জার্মানির বন শহরে জাতিসংঘের বার্ষিক জলবায়ু আলোচনা সোমবার শুরু হয়েছে৷ চলবে দুই সপ্তাহ৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জার্মান পরিবেশমন্ত্রী বলেন, প্যারিস চুক্তি ‘পরিবর্তনযোগ্য' নয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Stollarz
বিজ্ঞাপন
বারবারা হেন্ড্রিক্স বলেন, ‘‘প্যারিস চুক্তি অপরিবর্তনীয়৷ বরং আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে এই চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে হবে৷ আমাদের হাতে বেশি সময় বাকি নেই৷''
২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল ১৯৬টি দেশ৷ চুক্তি অনুযায়ী, এই শতাব্দীতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি, সম্ভব হলে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে৷ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে প্রতিটি দেশ নির্দিষ্ট পরিমাণ কার্বণ নিঃসরণ কমাবে বলে জানিয়েছে৷ তবে সেটি বাধ্যতামূলক কোনো বিষয় নয়৷
বনে কয়লা বিরোধী সমাবেশ
জার্মানির বন শহরে জলবায়ু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কয়লা বিরোধী এক বিক্ষোভে অংশ নেন কয়েক হাজার মানুষ৷ বিক্ষোভকারীরা জার্মানিকে যতদ্রুত সম্ভব কয়লা উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধের আহ্বান জানান৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
সিটি সেন্টার থেকে শুরু
জার্মানির প্রাক্তন রাজধানী বন শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে কয়লা বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়৷ এই তিন নারীর মতো অনেকেই মুখে রং মেখে কয়লা বিরোধী প্লাকার্ড ও পতাকা হাতে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ভেন্যুর দিকে যাত্রা
বন শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলন কপ২৩-এর ভেন্যুর দিকে অগ্রসর হন বিক্ষোভকারীরা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বিক্ষোভকারী কতজন?
জার্মানির জাতিসংঘ শহর হিসেবে পরিচিত বনে শনিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে এগারো হাজারের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ তবে আয়োজকরা জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা ২৫,০০০৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ব়্যালিতে ট্রাম্প!
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোশ পরে বনের কয়লা বিরোধী সমাবেশে অংশ নেন এক বিক্ষোভকারী৷ সম্প্রতি প্যারিস চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন ট্রাম্প৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ডে নানা দাবি
কয়লা বিরোধী সমাবেশে অংশ নেয়া বিক্ষোভকারীদের হাতে হাতে ছিল নানা দাবি সংবলিত ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
একশো’র মতো সংগঠন
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধসহ নানা দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে জার্মানির সবুজ দল এবং বাম দলের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছিল৷ একশো’র মতো পরিবেশবাদী সংগঠনও অংশ নেন কপ২৩-কে ঘিরে আয়োজিত এই বিক্ষোভে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তরুণদের মিলনমেলা
কয়লা বিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বড় অংশই ছিল বয়সে নবীন৷ বিক্ষোভকারীদের উৎসাহ যোগাতে নাচগানের আয়োজনও ছিল সমাবেশে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
জৈব উপায়ে চাষাবাদের দাবি
কয়লা বিরোধী সমাবেশে জৈব উপায়ে চাষাবাদ ও ‘ফ্যাক্টরি ফার্মিং’ বন্ধের দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোশ পরা এক ব্যক্তি সমাবেশ স্থলে স্ট্যাচু অব লিবার্টির রেপ্লিকা দেখাচ্ছেন, যেখানে মশাল থেকে বের হচ্ছিল ধোঁয়া আর স্ট্যাচুর গায়ে লেখা ছিল ‘ফ্রিডম টু পলিউট’৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
9 ছবি1 | 9
বন সম্মেলনে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা হবে৷
দ্বীপরাষ্ট্র ফিজি এবারের সম্মেলনের সভাপতি দেশ৷ তবে সেখানে পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় জার্মানিতে ‘কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিস' বা কপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ এবারের সম্মেলনটি এ ধরনের আয়োজনের ২৩তম সংস্করণ হওয়ায় এটি ‘কপ২৩' নামে পরিচিতি পাচ্ছে৷
ফিজির প্রধানমন্ত্রী ফ্রাংক বাইনিমারামা কপ২৩-র সভাপতি হিসেবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের বিশ্ব চরম আবহাওয়ার শিকার হচ্ছে৷ হারিকেন, দাবদাহ, বন্যা, খরা, বরফ গলা ও কৃষিকাজে পরিবর্তন আসায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে৷'' তিনি বলেন, তাঁর দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত একটি দেশ৷
ফিজির মতো দেশগুলো রক্ষায় বিশ্বের অন্যান্য দেশকে তাদের অঙ্গীকার পুরোপুরি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বাইনিমারামা৷ তিনি অবশ্য তাঁর বক্ততায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রতে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণার উল্লেখ করেননি৷ গত জুন মাসে ট্রাম্প তাঁর এই ইচ্ছার কথা জানান৷ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কার্বন নির্গমনকারী দেশ হওয়ায় ট্রাম্পের এই ঘোষণা প্যারিস চুক্তির সাফল্যের উপর কালো ছায়া ফেলেছে৷ তবে জার্মানি, ফ্রান্স এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্য সরকার ও বড় বড় প্রতিষ্ঠান প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের উপর জোর দিচ্ছে৷
কপ২৩ সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে পরিবেশ ও বন সচিব ইসতিয়াক আহমদ সহ একটি প্রতিনিধি দল এসেছে৷ সম্মেলনের শেষ দিকে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু আসবেন বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (জলবায়ু পরিবর্তন ও আন্তর্জাতিক কনভেনশন) মির্জা শওকত আলী৷ তারও আগে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাছান মাহমুদের সম্মেলনে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে৷
এদিকে, সম্মেলনকে ঘিরে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে৷ ইতিমধ্যে তাঁরা আয়োজক দেশ জার্মানিতে কয়লা সহ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে৷
কপ২৩ সম্মেলনে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও নোবেলজয়ী আল গোর, হলিউড অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, আর্নল্ড শোয়ারৎসেনেগার সহ আরও অনেকে যোগ দেবেন৷
জেডএইচ/ডিজি (এপি, এএফপি, ডিপিএ)
ইউরোপের সবচেয়ে বড় কয়লা খনি বিরোধী প্রতিবাদ
কপ২৩-এর ঠিক আগে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে কয়লা খনি বিরোধী কর্মীরা জার্মানির হাম্বাখ কয়লা খনিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি করেন৷ তাঁদের কথায়, কয়লার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে আনা যাবে না৷
ছবি: DW/Wecker/Banos Ruiz
কয়লা ত্যাগ করুন – এখনই !
বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লা ব্যবহারের বিরোধীতা জানিয়ে কপ২৩-এর ঠিক একদিন আগে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সমবেত হন৷ বিক্ষোভকারীদের সবাই সেসময় সাদা পোশাক পরে প্রায় ১০ কিলোমিটার হেঁটে হাম্বাখ কয়লা খনি পর্যন্ত যান৷
ছবি: DW
ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করুন
ইউরোপে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী কয়লা খনি হলো হাম্বাখ৷ এর সম্প্রসারণের কারণে ইতিমধ্যে ১ হাজার বছরের পুরনো বন কেটে ফেলা হচ্ছে৷ পরিবেশবাদীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যখন বন শহরে সম্মেলন চলছে তখন সেখান থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে এই খনি থাকাটা খুবই হাস্যকর একটা ব্যাপার৷
ছবি: DW
শান্তিপূর্ণ লড়াই
বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি সত্ত্বেও, রবিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল একেবারে শান্তিপূর্ণ৷ রঙিন ব্যানার, চেহারায় নানা অংকন, কেউ কেউ আবার গিটার এনে গানও করেছেন দিনের প্রথম ভাগে৷
ছবি: DW/Wecker/Banos Ruiz
জীবনের ঝুঁকিতে দৃষ্টি আকর্ষণ
বিক্ষোভকারীরা খনির কাছাকাছি পৌঁছালে পুলিশ কর্মকর্তারা চারপাশ থেকে তাঁদের ঘিরে রাখে৷ স্পিকারে তারা ঘোষণা করে যে, বিক্ষোভকারীরা অন্যের ব্যক্তিগত জায়গায় ঢুকে পড়েছেন৷ আর তাতে নাকি নিরাপত্তা সংক্রান্ত জটিলতা হতে পারে৷
ছবি: DW
পালাও
খনিরা কাছে যেতেই বিক্ষোভকারীদের দীর্ঘ লাইনে হঠাৎ করেই কেউ কেউ ফুঁসে ওঠেন৷ অনেকেই চিৎকার ও দৌড়াতে শুরু করে দেন৷
ছবি: DW
একটি একদিনের সাফল্য
বিক্ষোভকারীদের মতে, তাঁদের দাবি তুলে ধরার সবচেয়ে ভালো উপায়ই ছিল এই কয়লা খনির চারপাশ অবরোধ করা৷ এতে করে কিছু সময়ের জন্য হলেও তো খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ ছিল! তাই কিছুক্ষণের এই বিরতিকে বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখছেন বিক্ষোভকারীরা৷
ছবি: DW
কয়লা: আর না...
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, বিদ্যুতের জন্য কয়লার ওপর এতটা নির্ভরশীলতা ইউরোপের আর কোথাও নেই৷ ‘কয়লা ত্যাগ করুন, জলবায়ু রক্ষা করুন’ লেখা ব্যানারও সেদিন তাই চোখে পড়ে৷
ছবি: DW
শেষ পর্যন্ত
রবিবারের প্রতিবাদ কর্মসূচির শেষ দিকে বিক্ষোভকারীদের দু’টি দল মূল দল থেকে তাঁদের নেতাদের নিয়ে ভাগ হয়ে যায়৷ ছবিতে নিশ্চয় দেখতে পাচ্ছেন পুলিশ তাঁদের প্রতিরোধ করতে কীভাবে প্রস্তুত ছিল৷
ছবি: DW/Wecker/Banos Ruiz
এখনই সময়
একদিনের জন্য হাম্বাখ খনি বন্ধ করে দিতে সফল হন বিক্ষোভকারীরা৷ তবে এটা দেখতে হবে যে শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদরা ‘কপ২৩’ সম্মেলনে কয়লা খনি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী কোনো পদক্ষেপ নেন কিনা৷