জার্মানির ফেডারেল ও রাজ্য স্তরের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা বিমানবন্দরে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে আসা যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা চালু করতে চলেছেন৷ সম্ভবত শুক্রবার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানি এতকাল করোনা ভাইরাসের ধাক্কা মোটামুটি ভালোভাবে সামলে নিয়েছে৷ অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় সে দেশে জনজীবন অপেক্ষাকৃত স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে৷ ডাক্তার, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য পরিষেবা কাঠামোর উপর বাড়তি চাপও এড়ানো সম্ভব হয়েছে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও সংক্রমণ ঘটে চলেছে৷ বিশেষ করে বিদেশ থেকে আসা মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই সংক্রমণের উৎস হয়ে উঠছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে৷ সেই ঝুঁকি এড়াতে ফেডারেল ও রাজ্য স্তরের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা বিমানবন্দরে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে আসা মানুষের জন্য করোনা পরীক্ষা চালু করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন৷
জার্মানির ফেডারেল স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান ১৬টি রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনার পর নীতিগতভাবে এমন পরীক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তবে সংবাদ সংস্থা ডিপিএ-র সূত্র অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নি৷ শুক্রবার খুঁটিনাটি বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হবার কথা৷ তখন ব্যয়ভার ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে কথা হবে৷ তাছাড়া বিমানবন্দরের কর্মীদের পক্ষে করোনা পরীক্ষা চালানো সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর সেই দায়িত্ব নেবার জন্য চাপ বাড়ছে৷ বিমানবন্দরগুলির সংগঠন সেইসঙ্গে প্রশ্ন তুলছে, কোনো যাত্রীর শরীরে করোনা শনাক্ত করা গেলে কী করা হবে?
বর্তমানে ‘হাই রিস্ক' বা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলি থেকে জার্মানিতে আসা যাত্রীদের নিজস্ব উদ্যোগে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়৷ কিন্তু সেই পদক্ষেপ বাস্তবে কার্যকর করা বেশ কঠিন হচ্ছে৷ রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট এই মূহুর্তে বেশিরভাগ দেশকেই ‘হাই রিস্ক' পর্যায়ে রেখেছে৷ ফ্রান্স, স্পেন, গ্রিস-সহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ দেশকে ‘লো রিস্ক' বা কম ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রাখা হয়েছে৷ প্রস্তাবিত নিয়ম অনুযায়ী সেখান থেকে আসা মানুষকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করাতে হবে না৷
যেসব দেশে করোনায় সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি
জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড-১৯ বিষয়ক তথ্যের ভিত্তিতে এই ছবিঘরে রয়েছে করোনা সংক্রমণে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশগুলোর কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Keuenhof
১০. ইরান
সংক্রমণের সংখ্যার বিচারে দশম স্থানে রয়েছে ইরান৷ মোট আক্রান্ত ২ লাখ ৭৬ হাজার ২০২জন৷ মারা গেছেন ১৪ হাজার ৪০৫জন৷ সেরে উঠেছেন ২ লাখ ৪০ হাজার ৮৭জন৷
নবম স্থানে যুক্তরাজ্য৷ মোট আক্রান্ত ২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৪৪জন৷ মারা গেছেন ৪৫ হাজার ৩৯৭জন৷ জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বলছে যে, সেখানে সেরে উঠেছেন ১ হাজার ৪১৩জন৷ কিন্তু এ বিষয়ে সম্পূর্ণ হালনাগাদ তথ্য জানা যায়নি৷
ছবি: Getty Images/C. Furlong
৮. চিলি
অষ্টম স্থানে রয়েছে দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশ চিলি৷ মোট আক্রান্ত ৩ লাখ ৩০ হাজার ৯৩০জন৷ মারা গেছেন ৮ হাজার ৫০৩জন৷ সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ১ হাজার ৭৯৪জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. C. Grawe
৭. মেক্সিকো
দক্ষিণ অ্যামেরিকার আরেক দেশ মেক্সিকোতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩৯৬৷ প্রাণ হারিয়েছেন ৩৯ হাজার ৪৮৫জন৷ সেরে উঠেছেন ২ লাখ ৬৩ হাজার ৯২জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/U. Ruiz
৬. পেরু
ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে পেরু৷ সেখানে মোট আক্রান্ত ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫৯০জন৷ মারা গেছেন ১৩ হাজার ১৮৭জন৷ সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮১জন৷
ছবি: picture-alliance/AP/R. Abd
৫. দক্ষিণ আফ্রিকা
পঞ্চম স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা৷ সেখানে মোট আক্রান্ত ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৬২৮জন৷ প্রাণ হারিয়েছেন ৫ হাজার ১৭৩জন৷ ভালো হয়েছেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬৫জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Spatari
৪. রাশিয়া
সংক্রমণের হিসাবে চতুর্থ স্থানে রাশিয়া, মোট আক্রান্ত ৭ লাখ ৮২ হাজার ৪০৷ করোনা সংক্রমণে মারা গেছেন ১২ হাজার ৫৬১জন৷ সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৬১ হাজার ৩৯৭জন৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/A. Zemlianichenko Jr
৩. ভারত
এশিয়ায় সর্বোচ্চ সংক্রমিত দেশ এই মুহূর্তে ভারত৷ বিশ্বে করোনা সংক্রমণের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে থাকা ভারতে মোট আক্রান্ত ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৩৮জন৷ সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ২৪ হাজার ৫৭৮জন৷ কিন্তু মারা গেছেন ২৮ হাজার ৮২জন৷
ছবি: Getty Images/Y. Nazir
২. ব্রাজিল
ব্রাজিলেও হু হু করে বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা৷ মোট আক্রান্ত ২১ লাখ ১৮ হাজার ৬৪৬৷ প্রাণ হারিয়েছেন ইতিমধ্যে ৮০ হাজার ১২০জন৷ আবার সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৩০০জন৷
ছবি: Reuters/A. Perobelli
১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
করোনা সংক্রমণের হিসেবে এখনো শীর্ষস্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ৯২৬জন মোট আক্রান্ত সেখানে৷ সেরে উঠেছেন ১১ লাখ ৬০ হাজার ৮৭জন৷ মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৯০৯জনের৷ করোনা সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Warren
বাংলাদেশ
করোনা সংক্রমণের বিচারে বাংলাদেশ রয়েছে সতেরো নম্বরে৷ ২ লাখ ৭ হাজার ৪৫৩জন মোট সংক্রমিত সেখানে৷ এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৬৬৮জন, সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৬৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hussain
11 ছবি1 | 11
ইউরোপে মহামারি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আসার কারণে ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছে৷ গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময়ে জার্মানির অনেক মানুষ স্পেন ও গ্রিসের মতো দেশে বেড়াতে গেছেন৷ কিন্তু জার্মানদের প্রিয় গন্তব্য স্পেনের মাইয়র্কা দ্বীপে মাস্ক বা সামাজিক ব্যবধান ছাড়া পর্যটকদের বেপরোয়া আচরণের খবর ছড়িয়ে পড়ায় জার্মান রাজনীতিক নড়েচড়ে বসছেন৷
জার্মানির চিকিৎসক সংগঠনের প্রধান ক্লাউস রাইনহার্ট ডিপিএ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিমানবন্দরে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা চালু করার পক্ষে সওয়াল করেছেন৷ তাঁর মতে, করোনা মহামারি মোটেই শেষ হয়ে যায়নি৷ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে সংক্রমণের হার বেড়ে চলায় জার্মানিতেও আচমকা আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে তিনি মনে করেন৷ তাছাড়া অনেকে গ্রীষ্মের ছুটির পর সংক্রমণের হার বাড়ার আশঙ্কা করছেন৷ হেমন্তকালে তাপমাত্রা কমে গেলেও করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)
করোনা-কালীন বিমান
বিমান, না কি মহাকাশে যাওয়ার প্রস্তুতি? যাত্রী থেকে বিমান সেবিকা-- পোশাক দেখলে মনে হবে নভশ্চর। সামাজিক দূরত্বের নতুন সময়ে ভারতে পাল্টে গিয়েছে বিমানবন্দরের দৃশ্য।
ছবি: DW/Syamantak Ghosh
বসতে মানা
বিমানবন্দরের বসার জায়গায় এ ভাবেই স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব আসনে বসা যাবে না। একটা ছেড়ে ছেড়ে বসতে হবে। মেঝেতেও এ ভাবেই মার্কিং করা। সর্বত্র লেখা আছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা।
ছবি: DW/Syamantak Ghosh
বিশ্রামে কর্মীরা
সারা দিন ধরে বিমানবন্দর স্যানিটাইজ করার চেষ্টা করছেন কর্মীরা। তারই ফাঁকে একটু জিরিয়ে নেওয়া। সকলেরই পরনে পিপিই কিট।
ছবি: DW/Syamantak Ghosh
চৌকো চৌকো খোপ
লাউঞ্জ থেকে বিমান পর্যন্ত যাওয়ার বাসেও চৌকো চৌকো খোপ। যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব মেনে ওই খোপেই দাঁড়াতে হবে।
ছবি: DW/Syamantak Ghosh
মাঝে বসলে পিপিই
বিমানে উঠে জানলার আসন বা আইলের আসনে বসলে শুধুমাত্র মাস্ক এবং ফেস শিল্ড পরলেই চলবে। কিন্তু মাঝের সিটে বসলে পরতে হবে পিপিই। ফেস শিল্ড, মাস্ক, স্যানিটাইজার এবং পিপিই দিচ্ছে বিমান সংস্থাই।
ছবি: DW/Syamantak Ghosh
স্কাইফাই দৃশ্য
বিমানের ভিতরে এ ভাবেই ফেস শিল্ড আর মাস্ক পরে বসতে হচ্ছে সকলকে। সঙ্গের ব্যাগও আগে থেকে স্যানিটাইজ করে দেওয়া হচ্ছে।
ছবি: DW/Syamantak Ghosh
স্যানিটাইজেশন প্রক্রিয়া
যাত্রী ওঠার সময় এ ভাবেই ধোঁয়ার মতো জীবাণুনাশক ব্যবহার করে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে বিমান। প্রায় আধঘণ্টা ধরে এই প্রক্রিয়া চলে।
ছবি: DW/Syamantak Ghosh
নভশ্চর বিমান সেবক
বিমান সেবক এবং সেবিকারাও পিপিএ পরে কাজ করছেন। শারীরিক সংযোগ হয়, এমন কোনও কাজ তাঁরা করছেন না। এমনকী, বিমানে খাবার দেওয়াও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ছবি: DW/Syamantak Ghosh
ব্যাগ নিয়ে লাইনে
লাগেজ বেল্ট থেকে জিনিস নিয়ে এ ভাবেই দাঁড়াতে হচ্ছে লাইনে। সামাজিক দূরত্ব মেনে একজন একজন করে বাইরে যেতে পারছেন।
ছবি: DW/Syamantak Ghosh
এবং পরীক্ষা
বিমানবন্দর থেকে বেরনোর আগে এ ভাবেই মেপে নেওয়া হচ্ছে শরীরের উত্তাপ। থার্মাল স্ক্যানে তাপমাত্রা বেশি এলে যাত্রীদের পাঠানো হচ্ছে অন্যান্য পরীক্ষায়।