জার্মানির ফন ডেয়ার লাইয়েন ইউরোপের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট
১৬ জুলাই ২০১৯
জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে পর ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন৷ মঙ্গলবার আয়োজিত ভোটাভুটিতে ৭৪৭ ভোটের মধ্যে ৩৮৩ ভোট পান তিনি৷
বিজ্ঞাপন
নির্বাচনে জিততে ন্যূনতম যে ভোট পাওয়া দরকার ছিল তার চেয়ে মাত্র নয় ভোট বেশি পেয়েছেন এই জার্মান রাজনীতিবিদ৷ ইসির ৩২৭ আইনপ্রণেতা তাঁর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন, আর ভোটদান থেকে বিরত ছিলেন ২২ জন৷
মঙ্গলবার ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ৭৪৭ সংসদ সদস্য৷ ‘মিসেস ইউরোপ' হওয়ার জন্য অন্তত ৩৭৪ জন সদস্যের সমর্থন পেতে হতো ফন ডেয়ার লাইয়েনকে৷
বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গের পার্লামেন্ট ভবনে এই ভোটাভুটি হয়৷ পার্লামেন্টে মোট ৭৫১ সদস্য থাকলেও চারজন অনুপস্থিত থাকছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি৷
দুই মেয়াদের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার পদ ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়৷
নানা দেনদরবারের পর ইইউ-এর শীর্ষ পদে মনোনয়ন পান জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফন ডেয়ার লাইয়েন৷
পার্লামেন্ট মেম্বাররা সমর্থন দেওয়ায় ব্রাসেলসে ফিরছেন জার্মানির ক্ষমতাসীন ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (সিডিইউ) রাজনীতিবিদ ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ যেখানকার আলো-বাতাসে তাঁর শৈশব কেটেছিল৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ববর্তী সংগঠন ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিউনিটি (ইইসি)-এর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ছিলেন তাঁর বাবা এর্নস্ট আলব্রেখট৷ বাবার কর্মস্থল ব্রাসেলস-এ ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন ফন ডেয়ার লাইয়েন৷
জীবনের প্রথম ১৩ বছর ব্রাসেলসে কাটানোয় ফরাসি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছেন তিনি৷ মাতৃভাষা জার্মানের সঙ্গে ফরাসি ও ইংরেজি জানেন ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ এ কারণে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট পদে তাঁকে এগিয়ে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷
পেশায় চিকিৎসক ফন ডেয়ার লাইয়েনকে ২০০৯ সালের সরকারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন ম্যার্কেল৷ এরপর ২০১৩ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি৷
তবে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ফন ডেয়ার লাইয়েন একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্য জার্মানিতে প্রবল চাপের মুখে রয়েছেন৷ এক সংসদীয় কমিটি তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে৷
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে নির্বাচিত না হয়েও ম্যার্কেলের প্রভাবে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান হিসাবে মনোনয়ন পান ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে জার্মানির মহাজোট সরকারের শরিক এসপিডি দলও৷
ইউরোপেরজন্য ‘সবুজচুক্তি’
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দায়িত্বগ্রহণের ১০০ দিনের মাথায় ইউরোপীয় দেশগুলোকে ‘সবুজ চুক্তির‘ দিকে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন৷
মঙ্গলবার নির্বাচনের প্রাক্কালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তৃতায় ২০৫০ সালের মধ্যে ইউরোপের কার্বন নিঃসরণ শূন্যতে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে এই উদ্যোগের কথা বলেন তিনি৷
ইউরোপের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় একীভূত হওয়ার উপর গুরুত্ব দিয়ে ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেন, ‘‘প্রথমে আমাদের ঐক্যকে পুনরাবিষ্কার করতে হবে৷ আমরা যদি নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হই, কেউ বাইরে থেকে আমাদের বিভক্ত করতে পারবে না৷ আমাদের পৃথিবীকে সুস্থ রাখাই হচ্ছে আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ৷''
ব্রেক্সিট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ব্রিটেনের বেরিয়ে যেতে আরও সময়ের প্রয়োজন হলে আমি দিতে প্রস্তুত৷ কারণ ভালো কিছুর জন্য সময় বাড়ানো দরকার৷ তবে যা কিছু হোক, যুক্তরাজ্য আমাদের মিত্র, সহযোগী ও বন্ধুই থাকবে৷''
নারীদের এগিয়ে আনা, সামাজিক সুরক্ষা এবং দারিদ্র কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে উদ্যোগী হওয়ার অঙ্গীকার করেন ফন ডেয়ার লাইয়েন৷
ম্যার্কেলের পর কারা হতে পারেন চ্যান্সেলর?
চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলর মেয়াদে অভিবাসন নীতি নিয়ে ঘরে বাইরে বেশ লড়াই করতে হচ্ছে আঙ্গেলা ম্যার্কেলেকে৷ তার পরিবর্তে কারা হতে পারেন জার্মান চ্যান্সেলর? এ নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
আনেগ্রেট ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার
ক্রাম্প-কারেনবাউয়ারকে ম্যার্কেলের নিজের পছন্দের প্রতিনিধি মনে করা হয়৷ কিন্তু জার্মানি জুড়ে তাঁর পরিচিতি বেশ কম৷ সিডিইউ-এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার আগে ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার সারল্যান্ডের রাজ্য প্রধান হিসেবে সিডিইউ-এসপিডি জোটের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন৷ ম্যার্কেলের উদার অভিবাসন নীতির সমর্থক তিনি৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
ফল্কার বুফিয়ার
হেসের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০১০ সাল থেকে রাজ্য প্রধান বুফিয়ার৷ বর্তমানে ভিসবাডেনে সিডিইউ-গ্রিন জোটের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন৷ ম্যার্কেলের সিডিইউ পার্টির নির্বাহী কমিটির পাঁচ ডেপুটি চেয়ারপার্সনের একজন তিনি৷
ছবি: Reuters
ভোলফগাং শয়েবলে
কয়েক দশকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শয়েবলের৷ সিডিইউয়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ নেতাদের একজন তিনি৷ ৭৫ বছর বয়সি এই সাবেক আইনজীবী ২০১৭ সালে জার্মান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ম্যার্কেলের অধীনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন৷ জার্মানির অভিবাসন নীতির সমালোচনা করলেও ম্যার্কেলের সাথে তাঁর সম্পর্ক বেশ ভালো বলেই ধরে নেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Fischer
ইয়েনস স্পান
চ্যান্সেলর হওয়ার দৌঁড়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে কনিষ্ঠতম স্পান৷ ২০০২ সালে সংসদ সদস্য এবং পরবর্তীতে জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন তিনি৷ ২০১৬ সালে ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে গিয়ে সিডিইউ সম্মেলনে দ্বৈত নাগরিকত্ব বাতিলের প্রস্তাব পাশ করাতে ভূমিকা রাখেন৷ জার্মানির দারিদ্র্য নিয়ে মন্তব্যে তাঁকে সম্প্রতি বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন
জার্মানির প্রথম নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী তিনি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণস্বাস্থ্যের ওপর তাঁর পড়াশোনা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বিত প্রতিরক্ষার অন্যতম সমর্থক তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/M. Kappeler
ইউলিয়া ক্ল্যোকনার
ক্ল্যোকনার বর্তমানে ম্যার্কেলের কৃষিমন্ত্রী৷ তবে ম্যার্কেলের চেয়ে অনেক বেশি রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত তিনি৷ গর্ভপাত এবং ভ্রূণ নিয়ে গবেষণার বিরুদ্ধে তিনি৷ ম্যার্কেলের অভিবাসন নীতির বিকল্প প্রস্তাবেরও একজন সমর্থক ক্ল্যোকনার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
হর্স্ট সেহোফার
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেহোফারকেই বর্তমান সংকটের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ জার্মানির নতুন অভিবাসন নীতি নিয়ে মূলত সেহোফারই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন ম্যার্কেলকে৷ বাভারিয়া অঞ্চলে সিডিইউর সহযোগী দল সিএসইউর প্রধান সেহোফার৷ অক্টোবরে বাভারিয়ার নির্বাচনে তাঁর দল ভালো করার আশা করলেও বাকি জার্মানি তাঁকে চ্যান্সেলর হিসেবে না-ই দেখতে চাইতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
মার্কুস স্যোডার
বাভারিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্যোডার৷ অভিবাসন বিষয়ে ম্যার্কেলকে চ্যালেঞ্জ করে তিনিও এসেছেন আলোচনায়৷ জার্মানির দক্ষিণের এই রাজ্যে অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়াদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো এবং রাষ্ট্রীয় ভবনে ক্রুশ স্থাপনসহ বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ সমালোচনাতেও পড়তে হয়েছে তাঁকে৷
ছবি: Reuters/L. Barth
পেটার আল্টমায়ার
জার্মান অর্থমন্ত্রী আল্টমায়ার ম্যার্কেলের অভিবাসননীতির সমর্থক৷ সারল্যান্ড থেকে আসা এই রাজনীতিবিদ আগে কাজ করতেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে৷ ম্যার্কেলের খুব ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আল্টমায়ার কাজ করেছেন পরিবেশমন্ত্রী হিসেবেও৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Schreiber
আরমিন লাশেট
উদারপন্থি এই নেতাকে বিরোধীরা ‘রাজনীতির জন্য একটু বেশিই নরম’ বলে সমালোচনা করে থাকেন৷ সিডিইউর হয়ে গত বছর জার্মানির সবচেয়ে বড় রাজ্য নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ার রাজ্য প্রধান নির্বাচিত হন লাশেট৷ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের জন্য এই পরাজয় ছিল বিশাল এক ধাক্কা৷ সাবেক এই সাংবাদিকও ম্যার্কেলের পাঁচ ডেপুটির একজন৷