জার্মানি ক্রমশ আর্থিকভাবে সমৃদ্ধশালী হলেও দেশটিতে শিশু দরিদ্রতা বাড়ছে, সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে এ তথ্য৷ এ জন্য সরকারের পারিবারিক নীতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
বিজ্ঞাপন
মানুষের সর্বনিম্ন প্রাত্যহিক চাহিদাগুলো মেটাতে জার্মানিতে কোনো ঘাটতি নেই৷ খাদ্য, আবাস, শীতের পোশাক, ওষুধ এবং স্কুল – সবার জন্যই সহজলভ্য৷ এমনকি বাভেরিয়া বা বার্লিনের দরিদ্র শিশুরা বিশ্বের দুশ' কোটি শিশুর অধিকাংশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে৷
তা সত্ত্বেও, ব্যার্টেলসমান ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, দরিদ্রতার মধ্যে বড় হওয়া শিশুর সংখ্যা জার্মানিতে ক্রমশ বাড়ছে৷ গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় বিশ লাখ শিশুর অভিভাবকরা রাষ্ট্রের সাধারণ সহায়তা, যা ‘‘হার্টৎস-ফিয়ার' নামে পরিচিত, নিয়ে জীবনযাপন করছেন৷ তাদের জার্মানিতে গরিব হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ দীর্ঘমেয়াদি গবেষণাটিতে গবেষকরা রাষ্ট্রীয় কর্মসংস্থান ব্যুরোর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে শিশুদের উপর দরিদ্রতার প্রভাব কী, তা নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন৷
টাটকা খাবারদাবার নিয়মিত খেতে না পারায় গরিব ঘরের শিশুদের মধ্যে পুষ্টির অভাব দেখা যাচ্ছে এবং তারা নানারকম অসুখের শিকার হওয়ার শঙ্কার মধ্যে রয়েছে৷ গবেষণায় আরো দেখা গেছে, দরিদ্রতার শিকার পরিবারের শিশুরা সমাজ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ কেননা অভিভাবকরা তাদের স্কুলের প্রমোদভ্রমণে কিংবা খেলাধুলায় বা সংগীত কোর্সে পাঠাতে পারেন না৷ দরিদ্র শিশুদের নিজস্ব বেডরুম বা অনেকক্ষেত্রে বাসায় হোমওয়ার্ক করার নিরিবিলি জায়গাও থাকে না৷
এ সব কারণে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা লেখাপড়ায় ভালো করতে পারে না৷ ব্যার্টেলসমান ফাউন্ডেশনের পারিবারিক নীতি বিষয়ক কর্মকর্তা আনেটা স্টাইন এই বিষয়ে বলেন, ‘‘নিরাপদ রোজগার আছে এমন পরিবারের সন্তানদের চেয়ে দরিদ্র শিশুদের শিক্ষাজীবনে বেশি সমস্যা দেখা যায়৷''
তবে এর অর্থ এই নয় যে, দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া শিশুরা সবসময় দরিদ্র থাকে৷ বরং নিম্নআয়ের পরিবারের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্য যতটা সম্ভব করার চেষ্টা করেন৷ এর পরেও অবশ্য দরিদ্রতার চিহ্ন থেকে যায়৷ স্টাইন বলেন, ‘‘শিশুরা যত বেশি দরিদ্রতার মধ্যে থাকে, ততবেশি নেতিবাচক বিষয়াদি দিয়ে প্রভাবিত হয়৷''
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, একক অভিভাবকের সঙ্গে দুই বা ততোধিক ভাইবোন আছে এমন শিশুদের মধ্যে দরিদ্রতার হার অপেক্ষাকৃত বেশি৷
ফলে শিশুরা কোথায় বেড়ে উঠছে তার উপরে তাদের ভবিষ্যৎ প্রভাব বিস্তার করে৷ গবেষণায় দেখা গেছে, জার্মানির ধনী রাজ্যগুলোর শিশুদের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল রাজ্যগুলোর শিশুদের তুলনায় দরিদ্রতার হার কম৷ জার্মানির পূর্বাঞ্চলে যেখানে প্রতি পাঁচটি শিশুর একটি দরিদ্র, সেখানে বাভেরিয়ায় প্রতি দশটি শিশুর একটি দরিদ্রতার শিকার৷
যেসব দেশের শিশুরা সবচেয়ে কম স্কুলে যায়
শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির প্রত্যাশিত উন্নতি সম্ভব নয়৷ অথচ ইউএন ওয়াচ সম্প্রতি এমন দশটি দেশ সম্পর্কে জানিয়েছে, যেসব দেশের শিশুরা সবচেয়ে কম স্কুলে যায়৷ কোন দশটি দেশ? জেনে নিন এই ছবিঘরে..
ছবি: Joel Saget/AFP/Getty Images
লাইবেরিয়া
লাইবেরিয়ার ৬২ শতাংশ শিশুই স্কুলে যায় না৷ তাই তারাই আছে এক নাম্বারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Jallanzo
দক্ষিণ সুদান
দক্ষিণ সুদান আছে দ্বিতীয় স্থানে৷ সে দেশের ৫৯ শতাংশ শিশু স্কুলে যায় না৷
ছবি: Reuters/Kate Holt/UNICEF
ইরিত্রিয়া
ইরিত্রিয়ারও ৫৯ শতাংশ শিশু স্কুলে যায় না৷ তাই দক্ষিণ সুদানের সঙ্গেই আছে তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Rumpenhorst
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানের অবস্থা একটু ভালো৷ দেশটির শতকরা ৪৬ ভাগ শিশু স্কুলে যায় না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Gul
সুদান
আফ্রিকার আরেক দেশ সুদানের মাত্র ৪৫ শতাংশ শিশু শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত৷
ছবি: dapd
জিবুতি
জিবুতিও আফ্রিকার দেশ্৷ সে দেশের ৪৩ শতাংশ শিশু স্কুলে যায় না৷
ছবি: DW/J. Jeffrey
গিনি প্রজাতন্ত্র
আফ্রিকার এই দেশটিরও শিশুশিক্ষার অবস্থা খুব খারাপ৷ ইকোয়েটোরিয়াল গিনির ৪২ শতাংশ শিশু স্কুলে যায় না৷
ছবি: AFP/Getty Images/S. Kambou
নাইজার
এটিও আফ্রিকার দেশ৷ সেখানে শতকরা ৩৮ ভাগ শিশু স্কুলে গিয়ে লেখাপড়া শেখার সুযোগ পায়নি৷
ছবি: Reuters/Akintunde Akinleye
মালি
মালি-ও আফ্রিকা মহাদেশের দেশ৷ সে দেশের ৩৬ শতাংশ শিশু কখনো স্কুলে যায়নি৷
ছবি: Imago/UIG
নাইজেরিয়া
ইউএন ওয়াচের তালিকার দশ নম্বরে আছে নাইজেরিয়া৷ সে দেশের শতকরা ৩৪ ভাগ শিশু স্কুলে যায় না৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Alamba
10 ছবি1 | 10
শিশুদের এই অবস্থার জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন স্টাইন৷ তিনি জানান, পারিবারিক নীতি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে এবং কিছু উদ্যোগও নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না৷ তাঁর মতে, সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কিভাবে সামাজিক কল্যাণভাতার রেট হিসেব করা হচ্ছে৷ বর্তমানে, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রযোজ্য রেট শিশুদের জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে, বলেন তিনি৷ স্টাইন মনে করেন, শিশুদের প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় এনে সেই অনুযায়ী তাদের আর্থিক সহায়তা দিতে হবে৷ শুধু স্কুলিং নয়, সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে৷
উল্লেখ্য, শিশু দরিদ্রতা জার্মানিতে নতুন নয়৷ কিন্তু ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এটা রোধে সরকারি উদ্যোগগুলোর কোনোটাই পর্যাপ্ত নয়৷ বিষয়টি বিবেচনায় এনে জার্মানির অর্থমন্ত্রী ভল্ফগাং শয়েবলে গতসপ্তাহে শিশুদের জন্য সহায়তায় মাসে দুই ইউরো বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন৷ বলাবাহুল্য, অর্থমন্ত্রীর এই উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন অনেকে, কেননা তারা মনে করেন মাত্র দুই ইউরো বাড়ালে কোনো কিছুই বদলাবে না৷
জার্মানির মতো একটি উন্নত দেশে ২০ লক্ষ শিশু দারিদ্রতাক শিকার, বিশ্বাস হয়? লিখুন নীচের ঘরে৷
পর্যটকদের যৌন বিলাসে জন্ম যাদের
তারা অন্য শিশুদের থেকে ভিন্ন৷ কেননা দারিদ্র্য এবং বাবা ছাড়াই তাদের বেড়ে উঠতে হয়৷ তারা ফিলিপাইন্সে বেড়াতে আসা ব্যক্তিদের যৌন বিলাসের ফল৷
ছবি: DW/R. I. Duerr
যৌন ব্যবসার উপর নির্ভরশীলতা
একদিকে দারিদ্র্য, অন্যদিকে সুযোগের অভাব – এই দুটো কারণে ফিলিপাইন্সের ওলোনগাপো শহরে তরুণীরা বেছে নিচ্ছেন যৌনবৃত্তিকে৷ অন্য জায়গা থেকেও এখানে মেয়েরা আসে বার এ কাজ করতে৷ প্রতি বছর যৌন পর্যটনের কারণে জন্ম নিচ্ছে কয়েক হাজার শিশু৷
ছবি: DW/R. I. Duerr
পিতৃহীন প্রজন্ম
চার বছরের ড্যানিয়েলের বাবা অ্যামেরিকান ছিলেন বলে ধারণা করা হয়, আর তার অন্য ভাই-বোনরা ফিলিপিনো বাবার সন্তান, যিনি পরিবার ত্যাগ করে চলে গেছেন৷ ড্যানিয়েলের মা অনেক বছর ধরেই বার-এ কাজ করছেন৷ চেষ্টা করে যাচ্ছেন যাতে সন্তানদের ভবিষ্যতটা ভালো হয়৷
ছবি: DW/R. I. Duerr
যৌন পর্যটকদের লালসার শিকার
ছোট্ট রায়ান (মাঝে) বাস্কেটবল নিয়ে খেলতে ভালোবাসে৷ তার বাবা জাপানি৷ তার মা এখনও একটি বার-এ যৌন পেশায় নিয়োজিত৷ রায়ানের আরো চার সহোদর রয়েছেন, যাদের বাবা ভিন্ন৷
ছবি: DW/R. I. Duerr
পেশার সুযোগ
সাদা চামড়ার শিশু যেমন সাবরিনা – তাদের ফিলিপাইন্সের ভাষায় বলা হয় বাঙ্গুস অর্থাৎ মিল্ক ফিশ৷ এ ধরনের শিশুরা পরবর্তীতে অভিনেত্রী বা মডেলের পেশা বেছে নেয়৷ সাবরিনার বাবা জার্মানিতে থাকেন, তবে তার সাথে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই৷
ছবি: DW/R. I. Duerr
প্রজাপতি
লায়লা প্রতিদিন ব্যাকপ্যাক নিয়ে ঘুরে বেড়ায়৷ আগামী বছর স্কুলে ভর্তি হওয়ার সব চেষ্টা করবে সে৷ পড়ালেখায় তার ব্যাপক আগ্রহ৷ লায়লার মা জানালেন, লায়লার বাবা অ্যামেরিকান৷ লায়লার জন্মের আগে তাকে একথা জানানো হলো৷ একথা শোনামাত্র ‘প্রজাপতির’ মতই চলে গিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: DW/R. I. Duerr
জীবনভর বয়ে বেড়ানো
আফ্রিকা বা আফ্রো অ্যামেরিকান বাবার সন্তানেরা ফিলিপাইন্সে ‘নিগ্রো’ হিসেবে সমাজে পরিচিত হয়৷
ছবি: DW/R. I. Duerr
একমাত্র সন্তান
ছোট্ট লেস্টারের বয়স যখন এক বছর তখন তার বাবা মারা যায়৷ মায়ের সাথে তার বাবা ৭ বছর জীবন কাটিয়েছিলেন৷ কিন্তু বর্তমানে শিশুটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত৷ চিকিৎসার সব দায়িত্ব নেয়া তার মা জেসিকার পক্ষে সম্ভব নয়৷
ছবি: DW/R. I. Duerr
নতুন পরিবার
অ্যাঞ্জেলার ছেলে স্যামুয়েলের বাবা সুইস৷ কিন্তু তার জন্মের আগেই বাবা তাদের ফেলে চলে যায়৷ তবে এখন অ্যাঞ্জেলা ফিলিপাইন্সের এক নাগরিককে বিয়ে করেছেন৷ সে পরিবারে নতুন এক সন্তান এসেছে যার বয়স মাত্র এক সপ্তাহ৷ বিয়ের পর বার-এর চাকরিও ছেড়ে দিয়েছেন অ্যাঞ্জেলা৷