জার্মান প্রতিষ্ঠান বায়োনটেক ও মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফাইজারের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনা ভাইরাসের টিকা তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে ৯০ শতাংশ কার্যকারিতা দেখিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বড় আকারের কোনো পরীক্ষায় সাফল্যের খবর এই প্রথম এক বিবৃতির মাধ্যমে জানালো প্রতিষ্ঠান দুটি৷
তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে কোনো উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জটিলতা দেখা যায়নি বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি৷ একই সঙ্গে এর টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন গবেষকেরা৷
বায়োনটেকের প্রধান নির্বাহী উগুর সাহিন বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ‘‘আমরা আশা করি এই টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্তত এক বছর স্থায়ী হবে৷’’
যৌথ বিবৃতিতে ফাইজারের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আলবার্ট বোর্লা জানিয়েছেন, ‘‘টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে এটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে পারে৷’’ যাদের আগে কখনও করোনা সংক্রমণ হয়নি, এমন মানুষের ওপর চালানো এ পরীক্ষায় দেখা গেছে যে টিকা দেয়ার পর শরীরে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করলেও তাদের কোভিড-১৯ হয়নি৷
জুলাইয়ের শেষ থেকে শুরু হওয়া তৃতীয় পর্যায়ের এ ট্রায়ালে ৪৩ হাজার ৫০০ জনেরও মানুষ অংশ নিয়েছেন৷ আগামি সপ্তাহেই মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এফডিএর অনুমতির জন্য আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি৷
কুকুর দিয়ে করোনা পরীক্ষা: সময় ও অর্থ সাশ্রয়
ফিনল্যান্ডের গবেষকরা বলছেন, বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত কুকুর দিয়ে দ্রুত ও কম খরচে করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব৷ এজন্য মানুষকেও শারীরিক কোনো কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হবে না৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Lehtikuva/Reuters
ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ আবার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে৷ বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশ জানিয়েছে, ব্যয় সংকোচন করতে সংক্রমিত রোগীর সংস্পর্শে এলেও কারো আর করোনা টেস্ট করানো হবে না৷ করোনা পরীক্ষা ও ট্র্যাক করা নিয়ে পুরো ইউরোপই অনেকটা দিশেহারা৷
ছবি: Attila Cser/Reuters
ফিনল্যান্ডের বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা
ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কির বিমানবন্দরে ছোট্ট একটা কেবিনে এক টুকরো খাবারের বিনিময়ে করোনা পরীক্ষা করছে কুকুর ‘কোসি’৷ মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগছে তার৷ সাধারণ করোনা পরীক্ষায় যে পরিমাণ সময় লাগে তার তুলনায় অনেক কম সময় লাগে এখানে৷
ছবি: Lehtikuva/Reuters
শারীরিক অস্বস্তি নেই
নাক থেকে কোনো শ্লেষা নেয়ার দরকার নেই৷ কোনো ব্যক্তির হাত বা ঘাড় মোছা কাপড় শুঁকে তৎক্ষণাৎ কুকুর জানিয়ে দেবে করোনার সংক্রমণের কথা৷ এমনকি করোনা সংক্রমণের শিকার ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন, কিন্তু পাঁচদিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়নি এমন ব্যক্তিরও করোনায় সংক্রমণ ধরা পড়েছে কুকুরের পরীক্ষায় এবং তাকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Lehtikuva/Reuters
অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব
হেলসিঙ্কি ভেটারনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আনা হিলেম-জোর্কমান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, এই কুকুরগুলো করোনার হাত থেকে অনেক জীবন রক্ষা করতে পারে৷ তিনি জানালেন, কুকুর পরীক্ষার পর তারা অন্য মাধ্যমে পরীক্ষা করেও পরীক্ষাগুলো শতভাগ সঠিক ছিল৷
ছবি: Attila Cser/Reuters
প্রশিক্ষিত কুকুর
হেলসিঙ্কি ভেটারনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক কুকুরকে রোগ নির্ণয়ের কাজে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ বেডবাগস, ক্যান্সারের মতো রোগ নির্ণয়ে তাদের প্রশিক্ষণ রয়েছে৷ প্রথমে প্রশিক্ষণের পর কুকুর ‘কোসি’র সাত মিনিট সময় লেগেছে প্রশিক্ষক আসলে কী চাইছেন তা বুঝতে৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
১৫ কুকুরকে প্রশিক্ষণ
প্রথম পর্যায়ে ১৫টি কুকুরকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে৷ তাদের মধ্যে এমন কুকুর আছে, যারা শরীর শুঁকে বলে দিতে পারে কারো ডায়াবেটিস আছে কিনা৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
প্রয়োজন অনুমোদন
এই পরিকল্পনা সুদূর প্রসারী করতে প্রয়োজন অর্থের এবং অনুমোদনের৷ স্থানীয় মেয়র অবশ্য বিমানবন্দরে এসে এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং নিজেকে পরীক্ষা করিয়েছেন৷ তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন মাত্র দুই মিনিটে পরীক্ষা হয়ে যেতে দেখে৷ চার মাসের এ পাইলট প্রকল্পে ৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার দেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
এক মাসে খরচ দশ লাখ ইউরো
বিমানবন্দরের এই প্রকল্পে গত এক মাসে খরচ হয়েছে ১০ লাখ ইউরো৷ শীতকালে আরো ৩০ লাখ ইউরো খরচ হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
ফিনিশ সরকারের অনুমোদন মেলেনি
জনগণের বিপুল সমর্থন সত্ত্বেও ফিনল্যান্ড সরকার এখনো এই প্রকল্পে অনুমোদন দেয়নি৷ বিমানবন্দরের যাত্রীরা খুব আগ্রহের সাথেই এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/abaca/R. Lafargue
প্রকল্প পৌঁছেছে জার্মানিতেও
এই পরীক্ষা এখন আর কেবল ফিনল্যান্ডে সীমাবদ্ধ নেই৷ জার্মানির গবেষকরাও জানিয়েছেন, তারা এ ধরনের পরীক্ষায় সফলতা পেয়েছেন৷ হানোফারের ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হোলগার ফোল্ক জানিয়েছেন, এই প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও তহবিল প্রয়োজন, সেটা তারা পাচ্ছেন না৷ মহামারি মোকাবিলায় এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Frey
10 ছবি1 | 10
ফাইজার ও বায়োনটেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকা সরবরাহে এরই মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থের চুক্তি সই করেছে৷ চুক্তি সই হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, জাপানের সঙ্গেও৷ সময় বাঁচাতে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে উৎপাদনও৷ ২০২০ সালেই প্রতিষ্ঠান দুটি পাঁচ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করতে চায়৷ এর ফলে অন্তত আড়াই কোটি মানুষকে টিকা দেয়া সম্ভব হবে৷ ২০২১ সালে আরো ১৩০ কোটি ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ফাইজার৷
অর্ধেকের কাছাকাছি মানুষ উচ্চঝুঁকিতে
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসেবে বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে পাঁচ কোটি, প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি মানুষ৷ ইউরোপসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে কয়েক মাস সংক্রমণে ধীরগতি থাকার পর আবার দ্রুত হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা৷
পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে আক্রান্তের প্রতি পাঁচ জনের একজন মার্কিন নাগরিক৷ দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অধীনে করোনা মোকাবিলায় উদ্যোগে ঘাটতি থাকলেও নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা নেয়ার পর পরিস্থিতি অনেকটাই পালটানোর সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে৷ নির্বাচনের অনানুষ্ঠানিক ফলে জয়ী হওয়ার পরপরই করোনা মোকাবিলায় টাস্কফোর্স গঠন এবং টিকা আবিষ্কারে দ্রুত গতি আনার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷
জাপানের পর সবচেয়ে বেশি বয়স্ক মানুষের বাস জার্মানিতেই৷ সে হিসেবে করোনার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যাও দেশটিতে বেশি বলে জানিয়েছেন জার্মান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান৷ এছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত ওজন, ইত্যাদি সমস্যাও ঝুঁকির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে৷ জার্মান দৈনিক বিল্ডকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্পান বলেন, ‘‘এইসবই এই ভাইরাস বা অন্য সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ৷ ফলে সবকিছু হিসেবে নিলে জার্মানির ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন৷’’
এদিকে, বিশ্বের নানা দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় আবারো জারি হয়েছে কড়াকড়ি ও নিষেধাজ্ঞা৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতি প্রথমবারের ধাক্কা সামলে ওঠার সুযোগ পাওয়ার আগেই আবার বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে৷