1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিকে জানা

১২ অক্টোবর ২০১২

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় জার্মানির বহু ঐতিহ্যবাহী দুর্গ, ক্যাথিড্রাল আর বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়ে গেলেও কিছু আশ্চর্য নজির থেকে গেছে৷ বেশ কিছু শহর এখনো আছে যা অচিরেই হয়তো হারিয়ে যেতে পারতো ইতিহাসের পাতা থেকে৷ যেমন রেগেন্সবুর্গ৷

ছবি: picture-alliance/dpa

রেগেন্সবুর্গের সেন্ট পিটার্স ক্যাথিড্রাল৷ এটা দিয়েই শহরটিকে এক নিমেষে চিনে ফেলে যায়৷ জার্মানির বাভেরিয়া রাজ্যের একমাত্র গথিক ক্যাথিড্রাল এটি, যার চুড়ো সোজা ১০৫ মিটার আকাশে উঠে গেছে৷ আর সে কারণেই এটি হলো রেগেন্সবুর্গের প্রতীকচিহ্ন৷

তবে রেগেন্সবুর্গের আরেকটি নিশানও আছে৷ আর সেটা হলো তার ৩০০ মিটার লম্বা পাথরের সেতু, যা কিনা মধ্যযুগের স্থাপত্যের এক আশ্চর্য নিদর্শন৷ মজার বিষয়, সেতুর নির্মাতা নিজেই নিজের স্মৃতি অক্ষয় করে রেখে গেছেন একটি মূর্তি বানিয়ে৷ মূর্তিটিকে বলে ‘ব্রুকেনমান্ডল', মানে ‘সেতুর মনিষ'৷

রেগেন্সবুর্গ শহরের ট্যুরিস্ট গাইড ডরিস স্টালহোফার জানান, ‘‘মধ্যযুগে এই সেতুটি ছিল বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য৷ মূলত দুটি কারণে৷ প্রথমত, সেতুটি তৈরি হয় অসম্ভব তাড়াতাড়ি, ১১৩৫ সালে কাজ শুরু হয়ে তার আট বছরের মধ্যেই শেষ হয়৷ আর দ্বিতীয়ত, দানিউব নদীর একেবারে উত্তরে, এই রেগেন্সবুর্গেই একমাত্র সারা বছর পারাপারের মতো সেতু তৈরি করা সম্ভব ছিল৷ উত্তর-দক্ষিণ কিংবা পূর্ব-পশ্চিম, মাল চলাচলের দুটো রাস্তাই এসে মিলেছিল এই রেগেন্সবুর্গে৷ কাজেই সেতুটা খুবই কাজে লাগতো৷''

রোমান শাসনামলে শহরের মূল প্রবেশদ্বারটিকে বলা হতো ‘পোর্টা প্রেটোরিয়া'৷ খ্রিষ্টপরবর্তী দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে রেগেন্সবুর্গে রোমান সৈন্যদের ঘাঁটি ছিল৷ যার চিহ্ন এখনও দৃশ্যমান৷

রেগেন্সবুর্গ তার আকৃতি এবং অবয়ব পায় দ্বাদশ থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যে৷ ২০০৬ সালে শহরের ‘আল্টস্টাট' বা প্রাচীন অংশটাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সম্মান দেওয়া হয়৷ সে কারণেই বোধ হয়, আজও বছরে প্রায় ৪০ লাখ পর্যটক ভিড় করে এ শহরে৷ তাঁদেরই একজনের কথায়, ‘‘এ এক অবিশ্বাস্য পরিবেশ৷ মধ্যযুগের এরকম কোনো শহর আর জার্মানিতে নেই৷ আমরা মধ্যযুগের আধা-কাঠের বাড়ি চিনি, কিন্তু এখানে কয়েক তলা উঁচু পাথরের বাড়িও আছে৷... একদিকে এই সব বাড়ি-ঘর, অন্যদিকে কমবয়সী ছেলে-মেয়েদের বাইরে বসে থাকা, ঠিক যেন ইটালির মতো পরিবেশ৷ সত্যি, এ ধরনের পুরনো বাড়ি আর তাদের ইতিহাসই আমাকে সবচেয়ে বেশি টানে৷''

রেগেন্সবুর্গের পর্যটক কেন্দ্রটি খোলা হয় ২০১১ সালে৷ এখানে ১৮৩ হেক্টারের আল্টস্টাট আর তার প্রায় এক হাজার পুরনো বাড়ি সম্পর্কে সব কিছু জানা যায়৷ আর টিকিটও কিনতে হয় না৷ হ্যাঁ, এখানকার সমস্ত মিউজিয়াম দেখা যায় একেবারে বিনামূল্যে! পর্যটন কেন্দ্রের সমন্বয়ক মাটিয়াস রিপ বলেন, ‘‘ধারণাটা খুব সোজা৷ এখানে রেগেন্সবুর্গের বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার হওয়ার ব্যাপারটা অতি সহজে, প্রায় খেলার মতন করে বোঝানো হয়৷ পর্যটক, বাসিন্দা, ছোট ছেয়ে-মেয়ে, সবার জন্য৷ জার্মান, ইংরেজি, দুটো ভাষাতেই৷ সকলেরই খুব প্রিয়৷ গ্রীষ্মে আমাদের দিনে এক হাজার দর্শক হয়৷''

রেগেন্সবুর্গের আরেকটি আকর্ষণ হলো এখানকার সেন্ট এমেরাম প্রাসাদ৷ ট্যুর্ন এবং টাক্সিসের রাজপরিবারের বাস এখানে৷ প্রাসাদের সুবিশাল বলরুম কিংবা রাজহংসের পাখার নীচে শয্যা — এগুলো মিউজিয়ামের অংশ৷ তাই দর্শকরা এগুলো দেখতে পারেন৷ কিন্তু ‘আজাম হল' নামের রাজকীয় পুস্তকাগারটিতে শুধু বিজ্ঞানী আর গবেষকদের প্রবেশাধিকার৷ প্রায় এক লাখ পুরনো বই, পুঁথিপত্রের সংগ্রহ রয়েছে এখানে৷ আশ্চর্যের বিষয়, প্রাসাদের করিডরে গেলেই বোঝা যায় যে ১৮১০ সাল পর্যন্ত এটা একটা খ্রিষ্টীয় মঠ ছিল৷

ছবি: Regensburg Tourismus GmbH

প্রাসাদ থেকে আর কয়েক মিনিট হাঁটলে আরেকটি দর্শনীয় বস্তু চোখে পড়ে৷ রেগেন্সবুর্গের পুরনো চ্যাপেল৷ কিংবদন্তি অনুযায়ী বাভেরিয়া রাজ্যের প্রাচীনতম গির্জা এটা৷ বহু ভাঙাগড়ার পর অষ্টাদশ শতাব্দীতে গির্জাটি তার বর্তমান রূপ পায়, বাভেরিয়ান রকোকো শৈলীতে৷ তারই পাশে ‘আল্টার রাটহাউস' বা পুরনো পৌরভবনে ১৬৬৩ সাল অবধি জার্মানদের হোলি রোমান এম্পায়ারের সংসদীয় বৈঠক বসতো৷ আর ঐ রাইশস্টাগই ছিল সে আমলে রাষ্ট্র পরিচালনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান৷

বুঝতেই পারছেন, রেগেন্সবুর্গ এক সময় যেমন ছিল রাজনীতির কেন্দ্র এবং তার সঙ্গে বাণিজ্যিক কেন্দ্রও বটে৷ সে জন্যই তো আজ পুরো শহরটাই ইউনেস্কোর বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ৷ রেগেন্সবুর্গ তাই চিরকালই জয়ী৷

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ