1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির প্রাচীন দল এসপিডি

৯ জুন ২০১৭

জার্মানির সামাজিক গণতন্ত্রী দল (এসপিডি) পৃথিবীর অন্যতম পুরাতন রাজনৈতিক দল৷ এর রয়েছে অনেক চড়াই উৎরাইয়ের ইতিহাস৷ কখনো নিষিদ্ধ হয়েছে, কখনো ভেঙেছে৷ তারপর আবার নতুনভাবে মাঠে নেমেছে৷

150 Jahre SPD Postkarte Arbeiter-Jugend! - Wissen ist Macht! Jahr 1905
ছবি: AdsD der Friedrich-Ebert-Stiftung

সকল রাজনৈতিক দলেরই নিজের একটা মৌলিক ‘মিথ' থাকে৷ এসপিডি দাবি করে, তারা পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন রাজনৈতিক দল৷

ফার্ডিনান্ড লাসালেছবি: AdsD der Friedrich-Ebert-Stiftung

জার্মান সামাজিক গণতন্ত্রী দলের সঙ্গে সুদূর অতীতের ইতিহাস জড়িয়ে আছে৷ অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে যখন শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ছিল খুবই সীমিত, তখন জার্মানির একদল লোক এটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করে৷

এক সময় তারা সংগঠিত হয় এবং রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী শক্তিতে পরিণত হয়৷ আর এ কাজের বড় অংশে অবদান রেখেছিলেন ফার্ডিনান্ড লাসালে৷ ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও তিনি আজীবন শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন৷

১৮৬৩ সালের ২৩ মে লাইপসিশ শহরে জেনারেল জার্মান ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়৷ এতে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেন ফার্ডিনান্ড৷ ১৫০ বছর পর এসে তাঁকে এখন এসপিডির প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়৷

পৃথিবীর অল্প কিছু রাজনৈতিক দল এর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আব্রাহাম লিঙ্কনের রিপাবলিকান সে রকমই একটি দল৷ এটি এসপিডির ৯ বছর পূর্বে ১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ 

এসপিডির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ অ্যারহার্ড এপলারের মতে, দলটির প্রতিষ্ঠাতার বার্তা ছিল, শ্রমিকরা যদি তাদের কর্মক্ষেত্রকে বদলাতে চায়, তাহলে রাষ্ট্র যেন হয় অর্থনৈতিকভাবে নিরাপদ এবং তারা যেন সমান নাগরিকের মর্যাদায় পায়– তা নিশ্চিতে রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে হবে৷

দলের প্রথম পুস্তিকায় ফার্ডিনান্ড বলেন, এই সংগঠনে এক লাখ জার্মান শ্রমজীবী মানুষ জড়ো হলেই তা এমন শক্তিতে পরিণত হবে, যাতে সবার হিসাব করে চলতে হবে৷

তার এই কথা বাস্তবে রূপ পেয়েছিল৷ এক সময়কার শ্রমজীবী মানুষের দলটি ১৮৭১ সাল থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে জার্মানির বৃহত্তর গণ আন্দোলনে পরিণত হয়৷ তার সদস্য সংখ্যা ছিল ১০ লাখেরও বেশি৷ নির্বাচনে দলটি এক-তৃতীয়াংশের বেশি ভোট পেয়েছিল

দলটি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে, ওটো ভন বিসমার্ক ঐক্যবদ্ধ জার্মানির চ্যান্সেলর হয়ে ১৮৭৮ সালে সমাজতন্ত্রী বিরোধী আইনে দলটিকে নিষিদ্ধ করে দেন৷ ১৮৭১ সালে এই বিসমার্কই জার্মানিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন৷

নিষিদ্ধের পর দলটির নেতাকর্মীদের উপর ২০ বছর ধরে চলে নানা অত্যাচার নিপীড়ন৷ অনেক নেতাকর্মীকে কারাবরণ করতে হয়৷ অনেকে দেশত্যাগও করে৷ ১৮৯৮ সালে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরই নির্বাচনে দলটি প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পায়৷ ১৯১২ সালে এসে তারা জার্মান সংসদের সর্ববৃহৎ দলে পরিণত হয়৷

সমাজতন্ত্রী বিরোধী আইনে বাড়ি তল্লাশিছবি: AdsD der Friedrich-Ebert-Stiftung

শেষ পর্যন্ত সমাজতন্ত্রী বিরোধী আইন সামাজিক গণতন্ত্রীদের জন্য সুফলও বয়ে আনে৷ তাদেরকে রক্ত দিতে হয়৷ তবে এতে খুব দ্রুত সবাই বুঝতে পারে যে, তাদেরকে দাবিয়ে রাখা সম্ভব নয়৷ কারণ শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা খুব দ্রুত বাড়ছিলো৷

নিপীড়ন এই দলকে কিছু রেডিকাল বিষয়ের দিকেও নিয়ে যায়৷ সামাজিক গণতন্ত্রীদের বড় একটা অংশ বৈপ্লবিক মার্ক্সবাদের আদর্শের দিকে ধাবিত হন৷ যার ফলে ক্ষমতাসীন পুঁজিবাদী কাঠামো রাজনৈতিকভাবে শ্রেণিহীন এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তিহীন সমাজের দিকে এগিয়ে যায়৷

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৮ সালের নভেম্বরে দর্শনগত বিভেদে পরিস্থিতির অবনতি হয়৷ যার ফলে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ত্বরান্বিত হয়৷ শ্রমিক আন্দোলন সংস্কারবাদী এবং বৈপ্লবিক ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়৷

ছবি: AdsD der Friedrich-Ebert-Stiftung

জার্মান সাম্রাজ্যের সর্বশেষ চ্যান্সেলর কায়জার ভিলহেলম দ্বিতীয় ১৯১৮ সালের ৯ নভেম্বর যখন সিংহাসনচ্যূত হন৷ তখন সামাজিক গণতন্ত্রীদের উভয় অংশ নতুন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়৷

১৯১৯ সালে ভাইমার রিপাবলিক গঠিত হয়৷ ভাইমার নামে একটি শহরে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা গৃহিত হয় বলে এই নাম ধারণ করে৷ এ সময় এসপিডি থেকে ৩ জন চ্যান্সেলর ১ বছরের মত জার্মানির নেতৃত্ব দেয়৷ বাকী সময়ে নিজেদের মধ্যে চড়াই উৎরাই থাকলে অবদানও রাখতে থাকে দলটি৷

১৯৩৩ সালে ক্ষমতায় এসে হিটলার স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে বিরোধিতা করে এসপিডি৷ দলটির ৯৪ জন সংসদ সদস্যের সকলেই ‘ইন্যাবলিং অ্যাক্ট অফ ১৯৩৩'র বিরুদ্ধে ভোট দেয়৷ এই আইনের মাধ্যমেই জার্মানিতে গণতন্ত্রের বদলে হিটলারের স্বৈরতন্ত্র জায়গা করে নেয়৷ ওই সময় অন্য সব দলই হিটলারের পক্ষে ভোট দেয়৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির রক্ষণশীল রাজনৈতিক দল পুঁজিবাদী সংস্কারের দিকে মনোযোগ দেয়৷  ‘অর্থনৈতিক মিরাকল' অর্জনে দেশের জন্য পথও ঠিক করে দেয়৷ এর ফলে এসপিডিকে পুঁজিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হয়৷

১৯৫৯ সালের সম্মেলনে এসপিডি শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সঙ্গে বাজার অর্থনীতিকে গ্রহণ করে৷ ১৯৬৬ সালে এসপিডির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মধ্য ডানপন্থি খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়নের (সিডিইউ) সঙ্গে মহাজোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়৷

জোট সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান এসপিডির ভিলি ব্রান্ট৷ পরে তিনি ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর ছিলেন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনিই এসপিডি থেকে প্রথম চ্যান্সেলর হন

সিডিইউ-র সঙ্গে জোট সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় যুদ্ধ পরবর্তী পূর্ব ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ভূমিকা রেখে আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম কুড়ান তিনি৷ তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও পান৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শহীদ পোলিশদের একটি স্মৃতিস্তম্ভে তিনি হাঁটু গেড়ে বসে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন৷ এটাকে নাৎসি একনায়কতন্ত্রের অপরাধের জন্য প্রতীকী ক্ষমা প্রার্থণা বলে বিবেচনা করা হয়৷

পোলিশদের স্মৃতিস্তম্ভে ভিলি ব্রান্টছবি: ddp images/AP Photo

১৯৮৯ সালে বার্লিন ওয়ালের পতনের মাধ্যমে জার্মানি ঐক্যবদ্ধ হলে সিডিইউ রাজনৈতিকভাবে আরো সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যায়৷ বিরোধী দলে থাকে দলটি৷

১৯৯৮ সালে এসপিডি থেকে গেয়ারহার্ড শ্রোয়েডার জার্মানির চ্যান্সেলর হন৷ এরপর পার্টির ধরণ বদলে ফেলার কাজ শুরু হয়৷ শ্রোয়েডার শ্রমজীবী মানুষের দল থেকে এসপিডিকে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির দলে পরিণত করেন৷ এর মাধ্যমে তিনি একইসঙ্গে সাদা চামড়ার শ্রমিক, স্ব-নিয়োগকৃত পেশাদার, সংকুচিত শ্রমজীবী শ্রেণির সমর্থন পেতে চেয়েছেন৷

উচ্চ বেকারত্ব, অর্থনৈতিক মন্দার ওই সময়ে নতুন এই ধরণে দলটির ঐতিহ্যগত সমর্থক শিল্প শ্রমিক এবং নিম্ন আয়ের মানুষ পিছুটান দেয়৷ শ্রোয়েডারের শেষের দিকে এসে দলের ভেতরে ‘পরিচয় সংকট'ও সৃষ্টি হয়৷

এ সময় ২০০৫ সালের নির্বাচনে কেন্দ্র ও রাজ্য পর্যায়ে দলের সমর্থন কমে ৩০ শতাংশের নীচে নেমে আসে৷

ওই নির্বাচনের পর সিডিইউ'র সঙ্গে জোট করে সরকারে যোগ দেয় এসপিডি৷ ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে এসপিডি ম্যার্কেলের জোটে না থাকলেও ১৩ সালের পর ফিরে আসে৷

রিচার্ড এ ফুখস/এসএন

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ