সোমবার থেকে জার্মানিসহ ইউরোপের কিছু দেশের মানুষ সীমিত হলেও কিছু ‘স্বাধীনতা’ ভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন৷ করোনা সংকট থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে এই সব পদক্ষেপের পরিণাম নিয়ে অবশ্য সংশয় রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
মানুষের উপর এমন পরীক্ষা সম্ভবত এর আগে হয় নি৷ করোনা সংকটের জের ধরে লকডাউন বা অন্যান্য কড়াকড়ির মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশে জনজীবন কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেছে৷ সোমবার থেকে ইউরোপের একাধিক দেশে আরও কিছু বিধিনিয়ম শিথিল করা হচ্ছে৷ কিন্তু অন্যদিকে আরও বেশি মানুষ প্রকাশ্যে এলে সংক্রমণ কতটা ছড়িয়ে পড়তে পারে, সে বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা নেই৷ সঙ্গত কারণেই এমন ‘সাহসি’ পদক্ষেপের ফলাফল জানতে কমপক্ষে দশ দিন সময় লেগে যাবে৷ প্রশ্ন হলো, আক্রান্তের সংখ্যা মারাত্মক হারে বেড়ে গেলে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষে পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব হবে কি?
সোমবার থেকে জার্মানিতে কিছু ক্ষেত্রে পরিবেশ স্বাভাবিক হচ্ছে৷ কড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে সে দেশের মানুষ আবার চুল কাটার সেলুনে যেতে পারছেন৷ আরও শিক্ষার্থী স্কুলে ফিরছে৷ রাজ্য অনুযায়ী আরও কিছু ‘স্বাধীনতা’ উপভোগ করতে পারছেন মানুষ৷ করোনা সংক্রমণের হার অপেক্ষাকৃত কম থাকার ফলে পূবের স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্য প্রকাশ্যে পাঁচ জন পর্যন্ত মানুষের সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছে৷
তবে ইউরোপের যে দেশের উপর সবার নজর, সেই ইটালির মানুষও প্রায় নয় সপ্তাহ ধরে কার্যত গৃহবন্দি থাকার পর সোমবার থেকে আবার প্রকাশ্যে বেরিয়ে কিছু কাজ করতে পারছেন৷ নির্মাণ ও উৎপাদনের কাজ ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে৷ প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজে ফিরছেন৷ বার ও রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করতে না পারলেও সেখান থেকে খাবার কেনার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে৷ আইসক্রিমের দোকান অবশ্য এখনই খোলা যাবে না৷ খোলা আকাশের নীচে বের হবার ও আত্নীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন মানুষ, যদিও কারা এই নিয়মের আওতায় পড়েন, তা নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে৷ কম মানুষের সমাগম হলে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও আবার সম্ভব হচ্ছে৷ গণপরিবহণ ব্যবস্থা আবার চালু বলেও মানুষের ভিড় এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে৷ ফেডারেল কাঠামোর কারণে ইটালির বিভিন্ন অঞ্চলে আলাদা কিছু নিয়ম চালু করা হচ্ছে৷
অস্ট্রিয়ায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও অন্যান্য স্কুলের চূড়ান্ত বছরের প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী সোমবার থেকে স্কুলে ফিরছে৷ তাদের অবশ্য সামাজিক ব্যবধানের নিয়ম ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে৷ সে দেশে বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দাদের আত্মীয়স্বজনও আবার দেখা করতে আসতে পারবেন৷ অবশ্যই কড়া নিয়ম মেনে সেই কাজ করতে হবে৷
বেলজিয়ামে করোনা ভাইরাসের কারণে মৃত্যুর হার মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল৷ সে দেশে এখনো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাসা থেকেই দপ্তরের কাজ চালিয়ে যাওয়া হলেও সোমবার থেকে কিছু কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু হচ্ছে৷ গণপরিবহণ ব্যবস্থাও কিছুটা স্বাভাবিক করা হচ্ছে৷ সীমিত আকারে খেলাধুলার অনুমতিও দিচ্ছে সরকার৷
ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, গ্রিস, হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, লিথুয়েনিয়া, লুক্সেমবুর্গ ও পোল্যান্ডের মতো দেশও সোমবার থেকে কিছু বিধিনিয়ম শিথিল করছে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)
করোনা যেভাবে পালটে দিচ্ছে কৃষি
করোনা লকডাউন মানবজীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাকে পালটে দিচ্ছে৷ এর বাইরে নয় কৃষিও৷ ছবিঘরে দেখুন কৃষি ও পশুপালনে কী প্রভাব ফেলছে এই মহামারি৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bernetti
খামারে পশুপালন নিয়ে ভাবনা
বিজ্ঞানীরা এখনও জানেন না ঠিক কিভাবে কোভিড-১৯ এর উৎপত্তি হয়েছে৷ তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোয়াইন ফ্লু এবং বার্ড ফ্লু শূকর এবং মুরগি থেকে ছড়িয়েছে এটা অন্তত নিশ্চিত৷ মহামারির ঝুঁকি বাড়তে থাকা এবং এর সঙ্গে প্রাণীদের সংযোগ পাওয়ায় খামারে পশুপালন নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে চিন্তাভাবনা৷
ছবি: picture alliance/Augenklick/Kunz
বন্যপ্রাণীর ব্যবসা
এখন পর্যন্ত গবেষকেরা ধারণা করছেন নভেল করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে চীনের উহানের বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে৷ মহামারির আগে বন্যপ্রাণীর বিশাল ব্যবসা সম্পর্কে মানুষের ধারণা কমই ছিল৷ কিন্তু ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর চীন সরকার দেশজুড়ে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে অন্তত ১৯ হাজার বন্যপ্রাণীর বাজার বন্ধ করে দেয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Bernetti
স্থিতিশীল খাতের সন্ধানে
মহামারি আমাদের খাদ্য সরবরাহেও ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে৷ লকডাউন ও বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ বন্ধের ফলে এই খাত স্থানীয় পর্যায়ে মানুষের কাছে খাবার সরবরাহে নানা পন্থা বেছে নিয়েছে৷ পশুচারণ থেকে শুরু করে শ্রমিক সংকট সবক্ষেত্রেই কৃষকেরা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন৷ তাদের অপেক্ষা সব স্বাভাবিক হওয়ার অথবা বিকল্প কোনো পথ খুঁজে নেয়ার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শহুরে চাষবাস বাড়ছে
বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ এখন বাড়িতে আটকা পড়ে আছেন৷ তাদের অনেকেই ছাদে বা বারান্দায় সীমিত পরিসরে হলেও কৃষি কাজ করছেন৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এটি ভালো ফল বয়ে আনতে পারে৷ ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই শহরে বাস করবে৷ ফলে তখন শহুরে চাষবাস ও খামার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে৷ পাশাপাশি স্বল্প খরচ ও জমির চাহিদার কারণে পরিবেশে তা ভালো প্রভাব ফেলবে৷
ছবি: Imago/UIG
প্রকৃতির ওপর চাপ কমছে
২০৫০ সালের দিকে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছাড়াবে ১০০০ কোটি৷ ফলে খাবারের উৎপাদনও বাড়াতে হবে সে হারেই৷ এতদিন কৃষিজমির পরিমাণ বাড়ানোকেই এর একমাত্র সমাধান হিসেবে বিবেচনা করা হতো৷ কিন্তু শহরে চাষাবাদ বাড়তে থাকায় এই সংকটের নতুন সমাধান মিলতে পারে৷
ছবি: Kate Evans / Center for International Forestry Research (CIFOR)
উদ্ভিজ্জ আমিষের খোঁজ
মাংসের চাহিদা যত বাড়ছে, স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে৷ এক গবেষণায় দেখা গেছে চীনে উদ্ভিজ্জ পণ্য়ের দিকে মানুষ ঝুঁকছে৷ পশ্চিমা দেশগুলোতেও বেশ কয়েক বছর ধরে এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে৷ করোনা ভাইরাস মহামারি এই প্রবণতা আরো ত্বরান্বিত করতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Neibergall
খাদ্য নিরাপত্তা
খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ উন্নত দেশের চেয়ে উন্নয়নশীল দেশে প্রভাব ফেলবে বেশি৷ জাতিসংঘ এরইমধ্য়ে ভয়াবহ খাদ্যসংকটের হুঁশিয়ারি দিয়েছে৷ দুর্ভিক্ষ রোধে জরুরি ত্রাণ সরবরাহ, খাবার সরবরাহের ব্যবস্থার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের শস্যের চাষ, কৃষি জমির সুরক্ষাসহ নানা দিক নিয়ে ভাবতে হবে দেশগুলোকে৷