ৷ বিআইবির তথ্য মতে, বড় শহরগুলোতে নতুন আভিবাসী বেশি আসায় ছোট শহরগুলোর চেয়ে তুলনামূলকভাবে বড় শহর এবং রাজ্যগুলোতে মাইগ্রেশন ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষের সংখ্যাও এখন বেশি৷ জার্মানির হেসেন এবং বাডেন ভুর্টেমব্যাগের মতো অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী রাজ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা থাকায় সেখানে মাইগ্রেশন ব্যাকগ্রাউন্ডের সংখ্যাও বেশি৷ হেসেন রাজ্যে এই সংখ্যা ৩৪.৪ শতাংশ এবং বাডেন ভুর্টেমব্যাগে ৩৩.৮ শতাংশ৷
পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি হারে বিদেশি এসেছে ৫০ থেকে ৭০ এর দশকে পরিবারসহ অতিথি শ্রমিক হিসেবে৷
এনএস/জেডএইচ (এএফপি)
জার্মানিতে তুর্কিদের জীবন
জার্মান-তুর্কি নিয়োগ চুক্তির ৬০ বছর পূর্তিতে জার্মানির রুর জাদুঘরে একটি চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন চিত্রগ্রাহক এরগুন চাগাতে। বিস্তারিত ছবিঘরে...
ইস্তাম্বুলের চিত্রগ্রাহক এরগুন চাগাতে ১৯৯০ সালে জার্মানির কোলন, হামবুর্গ, ভের্ল, বার্লিন ও ডুইসবুর্গ শহরের তুর্কি বংশোদ্ভূতদের ছবি তোলেন। ওপরের ছবিতে চিত্রগ্রাহক নিজে।
ছবিতে ডুইসবুর্গের ভালসুম খনির দৃশ্য, যেখানে রয়েছে তুরস্ক থেকে আসা দুই খনি শ্রমিক। পঞ্চাশের দশকে জার্মানির কৃষি ও খনিখাতে দেখা যায় শ্রমিক সংকট। জার্মানির তৎকালীন রাজধানী বন ও তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার মধ্যে ১৯৬১ সালে সাক্ষরিত হয় নিয়োগ চুক্তি, যার ফলে ১৯৭৩ পর্যন্ত প্রায় দশ লাখ অতিথি শ্রমিক আসেন এই দেশে।
ছবিতে কোলনে গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান ফোর্ডের একটি কারখানা। গাড়িসহ নানাখাতে কাজ করতে আসা এই তুর্কিরা বর্তমানে জার্মানির বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। জার্মানিতে রয়েছেন প্রায় ২৫ লাখ তুর্কি।
চাগাতের তিনমাসব্যাপী এই সফরে জার্মানির পরিবর্তনের চিত্রটি ধরা পড়ে। বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর ধীরে ধীরে একটি বহুমাত্রিক সমাজের দিকে যাচ্ছিল দেশটি, যার সাথে মানিয়ে নেওয়া ছিল অনেকের জন্যই নতুন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ১৯৯০ সালে হামবুর্গ শহরে তৎকালীন একটি আইনের বিরুদ্ধে তুর্কীদের প্রতিবাদ সমাবেশ।
এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে এমনই একটি তুর্কী পরিবারের বাসার দৃশ্য। হামবুর্গের বাসিন্দা হাসান হ্যুসেইন গ্যুল ও তার পরিবারের সাত সদস্য। চাগাতের ছবির এই প্রদর্শনীতে রয়েছে হাসানের পরিবারের মতো আরো বহু পরিবারের কথা, যারা জার্মানিতে বাস করছেন কয়েক প্রজন্ম ধরে।
বর্তমানে, জার্মানিতে জলপাই বা ভেড়ার দুধের ছানা পাওয়া মোটেও কঠিন নয়। তবে একটা সময় তুর্কীদের পছন্দের খাবারের ব্যাপক অভাব থাকায় এই পরিবারেরা দেশ থেকে নিজেদের খাবার নিয়ে আসতেন। আস্তে আস্তে এই অবস্থার পরিবর্তন হয় ও তুরস্কে প্রচলিত খাবারের জোগান দিতে চালু হয় বহু তুর্কি বাজার। ছবিতে দেখা যাচ্ছে কোলন শহরের এমনই এক বাজার।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে কোলনের একটি পাড়ার দৃশ্য, যেখানে একটি দেয়ালে লেখা তুর্কী নির্বাসিত কবি নাজিম হিকমেটের কয়েকটি পংক্তি, "বাঁচতে হলে গাছের মতো, একা, মুক্ত! যেন জঙ্গলে একা হয়েও সঙ্ঘবদ্ধ থাকা যায়! এটাই আমাদের চাওয়া।"
বার্লিন-ক্রয়েতজবার্গ অঞ্চলের একটি তুর্কী বিয়েতেও উপস্থিত ছিলেন এই চিত্রগ্রাহক। তুরস্কের সংস্কৃতি অনুযায়ী এখানেও নববিবাহিত দম্পতির জন্য সবাই দোয়া করেন, যাতে তারা একসাথে একই বালিশ ভাগাভাগি করে থাকেন। কারণ, তুর্কী সংস্কৃতিতে বিয়ের পর নবদম্পতির জন্য বরাদ্দ থাকে একটা লম্বা বালিশ।
তুরস্কে প্রচলিত অনেক কিছুই ভুলে যাননি এই অভিবাসীরা। খৎনার অনুষ্ঠান শেষে 'মাশাল্লাহ' লেখা উত্তরীয় পরানোর চল জার্মানিতে আজও প্রচলিত। চাগাতের এই চিত্রপ্রদর্শনীর অর্থায়ন করেছে জার্মান পররাষ্ট্র বিভাগ ও অন্যান্য সংস্থা। সহযোগিতা করছে তুরস্কে অবস্থিত জার্মান সংস্থা গ্যোটে ইন্সটিটিউটও।